জীবন থেকে নেয়া
আবু বকর সালাফী
খাদীজা আমাতুল্লাহ 9132 বার পঠিত
খাদীজা আমাতুল্লাহ
মারাওয়ী সিটি, মিন্দানাও
পূর্বপ্রাচ্যের সর্ব দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের কোলে অবস্থিত ৭১০৭টি দ্বীপপুঞ্জের দেশ ফিলিপাইন। উত্তর থেকে দক্ষিণে লম্ব আকৃতির এই দেশটির দ্বীপপুঞ্জগুলো মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত। উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জের নাম লুজন। এটাই দেশটির সবচেয়ে বড় দ্বীপপুঞ্জ, যেখানে রাজধানী ম্যানিলা অবস্থিত। মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ভিসায়াস। আর দক্ষিণাঞ্চলে মিন্দানাও। ষোড়শ শতকে বৃটিশ, পর্তুগিজ, জাপানিজ ঔপনিবেশিকরা এ দেশের বুকে পদার্পণের আগে দেশটি একটি মুসলিম দেশই ছিল। ঔপনিবেশিকদের সাথে আসা খৃষ্টান মিশনারীদের প্রভাবে ধীরে ধীরে দেশটি মুসলিম পরিচিতি হারিয়ে ফেলল। কিন্তু একটি অঞ্চল এই প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ফিলিপাইনের দক্ষিণাংশ জুড়ে প্রায় ১ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের এই বিশাল অঞ্চলই হল মিন্দানাও দ্বীপ। মিন্দানাওবাসীদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষায় তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন সে যাত্রায় তাদের রক্ষা করে এবং মুসলিম পরিচিতি নিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দেয়। এই কারণে আজও এখানকার অমুসলিমরা মুসলিমদের যথেষ্ট সমীহ করে এই ভেবে যে, তারা শক্তিশালী ও বিশ্বাসপরায়ণ। আমার মনে পড়ে আমার কাজিনরা যখন লুজন বা ম্যানিলায় লেখাপড়া করত (সে সময় খুব কমসংখ্যক মুসলিম সেখানে পড়তে যেত), তখন তাদের শিক্ষকরা বলত যে, আমরা মিন্দানাওয়ের মুসলিমদের নিয়ে খুব গর্বিত। কেননা তারা ঔপনিবেশিকদের হাতে নিজেদের ভাগ্য ছেড়ে দেয়নি। তাদের স্কুলে এরূপ নিয়ম ছিল যে, আইডি কার্ড বা ইউনিফর্ম না থাকলে কোন ছাত্রকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হত না। অথচ দেখা গেছে আমার কাজিনদের কেউ ভুলবশত কোনদিন আইডি বা ইউনিফর্ম ছেড়ে আসলে তাদেরকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে, যদিও একই সময়ে অন্যদের দেয়া হচ্ছে না। এটা এই কারণে যে, তারা মুসলিম।
ফিলিপাইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এই মিন্দানাও। ফিলিপাইনের অধিকাংশ মুসলিমই এখানে বাস করে। ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলকে বলা হয় ‘মরোদের ভূখন্ড’। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মরো শব্দটির উৎপত্তি স্প্যানিশদের মাধ্যমে। এ দেশে পা দেওয়ার পর যখন তারা এখানকার অধিবাসীদের মুসলিম হিসাবে পেল, তখন তাদেরকে মুর বলা শুরু করল, যেমনভাবে উত্তর আফ্রিকার মুসলিমদের (মরক্কোর অধিবাসী) তারা মুর বলত। মিন্দানাও ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, মূল্যবান খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় বর্তমান বা পূর্ববর্তী কোন সরকারই মিন্দানাওয়ের মুসলিম স্বাধীনতাকামী সংগঠন ‘মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্র্ন্ট’ (এমআইএলএফ)-এর সাথে কর্তৃত্বের প্রশ্নে কোন চুক্তিতে সম্মত হয়নি। কেননা প্রেসিডেন্ট ও জনগণ ভাল করেই জানে যে, মিন্দানাও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার অর্থ লুজন বা ভিসায়াসকেও হারানো।
এদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করছে। খৃষ্টানরা আমাদের বিশ্বাস, আমাদের ধর্মকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। একসময় তারা মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও খারাপ লোক হিসাবে দেখত। ফিলিপ্পিনো সেনাদের সাথে মরো মুজাহিদদের যুদ্ধ সম্পর্কে রেডিও-টিভিতে যেসব গুজব নিয়মিত ছড়ানো হয় যে, তারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে, তা দিয়ে মুসলমানদের বিচার করত। যদিও এসব মোটেই সত্য নয়। আর যদি হত্যার কাহিনী সত্যও হয় তবে তার কারণ ছিল নিহতরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। কিন্তু যেসব অমুসলিম শিক্ষিত ও মিন্দানাও-এর মুসলিমদের সাথে বসবাস করে আসছে তারা জানে প্রকৃতঅর্থে মুসলমানরা কেমন। তারা আমাদের ভালবাসে, আমাদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় এমনকি অনেকে ধর্মান্তরিতও হয়। তবে আমার খুবই অপছন্দের বিষয় হল নির্বাচন প্রথা। বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত স্থানে নির্বাচন একটি বড় সমস্যা ও ব্যর্থতার কারণ। কেননা এখানে মুসলমানের বিরুদ্ধেই মুসলমানের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। যখন নির্বাচন এগিয়ে আসে তখন অনেক পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, দলসমূহ পরস্পর বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হয় এবং নির্বাচন শেষে শত্রুতে পরিণত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলামানের ভাই’। কিন্তু নির্বাচনে এই ভ্রাতৃত্বের কোন নজীর পাওয়া যায় না। এই তো গতবছরই ম্যাগুইন্দানাও প্রদেশে একজন প্রার্থী অপর প্রার্থীকে সপরিবারে হত্যা করল। একই সাথে সাধারণ মানুষ এমনকি সাংবাদিকদের পর্যন্ত তারা হত্যা করেছিল। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল হত্যাকারী ও নিহত সকলেই মুসলিম। এ কারণে মুসলমানদের নামে খারাপ রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। আরো লজ্জাজনক যে, সেই প্রার্থী এ ঘটনায় দোষ চাপায় মরো মুজাহিদদের উপর। অথচ সকলেই জানে সে মিথ্যা বলছে। ক্ষণস্থায়ী পদলোভের জন্য তারা একে অন্যকে হত্যা করতে মোটেও দ্বিধা করছে না। সামান্য অর্থের বিনিময়ে মানুষ নিজেদের ভোট বিক্রি করছে। খুব কম লোককেই দেখি যারা আল্লাহর ভয়ে এসব খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকছে। সবই ঘটছে এই নির্বাচনের কারণে। আমার খুব নিকট আত্মীয়রা এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। আমি বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিৎ। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনকে কেবল ১০০% নয় বরং সীমাহীন ঘৃণা করি।
এই মিন্দানাওয়েরই পশ্চিম অংশে অবস্থিত আমার জন্মস্থান মারাওয়ী সিটি। এই শহরটি ফিলিপাইনের একমাত্র ইসলামী শহর। আল্লাহর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে, আমাদেরকে তিনি এমন একটি হরদ দান করেছেন যা ফিলিপাইনের সবচেয়ে স্বচ্ছ জলের হরদ। পিতার কাছে শুনেছি, এই শহর একসময় খুব সুন্দর ও পরিস্কার ছিল। মুসলিমরা ছিল খুবই রক্ষণশীল। মহিলারা কেবলমাত্র বাড়িতে ও স্কুলে থাকত। তারা স্কুল থেকে এসে বাড়িতেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করত। বাইরে কোথাও কাজে যেত না। আমাদের নেতারাও ছিলেন শহরবাসীদের উপর খুব দায়িত্বপরায়ণ। কিন্তু আমার মনে হয় সেই সৌন্দর্য, সেই ইসলামিক পরিবেশ আজ হারিয়ে গেছে। আমার মনে পড়ে, স্কুল-কলেজে আমার শিক্ষকরা বলতেন, মারাওয়ী সিটিকে এখন আর ইসলামিক সিটি বলা যায় না। সত্যিকার ইসলামী দেশ হল মালয়েশিয়া, সঊদী আরব। তারা বলতেন, যদি এ সিটি ছেড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকত তবে তারা সেটা হাতছাড়া করতেন না। মিন্দানাওয়ের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা আমার সহপাঠীরা বলত তারা এখানে বড় আশা করে এসেছে। কারণ এটি ফিলিপাইনের একমাত্র