মুহতারাম আমীরে জামা‘আত (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9146 বার পঠিত
[‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে’র এই সৃনতিচারণমূলক সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ‘তাওহীদের ডাক’-এর পক্ষ থেকে মুযাফ্ফর বিন মুহসিন ও নূরুল ইসলাম]
(১৪) সোহাগদল, পিরোজপুর : ১৯৯৭
সালের নভেম্বরে ‘আন্দোলন’-এর নেতাকর্মীদের নিয়ে দক্ষিণবঙ্গে গিয়েছি
শিক্ষাসফরে। সাথে তিনটি মাইক্রো। পূর্বে দেওয়া প্রোগ্রাম মোতাবেক আমরা
বিরাট কাফেলাসহ সোহাগদল পৌঁছলাম। নদীর ওপারে গাড়িগুলো রেখে আমরা নৌকায় করে
শ্লোগান দিতে দিতে সোহাগদল আহলেহাদীছ জামে মসজিদের কিনারে গিয়ে নৌকা থেকে
নামলাম। ঐ মসজিদটি কিছুদিন পূর্বে তাওহীদ ট্রাস্টের সৌজন্যে পুনর্নির্মিত
হয়। একদিন আগেই মাওলানা মুসলিম ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম পৌঁছে গিয়েছিলেন।
ওনারা স্থানীয় ধনবান বড় ব্যবসায়ী শাহ বাহাদুর ছাহেবের আলীশান দ্বিতল বাড়িতে
অবস্থান করছেন। আমার জন্য ঐ বাড়িতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাথীদের মসজিদে
রেখে আমাকে ঐ বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হল। লক্ষ্য করলাম- ছাদে টিভি এ্যন্টিনা।
আমি বারান্দায় উঠেই নেমে এলাম। যেলা সংগঠনের অর্থ সম্পাদক স্থানীয়
হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আযীযুল ইসলামকে ইঙ্গিতে কাছে ডেকে নিয়ে
বললাম, আপনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। বেচারা বিপদে পড়ে গেলেন। কিন্তু কিছুই করার
ছিল না। আমিই আগে আগে হেঁটে চলেছি। বেশ দূরে ও ভিতরে ওনার বাড়ি। বারান্দায়
উঠতেই দেখি বিরাট আয়নায় বাঁধানো আরবীতে ‘আল্লাহ ও মুহাম্মাদ’ লেখা পোষ্টার
টাঙানো আছে। এক পা উঠেই নেমে এলাম। ওনাকে বললাম, ওটা আগে সরিয়ে ফেলুন।
মাও. জাহাঙ্গীরকে ইঙ্গিত করলাম। তারা কয়েকজন মিলে ওটা নামিয়ে নিল।
বাড়ীওয়ালাকে বললাম, বাড়িতে প্রাণীর ছবি যদি কিছু থাকে, সব নামিয়ে ফেলুন।
সবকিছু পরিষ্কার ও বিছানাপত্র ঠিকঠাক করতে প্রায় আধাঘন্টা লাগলো। এতক্ষণ
আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। জাহাঙ্গীরকে বললাম সাথীদের মধ্যে আলেমগণ সকলে
এখানে আমার সাথে থাকবেন। মাত্র একজন মসজিদে থাকবেন কর্মীদের তদারকি করার
জন্য। অতঃপর বাদ মাগরিব আমি হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনস্থলে গেলাম।
নদীর অপর পাড়ে শর্ষিণা কামিল মাদরাসা ও পীর সাহেবের খানকা। মাদরাসা থেকে
অনেক ছাত্র ও কয়েকজন শিক্ষক এসেছেন। আমার বক্তৃতা শেষে প্যান্ডেলেই ১২ জন
আহলেহাদীছ হলেন ও ছহীহ আক্বীদা মোতাবেক চলার শপথ নিলেন। পীর ছাহেবের এলাকার
জনগণের আগ্রহ ও ভক্তি দেখে এবং বাপ-দাদার আচরিত মাযহাব ছেড়ে এত সহজভাবে
‘আহলেহাদীছ’ হতে দেখে আমরা বিস্মিত হলাম।
