ফিলিস্তীনী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও হামাস
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম 9837 বার পঠিত
ইতিহাস এক বহমান নদীর মতো। কালের বিস্তার বেয়ে নেমে আসছে সে প্রবাহ। সভ্যতার বিবর্তন, সংস্কৃতির স্ফূরণ, দেশ-জাতি-জনগোষ্ঠী-ধর্ম-সম্প্রদায়কে কাঁধে নিয়ে মানবতার নিরন্তর যাত্রার এই সব কিছুরই সাক্ষী ইতিহাস। মানব সভ্যতার যাত্রাপথের প্রত্যেকটি বাঁক, প্রতিটি মাইলফলকের হিসাবরক্ষক ইতিহাস। সেই ইতিহাসকেই যখন বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, রাজনীতির প্রবাহে মোড় আনতে যখন ইতিহাসের সর্বজনবিদিত যাত্রাপথটাকে অন্য ভাবে দেখানোর চেষ্টা হয়, তখন আসলে কালের সঙ্গেই প্রতারণা করা হয়। এই প্রতারণা দুর্ভাগ্যজনক তো বটেই, বিপজ্জনকও। বাবরী মসজিদ ধ্বংস করার সঙ্গে মুসলিম বিরোধিতার কোনও সম্পর্ক নেই এমন এক তত্ত্বের অবতারণা করা হল এ বার সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকে। বাবরী আসলে গোলামীর প্রতীক, বাবরী আসলে অত্যাচারের প্রতীক, সেই কারণেই পতন ঘটানো হয়েছিল ওই কাঠামোর। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এক নেতা এমন এক নতুন তত্ত্ব সামনে আনলেন। সে তত্ত্বের সমর্থনে গোটা সঙ্ঘ পরিবারের আরও অনেকেই মুখ খুললেন। কোথায় এসে দাঁড়ালাম তাহলে আমরা? আমরা আরও বড় ক্ষতস্থানের মুখোমুখি হলাম। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরী মসজিদ ভেঙে সম্প্রীতির দেওয়ালে বৃহৎ ক্ষতচিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছিল। এবার ঐতিহাসিক উপলব্ধিকে অস্বীকার করে খোদ ইতিহাসের বুনটটায় বড়সড় ক্ষত তৈরীর চেষ্টা শুরু হয়ে গেল।
বাবরী মসজিদ সম্পর্কে সঙ্ঘের সুরেশ ভাইয়াজি জোশীর মন্তব্য বা সে মন্তব্যের প্রতি বিজেপির কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের অকুণ্ঠ সমর্থন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিন্তু নয়। এটি ইতিহাস বদলে দেওয়ার এক সংগঠিত প্রয়াসের অঙ্গ মাত্র।
৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সাল। উন্মত্ত করসেবকদের নীচে চাপা পড়ে গেল বাবরী মসজিদ। সশস্ত্র হামলায় একে একে উপড়ে ফেলা হল মসজিদের তিন-তিনটি গম্বুজ। আগে থেকে জ্বলতে থাকা হিংসার আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নিল। আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল সারা দেশ। হিংসার বলি হলেন কয়েক হাযার মানুষ ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে। কিন্তু ২৫ বছর আগের সেই দিন এখনও যেন টাটকা। রাম মন্দির না বাবরী মসজিদ? অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর মামলা চলার পর গত ৯ই নভেম্বর ২০১৯ শনিবার ১০৪৫ পাতার বিশাল বিবরণী সহ সর্বসম্মত রায় ঘোষিত হল। যাতে বাবরী মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়া হল।
পটভূমি
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মীয় দেবতা রামের জন্মভূমি ‘রাম জন্মভূমি’ নামে পরিচিত, যাকে হিন্দুরা তীর্থস্থান বলে বিশ্বাস করে থাকেন। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, অযোধ্যার যে স্থানে বাবরী মসজিদ নির্মিত, সে স্থানটি রামের জন্মভূমি। কিন্তু এর স্বপক্ষে ঐতিহাসিক কোন প্রমাণ নেই।[1] মোটামুটিভাবে ঐতিহাসিকেরা একমত যে, ১৫২৮ সালে ঐ অঞ্চল মুঘল শাসনের আওতাভুক্ত হয় এবং মুঘল সেনাপতি মীর বাকী মুঘল সম্রাট বাবরের নামে ‘বাবরী মসজিদ’ এর নামকরণ করেন।[2] জনসাধারণের মাঝে এই বিশ্বাস প্রচলিত যে, মীর বাকী একটি রাম মন্দির ধ্বংস করে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন কিন্তু এর পক্ষে যে ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়, তা বিতর্কিত।[3] প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার পর মসজিদটির ভূমির নিচে একটি কাঠামো আবিষ্কৃত হয়। কাঠামোটির বিভিন্ন জায়গায় সুস্পষ্টভাবে হিন্দু মন্দির এবং বৌদ্ধ স্থাপত্য ছিল বলে প্রমাণিত হয় নাই।[4] প্রায় চার শতাব্দী ধরে মসজিদটিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরাই প্রার্থনা করেছে। ১৮২২ সালে প্রথমবারের মত ফৈজাবাদ আদালতের এক চাকরিজীবী দাবী করেন যে, মসজিদটি যে মন্দিরের জমির উপরে অবস্থিত।[5] ১৮৫৩ সাল : নির্মোহী আখড়ার অনুগামীরা সশস্ত্র হামলা চালায় বাবরী মসজিদে। নির্মোহী আখড়া সংগঠন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঐ জমির উপরে তাদের দাবী জানায়। ১৮৫৫ সালে ঐ ভূখন্ডের দখল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে একটি অংশ হিন্দুদের পূজার্চনার জন্য চিহ্নিত করে ব্রিটিশ প্রশাসন।[6] ১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন সংঘর্ষ এড়াতে দেয়াল দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের প্রার্থনার জায়গা আলাদা করে দেয়। একই বছরে হিন্দুদের জন্য চিহ্নিত অংশে ফের মন্দির গড়ার চেষ্টা। আপত্তি জানায় মুসলিমরা।
১৯৩৪ সাল : হিংসা ভয়াবহ আকার নেয়। সংঘর্ষ শুরু হয় অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে।
২২শে ডিসেম্বর ১৯৪৯ সাল :
স্বাধীনতার দু’বছর পর। রাতের অন্ধকারে একদল কট্টরপন্থী মসজিদে ঢোকেন।
মসজিদের ভিতরে রামের বিগ্রহ রেখে দেন। ২৩শে ডিসেম্বর দেশ জুড়ে মুসলিম
সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে
অভিযোগ দায়ের করে। ২৪শে ডিসেম্বর ঐ জমিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে মসজিদে তালা
ঝুলিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।[7]
১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ : হিন্দুদের পূজোর জন্য মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ ফৈজাবাদ জেলা আদালতের। আধ ঘণ্টার মধ্যেই সেই তালা ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে হিন্দুদের বিরুদ্ধে। ১৪ই ফেব্রুয়ারী কালো দিবস পালন করেন মুসলিমরা। হিংসার আগুনে জ্বলে ওঠে দিল্লি, মেরাট-সহ উত্তরপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশ।
৯ই নভেম্বর, ১৯৮৯ সাল : তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর অনুমতি নিয়ে বাবরী মসজিদের কাছেই রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।[8]
নামকরণের ব্যুৎপত্তি :
ভারতবর্ষে
৩২৬ বছরব্যাপী মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা যহীরুদ্দীন মুহাম্মাদ বাবর
(১৫২৬-১৫৩১)-এর সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ
নির্মাণ করেন।[9] ‘বাবরী মসজিদ’ এ নামকরণ করা হয়েছে মুঘল সম্রাট বাবরের নামে, তিনিই এ নির্মাণ কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।[10] ১৯৪০ এর পূর্বে একে ‘মসজিদের জন্মস্থান’ বলা হত।[11]
বাবরী মসজিদ (ইংরেজি: Babri Mosque, হিন্দি: बाबरी मस्जिद, উর্দু: بابری
مسجد, অনুবাদ: বাবর-এর মসজিদ) ভারতের উত্তর প্রদেশের, ফৈজাবাদ যেলার
অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ছিল। বিশ্বাস
করা হয়, বাবরী মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত ছিল সেটাই ছিল হিন্দু ধর্মের অবতার
রামচন্দ্রের জন্মস্থান। এই বিষয়টি নিয়ে আঠার শতক থেকেই হিন্দু এবং মুসলিম
সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে, যা অযোধ্যা বিতর্ক নামে পরিচিত।
মসজিদের অভিলিখন থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে সেনাপতি মীর বাকী
১৫২৮-২৯ (৯৩৫ হিজরী) বর্ষে এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে করসেবক
দ্বারা এ মসজিদ আক্রমণ করা হয় এবং গুড়িয়ে দেওয়া হয়। যা পুরো দেশজুড়ে এক
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ্ফোরণ ঘটায়। এই মসজিদটি রামকোট (রামের দুর্গ)
হিলের উপর অবস্থিত ছিল।[12] হিন্দুদের মতে, মীর
বাকী পূর্বে অবস্থিত রামমন্দির ধ্বংস করে তারপর মসজিদ নির্মাণ করেছেন, একটি
মিথ ছাড়া এর পিছনে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।[13]
২০০৩ সালে ভারতের ভূমি জরিপ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা বাবরী মসজিদের
নীচে একটি পুরাতন স্থাপনার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন, কিন্তু তা কিসের
স্থাপনা সে বিষয়ে তারা কোন প্রমাণ পাননি।[14]
মসজিদের নির্মাণকৌশল :
বাবরী
মসজিদ তার সংরক্ষিত স্থাপত্য ও স্বতন্ত্র গঠনশৈলীর জন্য বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মসজিদটি সম্রাট আকবর দ্বারা গৃহীত ইন্দো-ইসলামী গঠনশৈলীর
প্রতীক ছিল। দিল্লীর সুলতানী এবং তার উত্তরাধিকারী মুঘল সাম্রাজ্যের
শাসকরা শিল্প এবং স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাদের নির্মিত অনেক
সমাধি, মসজিদ ও মাদ্রাসা সূক্ষ্ম নির্মাণকৌশলের নিদর্শন বহন করে। মুঘলদের
স্থাপত্য তুঘলক রাজবংশের স্থাপত্যের প্রভাব বহন কওে, যার একটি স্বতন্ত্র
গঠনশৈলী আছে। ভারতের সর্বত্র মসজিদসমূহের ভিন্ন ভিন্ন গঠনশৈলী আছে যা
বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এই নির্মাণগুলিতে আদিবাসী শিল্প ঐতিহ্য এবং
স্থানীয় কারিগরদের মার্জিত শৈলী ও দক্ষতা উভয়ই প্রকাশ পায়। মসজিদ নির্মাণে
আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক জলবায়ু, ভূখন্ড, উপকরণ ইত্যাদি প্রভাব ফেলতো। যার ফলে
বঙ্গ, কাশ্মীর ও গুজরাটের মসজিদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
মসজিদগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় মন্দির বা গার্হস্থ্য গঠনশৈলীর মধ্যে আবদ্ধ
ছিল না। বাবরী মসজিদ জানপুরের সুলতানী স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। পশ্চিম
দিক থেকে দেখলে এই মসজিদ জানপুরের আতালা মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[15]
আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা...বাবরী ধূলিসাৎ :
জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর। রাতের অন্ধকারে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে একদল মানুষ নিঃশব্দে রামলালার এক মূর্তি সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করে বাবরী মসজিদ প্রাঙ্গনে। তালা ভেঙে তারা ঢোকে। সরযূ নদী থেকে তারা পানি নিয়ে এসেছিল। সেই পানি দিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গনটি ধুয়ে তার উপর স্থাপিত হয় রামলালার মূর্তি। অযোধ্যার হনুমানগড়ি থেকেই তারা এই এলাকায় প্রবেশ করে। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ যেলার অযোধ্যা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইন-চার্জ ছিলেন পন্ডিত রামদেও দুবে। তিনি এই ঘটনায় একটি এফআইআর জারী করেন অভিরাম দাস, রামসকল দাস, সুদর্শন দাস এবং আরও প্রায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গা), ৪৪৮ (অবৈধ প্রবেশ), ২৯৫ (উপাসনা ক্ষেত্রের অসম্মান) ধারায়। এই এফআইআরে রামদেও দুবে লিখেছিলেন, সকাল ৭টায় আমি রামজন্মভূমিতে পৌঁছলে অযোধ্যা থানার কনস্টেবল মাতাপ্রসাদ আমাকে জানান, ৫০ থেকে ৬০ জন লোক তালা ভেঙে সীতা-রামের ছবি ও রামলালার মূর্তি বসায়। এই এফআইআরে বলা হয়, মসজিদে ঢুকতে গিয়ে সংঘর্ষও হয় দু’পক্ষের মধ্যে। আবার ১৯৮১ সালে, তিন দশক পর ৩রা ডিসেম্বর খুব ভোরে অভিরাম দাস ও আরও অনেকে মসজিদে ঢুকে পূজোর চেষ্টা করেছিলেন।
প্রশ্ন হল, কে এই অভিরাম দাস? তিনি কোথা থেকে এলেন? সাধুই বা হলেন কী করে? ১৯৪৯ সালের এফআইআরে তাঁর নাম ছিল। কবে তিনি মারা গেলেন? ৮১ সালের অভিযানেও কি এই অভিরাম দাসই নেতৃত্ব দেন? ১৯০৪ সালে অভিরামের জন্ম হয় বিহারের দারভাঙা যেলার বারহি গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন জয়দেব মিশ্র। গরীব ব্রাহ্মণ পরিবার। গ্রামের বাড়ি বাড়ি পূজো করতেন। বাবা জয়দেবের ছিল চার ছেলে ও এক মেয়ে। অভিরামের প্রকৃত নাম ছিল অভিনন্দন। অভিরামকে বাবা স্কুলে ভর্তি করলেও এক দিনও স্কুলে যাননি তিনি। চাকরি-বাকরিও কোনও দিন করেননি। বাবার মতো যজমানি শুরু করেন তিনি।
এর পর কীভাবে ও কেন অভিরাম অযোধ্যায় চলে আসেন তা স্পষ্ট নয়। নিজে ব্রাহ্মণ হলেও তিনি অব্রাহ্মণ সূর্য দাসকে নিজের গুরুঠাকুর মানেন। তার পরেই শুরু করে দেন রামলালা প্রতিষ্ঠা ও পূজোর কর্মসূচি।
এরপর হিন্দু জাতীয়তাবাদী লাইনের উত্থানে ৯২ সালের ৬
ডিসেম্বর বড় ভূমিকা নেয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো
ঐ বিতর্কিত স্থানে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শোভাযাত্রায় শামিল হয়েছিল
দেড় লাখ ভিএইচপি এবং বিজেপি ‘কর সেবক’। এছাড়া, অনুষ্ঠানে আদভানি, মুরলি
মনোহর জোশি ও উমা ভারতীর মত বিজেপি নেতা ভাষণ দিয়েছিলেন।[16]
শোভাযাত্রা চলাকালীন সময়ের প্রথম দিকে জনতা ক্লান্তিহীনভাবে স্লোগান
দিচ্ছিল। সহিংসতা প্রতিরোধে স্থাপনাটির চারদিকে পুলিশি বেষ্টনী তৈরী করা
হয়েছিল। দুপুরের দিকে এক যুবক বেষ্টনী অতিক্রম করে স্থাপনাটির উপরে চলে যায়
এবং গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে। এই ঘটনা ছিল সহিংসতার আগমনবার্তা। এরপর
উন্মত্ত জনতা কুঠার, হাতুড়ি এবং গাইতি দিয়ে ইমারতটি ভাঙা শুরু করে। কয়েক
ঘণ্টার মাঝে কাদা ও চুনাপাথর দ্বারা নির্মিত ইমারতটি মাটির সাথে মিশে যায়।[17]
২০০৯ সালে মনমোহন সিং লিবারহান কমিশনের প্রতিবেদনে ৬৮ জন বাবরী মসজিদ ধ্বংসের সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বিজেপি নেতা। দোষী ব্যক্তিদের নামের তালিকায় বাজপেয়ী, আদভানি, জোশি এবং বিজয় রাজে স্কিন্দিয়ার নাম ছিল। উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনটিতে সে সময়ে ইমারতটি ভাঙার সময় অযোধ্যার পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[18] সেদিন আদভানির নিরাপত্তার অঞ্জু গুপ্তা বলেছেন যে, আদভানি ও জোশির বক্তব্য জনতাকে আরো উন্মত্ত করে তুলেছিল।[19] প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কিছু বিজেপি নেতা মসজিদ ভাঙার সময়ে ‘কর সেবকদের থামতে দুর্বল অনুরোধ করেছিলেন... হয়ত মন থেকে অথবা গণমাধ্যমে সহানুভূতি পাবার জন্য’। কর সেবকদের পবিত্র গৃহে প্রবেশ করা কিংবা ইমারতটি ধ্বংস করা থেকে বিরত করার জন্য কেউ কোন অনুরোধ করে নি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, ‘নেতাদের কাজ তাদের মনের গহীনে বিতর্কিত ইমারতটি ভাঙার সুপ্ত ইচ্ছাকেই ফুটিয়ে তোলে’। প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে যে, ‘আন্দোলনের উদ্দেশ্য বর্তমানে (সেই সময়ে)... খুব সহজেই... ধ্বংসযজ্ঞটি থামাতে পারত।[20] ২০০৫ সালে সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান মলয় কৃষ্ণ ধর তার এক বইতে দাবী করেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিজেপি ও ভিএইচপির (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) নেতারা ইমারতটি (বাবরী মসজিদ) গুঁড়িয়ে দেওয়ার ১০ মাস আগেই এটি ভাঙার পরিকল্পনা করেছিল। বইটিতে ইস্যুটির ব্যাপারে পি.ভি. নরসিমা রাওয়ের পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়। বাবরী মসজিদ ধ্বংস ইসলাম বিরোধিতা নয়- ১৯৯২-এর ৬ই ডিসেম্বরের সিকি শতাব্দী পরে এমনই ব্যাখ্যা দিলেন আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ ভাইয়াজি জোশী। তাঁর মতে, বাবরী মসজিদ পরাধীনতা ও গোলামীর প্রতীক। তাকে ভাঙার অর্থ মুসলিম বিরোধিতা নয়। একই যুক্তিতে তিনি মনে করেন দিল্লীর ইন্ডিয়া গেটের মত ব্রিটিশ-স্মারকগুলিরও কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। অযোধ্যায় করসেবা করতে গিয়ে ১৯৯০-এ প্রাণ হারিয়েছিলেন কলকাতার দুই যুবক রাম ও শরদ কোঠারি। শুক্রবার তাঁদের নামে প্রতিভা সম্মান দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে হাযির ছিলেন আরএসএস নেতা। তিনি বলেন, বাবরী মসজিদ ইসলামের প্রতীক ছিল না। বাবরের মতো অত্যাচারী হামলাকারীর স্মারক ছিল সেটি। বাবরী ধ্বংস আসলে পরাধীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাঁর যুক্তি, সেই আন্দোলনে শামিল হতে গোটা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ করসেবক এসেছিলেন। কিন্তু অন্য কোনও ধর্মস্থানে হামলা হয়নি। এতেই স্পষ্ট যে ঐ আন্দোলন ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। আরএসএসের শীর্ষ নেতার মুখে এই ব্যাখ্যা শুনে স্বাভাবিক কারণেই জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে আরএসএস নেতা মুসলিম সমাজের কাছে কোনও বার্তা দিলেন কি না, উঠছে সে প্রশ্নও।
ইতিহাসবিদ ও তৃণমূল সাংসদ সুগতবসু মনে করেন, এটা আসলে আরএসএস-বিজেপির হিসাবী কৌশল। তিনি বলেন, দেশের জাতীয়তাবাদী সব নেতাই মনে করতেন ব্রিটিশ রাজশক্তি হল প্রভুত্বের প্রতীক। ব্রিটিশরাই আমাদের গোলাম করে রেখেছিলেন। অন্য কারও ক্ষেত্রে এই ধরনের গোলামীর প্রশ্ন ওঠেনি। সুগতবাবুর বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হ’ল লীন’। এটাই ভারত। তাই বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পিছনে জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরী আসলে অপচেষ্টা। কারণ দেশজুড়ে এখন বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে জনমত দানা বাঁধছে। তাই বাবরী মজসিদ ধ্বংসের কলঙ্কিত ইতিহাস যে মুসলিম বিরোধিতা নয়, আরএসএস-বিজেপিকে এটা বলতে হচ্ছে। ভাইয়াজি জোশীর বক্তব্যের সমর্থনে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, বাবরী ধাঁচাকে মসজিদ বলে আমরা ভাবি না। ওখানে দীর্ঘদিন কোনও উপাসনা হ’ত না। বাবরের অত্যাচারের স্মারক সে দিন ভাঙা হয়েছিল। এই ঘটনা মুসলিম বিরোধিতা নয়। কিন্তু এত দিন পর এই ব্যাখ্যা কি দেশজুড়ে বিজেপি-বিরোধী শক্তির উত্থানের চাপে? কৈলাস বলেন, হিন্দু সমাজ এক হলেই ষড়যন্ত্র হয়। বাবরীর পরও মন্ডল-কমন্ডল রাজনীতি হয়েছে। এখন আবার দলিত, পিছড়ে, ওবিসি নানা ভাগে হিন্দু সমাজকে ভাগ করা হচ্ছে।[21]
সাড়ে
বারোটা নাগাদ ভেঙে পড়ল প্রথম গম্বুজ। বাবরী মসজিদ চত্বরে দাঁড়িয়ে সাক্ষী
রইলেন দেবব্রত ঠাকুর। চার দিকে তাকিয়ে খুঁজলাম তেজশঙ্করকে। নেই,
ত্রিসীমানায় কোথাও তিনি নেই। তেজশঙ্কর, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষক।
প্রধান বিচারপতি বেঙ্কটচালাইয়ার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ করসেবা সুপ্রিম
কোর্টের আদেশ মেনে হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছিল। কিছুক্ষণ
আগেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেমন দেখছেন? হেসে জবাব দিয়েছিলেন, এভরিথিং
ইজ ফাইন। সেই কথোপকথনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এই তান্ডব শুরু হয়েছে। আর
পরিস্থিতি বুঝে কার্যত গা-ঢাকাই দিয়েছেন তেজশঙ্কর, দেশের শীর্ষ আদালতের
প্রতিনিধি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীর্ষ আদালতের এমন অবমাননা দেখবেনই বা কী করে!
দিনটা ছিল ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর। অকুস্থল অযোধ্যা হবে! [22]
আদভানীর রথযাত্রা থেকে তৈরী হল গণ-হিস্টিরিয়া। সে দিনের সাক্ষী সঞ্জয় সিকদার বলেন, গ্লানিতে নয়, লজ্জায় নয়, সাফল্যের আনন্দে ইস্তফা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ। আসলে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলার পরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশের মধ্যে দিশেহারা ভাব দেখা দিয়েছিল। সম্ভবত তারা বুঝে উঠতে পারছিল না কাজটা ঠিক হল, না ভুল হল। পরিণাম বা প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে। কল্যাণ সিংহ তাদের ঝিমুনি কাটাতেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। হাতে গরম কোনও প্রমাণ দাখিল করতে না পারলেও ঘটনার পরম্পরা থেকেই স্পষ্ট বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়াটা ছিল পুরোপুরি পরিকল্পিত।
কারা এ মামলা লড়েছে?
এ
বিশেষ মামলাটি লড়ছে ৩টি পক্ষ। এর মধ্যে দু’টি হিন্দু ও একটি মুসলিম পক্ষ।
মুসলিম পক্ষে লড়ছে মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড ভারতে ইসলামিক সম্পত্তি
রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এ বোর্ডের। অন্যদিকে হিন্দু পক্ষরা হলো- ডানপন্থি
রাজনৈতিক দল হিন্দু মহাসভা ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের সংস্থা নির্মোহী আখড়া।
১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভাঙার ১০ বছর ২০০২ সালে এলাহাবাদের উচ্চ আদালতে
অযোধ্যার ওই জায়গাটি নিয়ে মামলা করে এ তিন পক্ষ। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ওই
মামলার রায় দেওয়া হয়। রায়ে বাবরী মসজিদের ২.৭৭ একর জায়গা তিন পক্ষের মধ্যে
সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। আদালত জানান, ওই জায়গাটি তিন ভাগে বিভক্ত
করা উচিত। মুসলিম সম্প্রদায় এর তৃতীয় অংশটি পাবে। বাকি দুই অংশের মধ্যে মূল
যে অংশে বাবরী মসজিদ ছিল, সেটি পাবে হিন্দু মহাসভা। সে সময় আদালত এ
সংক্রান্ত ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণও দেন। আদালত বলেন, ওই জায়গাটি রামের
জন্মস্থান। সেখানে একটি হিন্দু মন্দির গুড়িয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং
প্রকৃত ইসলামী অনুশাসন মেনে বাবরী মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১১
সালে হিন্দু-মুসলিম সব পক্ষই ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতের সর্বোচ্চ
আদালতে আপিল করে।[23]
সুপ্রিম কোর্টের রায় :
বাবরী মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্ত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়। জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপর ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে দু’ভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নী ওয়াক্ফ বোর্ড। তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রীম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রীম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবী করেন বাবরী মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল। ভারতের বাবরী মসজিদ মামলার রায়ের খবর ও মূল্যায়ন শুধু উপমহাদেশেই নয়, বিশ্ব মিডিয়াতেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ হচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টির ১৩৪ বছর পর এই মামলার রায় বের হয়।
৯ই নভেম্বর ২০১৯ ছুটির দিন কোর্ট বসিয়ে রায় ঘোষণা করা হ’ল এবং সবরকম দলীল-যুক্তির বাইরে গিয়ে একটি অস্বাভাবিক রায়ে ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদের জমি দিয়ে দেওয়া হ’ল হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের জন্য। বিশ্লেষকরা বলেন, বাবরী মসজিদ মামলার এই রায়টি হ’ল ভারতের মুসলমানদের প্রতি হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের তৃতীয় আঘাত। প্রথমে এনআরসির মাধ্যমে লাখ লাখ মুসলমানকে অ-ভারতীয় সাব্যস্ত করা হল। আসাম থেকে শুরু করে এনআরসির এ ধারা এখন সারা ভারতজুড়েই চালু করার খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং বিজেপি সভাপতি কট্টর হিন্দুবাদী অমিত শাহ-এর ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, তা একমাত্র মুসলমানদের জন্যই করা হচ্ছে। কারণ এনআরসিতে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের ভিন্ন আইনে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় আঘাত হ’ল, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করে সেই রাজ্যটিকে পুরোপুরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষায়িত রাজ্য কাশ্মীরকে খন্ড-বিখন্ড করে, প্রাদেশিক মর্যাদাও বিলুপ্ত করা হয়েছে। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে সেখানকার মুসলমানদের। এই অবরুদ্ধতা নানা রূপে নানা মাত্রায় চালানো হচ্ছে সেখানে।
এখন শোনা যাচ্ছে, মুসলমানদের ওপর মোদি সরকারের চতুর্থ যে আঘাতটি আসতে যাচ্ছে সেটি হচ্ছে, মুসলিম পারসনাল ল বোর্ডকে বাতিল করে দিয়ে মুসলিম পারিবারিক আইন উঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ। পুরো ভারতজুড়ে অভিন্ন পারিবারিক আইন ও দন্ডবিধি প্রয়োগের পাঁয়তারা শুরু করেছে বিজেপি সরকার। আঘাত একের পর এক আসছেই ভারতের মুসলমানদের ওপর।
ভারতের প্রধান
বিচারপতি গগৈ রায়দানের সময় যেসব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে,
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এখানে রামের জন্মভূমি ছিল। তবে কারো বিশ্বাস যেন
অন্যের অধিকার হরণ না করে। বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে জমির মালিকানা নির্ধারণ
করা সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়েছেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার
রিপোর্টের উপর। তারা বলেছে, মসজিদের নিচে আরো একটি প্রাচীন কাঠামো ছিল। আর
সেটা কোনো ইসলামী স্থাপত্য ছিল না। তবে বিচারপতি গগৈ এও বলেন, মসজিদের নিচে
যে কাঠামোর সন্ধান মিলেছিল তা যে কোনো মন্দিরেরই কাঠামো ছিল,
পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের রিপোর্টে তাও কিন্তু বলা হয়নি। গগৈ আরো বলেছেন, যদি
বাবরী মসজিদের নিচের কাঠামোটি কোনো হিন্দু স্থাপত্য হয়েও থাকে, তাহলেও এত
দিন পর ওই জমিকে হিন্দুদের জমি হিসেবে মেনে নেয়া ঠিক হবে না। সুপ্রিম
কোর্টের রায়ে আরো বলা হয়েছে, ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাবরী মসজিদে
নিয়মিত ছালাত হয়েছে। এ সময় হিন্দুরা রাত্রিকালীন ছালাতের পর মসজিদের
মিম্বরে যে রামলালা ও সীতার মূর্তি স্থাপন করে, সেটিও ছিল অন্যায় ও বেআইনী
কাজ। এ ছাড়া ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর কথিত করসেবকদের হাতে বাবরী মসজিদ ধ্বংস
করাও ছিল বেআইনী। তবে বাবরী মসজিদের মামলাধীন জমির ওপর রামলালার অধিকার
স্বীকার করে নেয়া আইনশৃঙ্খলা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বহাল রাখার
প্রশ্নের সাথে যুক্ত।[24]
মন্দির
পক্ষের অনেকের বিশ্বাস ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে বাবরী মসজিদ
দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামচন্দ্রের। সুপ্রিম কোর্ট রায়
দিয়েছে, মসজিদ নির্মিত হয়েছিল অনৈইসলামী এক কাঠামোর উপর। একটানা ৪০ দিন
শুনানী হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয় বেঞ্চ।[25]
সংবিধান- শীর্ষ আদালতের রায়ের শুরুতেই রয়েছে সংবিধানের কথা। রায়ের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক মূল্যবোধ রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং সে কারণেই ৪১ দিন ধরে এই আদালতে বিষয়টির আইনগত সমাধানের উদ্দেশ্যে শুনানী হয়েছে।
ধ্বংস- বাবরী মসজিদ যখন ধ্বংস হয়েছিল, সে সময়ে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার ছিল এবং কেন্দ্র ছিল পি ভি নরসীমা রাওয়ের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। রায়ের ৯১৩-১৪ পাতায় লেখা হয়েছে, মসজিদ ধ্বংস করা ছিল স্থিতাবস্থা এবং আদালতককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ। মসজিদ ধ্বংস করা এবং ইসলামিক সৌধ বিলোপ করা আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন।
ন্যায়- রায়ে ন্যায় শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে ১০১ বার। রায়ে ন্যায় সম্পর্কিত বিষয়ে আইনবিদদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি তো দেওয়া হয়েছে, এমনকি সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদও উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে ন্যায় প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে।
বিশ্বাস- রায়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে প্রমাণাদি, বিশ্বাস নয়। তবে একটি ১১৬ পাতার অতিরিক্ত সংযুক্ত অংশে বিশ্বাসের প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার শেষে বলা হয়েছে, ফলে শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের বিশ্বাসমতে সেখানে মসজিদ নির্মাণের আগেও ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল এবং সে বিশ্বাসের কথা বিভিন্ন নথি ও মৌখিক প্রমাণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে।
সরকার- স্থানীয় এক জমি সমস্যা সমকালীন ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পিছনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে বিভিন্ন সরকার এবং তা ঘটেছে ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকে, চলেছে ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। ব্রিটিশরা বাবরীর বাইরে এবং ভেতরে দেওয়াল তুলেছিল, রাজীব গান্ধী তালা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর ১৯৯৩ সালে নরসীমা রাও ৬৭.৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন।
জমি- এই গোটা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২.৭৭ একর জমি। রায়ের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অযোধ্যা শহরের ১৫০০ বর্গগজ জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের কথা। বিতর্কিত জমি হিন্দুদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুন্নী সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড অন্যত্র ৫ একর জমি পাবে।
নরেন্দ্র মোদী- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯৯০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর গুজরাটের সোমনাথ থেকে আদভানীর নেতৃত্বে যে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল তার অন্যতম সংগঠক। এ যাত্রা মাঝপথেই শেষ হয়ে যায় যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব সমস্তিপুরে আদভানিকে গ্রেফতারির নির্দেশ দেন। পরবর্তী বছরগুলিতে রামমন্দির বিজেপির জনসমর্থন বাড়াতে থেকেছে এবং ২০১৪ সালে ঢেউ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন মোদী।
নির্মোহী আখড়া- রামনন্দী ধারার
এই আখড়া অন্যতম বড় ও শক্তিশালী আখড়া। দশকের পর দশক ধরে সমস্ত স্তরে
ব্যাপকভাবে আইনী লড়াই চালিয়ে এসেছে তারা। ২০১০ সালে এলাহাবাদ কোর্ট এই
আখড়াতে বিতর্কিত ২.৭৭ একরের এক তৃতীয়াংশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্ট
অবশ্য তাদের সেবায়েতের অধিকারের দাবীকে নাকচ করে দিয়েছে।[26]
পুরাতাত্ত্বিকরা বলেছিলেন যে, মসজিদের নীচে একটি ঐতিহাসিক কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে সেটি মন্দির কিনা তা তারা বলতে পারেননি। সরকারী উকিলকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ৪০০০ বছর হ’ল সোনা আবিষ্কার হয়েছে, তো ৭০০০ বছর আগে সোনার লঙ্কা এল কোথা থেকে? স্বভাবতই মেলেনি এ প্রশ্নের জবাবও। ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০১৬ সালে বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির তৈরীর অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোডবে, ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির-এর আপিল বেঞ্চ। একটানা চল্লিশ দিন শুনানির পর এ রায় দিল।
বাবরী মসজিদের জমির মালিকানার পক্ষে সব ধরনের প্রমাণ সুপ্রিমকোর্ট স্বীকার করেছে। অযোধ্যায় ১৫২৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ২২-২৩শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত ছালাত আদায়ের বিষয়টিও বিচারকরা স্বীকার করেছেন। হঠাৎ গত শতাব্দী থেকে হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা পুনর্জাগরণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে এই ইস্যু সামনে আনা হয়। এতে বিজেপি ও চরম হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বেশ সুবিধা পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলো অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নিচে মন্দিরই ছিল। সুতরাং রাম মন্দির থাকা দিবাস্বপ্নের মতো।
তৃতীয়ত: অযোধ্যার বাবরী মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা হিন্দুত্বকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনন্য সুযোগ হিসাবে কাজ করেছে।
চতুর্থত: ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে
কেন্দ্রীয় সরকার মসজিদ ধ্বংসের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ
আদালতের বিচারক মনমোহন সিং লিবারহানের নেতৃত্বে লিবারহান কমিশন গঠন করে। ১৬
বছরে ৩৯৯ বার বৈঠকের পর ২০০৯ সালের ৩০শে জুন কমিশন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর
কাছে ১,০২৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৯২ সালের
৬ই ডিসেম্বরের ঘটনা অপ্ররোচিত কিংবা অপরিকল্পিত ছিল না বলে প্রতিবেদন দেয়।[27]
লক্ষ্যণীয় যে, ১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরী মসজিদ নির্মাণ করলেও ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত একে ঘিরে কোনোরকম বিতর্ক ছিল না। ১৮৮৫ সালে মহান্ত রঘুবর দাস ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরী মসজিদের বাইরে চাঁদোয়া টাঙানোর আবেদন জানান যা আদালত কর্তৃক নাকচ হয়ে যায়। ব্রিটিশ আমল জুড়ে বাবরী মসজিদ নিয়ে এটি ছাড়া আর কোন ইস্যু তৈরী হয়নি। ভারত স্বাধীন হবার পর ১৯৫০ সালে রামলালার মূর্তিগুলির পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন করেন গোপাল শিমলা বিশারদ। মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করেন পরমহংস রামচন্দ্র দাসও। ১৯৫৯ সালে বাবরী মসজিদের অধিকার চেয়ে মামলা করে নির্মোহী আখড়া। লক্ষ্যণীয় যে, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির পূর্বসূরী নথুরাম গডসে কর্তৃক গান্ধীকে হত্যার পর নেহেরু ঘোষিত সেক্যুলার ভারতে এ গোষ্ঠীগুলি তখন নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।
তবে ঐতিহাসিক এই রায়ের প্রধান ৯টি বিষয় হলো-
১. রায়ে বলা হয়েছে- বাবরী মসজিদ কোনো খালি জমির উপর নির্মিত হয়নি। ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, পুরাতত্ত্ব বিভাগ তাদের যে রিপোর্টে জানিয়েছিল, ঐ বিতর্কিত জমিতে তার আগে একটি কাঠামো ছিল। যা সম্ভবত দ্বাদশ শতকে নির্মিত হয়েছিল। তবে মন্দিরই ছিল কিনা তা পুরাতত্ত্ব বিভাগ স্পষ্ট করে জানায়নি।
২. অযোধ্যায় মসজিদের দাবী কেউ কখনও ছেড়ে দেয়নি। ৯২ সালে মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তারপর ছালাত পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মসজিদের দাবী ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
৩. রায়ে বলা হয়- মুসলমানদের কোনোভাবে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। মসজিদ নির্মাণের জন্য বিতর্কিত স্থান থেকে দূরে কিন্তু অযোধ্যাতেই পাঁচ একর জমি দিতে হবে সরকারকে। যাতে একটি নব্য মসজিদ সেখানে গড়ে তোলা যায়।
৪. বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে শী‘আ ওয়াকফ বোর্ডের দাবী খারিজ করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে বলেছে, রামলালা বিরাজমান কোনো আইনী ব্যক্তি নন। নির্মোহী আখড়াও তাই জমির মালিকানা দাবি করতে পারে না। তারা কেবল রক্ষণাবেক্ষণ করত।
৫. আপাতত জমির মালিকানা যাবে সরকারের হাতে। সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্টি বোর্ড তৈরি করবে।
৬. বিতর্কিত জমির ভেতরের চত্বর ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে তুলে দিতে হবে। ওই ট্রাস্টি বোর্ডই ঠিক করবে তারা সেখানে কী নির্মাণ করবে।
৭. বিতর্কিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে হবে ভারত সরকারকে।
৮. রাম মন্দির ন্যাস কমিটির ভূমিকাকেও গুরুত্ব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জমির মালিকানা নিয়ে নির্মোহী আখড়ার দাবী খারিজ করলেও তাদেরকে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত ট্রাস্টের সদস্য করতে হবে।
৯. ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায় হল সর্বসম্মত। রায় নিয়ে পাঁচ জন বিচারপতি সহমত হয়েছেন।[28]
মুসলিমদের নিকট হতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নামে জোর করে মসজিদ ছিনিয়ে নিয়ে সেইস্থলে মন্দির বানিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদকে যাহির করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং ভারতীয় ক্ষমতাসীন দল তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে একে রাজনীতির ঘুটি বানিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলিকে বিরান করার চেষ্টা চালায়? অথচ তাদের জন্য সেখানে প্রবেশ করা বিধেয় ছিল না ভীত অবস্থায় ব্যতীত। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি (বাক্বারাহ ২/১১৪)। হে আল্লাহ! তুমি যালেমদের থেকে ভারতীয় মুসলিমদেরকে এবং তাদের মসজিদসমূহকে রক্ষা কর। আমীন!
[লেখক : সম্পাদক. মাসিক হারাবতী ও প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, জয়পুরহাট যেলা]
[1]. 'Timeline: Ayodhya holy site crisis' BBC News, ১৭ অক্টোবর ২০০৩।
[2]. Burjor Avari (2013) Islamic Civilization in South Asia: A History of Muslim Power and Presence in the Indian Subcontinent Routledge পৃ. ২৩১, ২৪৭।
[3]. Ram Sharan Sharma (2003) ÒThe Ayodhya IssueÓ Layton, Robert; Thomas, Julia Destruction and Conservation of Cultural Property Routledge, পৃষ্ঠা ১২৭-১৩৭।
[4]. Burjor Avari (2013), Islamic Civilization in South Asia: A History of Muslim Power and Presence in the Indian Subcontinent Routledge পৃষ্ঠা ২৩১, ২৪৭।
[5]. S.P Udayakumar (আগস্ট ১৯৯৭), 'Historicizing Myth and Mythologizing History: The ‘Ram Temple’ Drama', Social Scientist- 25 (7)|
[6]. Peter van der Veer (1994) Religious nationalism: Hindus and Muslims in India, Berkeley, CA: University of California Press পৃষ্ঠা ১৫৩।
[7]. 'Timeline: Ayodhya holy site crisis' BBC News, সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৪।
[8]. https://www.anandabazar.com/national/babri demolition-anniversarybabri-ram-mandir-ayodhya-dispute-an-interactive-timeline-of-events-dgtl-1.719034).
[9]. (http://at-tahreek.com/site/show/3765) |
[10]. Christopher John Fuller (2004), The Camphor Flame: Popular Hinduism and Society in India, Princeton University Press, পৃষ্ঠা ২৬২.
[11]. Ramachandra Guha (2007) India After Gandhi MacMillan, পৃষ্ঠা ৫৮২-৫৯৮.
[12]. Alf Hiltebeitel, Rethinking India’s Oral and Classical Epics: Draupadi among Rajputs, Muslims, and Dalits, University of Chicago Press, পৃষ্ঠা ২২৭।
[13]. S.P Udayakumar, "Historicizing Myth and Mythologizing History: The ‘Ram Temple’ Drama,ÓSocial Scientist 25|
[14]. Encyclopedia of Britanica
[15]. The Three Way Divide, Outlook, ৩০ September 2010|
[16]. Mark Tully (৫ ডিসেম্বর ২০০২) ,‘‘Tearing down the Babri Masjid,’’ BBC News|
[17]. Ramachandra Guha (2007), India After Gandhi MacMillan, পৃষ্ঠা ৫৮২-৫৯৮।
[18]. 'Uproar over India mosque report: Inquiry into Babri mosque’s demolition in 1992 indicts opposition BJP leaders,' Al Jazeera ২৪ নভেম্বর 2009|
[19]. V. Venkatesan, (১৬ জুলাই ২০০৫)| 'In the dock, again Frontline 22 (15)|
[20]. Report: Sequence of events on December 6 , NDTV, নভেম্বর ২৩, ২০০৯।
[21]. https://www.anandabazar.com/ national/babri-new-political-theory-of-rss-1.
[22]. https://www.anandabazar.com/national/babri-demolition-anniversary-failure-of-police-and-judicial-forces-in-restricting-the-mob-dgtl-1.718932.
[23].https://www.banglanews24.com/international/news/bd/.
[24].http://www.dailynayadiganta.com/sub editorial/456102/%E0%A)
[25].https://sylhetvoice.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BE.
[26].https://bengali.indianexpress.com/explained/ayodhay-judgement-ram-mandir-construction-babri-masjid-demolition-supreme-court.
[27]. https://www.thedailycampus.com/mukto_column/.
[28]. https://www.be.bangla.report/post/45380-ceR0J2BxA.