সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9265 বার পঠিত
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলীর পতন
সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এখন এক উত্তাল পরিবেশ। গত ১৭ই ডিসেম্বর ২০১০ পুলিশী নির্যাতনের শিকার মোহাম্মাদ বোয়াজিজি নামক এক সবজী ফেরীওয়ালার আত্মাহুতি তিউনীসীয় জনগণকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে তোলে যে, সে ক্ষোভের আগুনে ছারখার হয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের প্রতাপশালী শাসক যায়নুল আবেদীন বেন আলী ক্ষমতা হারান এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। উল্লেখ্য, দেশটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ চলমান বেকারত্ব ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছিল। এ অবস্থা পরিবর্তনের তরুণ ছাত্রসমাজ বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। সরকার তা কঠোর হস্তে মোকাবিলা করায় ছাত্রসমাজ আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরিশেষে বুয়াজিজির ঘটনা জনমনে রোষের দাবানল জ্বালিয়ে দেয়। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কঠোর দমননীতি অবলম্বন করেও কোনভাবেই সে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি। এমতাবস্থায় প্রেসিডেন্টের আত্মীয়-স্বজন বিপদ বুঝে গোপনে দেশত্যাগ করতে শুরু করে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীও প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে চরম বেকায়দায় পড়েন বেন আলী। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি গত ১৪ই জানুয়ারী মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেন এবং দেশে জরুরী অবস্থা জারী করেন। একই দিনে তিনি গোপনে তড়িঘড়ি করে দেশত্যাগ করে প্রথমে ফ্রান্সে অবতরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় সঊদী আরবের জেদ্দা নগরীতে অবতরণ করে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। বর্তমানে সে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ ঘানৌচি। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সেখানে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন। যদিও ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধেও সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
মিসরের তীব্র গণবিপ্লবের মুখে নতি স্বীকারে বাধ্য হলেন
লৌহশাসক হোসনী মোবারক
তিউনিসিয়ার গণবিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ মিসরেও গত জানুয়ারী মাসের ২৫ তারিখ ঘোষণা করা হয় Day of angar বা ‘ক্রোধের দিবস’। বিশেষত যুব সংগঠনগুলোই ছিল এ আন্দোলনের প্রধান উদ্গাতা। ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি মাধ্যম ব্যবহার করে অতি স্বত সময়ে তারা আন্দালনকে সুসংগঠিত করে ফেলে। প্রথমে অনেকটা অপ্রস্ত্ততভাবে আন্দোলন শুরু হলেও শীঘ্রই তা অবিশ্বাস্যরকম এক শক্তিশালী গণবিপ্লবে রূপ নেয়। কায়রো শহরের লিবারেশন স্কয়ার পরণিত হয় সরকার বিরোধী আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে। হতকচিত মোবারক সরকার রাতারাতি কার্ফূ জারি করে আন্দোলনকারীদেরকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সাথে তীব্র সংঘর্ষে হতাহত হয় উভয় পক্ষই। ২৮শে জানুয়ারী ‘ক্রোধের জুম‘আ’ দিবস ঘোষণা করে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। মুসলিম ব্রাদারহুড এই দিনের উদ্দ্যোগকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নোবেল বিজয়ী পরমাণুবিজ্ঞানী মোহাম্মাদ আল-বারাদেই আন্দোলনকে সমর্থন দেওয়ার জন্য স্বশরীরে উপস্থিতির ঘোষণা দেন। জুম‘আর ছালাতের পরপরই লক্ষাধিক মানুষের মিছিলে তাহরীর স্কয়ার উত্তাল হয়ে পড়ে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় মোবারকের এনডিপি পার্টির সদর দফতর। বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয় জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ। প্রতিদিনই হতাহত হয় শত শত লোক। দেশের ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্যাপক ধরপাকড় করা হয় ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। ভেঙ্গে পড়ে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। পুলিশের গুলিতে কয়েকদিনে হতাহত হয় সহস্রাধিক জনতা। ১লা ফেব্রুয়ারী শুধু কায়রোর তাহরীর স্কয়ারেই জড়ো হয় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। সারাদেশেও