পরদিন সকাল ৭টায় রওয়ানা হব। বাদ ফজর মসজিদে সংক্ষিপ্ত দারস দিলাম। তারপর প্রৌঢ় বয়সের ইমাম ছাহেব আমাকে মসজিদের একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন, স্যার! আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে আজ আমি আপনাকে ‘সোনার মেডেল’ উপহার দিতাম।’ বললাম, কেন? বললেন, স্যার! আপনার একটা আচরণই গতরাতে এলাকার পরিবেশ পাল্টে দিয়েছে। আপনি যে টিভি-ওয়ালা ধনী লোকের বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছেন, আবার হেড মাষ্টারের বাড়ী গিয়েও শিরক-বিদ‘আত দূর না করে ঘরে ঢোকেননি, একথা সাথে সাথে সর্বত্র প্রচার হয়ে গেছে। ফলে শর্ষিনা পীরের দুষ্ট মুরীদান, যারা আপনার সম্মেলন পন্ড করতে এসেছিল, তারাই গতরাতে আপনার হাতে বায়‘আত নিয়ে ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে গেছে।’ সবার মুখে আপনার প্রশংসা শুনে আমার মনটা ভরে গেছে। সবাই বলছে, আমাদের পীরের কাছে ঘেঁষা যায় না। অথচ এদের ‘আমীর’ সবার সাথে মেশে। কোন নযর-নেয়ায নেয় না।’ বললাম, দো‘আ করুন আল্লাহ যেন আমাদের দাওয়াত কবুল করেন’।
(১৫) চটেরহাট, বাগেরহাট : ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে দক্ষিণবঙ্গ সফরের এক পর্যায়ে পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী আমরা এখানে এলাম। এখানে ঢালীরখন্ড সহ দু’তিনটা গ্রাম ‘আহলেহাদীছ’। এরা পূর্ব থেকেই আমার আববার ভক্ত। মংলা পোর্ট পেরিয়ে বেশ কিছু দূরত্বে এলাকাটির অবস্থান। এখানকার আহলেহাদীছ ইজারাদার গোষ্ঠী খুব প্রভাবশালী। এরা কয়ভাই রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আববাকে এরা খুব ভক্তি করে। মংলা উপযেলা চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে এরা অধিষ্ঠিত। এদেরই একজনের আল-হেলাল দোতলা লঞ্চে আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা হয়েছে। যিনি ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে আববার কাছে এসেছেন তার পিতার সাথে, সে গল্প করলেন। ‘ডঃ গালিব তোরণ’ লেখা বিরাট তোরণ পেরিয়ে চটেরহাট বাজার এলাকায় ঢুকতে বিবেকে ধাক্কা দিচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। নিষেধ করলাম এসব লিখতে। রাতে সম্মেলন হল। চারপাশে হানাফী ও পীরের মুরীদান। সবাই এলো, দেখলো, শুনলো। আলহামদুলিল্লাহ আমার বক্তৃতার পর প্যান্ডেলেই ২২ জন ‘আহলেহাদীছ’ হল ও বায়‘আত করল। অবশ্য এখানকার শাখা ‘যুবসংঘ’-এর দু’জন- যারা রাজশাহী তাবলীগী ইজতেমায় নিয়মিত যেত, তারা আগেই কিছু প্রচারের মাধ্যমে ও বই-পত্র বিতরণের মাধ্যমে ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করে রেখেছিল।
শিক্ষাসফরের সাথে সাথে এইভাবে দাওয়াতী সফলতায় আমরা প্রাণভরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। এই সফরের পুরা রিপোর্ট ঐ সময়ের মাসিক আত-তাহরীকে বেরিয়েছিল।
(১৬) কাচিয়া-চৌমুহনী, বোরহানুদ্দীন, ভোলা : ১৯৯৮-এর ফেব্রুয়ারীতে এখানকার মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত পাঁচদিন ব্যাপী বার্ষিক তাফসীর মাহফিলে এবারই প্রথম আমরা সবাই ‘আহলেহাদীছ’ বক্তা। অবশ্য এটা ছিল গত কয়েক বছর যাবত ঢাকার উত্তরায় তাওহীদ ট্রাস্ট অফিসে দক্ষিণাঞ্চলের হানাফী আলেমদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত মতবিনিময় সভার ফসল। বাউফল সিনিয়র মাদরাসার প্রবীণ অধ্যক্ষ মাওলানা নূর মুহাম্মাদ আমাকে আগেই বললেন, এলাকায় তাফসীর মাহফিল বলতে ইউসুফ-যুলেখার কাহিনী বুঝায়। বক্তারা এই গতেই পাঁচদিন চালিয়ে দেয়। আপনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন। আমি আমার ভাষণের শুরুতেই উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করি এবং সূরা ইউসুফের তাওহীদভিত্তিক শিক্ষা ও আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুলের পুরস্কার সম্বলিত সারমর্ম সংক্ষেপে বিবৃত করলাম। অতঃপর মূল ভাষণের দিকে এগিয়ে গেলাম। ভাষণ শেষে শ্রোতাদের চাপে আমাকে পুনরায় দাঁড়িয়ে ওয়াদা করতে হল যে, আমি আল্লাহ চাহে তো প্রতি বছর এলাকায় আসব। কিন্তু এ যাবৎ আর যাওয়া হয় নি। আমি বক্তাদের নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত দিয়েছিলাম। ফলে নির্ধারিত আয়াতসমূহের আলোকে তাফসীর সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যা অত্যন্ত ফলদায় হয়েছিল। ঐ সময় পার্শ্ববর্তী পাঁচটি মাদরাসায় ছুটি দেওয়া হয় ও শিক্ষকরা প্রায় ৬০জন এখানে আসেন। শুক্রবারের জুম‘আ’র খুৎবা ও আমার ইমামতিতে জুম‘আর ছালাতের পূর্বে মসজিদের মুছল্লী সবাই ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল নিতান্তই বিস্ময়কর! শুনেছি আমরা আসার পর এলাকায় পাঁচটি মসজিদের মুছল্লী সব ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে গেছে। মাওলানা ছফীউল্লাহর নেতৃত্বে আজও এলাকায় দাওয়াত অব্যাহত রয়েছে। এই মাওলানা ছফীউল্লাহ উত্তরায় ট্রাস্ট অফিসে মতবিনিময় সভা শেষে নিজস্ব মন্তব্যে বলেছিলেন, দেউবন্দে যখন ফাতাওয়া আলমগীরী পড়তাম, তখন অতি পবিত্র জ্ঞানে আগে ওযূ করতাম। কিন্তু আজ দেখছি যে, এটা এমন ফাৎওয়ার বই, যা পড়লে পুনরায় ওযূ করতে হবে।’ ছফীউল্লাহর পূর্বে একই থানাধীন দেউলা গ্রামের বক্তা মাওলানা মোশাররফ হোসেন আকন্দ আহলেহাদীছ হন। স্থানীয় চার চারবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাশেম ঐ সফরের উক্ত মত বিনিময় সভা শেষে নিজ মন্তব্যে বলেন, ‘আপনাদের এই শুভ উদ্যোগ যদি প্রতি থানায় ও ইউনিয়নে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ দেশের অধিকাংশ মানুষ ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যাবে।’
ছফীউল্লাহর মুখে শুনেছি যে, আমরা আসার পর মাওলানা কামালুদ্দীন জাফরী- যিনি ভোলার বাসিন্দা- এলাকায় এক তাফসীর মাহফিলে গেলে এলাকাবাসী আমার নাম করে বিভিন্ন ফৎওয়া জিজ্ঞেস করলে উনি পরিষ্কার বলেছেন যে, ড. গালিব যা যা বলে গেছেন, সবই ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক। আপনারা ওগুলো মেনে চলবেন। আমিও এখন থেকে ঐ সব ছহীহ মাসআলার উপরে আমল করব, আপনারাও করবেন।’ শুনেছি, জাফরী ছাহেবের নরসিংদী জামে‘আ কাসেমিয়া মাদরাসায় প্রকাশ্যে হাদীছ ভিত্তিক আমল চালু হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