ইসলামী শহর। কিন্তু এখানকার অবস্থা দেখে তারা হতাশ হয়ে বলে এটি তো ইসলামী শহর নয়। আমি এজন্য আমার আমাদের শাসকগোষ্ঠীকে দোষারোপ করব। সাধারণ জনগণ ঠিকমতই ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভূখন্ড ধর্মীয়-অর্থনৈতিক সবদিক থেকেই অনুন্নতই রয়ে গেছে। আল্লাহই জানেন তারা এসব ট্যাক্সের টাকা কি করছে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বায়িত্ববান ও তাক্বওয়াশীল শাসক দান করুন এবং আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন।
আমার ইউনিভার্সিটির নাম মিন্দানাও স্টেট ইউনিভার্সিটি (এমএসইউ)। মারাওয়ী সিটিতেই এর অবস্থান। পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাড়ি থেকে খুব কাছে অবস্থিত। এখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। এখানেই আমি কিন্ডারগার্টেন থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ আমার খুবই ভাল লাগে। পরিস্কার বাতাস, অনুকূল আবহাওয়া আর চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা ছিমছাম ক্যাম্পাস। মিন্দানাওয়ের অধিকাংশ ছাত্রই ফিলিপাইনের অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাসের অনুসারীদের। মিন্দানাওয়ের বিভিন্ন প্রদেশ ছাড়াও ভিসায়াস ও লুজন থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে। মুসলিম, খৃষ্টান, নাস্তিক নানা কালচারের স্টুডেন্ট এখানে মিলেমিশে এবং পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই চলে। আমি লক্ষ্য করেছি এখানকার অনেক মুসলিম স্টুডেন্ট যেমন পোশাক-আশাকে খৃষ্টানদের দ্বারা প্রভাবিত, তেমনি অনেক খৃষ্টান স্টুডেন্টও মুসলিমদের দ্বারা প্রভাবিত। তারা ঢিলেঢালা পোষাক, লম্বা পাজামা এমনকি অনেকে বোরকাও পরিধান করে মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ। প্রতি রামাযানে আমি দেখেছি তারা আমাদের সামনে পানাহার করতে লজ্জাবোধ করে। আমরা আশে-পাশে না থাকলে তখন তারা আহার সেরে নেয়। এতদসত্ত্বেও যে বিষয়টি পীড়া দেয় তা হল, ইসলামিক সিটির এই বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামের চর্চা নেই বললেই চলে। রামাযান মাসে এখানে মাত্র ৪ দিনের ছুটি দেয়া হয়। ফলে কুরআন পড়া বা রামাযানের বিশেষ ইবাদত পালনের সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু যখন ক্রিসমাস আসে সুবহানাল্লাহ...দুই থেকে তিন সপ্তাহ টানা ক্লাস হয় না, পুরোটাই ভ্যাকেশন। যেন তারা আমাদেরকে ঈসা (আঃ)-এর জন্মদিবস পালনের জন্য বিশেষ সুযোগ করে দিচ্ছে। এমনিতে ছালাতের সময়ও এখানে ক্লাস চলতে থাকে। ক্লাস টাইমে ছালাতে যাওয়াও নিষেধ। কিন্তু খৃষ্টানদের জন্য প্রার্থনায় কোন বাধা নেই। শুক্রবারে রীতিমত ক্লাস হলেও যথারীতি রবিবারে কোন ক্লাস নেই। আমরা মুসলিম স্টুডেন্টরাও যেন নিজেদেরকে ছালাতবিহীনভাবে থাকায় অভ্যস্ত করে ফেলেছি। কেননা আমাদের তো ক্লাস বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা প্রায় সকলেই মুসলিম।
এখানকার মুসলিম তরুণ প্রজন্ম যে রোগটিতে বিশেষভাবে ভুগছে তা হল নিজ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা। তারা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্পর্কে যতটুকু জানে আমাদের রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বা ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে তার ছিটেফোটিও জানে না। তারা কুরআন বা হাদীছের চেয়ে হারাম গান-বাজনার সাথেই বেশি পরিচিত। তারা বিধর্মীদের পোশাক-আশাক অনুকরণে আসক্ত। পশ্চিমা শিক্ষা-দীক্ষা লাভের জন্য তারা বিস্তর সময় ব্যয় করলেও যে জ্ঞানটি অপরিহার্য অর্থাৎ ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। আমি