সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 10833 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ-

‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল সর্বদাই থাকা প্রয়োজন যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, ন্যায়ের আদেশ করবে এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান ১০৪)

২- كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ -

‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের জন্য তোমাদের আবির্ভাব। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে’ (আলে ইমরান ১১০)

৩- لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوْا مِنْ بَنِيْ إِسْرَائيْلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ كَانُوْا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوْهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ-

‘বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফির ছিল, তাদের উপর লা‘নত করা হয়েছিল দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখে; এ লা‘নত এ কারণে করা হয়েছিল যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল। তারা যে মন্দ ও গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা পরস্পরকে নিষেধ করত না; বাস্তবিকই তাদের কাজ ছিল অত্যন্ত গর্হিত’ (মায়েদাহ ৭৮-৭৯)

4- وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ -

‘এবং বলুন! সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব যার ইচ্ছা বিশ্বাস স্থাপন করুক আর যার ইচ্ছা অমান্য করুক’ (ইউনুস ১০৯)।

৫- خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجاهِلِيْنَ-

‘আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহিলদের কাছ থেকে দূরে সরে থাক’ (আ‘রাফ ১৯৯)। 

৬-  وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِناتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ-

‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা কল্যাণের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৭১)

৭- التَّائِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّائِحُوَنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْآمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ-

‘তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশদানকারী ও মন্দকাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে (তওবা ১১২) ।

৯- إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسانِ وَإِيْتَاءِ ذِي الْقُرْبى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ-

‘নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ’ (নাহল ৯০)

১০- الَّذِيْنَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوْا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكاةَ وَأَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عاقِبَةُ الْأُمُوْرِ-

‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা ছালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত’ (হজ্জ ৪১)

11- يا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلاَةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلى ما أَصابَكَ إِنَّ ذلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ-

‘হে বৎস, ছালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ কর এবং বিপদ-আপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ (লোকমান ১৭)

হাদীছে নববী থেকে :

12- عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَالَّذِيْ نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ- رواهُ الترمذيُّ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট দো‘আ করবে কিন্তু তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে না’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০, সনদ হাসান)

13-عَنْ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنْ أَبِيْهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "إِنَّكُمْ مَفْتُوْحٌ عَلَيْكُمْ مَنْصُوْرُوْنَ وَمُصِيْبُوْنَ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَتَّقِ اللهَ وَلْيَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَلْيَنْهَ عَنْ الْمُنْكَرِ وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ "- رواهُ أَبُو داودَ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদেরকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সাহায্য করা হবে, তোমরা (শত্রুদের) অনেক সম্পদ লাভ করবে এবং তোমাদের জন্য (বহু শহর ও দেশ) বিজিত হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ সে সময়টি পাবে, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। মানুষকে হেদায়েতের দিকে আহবান করে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/৫৯৩০, সনদ ছহীহ)।

14- عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  تَبَسُّمُكَ فِىْ وَجْهِ أَخِيْكَ لَكَ صَدَقَةٌ وَأَمْرُكَ بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهْيُكَ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِىْ أَرْضِ الضَّلاَلِ لَكَ صَدَقَةٌ- رواهُ الترمذيُّ

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার মুচকি হাস্যমুখ করাও ছাদাকাস্বরূপ, কাউকে সৎকাজের উপদেশ দেয়াটাও একটা দান, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করাও একটা দান এবং পথ হারানোর মত স্থানে কাউকে পথ দেখানোও একটা দান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৯১১,সনদ ছহীহ)

15- عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ "مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ" - رواهُ مسلمٌ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, সে যেন তা স্বহস্তে পরিবর্তন করে দেয়, যদি সে ক্ষমতা না থাকে তবে মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করবে, আর যদি সে ক্ষমতাও না থাকে তবে নিজের অন্তরে তাকে ঘৃণা করবে। আর এটাই হল ঈমানের দুর্বলতম স্তর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/ ৫১৩৭)

16- عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا ظَالِمًا فَلَمْ يَأْخُذُوْا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللهُ بِعِقَابٍ مِنْهُ- رواهُ الترمذيُّ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় মানুষ যখন কোন যালিম ব্যক্তিকে দেখে, অতঃপর তারা তার হাতকে যুলুম থেকে বিরত না রাখে, হয়তবা অচিরেই আল্লাহ আমভাবে তাদের সকলের উপর শাস্তি চাপিয়ে দিতে পারেন’ (তিরমিযী হা/১৯৫৬, সনদ ছহীহ)

17- عَنْ تَمِيْمٍ الدَّارِىِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اَلدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ، الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ، الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ. قَالُوْا : لِمَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِنَبِيِّهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَلِعَامَّتِهِمْ. رواهُ مسلمٌ

রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘নছীহত করাই দ্বীন’। তিনবার একথা বলার পর ছাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, কার জন্য হে রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলমানদের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬)

18- عَنْ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسّلَّمَ  قَالَ مَثَلُ الْقَائِمِ عَلَى حُدُوْدِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيْهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ اسْتَهَمُوْا عَلَى سَفِيْنَةٍ، فَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَعْلاَهَا وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، فَكَانَ الَّذِيْنَ فِىْ أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوْا مِنَ الْمَاءِ مَرُّوْا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَقَالُوْا لَوْ أَنَّا خَرَقْنَا فِىْ نَصِيْبِنَا خَرْقًا، وَلَمْ نُؤْذِ مَنْ فَوْقَنَا. فَإِنْ يَتْرُكُوْهُمْ وَمَا أَرَادُوْا هَلَكُوْا جَمِيْعًا، وَإِنْ أَخَذُوْا عَلَى أَيْدِيْهِمْ نَجَوْا وَنَجَوْا جَمِيْعًا- رواهُ البخاريُّ

রাসূল (ছাঃ) বলেন,  ‘যে মহান আল্লাহর সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমালংঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা লটারীর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল উপরতলায়, কেউ নীচতলায়। নীচতলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে উপরতলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচতলার লোকেরা বলল, উপরতলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নিই (তাহলে ভাল হতো)। এমতাবস্থায় উপরতলাবাসীরা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে) তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে’ (বুখারী হা/২৪০৩)

19- عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الْجِهَادِ كَلِمَةَ عَدْلٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ- رواهُ أَبُو داودَ والترمذيُّ

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অত্যাচারী, যালেম শাসকের সম্মুখে হক্ব কথা বলাই হল উত্তম জিহাদ’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৭০৫, সনদ ছহীহ)

20- عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : بَايَعْنَا رَسُوُلَ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أنْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ أيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ فِيْ اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট থেকে এ মর্মে বায়‘আত করেছিলাম যে, আমরা আমীরের আদেশ শুনব ও মেনে চলব....যেখানেই থাকি সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলার ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করব না’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৬)

বিদ্বানদের কথা :

  1. সুফিয়ান ছাওরী (রঃ) বলেন, সৎকাজের নির্দেশ এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার কাজটি যথার্থভাবে পালন করতে পারে না তিন শ্রেণীর লোক ব্যতীত; এক- সে ব্যক্তি যে সৎকাজের নির্দেশদানে সহনশীল থাকে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধেও সহনশীল থাকে, দুই- সে ব্যক্তি যে এ দু’টি দায়িত্বপালনে ন্যায়বিচারকের ভূমিকায় থাকে, তিন- সে ব্যক্তি যে আদেশ এবং নিষেধের বিষয়বস্ত্ত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখে’ (আল-খাল্লাল, আল আমরু বিল মা‘রূফ ওয়ান নাহী আনিল মুনকার, পৃ: ৪৬)
  2. উম্মুদ দারদা (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে সদুপদেশ দেয় গোপনে; সে যেন তাকে সম্মানিত করল, আর যে ব্যক্তি কাউকে ভুল ধরিয়ে দেয় জনসম্মুখে; সে যেন তাকে অপমানিত করল (ঐ, পৃ: ৪৯)
  3. জনৈক আলেম তার সন্তানকে লক্ষ্য করে বলেন, যদি কেউ সৎকাজের উপদেশ দিতে আগ্রহী হয়, তার উচিৎ হবে স্বীয় অন্তরকে ছবরে অভ্যস্ত করা এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদান প্রাপ্তির দৃঢ়বিশ্বাস থাকা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, সে বিপদ বা কষ্টের অনুভূতি থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহ তাকে যালিমদের আরোপিত অধিকাংশ বিপদ থেকে রক্ষা করেন- তাদের ইখলাছ, সদিচ্ছা, আল্লাহর উপর নির্ভরতা, আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের প্রতিজ্ঞার বরকতে (ইবনুন নুহাস, তানবীহুল গাফিলীন, পৃ:৪৩)
  1. সুফিয়ান ছাওরী বলেন, তুমি যখন মানুষকে সৎকাজের উপদেশ দাও তখন মু’মিনের পীঠ শক্তিশালী হয়, আর যখন তুমি মন্দ, অকল্যাণকর কাজ থেকে নিষেধ কর তখন মুনাফিকের নাক যেন ধূলামলিন হয়ে যায় (আল-খাল্লাল, আল আমরু বিল মা‘রূফ ওয়ান নাহী আনিল মুনকার, পৃ: ৪৬)

সারবস্ত্ত

  1. সৎকাজের নির্দেশ, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা মানুষের ঈমানের পূর্ণতার পরিচায়ক।
  2. এ দু’টি বিষয় ব্যক্তি ও সমাজ তথা মানবজীবনের নিরাপত্তা এবং সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
  3. মানবজাতির মাঝে কল্যাণ ও পরিশুদ্ধির অনুভূতি জীবিত থাকে এ দু’টি নীতির মাধ্যমে ।
  4. শিষ্টাচার, সদাচরণের চর্চা বৃদ্ধি এবং মন্দ ও অন্যায় আচরণের নিবৃত্তি- এ দু’টি বিষয় ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমেই সম্ভব।
  5. বিবেকের সুস্থতা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জনের জন্য এ দুই নীতি অবলম্বন অত্যাবশ্যক।
  6. মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক হল এ চিরন্তন নীতিদ্বয়- যা আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন।

সর্বোপরি পৃথিবীর সকল আইনের ঊর্ধ্বে নিজস্ব নৈতিকতার প্রহরা সৃষ্টি করা এবং দুনিয়া ও আখিরাতে চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করা- এ নীতিদ্বয় অবলম্বনকারীর জন্য অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়।



আরও