(১৭) কুয়েত : ১৯৯২ সালের ১৯-২২ শে জানুয়ারী সদ্য সমাপ্ত ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কুয়েতের বিরুদ্ধে ইরাকী সরকারের বর্বর আচরণের প্রতিবাদে আয়োজিত সম্মেলনে কুয়েত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে আমরা সাতজন গমন করি। ৩৫টি দেশের ৪২৬ জন প্রতিনিধির বিরাট সম্মেলন। সম্মেলনের ফাঁকে কুয়েতের আহলেহাদীছ সংগঠনের (ইহয়াউত তুরাছ আল-ইসলামী) নেতৃবৃন্দ তাদের মিলনায়তনে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও সুদান-এর আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দকে এক সম্বর্ধনা সভায় দাওয়াত দেন। ড. বারী স্যার মওজুদ থাকায় আমি নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু মঞ্চে গিয়ে বসার জন্য যখন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি বক্তাদের আহবান করা হল, তখন বাংলাদেশের পক্ষে আমার নাম ঘোষণা করা হল। অথচ আমার কোন প্রস্ত্ততি নেই। ভাগ্য ভাল যে, আমার নাম পড়ল পাঁচ নম্বরে। প্রত্যেকের ১০ মিঃ সময়। কিন্তু কেউই সময় মানতে পারছেন না। ফলে পরিচালকের তাকীদমূলক ঘন্টার ধ্বনি প্রত্যেকের ভাগ্যে জুটল। পাকিস্তানের সাজিদ মীর কেবল ইংরেজীতে বললেন। বাকীরা আরবীতে। আমি ৪০ মিনিট সময় পেয়ে আরবীতে বক্তব্য ঠিক করে ফেললাম মঞ্চে বসেই। তারপর দাঁড়ালাম বুকে বল সঞ্চয় করে। অন্যের ভাষায় তাদের সামনে বক্তৃতার অভিজ্ঞতা তখনও হয়নি। তবুও মনের জোরে বক্তব্য ভালই জমল। অন্তত: দু’বার সমাবেশে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ধ্বনি উঠল। ঠিক সাড়ে নয় মিনিটে বসে গেলাম। তাতে ঘোষকের প্রশংসা পেলাম। আমার পরে নেপালের আব্দুল্লাহর বক্তৃতার পর অনুষ্ঠান শেষ হল। মঞ্চ থেকে নামতেই বিভিন্ন দেশের যুবনেতারা আমাকে ঘিরে ধরল। যুবসংগঠন পরিচালনা পদ্ধতি, দাওয়াতের কৌশল ইত্যাদি নিয়ে তাদের সাথে অনেক কথা হল। দ্বীনী মহববতে আপনজনের মত মিশে গেলাম সবাই একই সুত্রে। অটোগ্রাফ নিল অনেকে।
(১৮) লাহোর, পাকিস্তান : ১৯৯২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর লাহোরের ‘মুরীদকে’ ময়দানে ৫ লক্ষাধিক আহলেহাদীছের মহাসমাবেশে ১৪টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আমার উর্দূ বক্তৃতায় মুহুর্মুহু তাকবীর ধ্বনি আমি আজও শুনতে পাই। মনে পড়ে সেদিন আবেগ মিশ্রিতকন্ঠে বলেছিলাম, তোমরা আজ স্বাধীন পাকিস্তানের নাগরিক। কিন্তু ভারতবর্ষের স্বাধীনতার মূলে বাংগালী আহলেহাদীছ মুসলমানদের রক্ত মিশে আছে। ঐ দেখ এখান থেকে অনতিদূরে মুলকা, সিত্তানা, আস্তমাস্ত, পাঞ্জতার, আম্বেলা, বালাকোটের ধূলি ও মাটিতে সে রক্ত আজও মিশে আছে। তাদের বংশধর অনেকে এখনো এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।- ঐ বক্তৃতার ক্যাসেট তারা দিয়েছিল। বাসায় ছিল। কিন্তু এখন ওটা খুঁজে পাচ্ছি না। সকল ক্যাসেটের প্লাস্টিকের কভারটা দেখছি। জনৈক চীনা প্রতিনিধি আমাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে অনেক কথা বললেন। তার একটি কথা ছিল, ‘বাংলাদেশে এমন আলেমও আছেন যারা এত ভাষায় কথা বলতে পারেন?’।
