দক্ষিণ এশিয়ায় আহলেহাদীছ আন্দোলন
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম 9349 বার পঠিত
দুনিয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাসে মুসলিম জাতি নানা ধরনের ফিৎনার সম্মুখীন হয়েছে এবং ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন রকম বিদ‘আত ও কুসংস্কার ঢুকে পড়েছে ধর্মীয় কর্মকান্ডের নামে। কুরআন মাজীদকে পরিবর্তন করার কিংবা তাতে সন্দেহবাদ আরোপ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। রাসূলের ছহীহ সুন্নাতকে এড়িয়ে গিয়ে নতুন নতুন আমল চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। এসবের যে কোন একটিই দ্বীনের চিহ্নসমূহ মুছে দেওয়ার এবং তার মূলনীতি সমূহ বিনষ্ট ও ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আল্লাহ এ দ্বীনকে হেফাযত করেছেন এবং বিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি যুগে যুগে যোগ্য বান্দা সৃষ্টি করে তাঁর দ্বীনকে পৃথিবীর বুকে অবিকৃত রেখেছেন। অন্যথা ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় ইসলামও পৃথিবীর বুকে তার আসল চেহারা হারিয়ে ফেলতো। দ্বীনের হেফাযত তথা ইসলামের আদিরূপ বজায় রাখার আন্দোলনই আহলেহাদীছ। এ আন্দোলন ইসলামের মৌলিকত্বকে অক্ষণ্ণ রাখতে সদা সচেষ্ট। এজন্য তারা সকল বিদ‘আতকে ছাটাই করার চেষ্টা করে, সকল ভ্রান্তি দূর করে দ্বীনকে হেফাযত করাই তদের সতত সাধনা। তাঁরা এ দ্বীনের অতন্দ্র পহরী হিসাবে বাতিল পন্থীদের বিরুদ্ধে খাঁটি দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হন। ছাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসা এ আন্দোলনের উত্তরসূরীরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছেন।
উল্লেখ্য যে, ৩৭ হিজরীর পর থেকে মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে শুরু করে। যার অশুভ পরিণতি আজো মুসলিম বিশ্ব ভোগ করছে। দলবিভক্তির সাথে সাথে শুরু হয় ইসলামের নামে বিভিন্ন মতবাদের উত্থান। এসব মতবাদের অধিকাংশ ছিল মানুষের আক্বীদা-বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যার কবলে পড়ে মানুষ তাদের ঈমান-আক্বীদা হারিয়ে শিরক ও কুফরের মত জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হয়। এ কারণে এটা ছিল মানুষের আক্বীদা বিধ্বংসী এক মারাত্মক যুগ। তাই এ যুগকে আমরা সংকট ও সংস্কার যুগ বলে অভিহিত করেছি। এ যুগের সময়কাল ছিল ১০০ থেকে ১৩২ হিজরী পর্যন্ত। মূলত এ যুগে আল্লাহর যাত ও ছিফাত তথা তাঁর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত আক্বীদা সৃষ্টি হয়। এ যুগে প্রধানত চারজন বিদ্বানের দ্বারা চার ধরনের বিদ‘আত প্রসার লাভ করে। সেগুলো নিম্নরূপ :
এসব ক্ষেত্রে সঠিক আক্বীদা হচ্ছে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী এক ও অবিভাজ্য এবং তাঁর সত্তার সাথে তাঁর গুণাবলীকে অবিচ্ছিন্ন ও ক্বাদীম (সনাতন) বলে বিশ্বাস করা। কুরআন মাজীদ আল্লাহর কালাম, সৃষ্ট নয়; তাক্বদীরের ভাল-মন্দ; কবীরা গোনাহগার মুমিন, কাফির নয়; বান্দার ভাল-মন্দ সকল কর্মের মূল স্রষ্টা আল্লাহ, বান্দা আল্লাহ প্রদত্ত কর্মশক্তি প্রয়োগে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী প্রভৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
এই সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাসকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বীনকে হেফাযত করার জন্য আল্লাহ তাঁর এক শ্রেণীর বান্দাদের মনোনীত করেছেন। তারা একদিকে যেমন আল্লাহ ও তাঁর প্রতি যথার্থভাবে ঈমান এনেছেন, তেমনি কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরেছেন। আর দ্বীন বিরোধীদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সর্বাত্মক সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। দ্বীনের হেফাযতের দায়িত্বে নিয়োজিত আল্লাহর সেই বান্দারাই হচ্ছেন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাতের নিঃশর্ত অনুসারী আহলেহাদীছগণ।
বর্তমান যুগসন্ধিক্ষণে দ্বীনের উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত এ শতাব্দীতে ইসলাম বৈরী শক্তি ইসলামকে প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তারা মুসলিম উম্মাহর ইযযত-আব্রু রক্ষা ও বিজয়ের মূল সূত্র কিতাব ও সুন্নাতের প্রতি মুসলমানদের উদাসীনতা লক্ষ্য করেছে। ফলে তারা মুসলিম সন্তানদেরকেই দ্বীনের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টির কাজে লাগিয়েছে। প্রথমে তারা নিজেদের সন্তানদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অতঃপর মুসলিম ছেলেদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে কাছে টেনে তাদের মগজ ধোলাই করেছে। ফলে এখন মুসলিম সন্তানরাই ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কথা বলে। মুসলমান এখন ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রু হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকেই ফিরে আসতে হবে এবং তার সিদ্ধান্তকে সবকিছুর উপরে স্থান দিয়ে তাকে অবনত মস্তকে মেনে নিতে হবে। তাহলে মুসলিম তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!