স্বপ্নে এলাহী ইশারা পেয়ে মুসলিম হন জন মাইপোপল!

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9690 বার পঠিত

আবু বকর জন মাইপোপল। তিনি বিশপ জন মাইপোপল নামেও পরিচিত। তানজানিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বিলোসায় ১৯৩৬ সালের ২২শে ডিসেম্বরে তাঁর জন্ম। চার্চের পরিবেশেই মার্টিন বড় হন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে মার্টিন তৃতীয়। মার্টিনের ইচ্ছা ছিল পুলিশ হওয়ার আর মা-বাবা চাইতেন মার্টিন হবে একজন খ্রিস্টান পুরোহিত। কিন্তু তিনি খাঁটি মুসলিম হয়ে গেলেন।

মার্টিনের বাবা ছিলেন একজন পুরোহিত। তিনি সব সময় মার্টিনকে পুরোহিত হওয়ার পরামর্শ দিতেন। যেহেতু মার্টিনের অন্য কোনো ভাই ছিল না, বাবা চাইতেন তাঁর একমাত্র ছেলেই হবে পুরোহিত ধর্মযাজক। মার্টিনের বাবা ছিলেন চার্চের একজন নেতৃস্থানীয় লোক। তাই তিনি বলতেন, মার্টিন! তুমি পুরোহিত হও, এটাই তোমার জন্য উত্তম হবে।

১৯৬০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী। মার্টিন একজন শিক্ষানবিশ ধর্মযাজক হিসাবে চার্চে যোগদান করেন। ফলে খ্রিস্টান ধর্ম ও এর শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান অর্জিত হয়। ১৯৭৩ সালে মার্টিন জার্মানিতে যান ডিগ্রী কোর্স সম্পন্ন করার জন্য। ওই বছরই সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি একজন উচ্চপদস্থ ধর্মযাজক হিসাবে নিযুক্তি লাভ করেন। চার্চের আগের ধর্মযাজক বিদায় নিলে মার্টিনকেই চার্চের প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।

১৯৮৩ সালে তিনি আবার জার্মানিতে মাস্টার্স ডিগ্রী করার জন্য গমন করেন। সেখানেই তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। জার্মানি থেকে তিনি কেনিয়ায় যান একটি সভায় যোগদানের জন্য। তাঁকে সেখানে আলোচনা করতে হয় কিভাবে পূর্ব আফ্রিকায় খ্রিস্টান ধর্মের বিকাশ করা সম্ভব হবে তা নিয়ে। তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল ইসলামকে প্রতিহত করার পথ ও পন্থা নিয়ে। এ প্রকল্পে তাঁদের সংগঠন ৫২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এ সময় আলোচনার প্রস্ত্ততির জন্য মার্টিন ইসলামের ওপর বেশ কিছু পুস্তক পাঠ করেন। তিনি পবিত্র কুরআনের অনুবাদ পড়ারও সুযোগ পান। এতে মার্টিনের মনে নানা প্রশ্নের উদ্ভব হয়। তিনি তাঁর শিক্ষকদের সেসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু তাঁরা প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হননি। নিরুপায় হয়ে মার্টিন বাইবেল আবার অধ্যয়ন করেন। লক্ষ্য ছিল নিজ থেকেই তাঁর মনের জাগ্রত প্রশ্নের সমাধান খুঁজে বের করবেন। তাঁর একটি প্রশ্ন ছিল, কেন যিশু ক্রুশবিদ্ধ হলেন?

বাইবেলের আলোকে তিনি তাঁর জবাব পাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতে তিনি কোনো জবাবই খুঁজে পেলেন না। তাঁর অন্য প্রশ্ন ছিল যিশু মহান আল্লাহর সন্তান হলেন কিভাবে? তারও কোনো জবাব পেলেন না মার্টিন। বাইবেলের আলোকে প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে মার্টিন ঠিক করলেন ইসলাম থেকে তিনি তার একটা জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবেন। তখন থেকে তিনি বহু বই পড়া শুরু করলেন। এরই মধ্যে মার্টিন তাঁর মাস্টার্স সমাপ্ত করে আবার তানজানিয়ায় ফিরে গিয়ে ধর্মযাজকের পদে যোগদান করলেন। তিনি চেষ্টা করলেন অতীতকে ভুলে যেতে। এর মধ্যে মার্টিন এক রাতে এক স্বপ্ন দেখলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে জাগিয়ে তুললেন। স্ত্রী বললেন, মার্টিন স্বপ্নে ইসলামের কোনো এক নবীর কথা বারবার উচ্চারণ করছিল। মার্টিন স্ত্রীর কথা শুনে কিছুই বললেন না। সকালে খাওয়া-দাওয়া সেরে তিনি বেরিয়ে পড়লেন শহরে। বাসার জন্য বিভিন্ন জিনিস নিয়ে তিনি যখন ঘরে ফিরছিলেন তখন ছিল মাগরিব ছালাতের সময়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি মসজিদে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। তখন তাঁর পরনে ছিল খ্রিস্টান ধর্মযাজকের পোশাক। তিনি যখন মসজিদে ঢুকলেন তখন মুছল্লীরা কিছুটা বিস্মিত হ’ল। তারা তাঁকে মসজিদে ঢোকার কারণ জিজ্ঞেস করল।

মার্টিন জানালেন, তিনি তাদের সঙ্গে ছালাত পড়বেন। মার্টিন ইমাম শেখ আহমারার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। আগে থেকেই আহমারার সঙ্গে মার্টিনের পরিচয় ছিল। মার্টিন আহমারার কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। ইমাম সাহেব মার্টিনের প্রস্তাব শুনে এটাকে নিছক কৌতুক বলে ভাবলেন। অথচ মার্টিন ছিলেন খুবই সিরিয়াস। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেনই, করবেন। ইমাম ছাহেব মার্টিনকে জুতা খুলে পবিত্র হয়ে আসতে বললেন। ইমাম ছাহেব মার্টিনের হাত ধরলেন এবং তাঁকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান করে নেন। এভাবেই আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়িত হল। খ্রিস্টান ধর্মযাজক জন মাইপোপল মার্টিন মুসলিম আবু বকর জন মাইপোপলে পরিণত হলেন।

(তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট)



আরও