(১৯) কলম্বো, শ্রীলংকা : ১৯৯৩-এর ২৬-৩১শে আগস্ট কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এশীয় দেশসমূহের ১ম ইসলামী সম্মেলন, সঊদী আরব ও শ্রীলংকা সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। শমশের মুবীন চৌধুরী তখন ওখানে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার। ওনার বড়ভাই বযলুল মুবীন চৌধুরী তখন রাবি-র প্রফেসর। সে সুবাদে সৌহার্দ্যের সাথে আমার সাথে অনেক কথা হল। শেষদিন বাকী দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখবেন। মঞ্চ থেকে দেশের নাম ধরে বক্তার নাম চাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে মাওলানা এ কে এম ইউসুফ, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আমার দু’পাশে বসা। আমাকে দু’জনেই নাম দেবার জন্য বারবার তাকীদ করছেন। বললাম, আপনারা নেতা থাকতে আমি কেন? অবশেষে আমাকেই নাম দিতে হল। আরবী, ইংরেজী অথবা ফ্রেঞ্চ- তিনটির যে কোন একটি ভাষায় বলতে হবে। আমি আরবীতে বক্তব্য রাখলাম, ‘আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ইসলামকে পেশ করার কৌশল’-এর উপর। স্বত প্রস্ত্ততির উপরই বিষয়বস্ত্ত ফুটিয়ে তুলতে হল। আলহামদুলিল্লাহ দেশের মান বাঁচল। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট জয়বর্ধনে, স্পীকার হানুফা মুহাম্মাদ হানুফা, মালদ্বীপের বিচারমন্ত্রী, কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, সঊদী আরবের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ড. তুর্কী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনের দাওয়াতপত্রে আমার পরিচিতি ছিল- ‘আমীন, জমঈয়তে শুববানে আহলেহাদীছ বাংলাদেশ’। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সংগঠনের এই স্বীকৃতি আমার জন্য ছিল পরম তৃপ্তির ব্যাপার। এ সম্মেলনে ড. আব্দুল বারীর পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসাবে অধ্যাপক শামসুল আলমও এসেছিলেন। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে তিনিও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
(২০) দুবাই, আরব আমিরাত : ১৯৯৯-এর ডিসেম্বরে দুবাইয়ের এক মসজিদে রাজশাহীর সেলিম ছাহেবের বড় ভাইয়ের আমন্ত্রণে গিয়ে সেখানে তারাবীহ জামা‘আতের পর পরে হঠাৎ করে এক বক্তৃতা করতে হয়েছিল উর্দূতে মুছল্লীদের দাবী মতে ২৫ মিনিট। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মুছল্লীরা বুঝতেই পারেনি যে আমি বাঙ্গালী। বক্তৃতার শেষভাগে আমি নিজের পরিচয় দিয়ে নোয়াখালীর একজন মাত্র বাঙ্গালীকে পেলাম। (চলবে)