গুয়ানতানামো বে’র কারারক্ষীর ইসলাম গ্রহণ
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ফয়েয মুহাম্মাদ (১৯৭০-১৯৭১) জন্মগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে। মুসলিম পন্ডিতবর্গের কাছে ইসলামী জ্ঞান অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে তিনি সঊদী আরবে পাড়িজমান এবং ভর্তি হন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দীর্ঘ ৪ বছর কাটানোর পর ইসলামের পথে মানুষকে দাওয়াত প্রদানের স্বপ্ন বুকে নিয়ে তিনি আবার সিডনীতে ফিরে আসেন। তার বক্তব্য প্রদানের চমৎকার ভঙ্গিমা বহু শ্রোতাকে আকৃষ্ট করে, তা যেমন ফলপ্রসূ তেমনি মনোমুগ্ধকর। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পি-এইচ.ডি রত। লেবানীজ বংশোদ্ভূত এই মুসলিম দাঈ ইতিপূর্বে সিডনীর শহরতলী লিবারপুলে ‘গ্লোবাল ইসলামিক ইউথ সেন্টার’-এর পরিচালক ছিলেন। বৃটিশ টেলিভিশনের ‘আনকভার মস্ক’ শিরোনামের এক ডকুমেন্টারীতে তাঁকে উপস্থাপন করা হয়। মিডিয়ায় তাঁকে মৌলবাদী ধ্যান-ধারণার লোক এবং ‘ওহাবী’ বলে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে।
শায়খ ফয়েয মুহাম্মাদ সিডনীতে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পূর্বপুরুষরা লেবাননের অধিবাসী। প্রথম জীবনে তিনি একজন মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন। প্রাথমিক জীবনটা তাঁর খেলাধূলার মাঝে কেটেছে। ১৭ বছর বয়সে তিনি বক্সিং-এ টাইটেল অর্জন করেন এবং ১৯ বছর বয়সে ‘অস্ট্রেলিয়ান বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশীপ’ জয় করেন। কৈশোরের অধিকাংশ সময় তিনি সিডনী শহরের রাস্তায় রাস্তায় গ্যাংস্টার পরিবেশে কাটিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার সাথে তাঁর কোন পরিচয় ছিল না। তিনি অসি জীবনযাত্রার উপস্থাপিত যাবতীয় কিছু ভোগ করার জন্য বেপরোয়া স্বভাবের ছিলেন। কঠোর বৈশিষ্ট্য ও বেপরোয়া স্বভাবের কারণে মুষ্টিযুদ্ধে খ্যাতি লাভের দিনগুলোতে তাঁকে ‘খুনী ফ্রাংক’, অনুরূপভাবে বডিবিল্ডিং-এর দিনগুলোতে ‘জন্তু’ বলা হত। এত কিছু হাতের নাগালে থাকতেও তিনি আরো কিছুর অভাব বোধ করেন। তিনি যদিও কথিত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু চতুর্পার্শ্বের নেতিবাচক পরিবেশের কারণে সত্য দ্বীন সম্পর্কে জানার কোন চেষ্টা কখনো করেননি। রাস্তার পরিবেশে সেই কঠোর জীবন কাটানোর পর তিনি অনুভব করেন যে, তাঁর অস্তিত্বটা এভাবে দস্যুর মত বেঁচে থাকার চেয়ে নিশ্চয়ই আরো অর্থপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই সেখানে ত্রুটি পেলেন। একদিন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এক মসজিদে প্রবেশের পর তিনি অনুভব করলেন আল্লাহ তাঁকে হেদায়াতের জন্য এখানে প্রেরণ করেছেন, দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার জন্য নয়। তিনি সিডনীর মসজিদগুলোতে অনুষ্ঠিত তা‘লীমী আলোচনা বৈঠকগুলোতে উপস্থিত হতে লাগলেন কিন্তু সেগুলোকে তাঁর কাছে অনাকর্ষণীয়, দুর্বোধ্য এবং যুবকদের জন্য গুরুত্বহীন মনে হল।
তিনি যখন আমেরিকায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত হন, ঠিক তখনই তাঁর অন্তর্জগত ঈমানের প্রশান্তিময় সুবাতাসে ভরপুর হয়ে যায়। তিনি আপন অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে মহৎ এবং সর্বাধিক অর্থবহ কিছু অর্জনের জন্য আপন আলোয় জ্বলে উঠলেন। যার ফলশ্রুতিতে-সবকিছু পরিত্যাগ করে তিনি ইসলামের কেন্দ্রভূমি মদীনা যাত্রা করলেন। তিনি সেখানে দুই বছর আরবী ভাষা শিখলেন এবং পরবর্তী চার বছর শরী‘আহ অনুষদে পড়াশোনা করে লিসান্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিগ্রি সমাপনের পর তিনি পুনরায় অস্ট্রেলিয়া ফিরে যান পথভ্রষ্ট তরুণদের চাহিদা পূরণের স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ২০০০ সালে তিনি ‘গ্লোবাল ইসলামিক ইউথ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এটা এমন একটি শিক্ষাকেন্দ্র যা তরুণ সমাজকে আরো ভালো মুসলিম হিসাবে গড়ে উঠার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে। এখানে যুবশিবির ও ইসলামের উপর প্রাথমিক ও গভীর জ্ঞানদানের নিয়মিত আয়োজন রয়েছে। এছাড়াও একটি শরীরচর্চাকেন্দ্র রয়েছে, রয়েছে বিনোদনের সুবিধাদিও।
তাঁর অনন্য বাচনভঙ্গি ও ইসলামের উপর দৃঢ়তা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যুবক-বৃ্দ্ধ নির্বিশেষে সকলকে আকর্ষণ করেছে। স্বধর্মকে আধুনীকিকরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণে তিনি সমালোচকদের লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত হন। এতদসত্ত্বে তিনি আপন কর্তব্যে অবিচল। আল্লাহর বিধানে আস্থা ও আক্ষরিকভাবেই ‘কোন আপোস নেই’ নীতিকে তিনি দৃঢ়ভাবে ধারণ করে রেখেছেন। তিনি কঠোর একনিষ্ঠতার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়াতে পি-এইচ.ডি করছেন এবং সেখানেই বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁকে হেফাযত করুন- আমীন!!