আলোকপাত
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
আমি দাওয়াতী কাজে অনেক দিন ধরেই সম্পৃক্ত ছিলাম। বিভিন্ন মসজিদে ও ইসলামী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া, সাংগঠনিক প্রোগ্রাম পরিচালনা ইত্যাদি কাজে যথেষ্ট সময় দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমি নিজের আত্মিক দিক ক্রমান্বয়ে উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বেশ কয়েকটি বছর এ লক্ষ্যে ব্যাপক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে যে, আমি মানুষকে দাওয়াতদানের উপযুক্ত নই। কেননা আমি মানুষকে যা বলি, তার অনেক কিছুই নিজে পালন করতে পারি না। তাই আমি দাঈ হিসাবে মানুষের সামনে আর না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেবল ইসলামের খেদমতে সামান্য একজন কর্মী হয়ে থাকতে চাই। আমি আমাকে আর প্রতারিত করতে চাই না, অন্যদের সামনে আর মুনাফিক হতে রাযী নই। এখনই কি সঠিক সময় নয়, আল্লাহর কাছে লজ্জিত হওয়ার? তিনি বলছেন, হে ঈমানদারগণ! কেন তোমরা তা বল যা তোমরা নিজেরা কর না (ছফ ২-৩)। এখনই কি সময় নয় জীবনের শেষ দিনগুলোকে সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনার এবং অতীতে যা কিছু উপেক্ষা করেছি তার দিকে মনোযোগী হওয়ার? আল্লাহর কাছে আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি আমার অতীত পাপের ক্ষমার জন্য এবং আগামী দিনে তাঁর সাথে সাক্ষাতের পূর্বেই সৎআমল সম্পাদনের তাওফীক দানের জন্য।
-হাসান ফেরদাউস,
কারমাইকেল কলেজ, রংপুর।
প্রিয় ভাই! মূলতঃ আল্লাহর পথে আহবান আত্মার জন্য একটি উত্তম প্রশিক্ষণ। আপনি যদি নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে চান, তবে অন্যকে সৎপথের দিকে আহবানের পথ থেকে সরে আসা আদৌ উচিৎ হবে না। কেননা আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, দাওয়াত প্রদানের জন্যও ঠিক ঠিক তা-ই প্রয়োজন। কেননা যখন আপনি পরিশুদ্ধি অর্জন ও সত্যের পথ দেখানোর জন্য মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছেন, তখন আপনি আপনার অজান্তে নিজেকেও অনুরূপ পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষকে আল্লাহর দিকে তথা ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে গেলে নিজেকেও কি আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হওয়া, তাঁর কাছে দো‘আ করা বা তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হয় না? যেমন পবিত্র কুরআনে সূরা আ‘রাফের ৮৯নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শু‘আইব (রাঃ)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِيْنَ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের এবং আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করে দিন এবং আপনিই তো সর্বোত্তম ফায়ছালাকারী।’ দাওয়াত দিতে গেলে নিজের নৈতিক মূলোবোধের উপর সুদৃঢ় থাকার প্রতিজ্ঞা কি নিতে হয় না? যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি উহার দিকে (সকলকে) আহবান কর এবং তোমাকে যা আদেশ করা হয়েছে তার উপর সুদৃঢ় থাক। আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না (শূরা ১৫)।’ এ কাজে কি পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ, ছাড় প্রদান, আশা-প্রত্যাশা রাখার মত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হয় না? যেমন রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমরা (মানুষের কাজকে) সহজ করে দাও, কঠিন করো না; তাদেরকে সুসংবাদ দাও, বিমুখ করে দিও না (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭২২)। এ কাজে কি একনিষ্ঠতা, একাগ্রতার প্রয়োজন হয় না? যেমন নূহ (আঃ)-এর বক্তব্য পবিত্র কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি (সত্যের পথে) ডেকেছি (নূহ ৫)।’ মানুষের সাথে কি সত্য প্রকাশের জন্য হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে বক্তব্য-বিতর্ক করতে হয় না? যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং যুক্তিতর্ক করো সর্বোত্তম পন্থায় (নাহল ১২৫)। এভাবে দেখা যাচ্ছে মানুষকে দাওয়াত প্রদানের সকল স্তরে প্রকারান্তরে আপনি নিজেকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই হতাশ হবেন না। আপনার নৈতিক দুর্বলতা কাটানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম মানুষকে সৎকাজের প্রতি আহবান জানানো। এ পথে প্রতিটি পদক্ষেপই আপনাকে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় রাখবে। পাপের কারণে যদি দাওয়াত প্রদান থেকে পিছিয়ে আসেন তবে তাতে আপনার দ্বীনের পথ থেকে পিছলে যাওয়ারই ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তাই শয়তানের প্ররোচনায় কোন পাপ করে ফেললে দ্রুত তওবা করুন এবং নিজেকে ও অন্যদেরকে সে পাপের কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার খুলুছিয়াতের বিনিময়ে আপনাকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করবেন।
অন্যদিকে দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে আপনার পাপও দূরীভূত হতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কার্যাবলী মুছে ফেলে মন্দ কাজসমূহকে (হূদ ১১৪)।’ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর। আর কোন পাপ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথেই কোন পূণ্যের কাজ কর, যা তাকে মিটিয়ে দেবে। আর উত্তম চরিত্র ও ব্যবহার নিয়ে মানুষের সাথে মেলামেশা কর (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩, সনদ হাসান)।
সুতরাং আপনাকে বলব, মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই ভুল-ক্রটি থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে পথভোলা মানুষকে সত্যের দিকে দাওয়াত প্রদানে আমরা কোনরূপ অবহেলা করতে পারি না। কারণ এটা প্রত্যেক মুসলমানের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব (আলে ইমরান ১১০)। ইনশাআল্লাহ এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই আপনি নিজেকে পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন এবং আল্লাহর প্রিয়তম বান্দাদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন।
বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পর্কে জানার সবচেয়ে উপযোগী গ্রন্থ কোনটি?
মাশরুর আহসান
দারুস সালাম আলিয়া মাদরাসা, রাজশাহী
উত্তর : কোন বিষয়ে উপযোগী গ্রন্থ কোনটি তা নির্ভর করে স্থানভেদে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির তারতম্যের উপর। তবে সাধারণভাবে আক্বীদা সম্পর্কিত উপকারী গ্রন্থ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই নাম আসে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘আল-আক্বীদা আল-ওয়াসেত্বিয়া’ (ব্যাখ্যাসহ), ইমাম তাহাবীর ‘শারহুল আক্বীদা আত ত্বহাবিয়াহ’, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের ‘কিতাবুত তাওহীদ (ফাতহুল মাজীদ-ব্যাখ্যাসহ)’, ‘কাশফুশ শুবহাত’, ‘ছালাছাতু উছূল’ এবং ইবনে খুযাইমার ‘কিতাবুত তাওহীদ’ প্রভৃতি। এগুলো মৌলিক কিতাবের কোন কোনটির বাংলা অনুবাদ হয়েছে। বাংলাভাষীদের জন্য ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের ‘আক্বীদা ইসলামিয়াহ’ নামক সংক্ষিপ্ত পুস্তিকাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি পবিত্র কুরআনই সঠিক আক্বীদা সম্পর্কে জানার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। পবিত্র কুরআনকে গভীর মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে সঠিক আক্বীদা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য মহা পুরস্কার রয়েছে (ইসরা ৯)।