একইভাবে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এইদিন রাত ১১টায় হোসনী মোবারক জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি পুলিশের বাড়াবাড়িতে বহু লোকের প্রাণহানী হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং প্রতিবাদীদের দাবী মেনে রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। আর জানিয়ে দেন যে, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং তিনি সে নির্বাচনে আর প্রার্থী হবেন না। বিদ্রোহীরা স্বাভাবিকভাবেই এ আশ্বাস মেনে নেয়নি। পরদিন ২রা ফেব্রুয়ারী হঠাৎ করে মোবারক সমর্থক নামধারী এনডিপি পার্টির ভাড়াকৃত কয়েক হাজার লোক পুলিশী সহযোগিতায় তাহরীর স্কয়ারে অবস্থানরত বিদ্রোহীদের উপর ঘোড়া ও উটে আরোহন করে পাল্টা হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে। হতাহত হয় উভয় পক্ষের লোকজন। অতঃপর ৪ঠা ফ্রেব্রুয়ারী ঘোষণা করা হয় ‘বিদায়ী জুম‘আ’ দিবস। এদিনও তাহরীর স্কয়ারে ২০ লক্ষাধিক মানুষ জুম‘আর ছালাত আদায় করে। দিনরাত সর্বক্ষণ তারা সেখানে অবস্থান করতে থাকে। পরবর্তী সপ্তাহেও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। প্রতিটি দিন অর্থবহ করে তোলার জন্য বিপ্লবীরা দিনগুলোকে নানা নামে আখ্যায়িত করে। অবশেষে ১০ই ফেব্রুয়ারী ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারক পদত্যাগ করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু তাহরীর স্কয়ারে অবস্থানরত উৎফুল্ল ৩০ লক্ষ জনতা টেলিভিশনে দেয়া হোসনী মোবারকের ভাষণে হতচকিয়ে যায়, যখন তিনি পুনরায় ক্ষমতায় থাকার জোরালো ঘোষণা দেন। বিক্ষুব্ধ জনতা পরদিন পুনরায় বিরাট বিক্ষোভের প্রস্ত্ততি নেয়া শুরু করলে অবশেষে ১১ই ফেব্রুয়ারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলাইমান ঘোষণা দেন যে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্ষদ ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। ১২ই ফেব্রুয়ারী কার্ফূ প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে, তারা ইসরাঈলের সাথে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি শ্রদ্ধার সাথেই পালন করবে। এভাবে তিন শতাধিক লোকের রক্তস্নাত মাত্র আঠারো দিনের আন্দোলনে মিসরের ৩০ বছরের শাসক লৌহমানব খ্যাত হোসনী মোবারকের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
বিভক্ত হয়ে গেল আফ্রিকার বৃহত্তম মুসলিম দেশ সুদান
সুদানের দারফুর অঞ্চলে দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ গৃহযুদ্ধ চলার পর ৮ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ই জানুয়ারী থেকে ১৫ই জানুয়ারী পর্যন্ত। খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রচুর খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ সুদানের দক্ষিণাঞ্চলকে স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠাদানের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে এই গণভোটের আয়োজন করে সুদান সরকার। অতঃপর গত ৭ই ফেব্রুয়ারী গণভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায় ৯৮.৮৩% ভোটার দেশ বিভক্তির পক্ষে রায় দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশীর এই ফলাফল মেনে নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরীর জন্য আগামী ৯ই জুলাই পর্যন্ত দেশটির চূড়ান্ত স্বাধীনতা ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশটির সম্ভাব্য নাম হবে ‘রিপাবলিক অফ সাউথ সুদান’। এর মাধ্যমে ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতালাভের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশটি উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হয়ে গেল।
নওমুসলিম বৃটিশের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে
বৃটেনের ‘ফেইথ ম্যাটার’ একটি সংস্থা পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বৃটেনে নওমুসলিম বৃটিশের সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশী। গত বারো মাসেই সেখানে ইসলাম গ্রহণ করেছে ৫২০০ জন বৃটিশ। যাদের মধ্যে ১৪০০ জন রাজধানী লন্ডনের অধিবাসী। এদের দুই-তৃতীয়াংশই আবার মহিলা যাদের মধ্যে ৭০% শ্বেতাঙ্গ এবং তাদের গড় বয়স ২৭ বছর। নারীদের প্রতি ১০ জনে ৯ জনই বলেছেন, ইসলাম গ্রহণ করে তারা বোরকা ও স্কার্ফের মত রক্ষণশীল পোষাক পরিধান করা শুরু করেছেন। অর্ধেকের বেশীই বলেছেন যে, ইসলাম গ্রহণের কারণে তারা পরিবার ও সমাজ থেকে নেতিবাচক আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন।