মধ্যপ্রাচ্যে ঐতিহাসিক গণজাগরণ : তারুণ্যের বিজয়

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 705 বার পঠিত

জনতার দুর্বার গণবিক্ষোভের মুখে গত ১৪ জানুয়ারী তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট যায়নুল আবেদীন বিন আলীর ২৩ বছরের দীর্ঘ শাসনামলের অবসান ঘটে। গণরোষ প্রশমনের লক্ষ্যে তিনি মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়ে যরূরী অবস্থা জারী করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। অবশেষে ঐ একই দিনে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি সঊদী আরবে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিউনিসিয়ার গণবিপ্লবের ঢেউ লাগে পার্শ্ববর্তী মিসর, জর্ডান, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, সুদান, আলবেনিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে। একই সঙ্গে এতগুলো রাষ্ট্রে গণজাগরণের ঘটনা অভূতপূর্ব। জর্ডানেও গণবিস্ফোরণ এড়াতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়েছেন। ঐ একই উদ্দেশ্যে ইয়েমেনের দীর্ঘ ৩২ বছরের শাসক আলী আব্দুল্লাহ ছালেহ ২০১৩ সালের পর ক্ষমতায় থাকবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে মাত্র ১৮ দিনের গণজাগরণের তোপে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হোসনী মোবারক (৮২) অবশেষে গত ১১ ফেব্রুয়ারী ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে পড়েছেন। গত ২৫ জানুয়ারী শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে নির্যাতন ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠা মোবারকের ক্ষমতায় টিকে থাকার লালিত স্বপ্ন-সাধ। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ইরানে এক গণবিপ্লবের মাধ্যমে পতন ঘটেছিল স্বৈরশাসক রেযা শাহ পাহলভীর। তার ঠিক ৩২ বছর পরে একই দিনে গণবিক্ষোভের ঝাপটায় ধসে গেল আরেক স্বৈরাচারের তখতে তাউস। ক্ষমতায় টিকে থাকার নিরন্তর কোশেশ করেও জনরোষের কবলে পড়ে তিনি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। মিসরের রাজধানী কায়রোর তাহরীর স্কয়ারের ঘটনা ২১ বছর আগে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের বিখ্যাত তিয়েন আনমেন স্কয়ারে সংঘটিত ঘটনাবলীর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

১৯৫২ সালে জামাল আব্দুন নাছেরের নেতৃত্বে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিসরে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল। এরপর যে চারজন প্রেসিডেন্ট মিসর শাসন করেছেন, তারা সবাই এসেছিলেন সেনাবাহিনী থেকেই। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত। এর এক সপ্তাহ পর তার স্থলাভিষিক্ত হন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারক। পরবর্তী মাসে গণভোটে মোবারক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর থেকে গত ৩০ বছর তিনি ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরেছিলেন। গণধিকৃত এই স্বৈরশাসক দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুর্নীতির বিষবাষ্পে বিষিয়ে তুলেছিলেন মিসরের জনজীবন। বঞ্চনা, নির্যাতন ও হতাশায় গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন মানুষের মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে। তিন দশকে স্বৈরাচারীর বুলডোজার পিষ্ট করেছে হাযার হাযার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন অগণিত অধিকার সচেতন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী। ইসরাঈল ও আমেরিকার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও ফিলিস্তীনের জনগণের উপর নির্বিচারে আক্রমণ পরিচালনার পরও ইসরাঈলের তল্পীবাহক হিসাবে কাজ করে যাওয়ায় মিসরের জনগণ ছিল তার উপর দারুণ ক্ষুব্ধ। এসবের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠা টানা ১৮ দিনের গণবিক্ষোভে মোবারক বাহিনীর হামলায় তিন শতাধিক সাধারণ মানুষ নিহত ও চার সহস্রা্ধিক আহত হয়েছে। ৩০ বছর যাবৎ শাসরুদ্ধকর যরূরী আইনের নিগড় থেকে মুক্তির আনন্দে গত ১১ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী কায়রো সহ সর্বত্র দেখা যায় জনতার বাঁধভাঙ্গা উল্লাস।

শাসন-শোষণ, যুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যুগে যুগে এভাবেই বিস্তৃত হয়েছে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এ সত্য নতুন করে আবার বিশ্ববাসীর সামনে প্রতিষ্ঠিত হল। এসব আন্দোলনের পুরোধা ছিল তরুণ সমাজ। এর দ্বারা আবারো প্রমাণিত হল যে, যে কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে তরুণরা জেগে উঠলে তার পরাজয় সুনিশ্চিত এবং তারা তাদের দাবী যে কোন মূল্যে আদায় করেই ছাড়ে। এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তরুণ সমাজ জেগে উঠলে দ্বীনের পতাকা উড্ডীন হবে দিকে দিকে- এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ আমাদের তরুণ সমাজকে চেতনাদীপ্ত হয়ে ইসলামের খেদমতে সর্বস্ব কুরবানী দেওয়ার তাওফীক্ব দিন-আমীন!



বিষয়সমূহ: সাক্ষাৎকার
আরও