ছাদাক্বাহ
নাজমুল আহসান
ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর 10855 বার পঠিত
ধৈর্য মুমিনের শ্রেষ্ঠতম গুণসমূহের মধ্যে একটি। ধৈর্য অর্থ
সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা, সহ্য বা অপেক্ষা করার ক্ষমতা, ধীরতা, নিস্পৃহতা ও
প্রশান্তি। কুরআন ও হাদীছের পরিভাষায় অন্যায় কাজ হতে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ
করা, বিপদে-আপদে নিজেকে অটল, সুস্থির রাখাকেই ছবর বলে। সুতরাং সর্বাবস্থায়
সংযম অবলম্বন, ইচ্ছাবিরুদ্ধ বিষয়ে ধীর স্থির থাকা, রিপুকে আয়ত্তে রাখা এবং
নফসের উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভই হচ্ছে ছবর।
এই ধরিত্রীর মাঝে জীবন চলার পথে অনেক বিপদাপদ, নানান ধরনের সমস্যা এসে জীবন যাত্রাকে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। কিন্তু সেসব বাধাকে পদদলিত করে, কষ্টের সাগর পাড়ি দিয়ে, কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েই পেঁŠছতে হয় স্বীয় লক্ষ্যস্থানে। কেউ যদি এ সকল সমস্যাকে দুঃসাহসিক মাঝি মাল্লার মত দূরীভূত করতে না পারে, তাহলে তার জীবনাকাশে সোনালী সূর্য়ের উদায়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। নেমে আসে অন্ধকারের গহীন অমানিশা। ফলশ্রুতিতে তার সকল আশা দূরাশায় রূপামত্মরিত হয়। তখনই দৃঢ় মনোবল নিয়ে মহান আল্লাহর উপর আস্থা রেখে ছবরের মাধ্যমে টিকে থাকতে হয়। দিতে ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা। তবেই পাওয়া যায় সফলতা। নিম্নে ধৈর্যের কতিপয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হল।
অতীতে বহু নবী ও রাসূল অত্যাচারিত হয়েও স্বীয় দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব হতে সরে দাঁড়াননি। বরং ছবর করে চালিয়ে গেছেন তাঁদের দাওয়াতী মিশন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বহু নবী এমন ছিলেন, যাঁদের সাথীরা অনেকে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হয়ে তাঁদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আল্লাহর পথে তারা বিপদাপদের মুখোমুখি হয়েছেন, সেজন্য তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়েননি এবং দমেও যাননি। এরূপ ধৈর্যশীলগণকে আল্লাহ পসন্দ করেন’ (আলে ইমরান ১৪৬)।
মানবতার মুক্তির অগ্রদূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ (ছাঃ) তায়েফবাসীকে দাওয়াত দিতে গিয়েও স্বীয় উম্মতের জন্য ধৈর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তায়েফে ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে সেখানে দশ দিন অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু সকলের উত্তর একই ‘তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও’।
ফলে ভগ্ন হৃদয়ে তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করলেন। প্রত্যাবর্তনের পথে যখন তিনি পা বাড়ালেন তখন তাঁকে অপমানিত ও কষ্ট দেয়ার জন্য শিশু-কিশোর ও যুবকদেরকে তাঁর পিছনে লেলিয়ে দেয়া হল। ইত্যবসরে পথের দুই পাশে ভিড় জমে গেল। তারা হাততালি, অশ্রাব্য, অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাঁকে গাল-মন্দ করতে ও পাথর ছুড়ে আঘাত করতে থাকল। আঘাতের ফলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর শরীরে অসংখ্য ক্ষতের সৃষ্টি হ’ল। এমনকি রক্তক্ষরণে তাঁর পাদুকাদ্বয় পায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
তায়েফের হতভাগ্য কিশোর ও যুবকেরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করছিল তখন যায়েদ ইবনু হারেছা (রাঃ) তাঁকে রক্ষার জন্য ঢালের মত কাজ করছিলেন। ফলে তিনিও তাঁর মাথার কয়েকটি স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এভাবে অমানবিক যুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পথ চলতে থাকেন। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত ও রক্তাক্ত অবস্থায় পথ চলতে গিয়ে নবী করীম (ছাঃ) খুবই ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত একটি আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হন। তিনি বাগানে প্রবেশ করলে শত্রুরা ফিরে যায়।
অল্পক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার ফলে কিছুটা সুস্থতা লাভ করলে নবী করীম (ছাঃ) আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দো‘আ করলেন। তাঁর এই দো‘আ ‘দুর্বলদের দো‘আ’ নামে সুপ্রসিদ্ধ। তাঁর দো‘আর একটি কথা থেকে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, তায়েফবাসীর দুর্ব্যবহারে তিনি কতটা ক্ষুদ্ধ এবং তারা ঈমান না আনার কারণে কতটা ব্যথিত হয়েছিলেন।
তিনি দো‘আ করেন এভাবে, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনারই নিকট আমার দুর্বলতা, অপারগতা এবং মানুষের নিকটে আমার কদর না হওয়ার অভিযোগ করছি। হে দয়াময়! আপনিক দুর্বলের প্রভু এবং আমারও প্রভু। আপনি আমাকে কাদের নিকট সোপর্দ করেছেন? এমন কোন অনাত্মীয়ের কাছে কি, যে রূঢ় আচরণ করে? কিংবা শত্রুর নিকটে, যাকে আমার কার্যের মালিক বানিয়েছেন? যদি আপনি আমার উপর রাগান্বিত না হন তবে আমি কোনই পরোয়া করি না, আপনার ক্ষমাই আমার প্রকৃত কাম্য। আমি আপনার মুখমন্ডলের ঐ জ্যোতির আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদ্বারা অন্ধকার আলোকিত হয়েছে এবং ইহলৌকিক-পারলৌকিক কার্যাবলী সঠিক হয়েছে। আপনি যখন আমার প্রতি শাস্তি অবতীর্ণ করবেন, কিংবা ধমক দিবেন সে অবস্থাতেও আমি আপনারই সন্তুষ্টি কামনা করি। সকল ক্ষমতা ও শক্তি একমাত্র আপনারই এখতিয়ারভুক্ত। আপনার শক্তি ছাড়া কারোই কোন শক্তি নেই’।
এতো কিছুর পরও মহানবী (ছাঃ) ছবর পরিত্যাগ করে বিচলিত হননি। ছহীহ বুখারীতে ঘটনাটি এভাবে এসেছে- মহানবী (ছাঃ) বলেন, দীর্ঘ বিশ্রামের পর এক সময় আমার মনে কিছুটা স্বস্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে আমি আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি যে, একখন্ড মেঘ আমাকে ছায়া দান করছে। ব্যাপারটি আরও ভালভাবে নিরীক্ষণ করলে বুঝতে পারি যে, এতে জিবরীল (আঃ) রয়েছেন। তিনি আমাকে আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যা বলেছে এবং আপনার প্রতি যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুই শুনেছেন এবং দেখেছেন। এখন তিনি পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতাগণকে আপনার খেদমতে প্রেরণ করছেন। আপনি তাদেরকে যা ইচ্ছা নির্দেশ প্রদান করুন’। এরপর পর্বতের ফেরেশতা আমাকে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আপনি চাইলে আমি দু’পাহাড় একত্রিত করে এদেরকে পিষে মেরে ফেলি’। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘না, বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ এদের পৃষ্ঠদেশ হতে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং অন্য কাউকে তাঁর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করবে না’ (ছহীহ বুখারী ১/৪৫৮ পৃ:, আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃঃ ১২৫-১২৬)।
মহানবী (ছাঃ) তায়েফবাসীর ধবংস কামনা না করে বরং ধৈর্য ধরে তাদের হেদায়াতের অপেক্ষা করছিলেন। পরবর্তীতে তারা ঈমান আনায়ন করে ইসলামের ব্যাপক উপকার সাধন করে। তাদের উর্বর ভূমির শস্য মুসলমানদের অর্থনৈতিক চাকাকে গতিশীল করতে সহায়তা করে।
আবু তালহা (রাঃ)-এর এক ছেলে অসুস্থ হলো। আবু তালহা তখন বাইরে কোথাও গেলেন। সেই সময় ছেলেটি মারা যায়। আবু তালহা ফিরে এসে ছেলের অবস্থা জানতে চাইলেন। ছেলে ও মা উম্মু সুলাইম (রাঃ) বললেন, সে আগের চেয়ে ভাল আছে। তারপর আবু তালহাকে তিনি রাতের খাবার দিলেন। আবু তালহা খাবার খেলেন, তারপর স্ত্রী সহবাস করলেন। শেষে উম্মু সুলাইম বললেন, ছেলেকে দাফন করুন। সকালবেলা রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর কাছে এসে আবু তালহা (রাঃ) তাঁকে এই সংবাদ দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) প্রশ্ন করলেন, আজ রাতে তুমি কি স্ত্রী সহবাস করেছ? আবু তালহা বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্! তাদের উভয়কে তুমি বরকত দাও। এরপর উম্মু সুলাইমের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবু তালহার ছেলে ইন্তিকাল করলে বাড়ীর লোকদেরকে তার মাতা উম্মু সুলাইম বললেন যে, তারা যেন ছেলে সম্পর্কে আবু তালহাকে কিছু না বলে। তাকে যা বলার আমি নিজেই বলব। আবু তালহা বাড়ী আসার পর উম্মু সুলাইম তাকে রাতের খাবার দিলেন। তিনি খাবার খেলেন। তারপর উম্মু সুলাইম নিজেকে আগের চেয়ে অধিক সুন্দর করে স্বামীর জন্য সাজালেন। আবু তালহা তার সাথে সহবাস করলেন। উম্মু সুলাইম যখন দেখলেন, আবু তালহা তৃপ্ত হয়েছেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ হয়েছে, তখন তাকে বললেন, হে আবু তালহা! যদি কোন পরিবারকে কোন সম্প্রদায় কিছু ঋণ দেয়, তারপর সেই ঋণ ফেরত চায়, তবে কি তাদের ঋণ ফেরত না দেয়ার অধিকার সেই পরিবার রাখে? আবু তালহা বললেন, না। উম্মু সুলাইম বললেন, তাহলে আল্লাহর নিকট আপনার ছেলের জন্য ছওয়াব কামনা করুন! এই কথা শুনে আবু তালহা রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি আগে কিছু বললে না, এমনকি আমি সহবাসও করে ফেললাম, তারপর আমার ছেলের ব্যাপারে খবর দিলে। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে সব কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) দো‘আ করলেন, তোমাদের উভয়ের রাতে আল্লাহ্ তা‘আলা বরকত দিন।
তারপর উম্মু সুলইম (রাঃ) গর্ভবতী হলেন। কোন এক সফরে তিনি (উম্মু সুলাইম) রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলেন। সফর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) মদীনায় সাধারণতঃ রাতে ফিরে আসতেন না। যা হোক তারা যখন মদীনার কাছাকাছি আসলেন, তখন উম্মু সুলাইমের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হল। আবু তালহা এজন্য তার কাছে রয়ে গেলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) চলে গেলেন। আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ্! তুমি জান যে, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) যখন কোথাও যান এবং কোথাও থেকে ফিরে আসেন, তখন তাঁর সাথে সাথে থাকতে আমার ভাল লাগে। আর এখন যে কারণে আমি এখানে আটকে পড়লাম তা তুমি দেখছ। উম্মু সুলাইম বলতে লাগলেন, হে আবু তালহা! যে ব্যথা আমি অনুভব করছিলাম, এখন তা আর অনুভব করছি না , চলুন যাই। সেখান থেকে আমরা চলে এলাম। মদীনায় আসার পর তার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হল এবং একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করল (বুখারী, হা/৫৪৭০; মুসলিম, হা/২১৪৪।)
উম্মু সুলাইম ধৈর্য ধরার ফলে মহান আল্লাহ তাদের ঔরসে পূনর্বার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেন। উম্মু সুলাইম নিজ পেটে ধরা সন্তানের লাশ স্বামীর অলক্ষ্যে রেখে বেদনা বিধুর হৃদয়ের শত যন্ত্রনাকে সবরের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়ে নিজেকে সফর ফেরত স্বামীর জন্য উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি কী পরিমাণ সবর করেছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ছবরের চরম বাস্তবতার উদাহরণ এর চেয়ে আর কি হতে পারে। অবশ্য মহান আল্লাহ তাকে ছবরের বিনিময়ে তড়িৎ ফলও দিয়েছিলেন।
উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যদি কোন মুসলমানের প্রতি কোন বিপদ আসে, আর সে তায় বলে যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলতে বলেছেন, তথা- إنا لله وانا إليه راجعون অর্থাৎ ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আর তাঁর দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন। অতঃপর বলে, اللهم اجرني في مصيبتين واخلف لى خيرا منها الا اخلف الله خيرا منه‘হে আল্লাহ! তুমি আমার এই বিপদে আমাকে প্রতিফল দাও এবং তা অপেক্ষা উত্তম বিনিময়ে আমাকে ভূষিত কর। তা হলে আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদানে সম্মানিত করেন। উম্মে সালমা বলেন, যখন (আমার স্বামী) আবু সালাম মারা গেলেন, তখন আমি মনে মনে বললাম, কোন মুসলমান আছেন কী যিনি আবু সালমা অপেক্ষা উত্তম হতে পারেন? কেননা আবু সালমার পরিবারই তো প্রথম পরিবার যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট হিজরত করে এসেছিল। তবুও আমি তাই বললাম যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতে বলেছেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আবু সালামার পরিবর্তে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে প্রদান করলেন। যিনি আবু সালামা থেকে অনেক উত্তম ব্যক্তি (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৮)।
সম্মানিত পাঠক! উপরোক্ত ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি কল্যাণ কোথায় কিভাবে নিহিত রয়েছে তা মানুষের (সম্পূর্ণ) জ্ঞানের বাইরে। যা কল্পনাও করার বিষয় না। যার বাস্তব উদাহরণ উম্মু সালামা। যিনি স্বামী হারিয়ে ধৈর্যের বিনিময়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে স্বামী হিসাবে পেয়েছিলেন।
আতা ইবনে আবু রাবাহা বলেন, আমাকে একদা ইবনে আববাস বললেন, (আতা) আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মেয়ে লোক দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ ! দেখান। তিনি বললেন, এই কালো মেয়ে লোকটি জান্নাতী। সে একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং উলঙ্গ হয়ে পড়ি। আল্লাহর নিকট আমার জন্য দু‘আ করুন। মহানবী (ছাঃ) বললেন, যদি ইচ্ছা কর তাহলে সবর বা ধৈর্য ধরতে পার। আর ধৈর্য ধরলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি ইচ্ছা কর সুস্থ হওয়ার তাহলে আমি তোমার জন্য দু‘আ করব, যেন আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করেন। মহিলাটি বলল, আমি ছবর করব। অতঃপর বলল, তবে আমি যে অসুস্থতার সময় নগ্ন হয়ে যায়। দু‘আ করুন আমি যেন নগ্ন না হয়ে পড়ি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জন্য দু‘আ করলেন সে যেন রোগাক্রান্ত হওয়ার সময় নগ্ন না হয়। ফলে তারপর থেকে তিনি অসুস্থ হলে আর নগ্ন হয়ে যেতেন না। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৭৭)।
মহিলাটি যদি সুস্থতার জন্য মহানবী (ছাঃ)-এর জন্য নিকট দু‘আ চাইতেন তাহলে হয়তো সুস্থ হয়ে যেতেন, তবে তার জন্য জান্নাত না জাহান্নাম তা বলা কঠিন ছিল। কিন্তু অসুস্থ থেকে ধৈর্য ধরার বিনিময়ে তাকে মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দান করবেন। যা ছবরের বাস্তব ফলাফল হিসাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ছবরের ফলাফল সুখকর জানার জন্যই মহানবী (ছাঃ) মহিলাকে ছবর করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে উক্ত পরামর্শ তার নিকট উপস্থাপন করে ছিলেন। সবর বা ধৈর্য মানুষকে বড়, সম্মানী ও মর্যাদাবান হতে সহায়তা করে থাকে। ধৈর্যহীন মানুষের দ্বারা পৃথিবীতে কোন দিন কোন কঠিন ও মহৎ কাজ সাধিত হয়নি। এই বিশ্ব চরাচরে যত জটিল ও স্মরণীয় বরণীয় মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তা ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনর বিনিময়েই সাধিত হয়েছে। স্বয়ং মহানবী (ছাঃ) দ্বীন ইসলামে বিজয়ী মিশন সফল হওয়ার পিছনে রয়েছে কল্পনাতীত ধৈর্যের সফল পরীক্ষা। যদি তিনি এ পরীক্ষায় হেরে যেতেন তাহলে ইসলাম হয়তো অনেক আগেই দুনিয়া থেকে মুছে যেত। তাই একথা বলতেই হয় ধৈর্যের বাস্তবতা তিক্ত হলেও তার ফলাফল পরিশেষে সুমিষ্টই হয়। আল্লাহ আমাদেরকে ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!!