সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9464 বার পঠিত
তিন ফিলিস্তীনী কিশোরীর কৃতিত্ব
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক যুব বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মেলায় পুরস্কার লাভ করেছে তিন ফিলিস্তীনী কিশোরী। তাদের প্রজেক্ট ছিল ‘অন্ধদের পথপ্রদর্শনের জন্য ইলেক্ট্রনিক লাঠি’। ১৪ বছর বয়সী আসীল আবুল লাইল, নূর আল-আরাদা ও আসীল আল-শার নামক এই তিন কিশোরী পশ্চিম তীরের নাবলুসের আসকার উদ্বাস্ত্ত কেন্দ্রে অবস্থিত জাতিসংঘ (UNRWA) স্কুলে লেখাপড়া করে। ক্যালিফোর্নিয়ার সানজোসে ইন্টেল আয়োজিত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মেলায় ৫৬টি দেশের ১৬১১ জন প্রতিযোগীর মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে তারা বিজয়ী হয়। তাদের আবিষ্কৃত ইলেক্ট্রনিক লাঠির বৈশিষ্ট্য হল- এটি ইনফ্রারেড সিগন্যালের মাধ্যমে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে পথ চলার সময় গর্ত, উঁচু-নিচু স্থান, গাছপালা ইত্যাদি সহজেই চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। গাজার সমস্যাসংকুল নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও দীর্ঘ ছয় মাস যাবৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর তারা প্রজেক্টটি প্রথম নিজেদের স্কুল প্রতিযোগিতায় উপস্থাপন করে। অতঃপর সেখানে বিজয়ী হয়ে সানজোসের আন্তর্জাতিক মেলায় তা উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ পায়। আমেরিকার দৃষ্টিহীন ফেডারেশনের প্রধান মার্ক উসলান জানান, এ আবিষ্কার যুগান্তকারী। কেননা ইতিপূর্বে ১৯৭০ সালে যে ইলেক্ট্রনিক লাঠিটি বাজারে এসেছিল তা উচু-নিচু বা গর্তের অবস্থান নির্ণয় করতে পারত না। বর্তমান মডেলটি সে সমস্যা দূর করেছে। বিষয়টি আরব মিডিয়ায় বেশ আলোড়িত হয়েছে।
আমেরিকান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের ইসলাম গ্রহণ
আমেরিকার উইসকনসিনের অধিবাসী এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আয়েশা রবার্টসন নাম ধারণকারী উক্ত সাংবাদিক আম্মানে একটি কেস রিপোর্ট তৈরীর জন্য ফিল্ড ওয়ার্ক করার সময় মুসলিমদের সংস্পর্শে আসেন এবং কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের আদর্শ দেখে মুগ্ধ হন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি বলেন, তারা আমাকে কখনো ইসলাম গ্রহণে চাপ দেয়নি; বরং আমার উপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছে। আমি ইতিপূর্বে কেমন যেন এক অনুভূতির মধ্যে ছিলাম, যা আমাকে পিছুটান দিয়ে রাখত এবং আমাকে ইসলাম গ্রহণে বাধাদান করত। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য এই কুরআনেই আমি সমাধান খুঁজে পাব। আল্লাহ্র অনুগ্রহেই সে সমাধান আমি পেয়েছি যখন আমি সূরা মায়েদার ৮২-৮৫ আয়াত পাঠ করলাম। অতঃপর আমি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করলাম। এখন আমার মনে হচ্ছে আমি জন্ম থেকেই মুসলিম ছিলাম। ইসলাম যে ফিতরাতের ধর্ম তারই হয়ত স্বাভাবিক অনুভূতি এটি। ইসলামের রূহ এমনই যা আমাকে এরূপ অনুভূতি দিচ্ছে যে আমি যেন বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছি। এটি এমনই এক নে‘আমত যা আমাকে স্বীকার করতে বাধ্য করেছে যে, ‘ইসলাম গ্রহণের পর আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তও ইসলাম গ্রহণের পূর্বকালের সর্বাধিক সুন্দর মুহূর্তগুলির চেয়ে অনেক অনেক গুণ উত্তম’।
পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্য
চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে পাকিস্তানে শুরু হয় এক ভয়াবহ বন্যা। গত আশি বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানে এত বড় বন্যা আর হয়নি। খায়বার পাখতুনওয়ালা, সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান জুড়ে মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর এ বন্যার সৃষ্টি হয়। গোটা পাকিস্তানের এক পঞ্চমাংশ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার শিকার হয়ে ২০০০-এর বেশী লোক মারা গিয়েছে এবং ১ মিলিয়নেরও বেশী বাড়ী-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে এ পর্যন্ত ২১ মিলিয়নেরও বেশী লোক সেখানে আহত কিংবা বাস্ত্তহারা হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। সার্বিক ক্ষয়-ক্ষতি ২০০৪ সালের সুনামী, ২০০৫ সালে কাশ্মীরের ভূমিকম্প কিংবা ২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্পকেও অতিক্রম করেছে। বর্তমানে খাদ্য ও বাসস্থানের নিদারুণ অভাবে সেখানে বিরাজ করছে এক চরম মানবেতর পরিস্থিতি।
গ্রাউন্ড জিরোর পার্শ্বে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক
আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে নাইন ইলেভেন হামলাস্থলের পাশ্ববর্তী এলাকায় একটি বহুতল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় সম্প্রতি বিরাট তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কর্ডোভা হাউস নামে পরিচিত ঐ বিল্ডিংটি ইতিপূর্বেই মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হত। এ বছর মে মাসে লোকাল কমিউনিটি বোর্ডে বিল্ডিংটি সংস্কার করে নতুন ১৩ তলা বিশিষ্ট এক বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তারপরই বিষয়টি মিডিয়ার নজরে আসে। ভবনটি গ্রাউন্ড জিরো থেকে না দেখা গেলেও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত বলে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এ নিয়ে নানা আঙ্গিকের রং চড়ানো সংবাদ ফলাও করে প্রচার করা হয়। ফলে দ্রুতই বিষয়টি সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। রক্ষণশীল ডানপন্থীরা গ্রাউন্ড জিরোতে ব্যাপকাকারে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। বিরোধীদের মতে, এখানে মসজিদ নির্মাণ করলে তা ইসলামের জন্য ‘ভিক্টোরী মেমোরিয়াল’ হিসাবে পরিগণিত হবে। এটা হবে মুসলমানদের জন্য বিজীত অঞ্চলে স্থাপিত বিজয় চিহ্নস্বরূপ। এতে নাইন ইলেভেন ভিকটিমদের আত্মার প্রতি অবমাননা করা হবে। কেননা তাদের ধারণামতে ইসলামই গ্রাউন্ড জিরোতে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী। বিল্ডিংটির নাম এলাকার নামানুসারে ‘পার্ক ফিফটি ওয়ান’ হলেও মুসলমানরা একে কর্ডোভা বিল্ডিং বলার কারণে বিরোধী পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, আমেরিকানদের বোঝা উচিৎ মসজিদসমূহ কেবলমাত্র চার্চের বিপরীতে একটি উপাসনালয়-এমন ধারণা করা ভুল। মূলত তা মুসলমানদের জন্য ‘আধিপত্যের প্রতীক এবং মৌলবাদের কেন্দ্রস্থল’। বর্তমানে ব্যাপক পরিচিতির কারণে ‘গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ’ নামেও এটিকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় মেয়রসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এ মসজিদ নির্মাণে সমর্থন দিয়েছেন। এরই মধ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের নবম বার্ষিকীতে টেরি জোনস্ নামক এক পাদ্রী ‘কুরআন পোড়ানো’ দিবস ঘোষণা করে গ্রাউন্ড জিরোতে একত্রিত হওয়ার জন্য জনগণকে আহবান করেন। অবশ্য মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হলে নির্দিষ্ট দিনের পূর্বেই উক্ত প্রোগ্রাম প্রত্যাহার করা হয়।