সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু (!)
কথিত আল-কায়েদা প্রধান এবং পশ্চিমা বিশ্বের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ তত্ত্বের দাবার ঘুটি হিসাবে ব্যাবহৃত বহুল আলোচিত ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে এক মার্কিন সেনা হামলায় নিহত হয়েছেন। সারাবিশ্বে এ বিষয়ে ব্যাপক ধূম্রজাল থাকলেও মার্কিন সূত্রগুলো থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। জানা গেছে পাকিস্তারে রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ৯০ কি.মি. দূরের এক সেনাশহর এ্যাবোটাবাদের এক কাঁটাধারে ঘেরা দ্বিতল বাড়িতে গত ৬ বছর ধরে আত্মগোপন করে বসবাস করছিলেন আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী’ ওসামা বিন লাদেন। মার্কিন সূত্র মতে, গত বছর আগস্ট মাসে গোপন সূত্রে এই বাড়িটি শনাক্ত করে সিআইএ’র গোয়েন্দারা। তখন থেকে তারা বাড়িটির দিকে নজর রাখছিল। অতঃপর সুনিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবুজ সংকেত পায়। অতঃপর ১ মে দিবাগত রাত সাড়ে দশটায় আফগানিস্তান থেকে গোপনে পাকিস্তানী রাডারকে ফাঁকি দিয়ে দু’টি হেলিকপ্টার নিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে মার্কিন নেভির একটি কমান্ডো দল। তারা ঐ বাড়িতে হামলা চালায়। অল্পসময়ের মধ্যে তারা বাড়িটি দখলে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ওসামা বিন লাদেনকে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা ওসামা বিন লাদেনের লাশ তাদের হেলিকপ্টারে করে আফগানিস্তানে তাদের সেনাঘাটিতে নিয়ে যায়। অতঃপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে আরব সাগরে মোতায়েন একটি সেনা জাহাজে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে তার লাশ আরব সাগরের বুকে নিমজ্জিত করা হয়।
এদিকে তার নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। মার্কিনী ও ইউরোপীয় সমাজ দৃষ্টিকটুভাবে উল্লাসে মেতে উঠে। অপরদিকে মুসলিম দেশসমূহে সাধারণ জনগণ পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে অনেকটা নীরবতা পালন করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওসামা নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘ন্যায়বিচার’ বলে আখ্যায়িত করেন। ওআইসি কিছুটা শীতল দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছে যে, ওসামা বিন লাদেনের কারণে বহু নিরপরাধ মানুষ প্রাণহানির শিকার হয়েছে। আর সন্ত্রাসীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রয়োজন ঠিকই, তবে অবশ্যই সন্ত্রাসের পিছনে যে কারণগুলো কাজ করেছে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ওসামা বিন লাদেন ১৯৫৭ সালে এক ধনাঢ্য সঊদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আফগানিস্তানে গমন করেন। এ সময় আমেরিকা আফগান মুজাহিদদেরকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি সহযোগিতা করে। ১৯৮৮ সালে তিনি আল-কায়েদা বাহিনী গঠন করেন বলে কথিত রয়েছে। ১৯৯০ সালে ওসামা বিন লাদেন সোভিয়েত বিজেতা বীর বেশে সঊদী আরবে ফিরে আসেন। ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন কুয়েতে আক্রমণ করলে সঊদী বাদশাহ কিং ফাহাদ আত্মরক্ষার্থে আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাহায্য কামনা করেন। এ সময় ওসামা বিন লাদেন সঊদী বাদশাহর সাথে সাক্ষাৎ করে বিধর্মীদের সাহায্য না নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এ অনুরোধ উপেক্ষা করে আমেরিকানদের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সর্বপ্রথম সঊদী সরকারের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে কথা বলেন। ফলে ১৯৯২ সালে সঊদী সরকার তাকে বহিষ্কার করে এবং তিনি সূদানে নির্বাসনে যান। তারপরও তিনি সঊদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা অব্যাহত রাখলে ১৯৯৪ সালে তার সঊদী নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে তিনি সুদান থেকে আফগানিস্তানের জালালাবাদে ফিরে আসেন। তিনি তালিবান নেতা মোল্লা ওমরের সাথে জোট বাঁধেন। তারপর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মের জন্য আমেরিকা তাকে দায়ী করতে থাকে। ২০১১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমেরিকা ১ম দিনই তাকে দায়ী করে এবং তাকে কেন্দ্র করেই আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে তালিবান শাসনের অবসান ঘটায়, সারাদেশ তছনছ করে দেয়। তখন থেকেই ওসামা বিন লাদেনকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন। অবশেষে ২০১১ সালের ১লা মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে তার মৃত্যু ঘটেছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়। এভাবে মিডিয়ার কল্যাণে ৫৪ বছর বয়স্ক ও বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব ওসামা বিন লাদেনকে নিয়ে রহস্যের আপত অবসান ঘটে। যদিও রহস্যের এখনো অনেক বাকি রয়েছে। গত ৯ই মে ইরান জানিয়েছে বিন লাদেন ইতিপূর্বেই রোগগ্রস্ত হয়ে মারা যান। তাদের মতে, সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য ওবামা এই নাটক সাজিয়েছেন। ওসামা বিন লাদেনের মৃতদেহের ছবি প্রকাশ না করা, পানিতে ডুবিয়ে দেয়া ইত্যাদি এ প্রশ্নকে আরো ঘনীভূত করেছে।
ফ্রান্সে জনসম্মুখে নিকাব পরিধান নিষিদ্ধ
ইউরোপের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ (৬০ লক্ষ) ফ্রান্স সরকার গত ১১ এপ্রিল থেকে হিজাব/নিকাব পরে জনসম্মুখে চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। যদি কোন মহিলা পাবলিক প্লেসে নিকাব পরিধান করে, তার জন্য ১৫০ ইউরো জরিমানা করা হবে এবং তাকে নাগরিকত্ব শেখার জন্য একটি কোর্স করতে হবে। আর যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে নিকাব পরিধানে বাধ্য করে, তবে স্বামীর ২৫,০০০ ইউরো জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ২ বছর সাজার বিধান রাখা হয়েছে। ফ্রান্সে নিকাব পরিধানকারীর সংখ্যা ২০০০ বা তার কিছু বেশী বলে সে দেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সে হিজাব নিয়ে বিতর্কের আরম্ভ ১৯৮৯ সাল থেকে। যখন একটি স্কুলে ৩ জন মুসলিম ছাত্রী শিক্ষকের নির্দেশ সত্ত্বেও মাথার স্কার্ফ খুলতে আপত্তি জানায়। এরূপ বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সের স্কুলগুলোতে বিশেষ ধর্মীয় চিহ্নবাহী উপাদান যেমন হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও জন্য রাস্তায় নামে স্কুল ছাত্রীরা। অতঃপর ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ ছাত্রীকে হিজাব পরিধানের জন্য অভিযুক্ত অথবা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৪ সালে একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যে, ৮০৬ জন শিক্ষার্থী এই আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩৩ জন বাধ্য হয়ে হিজাব ছাড়াই ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে এবং ৭৩ স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। আর কতজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে তার পরিসংখ্যান জানা যায়নি। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই ফ্রান্স সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও জনসম্মুখে বোরকা ও নেকাব পরিধানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা ছিল নেকাব তথা মুখ ঢেকে চলার বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে এপ্রিল মাসে এই আইন চূড়ান্তভাবে কার্যকর করা হয়। এর বিরুদ্ধে ফ্রান্সসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং একে ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করা হয়েছে।