ছবর বা ধৈর্য

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 19136 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَعِينُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ -

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন’ (বাক্বারাহ ১৫৩)।   

২- أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ-

‘তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল?’ (আলে ইমরান ১৪২)

৩- يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اصْبِرُوْا وَصابِرُوْا وَرابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য অবলম্বন কর এবং সহিষ্ণু ও সুপ্রতিষ্ঠিত হও এবং আল্লাহকে ভয় কর- যেন তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হও’ (আলে ইমরান ২০০)

4- وَاتَّبِعْ ما يُوْحى إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتَّى يَحْكُمَ اللهُ وَهُوَ خَيْرُ الْحاكِمِيْنَ-

‘তুমি তোমার প্রতি প্রেরিত ওহীর অনুসরণ কর, আর ধৈর্যধারণ কর এই পর্যন্ত যে, আল্লাহ মীমাংসা করে দেন এবং তিনিই উত্তম মীমাংসাকারী’ (ইউনুস ১০৯)

৫- وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْ ءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَراتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ-

‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি বা ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে এবং ঐসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন’ (বাক্বারাহ ১৫৫)। 

৬- وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَداةِ وَالْعَشِيِّ يُرِْيدُوْنَ وَجْهَهُ وَلا تَعْدُ عَيْناكَ عَنْهُمْ تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَياةِ الدُّنْياَ وَلا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكانَ أَمْرُهُ فُرُطاً-

‘নিজেকে তুমি আবদ্ধ রাখবে তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালককে, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না; যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে, তুমি তার আনুগত্য করো না’ (কাহ্ফ ২৮)

৭- وَاصْبِرْ عَلى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ-

‘(হে বৎস!) ...বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (লোকমান ১৭)

৮- وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحاتِ وَتَواصَوْا بِالْحَقِّ وَتَواصَوْا بِالصَّبْرِ -

‘শপথ যুগের। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং ধৈর্যধারণে উদ্বুদ্ধ করে’ (আছর ১-৪)

৯- وَإِنْ عاقَبْتُمْ فَعاقِبُوْا بِمِثْلِ ما عُوْقِبْتُمْ بِهِ وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِيْنَ-

‘যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঠিক ততখানি প্রতিশোধ গ্রহণ করবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে; তবে তোমরা ধৈর্যধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য তা উত্তম’ (নাহল ১২৬)

১০- وَقَالَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوْابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صالِحاً وَلا يُلَقَّاها إِلاَّ الصَّابِرُوْنَ-

‘আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ব্যতীত এটা কেউ পাবে না’ (ক্বাছাছ ৮০)

11-وَلا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلاَ السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَداوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ - وَما يُلَقَّاها إِلاَّ الَّذِيْنَ صَبَرُوا وَما يُلَقَّاها إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيْمٍ-

‘ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা। তখন দেখবে তোমার সাথে যার শত্রুতা রয়েছে, সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী হয় শুধু তারাই যারা ধৈর্যশীল, এই গুণের অধিকারী হয় শুধু তারাই যারা মহা ভাগ্যবান’ (হামীম সাজদাহ ৩৪-৩৫)

হাদীছে নববী থেকে :

12- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- : مَا يَكُنْ عِنْدِىْ مِنْ خَيْرٍ لاَ أَدَّخِرْهُ عَنْكُمْ ، وَإِنَّهُ مَنْ يَسْتَعِفَّ يُعِفُّهُ اللَّهُ ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللَّهُ ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ ، وَلَنْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ " متفق عليه-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমার কাছে যা কিছু কল্যাণ রয়েছে তা আমি তোমাদের বঞ্চিত করে আগলিয়ে রাখব না। যে ব্যক্তি পাপমুক্ত হতে চায় আল্লাহ তাকে পাপমুক্ত করেন। যে ব্যক্তি মানুষের পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বাঁচতে চায় আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষিহীন করে দেন। যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল করে দেন। কোন ব্যক্তিকে যা কিছু দান করা হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্ববৃহৎ হল ধৈর্য’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৮৪৪)। 

13- عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: "إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ صَبَرَ فَلَهُ الصَّبْرُ وَمَنْ جَزِعَ فَلَهُ الْجَزَعُ" صحيح الجامع-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোন কওমকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে ধৈর্য ধারণ করে তার জন্য ধৈর্যের উপায় বের করে দেয়া হয় এবং যে অধৈর্য হয়ে যায় তাকে ধৈর্যহীনতায় নিক্ষেপ করা হয় ’ (ছহীহুল জামে‘ হা/১৭০৬)

14- عَنْ أَبِى مَالِكٍ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- "..وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ " رواه مسلم-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ছাদাকা হল দলীল, ধৈর্য হল আলো আর কুরআন হল তোমার পক্ষে বা তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণস্বরূপ’ (ছহীহুল জামে‘ হা/২৪০৩)

15- عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- "عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ" رواه مسلم-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটাই অদ্ভূত। তার সব কাজই তার জন্য মঙ্গলময়। একজন মুমিন ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। যখনই তার সামনে প্রফুল্ল সময় উপস্থিত হয় সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর যদি দুর্ভোগ উপস্থিত হয় সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৭)

16-  عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رضي الله عنه- "وَاعْلَمْ أَنَّ فِى الصَّبْرِ عَلَى مَا تَكْرَهُ خَيْراً كَثِيراً وَأَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً" رواه أحمد-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘জেনে রেখ! তোমার নিকট অপছন্দনীয় কোন ব্যাপারে যদি তুমি ধৈর্য ধারণ কর তবে তাতে তোমার জন্য রয়েছে অনেক কল্যাণ। আর নিশ্চয়ই বিজয় আসে ধৈর্যের সাথে এবং বিপদের সাথে রয়েছে বিপদমুক্তির পথ। আর কাঠিন্যের পর সহজ আসে’ (আহমাদ হা/২৮০৪)

17- عَنْ أَنَسٍ - رضي الله عنه-  قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم : "الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولَى" . متفق عليه-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ছবর হল সেটাই যেটা প্রথম ধাক্কাতে সহ্য করতে হয়’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৭২৮)

18- عن ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ "الْمُؤْمِنُ الَّذِى يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَعْظَمُ أَجْراً مِنَ الَّذِىْ لاَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَلاَ يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ " صحيح الجامع-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে মুমিন মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করে সে ব্যক্তি অধিক ছওয়াবের অধিকারী ঐ ব্যক্তির চেয়ে যে মানুষের সাথে মেশে না এবং তাদের দেয়া দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে না’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৫১)

19- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ "مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا ، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ" متفق عليه-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলমানকে যদি ক্লান্তি, কষ্ট, দুঃখ, বেদনা, দুর্যোগ বা নিরাশা এমনকি যদি একটি কাটাও বিঁধে তবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩৭)

20- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- "مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِى نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ" رواه الترمذي-

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিন এবং মুমিনাদের জীবন, সন্তান ও মাল-সম্পদের উপর বালা-মুছিবত অব্যাহত থাকে, এমনকি সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে এমতাবস্থায় তার আর কোন পাপ থাকে না’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৫৬৭, সনদ হাসান)

বিদ্বানদের কথা :