মিন্দানাও ইউনিভার্সিটির মুসলিম স্টুডেন্টদের অবস্থা এমনটাই দেখি। আমার মনে আছে আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী ছিলাম, দেখতাম আমার খৃষ্টান সহপাঠীরা আরবী বিষয়ে পাশ করতে পারলেও মুসলিমরা পাশ করতে পারত না। কেন? এজন্য পিতামাতারাই মূলত দায়ী। যদি সন্তানরা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনে আগ্রহী না হয় তবে তারা কিছু মনে করে না বা তাদেরকে কোন চাপ দেয় না। কোন কোন পিতা-মাতা সন্তানদেরকে পশ্চিমা শিক্ষা গ্রহণে নির্দেশ দেয় যেন তারা কর্মজীবনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, নার্স প্রভৃতি হতে পারে। যদি কোন শিশু পড়াশোনা না করে অথবা স্কুলে ক্লাসে উত্তীর্ণ না হতে পারে তাহলে তারা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে কিন্তু তারা যদি ইসলামী জ্ঞানার্জনে অলসতা দেখায় তাতে তাদের কিছুই যেন যায় আসে না। সকল পিতা-মাতার অবস্থায় যে এমন তা নয়, তবে অনেকেই বা অধিকাংশই এই রোগে আক্রান্ত। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল জনগণ জানে না বা গুরুত্বই দেয় না বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের দুরবস্থার বিষয়ে। আমার এক আন্টি বলতেন, আমাদেরকে আমাদের নিজেদের ব্যাপারেই আগে মনোযোগ দিতে হবে। কেননা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অবস্থাই খুব ধ্বংসাত্মক।
এ সিটির যেদিকেই তাঁকানো যায় দেখা যাবে ফিৎনার বিস্তার। আধুনিক প্রযুক্তি যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা এর মধ্যে এমনভাবে ডুবে থাকছে যে আল্লাহর স্মরণে তারা খুব কমই সময় দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব প্রযুক্তির ফিৎনা আর শহরের জীবনের ফিৎনা ছেড়ে দূরে পালিয়ে বাঁচি।
অবশ্য আমি যে মাদরাসায় ইসলামী জ্ঞানার্জনের জন্য যাই সেখানকার চিত্র ভিন্ন। এখানে আমি আমার ক্লাসমেটদের সাথে খুব স্বাচ্ছন্দপূর্ণ প্রশান্তিময় সময় উপভোগ করি। অধিকাংশ সময় আমরা এখানে ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করি ও আল্লাহর প্রশংসায় সময় কাটাই। ক্লাসমেটরা আল্লাহভীরু এবং তারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে। আমি আমার সেসব সহপাঠীদের প্রশংসা করি যারা তাদের পিতা-মাতাকে জোর করে রাজি করিয়ে জেনারেল স্কুল পরিত্যাগ করে মাদরাসায় এসেছে ইসলামী জ্ঞানার্জনের জন্য। এমনকি শুধু আরবী ভাষা শিক্ষা, কুরআন মাজীদ হিফয করার জন্য তারা অন্য সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে। অনেকেই রয়েছে যারা সঊদী আরব, পাকিস্তান, মিসর, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইসলামী ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গেছে। আমারও স্বপ্ন রয়েছে কোন একদিন আমিও তাদের মত ইসলামী শিক্ষা অর্জনের জন্য সঊদী আরবে যাব।
আমার সিটিতে বেশকিছু ইসলামী দা‘ওয়াহ সংস্থাও রয়েছে যারা সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কার্যক্রম যথাসাধ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন ‘হায়আতুল আলামিয়া লি তাহফীযিল কুরআনিল কারীম’, ‘সেন্টার ফর মুসলিম ইউথ উমেন অক্সিলারী সার্ভিসেস (CMYWAS) ‘লীগ অফ মুসলিম ইউথ মুভমেন্ট’, ‘ইউথ পীস এডভোকেট’, ‘ইনসান ইসলামিক এসেম্বলি’, ‘আল হুদূদ ইসলামিক একাডেমী’, ‘রাসায়েলে নূর ইন্সটিটিউট ফিলিপাইন’, ‘আল উখুওয়া’ ইত্যাদি। আল্লাহ তাঁর দ্বীনের এসব মুজাহিদদেরকে সফলতা দান করুন এবং তাদের মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করুন। আমাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদাউসে একত্রিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন!!