আমলে ছালেহ (সৎ আমল)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1459 বার পঠিত
অল্পে তুষ্টি
আল-কুরআনুল কারীম :
1- مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ-
(১) ‘পুরুষ হৌক বা নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।
2- فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَالَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ- وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَلَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ-
(২) ‘অতঃপর ক্বারূন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হ’ল। তখন যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, হায় কবারূন যা পেয়েছে আমাদেরকে যদি অনুরূপ দেওয়া হ’ত? সত্যিই মহা ভাগ্যবান। পক্ষান্তরে যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদের! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া পুরস্কারই সর্বোত্তম বস্ত্ত। এটা কেবল তারাই পায়, যারা (আল্লাহর অনুগ্রহের উপর) দৃঢ়চিত্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/৭৯-৮০)।
3- لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ-
(৩) ‘তোমরা ব্যয় কর ঐসব অভাবীদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে, যারা ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণে সক্ষম নয়। না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদের চেহারা দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড় বান্দা হ’য়ে চায় না। আর তোমরা উত্তম সম্পদ হ’তে যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সম্যকভাবে অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৭৩)।
4- وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
(৪) ‘আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও ও পরকালে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও’ (বাক্বারাহ ২/২০১)।
5- وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ-
(৫) ‘কতই না ভাল হ’ত যদি তারা সন্তুষ্ট হ’ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের যা দিয়েছেন তার উপরে এবং বলত, আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। সত্বর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে দান করবেন। আর আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি নিরত হ’লাম’ (তওবা ৯/৫৯)।
হাদীছে নববী :
6- عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ طُوبَى لِمَنْ هُدِىَ إِلَى الإِسْلاَمِ وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافًا وَقَنِعَ-
(৬) ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, সেই কতই না সৌভাগ্যবান যাকে ইসলামের পথে হেদায়াত দান করা হয়েছে এবং তার জীবিকা ন্যূনতম প্রয়োজন মাফিক এবং সে তাতেই খুশী’।[1]
7- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا هُرَيْرَةَ كُنْ وَرِعًا تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَكُنْ قَنِعًا تَكُنْ أَشْكَرَ النَّاسِ وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحَسِنْ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَأَقِلَّ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ الْقَلْبَ-
(৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আবু হুরায়রা (রাঃ)! তুমি আল্লাহ ভীরু হয়ে যাও, তাহ’লে লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হ’তে পারবে। তুমি অল্পে তুষ্ট থাকো, তাহ’লে লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম শুকরিয়া আদায়কারী হ’তে পারবে। তুমি নিজের জন্য যা পসন্দ করো, অন্যদের জন্যও তাই পসন্দ করবে, তাহ’লে পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে। তোমরা প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারী ও দয়াপরবশ হও, তাহ’লে মুসলমান হ’তে পারবে। তোমরা হাসি কমাও, কেননা অধিক হাসি অন্তরাত্নাকে ধ্বংস করে’।[2]
8- عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ إِنَّمَا كَانَ فِرَاشُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم الَّذِى يَنَامُ عَلَيْهِ أَدَمٌ حَشْوُهُ لِيفٌ-
(৮) আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)- এর ঘুমানোর বিছানাটি ছিল চামড়া দিয়ে বানানো। এর ভেতরে খেজুর গাছের বাকল ভর্তি ছিল’।[3]
9- عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ، فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ، وَقَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ-
(৯) আবু সাঈদ মাকবুরী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আবু হুরায়রা (রাঃ) একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যাদের সামনে ভুনাবকরী ছিল। তারা তাঁকে খেতে ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পূর্ণ করে খাননি’।[4]
10- عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ يَخْطُبُ قَالَ ذَكَرَ عُمَرُ مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا فَقَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِى مَا يَجِدُ دَقَلاً يَمْلأُ بِهِ بَطْنَهُ-
(১০) সিমাক ইবনু হারব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নু‘মান ইবনু বশীর (রাঃ) হ’তে শুনেছি তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন যে সমস্ত লোক দুনিয়ার ধন-সম্পদ অধিক জমা করে ফেলেছে তাদের কথা উল্লেখ করে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি সারাদিন ক্ষুধার্ত থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন। যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্টমানের খুরমাও পেতেন না’।[5]
11- عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مِحْصَنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ، مُعَافًى فِي جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا-
(১১) উবায়দুল্লাহ ইবনু মিহছান আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকী থাকে তবে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্র করা হলো’।[6]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. রাগেব (রহঃ) বলেন, ‘ক্বনা‘আত হলো প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অল্পে তুষ্ট থাকা’।[7]
২. ইবনু মানযূর (রহঃ) বলেন, ‘অল্প পাওয়াতে সন্তুষ্টিই হলো ক্বনা‘আত’।[8]
৩. জাহেয (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত বরকতকে জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট মনে করা, সম্পদ জমানোর যাবতীয় লোভকে পরিহার করে অন্তরের কামনা থাকা সত্ত্বেও অল্পে তুষ্টিতে তা বশ মানিয়ে নেওয়া’।[9]
৪. ইমাম গাযালী (রহঃ) অল্পে তুষ্ট সম্পর্কে বলেন, ‘মুহাম্মাদ ইবনু ওসে‘ শুকনা রুটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে খাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘যে ব্যক্তি এই শুকনা রুটিতে সন্তুষ্ট থাকবে তার আর কোন লোকের প্রয়োজন নেই’।[10]
৫. আবু আমর শায়বানী (রহঃ) বলেন, ‘মুসা (আঃ) আল্লাহকে প্রশ্ন করলেন হে আমার প্রভু! কোন বান্দা তোমার নিকট অধিকতর প্রিয়? তিনি বললেন, আমায় অধিক যিকিরকারী বান্দা। অতঃপর তোমার কোন বান্দা তোমার নিকট সবার চেয়ে ধনী? তিনি বললেন, আমি তাকে যা দিয়েছি তাতেই সে (অল্পে) তুষ্ট’। অতঃপর তোমার কোন বান্দা তোমার নিকট অধিকতর ইনছাফকারী? তিনি বললেন, যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে’।[11]
সারবস্ত্ত :
১. অল্পে তুষ্টি থাকা হলো ইসলামের সৌন্দর্য ও ঈমানের পরিপূর্ণতা।
২. অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর নিকট ও মানুষের নিকট ভালবাসার পাত্রে পরিণত হয়।
৩. দুনিয়ার যাবতীয় প্রাপ্তিতে সে সমাজের সবচেয়ে সুখী মানুষের আসনটি দখল করে নেয়।
৪. মানুষ যদি অল্পে তুষ্ট হয় তাহ’লে সমাজে কোন মানুষ বঞ্চিত ও গরীব থাকেনা।
৫. অল্প তুষ্টি এমন একটি গুণ যা সমাজে শান্তি, সমৃদ্ধি, ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
[1]. তিরমিযী হা/২৩৪৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫০৬; তা‘লীক্বুর রাগীব ২/১১।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৪২১৭; ছহীহুল জামে’ হা/৭৮৩৩।
[3]. মুসলিম হা/২০৮২; তিরমিযী হা/১৭৬১; মিশকাত হা/৪৩০৭।
[4]. বুখারী হা/৫৪১৪; মিশকাত হা/৫২৩৮।
[5]. মুসলিম হা/২৯৭৮; তিরমিযী হা/২৩৭২; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪৬; আহমাদ হা/১৫৯।
[6]. তিরমিযী হা/২৩৪৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৫১৯১।
[7]. মুফরাদাত ৪১৩ পৃঃ ।
[8]. লিসানুল আরব ৮/২৯৭ পৃঃ।
[9]. তাহযীবুল আখলাক্ব ২২ পৃঃ।
[10]. ইহইয়াউল উলূম ৩/২৯৩ পৃঃ ।
[11]. ইবনু সিননী, ‘কিতাবুল ক্বনা‘আহ’ ৫১পৃঃ।