  1. ওমর (রাঃ) বলেন, আমাদের সর্বোত্তম আশ্রয়স্থল হল ছবর বা ধৈর্য’ (তা‘লীক্বাতুল বুখারী হা/৬৪৭০)
  2. আলী (রাঃ) বলেন, ছবর এমন একটি বাহন যা কখনো পথ ভুল করে না (উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃঃ ১৭)
  3. আলী (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ছবর ঈমানের এমন একটি অংশ যেমন মাথা শরীরের অংশ অর্থাৎ মাথাবিহীন শরীর যেমন অকার্যকর তেমনি ছবরবিহীন ঈমানও অকার্যকর। অতঃপর উচ্চকণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন, সাবধান! ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই যার যৈর্য নেই (বাছায়েরু যাবিত তাময়ীয, ৩/৩৭৬ পৃঃ)
  4. সুফিয়ান ছাওরী বলেন, ছবর তিন প্রকার- (১) নিজের ব্যথা বেদনাকে কারো সামনে প্রকাশ না করা। (২) নিজের সমস্যা কাউকে না বলা। (৩) নিজের প্রশংসা না করা (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/৪৮৯ পৃঃ)
  5. ইবনুল কাইয়িম বলেন, ছবর তিন প্রকার- আল্লাহর নির্দেশিত আমলসমূহের উপর ধৈর্য রাখা যতক্ষণ না তা আদায় করা হয়। নিষিদ্ধ কাজ থেকে ছবর করা যাতে তার মাঝে পতিত না হয় এবং তাক্বদীর তথা ভাগ্যের উপর দোষারোপ না করে তার প্রতি নির্ভরতা রাখা (মাদারিজুস সালেকীন ১/১৬৫)
  6. ইবনুল কাইয়িম বলেন, ইমাম শাফেঈকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি উত্তম- যে সামর্থ্যবান হয়েছে যে, না কি যে বিপদের শিকার হয়েছে? তিনি বললেন, বালা-মুছীবতের শিকার না হলে সামর্থ্যবান হওয়া যায় না। আল্লাহ তাআলা নূহ, ইবরাহীম, মুহাম্মাদ (ছাঃ) সকলকেই বিপদের মুখোমুখি করেছিলেন। অতঃপর যখন তারা ধৈর্য ধারণ করেছিলেন তখন তাদেরকে সামর্থ্যবান করা হয়। মূলত বিপদ-দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির কথা কেউ ভাবতেও পারে না (আল ফাওয়ায়েদ, পৃঃ ২৮৩)
  7. হারীরী বলেন, ছবর হল আনন্দ-বিষাদ নির্বিশেষে সকল সময়ে নিজ আত্মাকে সুস্থির রাখা (বাছায়েরু যাবিত তাময়ীয, ৩/৩৭৭ পৃঃ)
  8. যুন্নুন মিছরী বলেন, তর্কবাজি, মতবিভক্তি থেকে দূরে থাকা, দুঃখ-কষ্টের মুখে শান্ত থাকা, জীবিকার ময়দানে দীর্ঘকাল দারিদ্রে্যর সাথে লড়েও নিজেকে মুখাপেক্ষীহীনভাবে প্রকাশ করা (ঐ)

সারবস্ত্ত

  1. ছবর মানুষের সবচেয়ে বড় আত্মিক শক্তি।
  2. ছবর এমন এক আভ্যন্তরীণ শক্তিশালী অস্ত্র যার মাধ্যমে মানুষ বড় বড় বিপদ ও বিপর্যয়কে প্রতিরোধ করতে পারে।
  3. ছবর মানুষকে বিপদে-আপদে রক্ষকের ভূমিকা পালন করে।
  4. সঠিক সময়ে সঠিক দায়িত্ব পালন ধৈর্যশীল ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব।
  5. চঞ্চলতা ও তাড়াহুড়ার পরিবর্তে স্থৈর্য ও স্থিতিশীলতা দান করে ছবর।
  6. ক্রোধের মত দুর্দমনীয়, অপ্রতিরোধ্য বদগুণকে প্রতিরোধ করে ধৈর্য।
  7. ভীতির সময় ভীতি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সাহসীভাবে উপস্থাপনের ক্ষমতা দান করে ছবর।
  8. ছবরের মাধ্যমেই কুপ্রবৃত্তির অস্থির নেশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
  9. ছবর একজন প্রকৃত মুসলিমের জন্য অপরিহার্য গুণ, যা তার ঈমানের প্রমাণ বহন করে।
  10. ছবর অন্তরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করে।
  11. ছবরের ফলে আল্লাহ ও মানুষের প্রতি মুহাববাত সৃষ্টি হয়।
  1. পৃথিবীর বুকে ক্ষমতাবান হওয়ার মাধ্যম হল ছবর।
  2. ছবরের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃত ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে।
  3. পরকালীন জীবনে সাফল্য অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ হল ধৈর্য।
  4. আল্লাহ সবসময় ছবরকারীদের সাথে থাকেন।
  5. আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হয় ধৈর্যশীলদের উপর।


বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও