আলাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্র“তা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9467 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
1. قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ- وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ-
(১) ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় বক্ষদেশের উপর রাখে (অর্থাৎ দু’টিই ঢেকে রাখে)। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজ পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনীপুত্র, নিজেদের বিশ্বস্ত নারী, অধিকারভুক্ত দাসী, কামনামুক্ত পুরুষ এবং শিশু যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অবহিত নয়, তারা ব্যতীত। আর তারা যেন এমন ভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র দিকে ফিরে যাও যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ২৪/৩০-৩১)।
2. وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا - اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا - مَنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا-
(৩) ‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্মকে আমরা তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে বের করে দেখাব একটি আমলনামা, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সেদিন আমরা বলব) তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট। যে ব্যক্তি সৎপথ অবলম্বন করে, সে তার নিজের মঙ্গলের জন্যেই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, সে তার নিজের ধ্বংসের জন্যেই সেটা হয়। বস্ত্ততঃ একের বোঝা অন্যে বহন করে না। আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৩-১৫)।
3. وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِها لَوْ لا أَنْ رَأى بُرْهانَ رَبِّهِ كَذلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبادِنَا الْمُخْلَصِينَ- وَاسْتَبَقَا الْبابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِنْ دُبُرٍ وَأَلْفَيا سَيِّدَها لَدَى الْبابِ قالَتْ ما جَزاءُ مَنْ أَرادَ بِأَهْلِكَ سُوءاً إِلَّا أَنْ يُسْجَنَ أَوْ عَذابٌ أَلِيمٌ-
(৫) ‘উক্ত মহিলা তার বিষয়ে কুচিন্তা করেছিল এবং সেও তার প্রতি কল্পনা করত যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার প্রমাণ অবলোকন করত। এভাবেই এটা একারণে যাতে আমরা তার থেকে যাবতীয় মন্দ ও অশ্লীল বিষয় সমূহ সরিয়ে দেই। নিশ্চয়ই সে ছিল আমাদের মনোনীত বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত। তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলাটি ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার মুখে পেল। তখন মহিলাটি তাকে বলল, যে ব্যক্তি তোমার স্ত্রীর সাথে অন্যায় বাসনা করে, তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা অথবা (অন্য কোন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেওয়া ব্যতীত আর কি সাজা হ’তে পারে? (ইউসুফ ১২/২৪-২৫)।
হাদীছে নববী :
4. عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصَدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِى طُعْمَةٍ-
(৬) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমার মাঝে চারটি জিনিস থাকবে, তখন দুনিয়ার সবকিছু হারিয়ে গেলেও তোমার কোন সমস্যা নেই। ১. আমানত রক্ষা করা, ২. সত্য কথা বলা, ৩. সুন্দর চরিত্র, ৪. বৈধ রুযী।[1]
5. عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ عَوْنُهُمُ الْمُجَاهِدُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِى يُرِيدُ الأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِى يُرِيدُ الْعَفَافَ-
(৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদকারী, মুকাতাব গোলাম অর্থাৎ যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে এবং বিবাহে আগ্রহী লোক যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়’।[2]
6. عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اضْمَنُوا لِى سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ-
(৮) উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের যামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। ১. তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বল, ২. যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ কর, ৩. যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় কর, ৪. নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত কর, ৫. স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখ এবং ৬. স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হতে) বিরত রাখ’।[3]
7. عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَخْبَرَهُ قَالَ أَخْبَرَنِى أَبُو سُفْيَانَ أَنَّ هِرَقْلَ قَالَ لَهُ سَأَلْتُكَ مَاذَا يَأْمُرُكُمْ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَالصِّدْقِ وَالْعَفَافِ وَالْوَفَاءِ بِالْعَهْدِ وَأَدَاءِ الأَمَانَةِ . قَالَ وَهَذِهِ صِفَةُ نَبِىٍّ-
(৯) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, হিরাক্লিয়াস তাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, নবী করীম (ছাঃ) তোমাদের কি কি আদেশ করেন? তুমি বললে যে, তিনি তোমাদেরকে ছালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক পবিত্রতা, ওয়াদা পূরণ ও আমানত রক্ষার আদেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, এটাই নবীগণের ছিফাত’।[4]
8. عَنْ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-
(১০) আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই বলে দো‘আ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুকা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথনির্দেশ, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক পবিত্রতা ও সচ্ছলতার জন্য দো’আ করছি’।[5]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ইবনু হাজার আসক্বলানী (রহঃ) বলেন, ‘যে আলেম অনেক জ্ঞানী কিন্তু সচ্চরিত্রবান নয় তাহলে সে একজন জাহেলের চেয়েও বেশী বিপদজনক’।[6]
২. ইবনু মুফলেহ (রহঃ) বলেন, দারিদ্রতা ও ধনে সর্বাস্থায় আল্লাহ্র হক রয়েছে। ধনে রয়েছে দয়া ও কৃতজ্ঞতা এবং দারিদ্রতায় রয়েছে সচ্চরিত্রতা ও ধৈর্য’ ।[7]
৩. মাওয়ার্দী (রহঃ) বলেন, ব্যক্তির চারিত্রিক পবিত্রতা, কাজের গোপনীয়তা এবং অল্প তুষ্ট জীবনযাপন আসল দ্বীনদারীর পরিচায়ক’।[8]
৪. মানছূর ফক্বীহ (রহঃ) বলেন, তাক্ব্ওয়াশীল ব্যক্তির তাক্ব্ওয়া অর্জিত হতে পারে না যতক্ষণ না তার কর্মে সচ্চরিত্রতা ও আদব ফুটে না উঠে’ ।[9]
৫. আবু আমর ইবনুল আলা (রহঃ) বলেন, জাহেলী আরবরা অপূর্ণাঙ্গ ছয়টি কাজের মাধ্যমে আরব জাহানকে শাসন করত। ইসলাম সেটির পরিপূর্ণতা দান করেছে। আর সপ্তমটি হলো সচ্চরিত্রতা’ ।[10]
৬. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, ঈদের দিন বাইরে বেরিয়ে তার সাথীদের বলতেন, আজ আমরা আমাদের চোখের পবিত্রতা বা সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দিন শুরু করব’।[11]
সারবস্ত্ত :
১. চারিত্রিক পবিত্রতা হ’ল আল্লাহ্র হারামকৃত বিষয় থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাযত করা এবং এর যথাযথ হক আদায় করা।
২. লোভনীয় দুনিয়ার চাকচিক্যের মোহে না পড়া এবং আখেরাতের অফুরন্ত নে‘মতরাজির স্বাদ আস্বাদন করাই সচ্চরিত্রতা।
৩. সচ্চরিত্রতা মহত্বের এমন এক নমুনাপত্র যা দ্বারা সম্মান ও মর্যাদা অর্জিত হয়।
৪. সচ্চরিত্রতা সমাজ জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির সোপান।
৫. সচ্চরিত্রতার প্রচার-প্রসার সুন্দর ও সুস্থ সমাজ বিনির্মানের অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।
৬. পরিচ্ছন্ন জ্ঞান ও পবিত্র হৃদয় সৃষ্টির কেন্দ্রস্থল হ’ল সচ্চরিত্রতা।
[1]. আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮১।
[2]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩০৮৯।
[3]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০ সনদ হাসান।
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৭৯।
[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৬।
[6]. ফাৎহুল বারী ১৩/১৪৯ পৃ.।
[7] . আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ ২/৩১০ পৃ.।
[8] . আদাবুদ দুনিয়া ওয়া দ্বীন ১৯৪ পৃ.।
[9] .আল-আদাবুল শারঈয়্যাহ ২/২২১ পৃ.।
[10] .আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ ২/২১৫ পৃ.।
[11] . আর-ওর‘ লি আবিদ দুনিয়া ৬৩ পৃ.।