জুম‘আর পূর্বে করণীয় : একটি বিভ্রান্তি নিরসন

আহমাদুল্লাহ 1123 বার পঠিত

ভূমিকা : জুম‘আর সাথে সম্পৃক্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাযহাবী ভাইগণ না বুঝেই অযথা ফেতনা করে থাকেন। তন্মধ্যে কাবলাল জুম‘আ তথা জুম‘আর পূর্বে নির্দিষ্টভাবে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার বিষয়টিও রয়েছে। এ সম্পর্কে তারা অনেক দলীলও পেশ করেছেন। মূলত জুম‘আর পূর্বে ইচ্ছামত নফল ছালাত পড়া যায়। এ ব্যাপারে কোন ধরা বাঁধা সংখ্যা নেই। নিম্নে আমরা এমনই একটি বিষয়ের অবতারণা করব ইনশাআল্লাহ। অনেকেই চার রাক‘আতকে নির্দিষ্ট করে থাকেন। তাদের দলীলগুলি নিমণরূপ।-

(১) মারফূ দলীলসমূহ :

দলীল-১ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ رَبِّهِ قَالَ: حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، عَنْ مُبَشِّرِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ حَجَّاجِ بْنِ أَرْطَاةَ، عَنْ عَطِيَّةَ الْعُوفِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، لَا يَفْصِلُ فِي شَيْءٍ مِنْهُنَّ ‘আমাদেরকে মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে ইয়াযীদ বিন আব্দু রবিবহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাক্বিইয়া মুবাশ্বির বিন উবায়দ হতে, তিনি হাজ্জাজ বিন আরতাত্ব হতে, তিনি আত্বিইয়া আওফী হতে, তিনি ইবনে আববাস হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (ইবনে আববাস) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত পড়তেন। মাঝে কোন সালাম ফেরাতেন না’।[1]

তাহক্বীক্ব :

(১) শায়েখ আলবানী (রহঃ) এই হাদীছকে বাতিল বলেছেন। তিনি বলেন, এটি ত্বাবারানী আল-মুজামুল কাবীর (৩/১৭২/১) গ্রন্থে ‘বাক্বিইয়া ইবনুল ওয়ালীদ হতে’.. মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীছটিকে ইবনে মাজাহ তার ‘সুনান’ গ্রন্থে (১/৩৪৭) উক্ত সূত্রেই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘জুম‘আর পরে চার রাক‘আত’-এ অংশটুকু ব্যতীত বর্ণনা করেছেন।

যায়লাঈ নাছবুর রায়াহ (২/২০৬) গ্রন্থে বলেছেন, এর সনদটি খুবই দুর্বল। মুবাশ্বির বিন উবায়েদকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। আর হাজ্জাজ ও আতিইয়াহ তারা উভয়েই দুর্বল’।[2]

(২) হাফেয যায়লাঈ (রহঃ) বলেছেন, وَسَنَدُهُ وَاهٍ جِدًّا، فَمُبَشِّرُ بْنُ عُبَيْدٍ مَعْدُودٌ فِي الْوَضَّاعِينَ، وَحَجَّاجٌ. وَعَطِيَّةُ ضَعِيفَانِ এই সনদটি খুবই দুর্বল। মুবাশ্বির বিন উবায়দকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। আর হাজ্জাজ ও আত্বিইয়া উভয়ই দুর্বল’। [3]  

(৩) ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেন, رَوَاهُ ابْن ماجة بِإِسْنَاد ضَعِيف جد ইবনে মাজাহ একে অত্যন্ত যঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন। (খুলাছাতুল আহকাম হা/১৮৫১)। অন্যত্র বলা হয়েছে, رَوَاهُ ابْن مَاجَه. وَهُوَ حَدِيث بَاطِل اجْتمع فِيهِ هَؤُلَاءِ الْأَرْبَعَة، وهم ضعفاء، ومبشر وضّاع صَاحب أباطيل ইবনে মাজাহ একে বর্ণনা করেছেন। এটি বাতিল হাদীছ। এখানে অত্র চারজন যঈফ রাবী একত্রিত হয়েছেন। আর মুবাশ্বির হলেন (হাদীছ) জালকারী, বাতিল (রেওয়ায়াত) বর্ণনাকারী (হা/২৮৭২)

(৪) বদরুদ্দীন ‘আয়নী হানাফী (রহঃ) বলেছেন, وسنده واهِ جداً؛ لأن فيه مبشر ابن عبيد وهو معدود في الوضاعين، وفيه حجاج وعطية وهما ضعيفان এর সনদিট খুবই দুর্বল। কেননা এখানে মুবাশ্বির বিন উবায়েদ আছেন। আর তাকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। আর এখানে হাজ্জাজ ও আত্বিইয়া রয়েছেন। উভয়ই যঈফ’।[4]  

দলীল-২ : حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ الْبَاقِي الْمِصِّيصِيُّ، ثنا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ الْحِمْصِيُّ، ثنا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ مُبَشِّرِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ أَرْطَاةَ، عَنْ عَطِيَّةَ الْعَوْفِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ ‘ইয়াহইয়া বিন আব্দুল বাক্বী আল-মিছছীছী আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেছেন) আমর বিন ওছমান আল-হিমছী আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেছেন) বাক্বিইয়া ইবনুল ওয়ালীদ আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন মুবাশ্বির বিন উবায়দ হতে, তিনি হাজ্জাজ বিন আরতাত্ব হতে, তিনি আত্বিইয়া আল-আওফী হ’তে, তিনি ইবনে আববাস হতে (বর্ণনা করেছেন)। তিনি (ইবনে আববাস) বলেছেন, (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত পড়তেন। মাঝে কোন সালাম ফেরাতেন না’।[5]

তাহক্বীক্ব : এটাও বানোয়াট। কেননা এর সনদে মুবাশ্বির বিন উবায়েদ নামী উপরোল্লিখিত মহা মিথ্যুক রাবী রয়েছেন। এতদ্ব্যতীত এখানে বাক্বিইয়া ইবনুল ওয়ালীদ, হাজ্জাজ বিন আরত্বাত্ব এবং আত্বিইয়া আল-আওফী রয়েছেন। যাদের সম্পর্কে উপরে আলোচিত হয়েছে।

দলীল-৩ : حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نا شَبَابٌ الْعُصْفُرِيُّ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّهْمِيُّ قَالَ: نا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّلَمِيُّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، يَجْعَلُ التَّسْلِيمَ فِي آخِرِهِنَّ رَكْعَةً ‘আমাদেরকে আহমাদ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে শাবাব উছফুরী খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস-সাহমী আমাদেরকে খবর প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, হুছায়ন বিন আব্দুর রহমান আস-সুলামী আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন আবূ ইসহাক্ব হতে, তিনি আছেম বিন যামরাহ হতে, তিনি আলী হতে। তিনি (আলী রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে চার রাক‘আত পড়তেন। এবং চার রাক‘আতের শেষে (চার রাকআত শেষ করে) সালাম ফেরাতেন’। [6]

তাহক্বীক্ব : যঈফ হাদীছ। ইমাম ত্বাবারানী হাদীছটির শেষে বলেছেন, لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ إِلَّا حُصَيْنٌ، وَلَا رَوَاهُ عَنْ حُصَيْنٍ إِلَّا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّهْمِيُّ স্রেফ হুছাইন এই হাদীছটি আবূ ইসহাক্ব হ’তে বর্ণনা করেছেন। আর হুছাইন হতে শুধুমাত্র মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস-সাহমী এটা বর্ণনা করেছেন ()।

হাদীছটি যঈফ হওয়ার কারণগুলি নিমণরূপ।-

(১) আলবানী (রহঃ) একে মুনকার বলেছেন’।[7]

(২) ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّهْمِيُّ وَهُوَ ضَعِيفٌ عِنْدَ الْبُخَارِيِّ وَغَيْرِهِ وَقَالَ الْأَثْرَمُ إِنَّهُ حَدِيثٌ واه ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস-সাহমী বুখারী ও অন্যদের নিকটে যঈফ। আছরাম বলেছেন, তার হাদীছ অত্যমত্ম দুর্বল’। [8]

(৩) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, ولا يُتابَعُ عليه তাকে সমর্থন করা হয় না (আত-তারীখুল কাবীর, রাবী নং ৪৮১; আল-মুগনী, রাবী নং ৫৭২৭)

সুতরাং জমহুর মুহাদ্দিছদের মতে তিনি যঈফ।

অপর রাবী আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) একজন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। তিনি ছিক্বাহ-মুদাল্লিস রাবী। যেমন ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে আছে যে, كثير التدليس ويعرف بالإمام তিনি অত্যধিক তাদলীসকারী ও ইমাম হিসাবে পরিচিত (রাবী নং ৪৫)। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তাঁকে স্বীয় ‘ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (রাবী নং ৯১)। ‘যিকরুল মুদাল্লিসীন’ (রাবী নং ৯), ‘আল-মুদাল্লিসীন’ প্রভৃতি গ্রন্থে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে (রাবী নং ৪৭)।

শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁকে মুদাল্লিস রাবী বলেছেন’।[9] 

দ্বিতীয়ত : আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ আস্থাভাজন। কিন্তু তিনি তার ইখতিলাত্ব থাকার সাথে সাথে মুদালিস্নসও (, হা/২০৩৫)

এই হাদীছটি সম্পর্কে শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ)  বলেছেন, এই বর্ণনাটি যঈফ। (১) আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ মুদালিস্নস (দ্র. ছহীহ ইবনে হিববান, আল-ইহসান ১/৯০; ত্বাবাক্বাতুল মুদালিস্নসীন, পৃ. ৫৮)। (২) আবূ ইসহাক্ব শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হয়েছিলেন (ফাতাওয়া ইলমিইয়া ১/৪৪৮)

দলীল-৩ : حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ قَالَ: نا سُلَيْمَانُ بْنُ عُمَرَ بْنِ خَالِدٍ الرَّقِّيُّ قَالَ: نا عَتَّابُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ خُصَيْفٍ، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا ‘আমাদেরকে আলী বিন সাঈদ আর-রাযী হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সুলায়মান বিন ওমর বিন খালেদ আর-রাক্কী আমাদেরকে খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আত্তাব বিন বাশীর আমাদেরকে সংবাদ প্রদান করেছেন খুছায়ফ হতে, তিনি আবূ উবায়দাহ হতে, তিনি আব্দুল্লাহ হ’তে, তিনি নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি জুমআর পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে চার রাক‘আত পড়তেন’।[10]  ইমাম ত্বাবারানী বলেছেন, لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ خُصَيْفٍ إِلَّا عَتَّابُ بْنُ بَشِيرٍ ‘খুছাইফ হতে এই হাদীছটি আত্তাব বিন বাশীর ব্যতীত আর কেউই বর্ণনা করেন নি’।

তাহক্বীক্ব : এটি যঈফ। দুটি কারণে। এটি বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত।

(১) ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, وَعَن بن مَسْعُودٍ عِنْدَ الطَّبَرَانِيِّ أَيْضًا مِثْلُهُ وَفِي إِسْنَادِهِ ضعف وَانْقِطَاع ‘ইবনে মাসঊদ হতে ত্বাবারানীর নিকটেও অনুরূপ (একটি বর্ণনা আছে)। এই সনদটির মধ্যে দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতা আছে’। [11]

(২) আব্দুর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) বলেছেন, عن بن مَسْعُودٍ مَرْفُوعًا وَفِي إِسْنَادِهِ ضَعْفٌ وَانْقِطَاعٌ كَذَا فِي فَتْحِ الْبَارِي ‘ইবনে মাসঊদ হতে মারফূ হিসাবে বর্ণিত। এবং এর সনদে দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। যেমনটি ফাৎহুল বারী গ্রন্থে আছে’। [12]

(৩) আলবানী (রহঃ) মুনকার বলেছেন (যঈফা হা/১০১৬)

এই হাদীছটির রাবী খুছাইফ জমহূর মুহাদ্দিছদের নিকটে যঈফ।

(১) ইবনে আবী হাতেম (আল-জারহু ওয়াত-তাদীল, রাবী নং ১৮৪৮), ইবনে হিববান (আল-মাজরূহীন, রাবী নং ৩১৫) তার সমালোচনা করেছেন।

(৩) হাফেয যাহাবী বলেছেন, صدوق سئ الحفظ ضعفه أحمد তিনি সত্যবাদী। মন্দ হিফযের অধিকারী। আহমাদ তাকে যঈফ বলেছেন (আল-কাশিফ, রাবী নং ১৩৮৯)। তিনি অন্যত্র বলেছেন, খুছায়ফ বিন আব্দুর রহমান আল-জাযারী তাবেঈনদের হতে অত্যধিক বর্ণনাকারী। আহমাদ এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন (আল-মুগনী, রাবী নং ১৯১২)

(৪) হাফেয বুরহানুদ্দীন হালাবী তাকে মসিত্মষ্ক বিকৃত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (আল-ইগতিবাত্ব, রাবী নং ৪৩/৪)

(৫) হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, صدوق سيء الحفظ خلط بأخرة ورمي بالإرجاء من الخامسة তিনি সত্যবাদী, মন্দ হিফযের অধিকারী। শেষ বয়সে মসিত্মষ্ক বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তাকে মুরজিয়া হওয়ার অপবাদ দেয়া হয়েছিল। তিনি পঞ্চম সত্মরভুক্ত (তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ১৭১৮)

(৬) বদরুদ্দীন আইনী হানাফী তার কতিপয় উস্তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেখানে তিনি ইবনে মাস‘ঊদের নাম বলেন নি (মাগানিউল আখয়ার, রাবী নং ৫৯৮)

(৭) দারাকুৎনী বলেছেন, خصيف بن عبد الرحمن جزري يعتبر به، يهم তার বর্ণনার ইতিবার করা হয় (তার বর্ণনা কবুল করা যাবে কি না মর্মে গবেষণা করা হয়)। তিনি ভুল করতেন (মাওসূআতি আক্বওয়ালিল ইমাম আবীল হাসান আদ-দারাকুৎনী, রাবী নং ১১৭৬)

(৮) হাফেয যায়লাঈ (রহঃ) বলেছেন, وَابْنُ إسْحَاقَ، وَخُصَيْفٌ فِيهِمَا مَقَالٌ ইবনে ইসহাক্ব এবং খুছায়ফ সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে (নাছবুর রায়াহ ৩/২১)। পরে তিনি বলেছেন, وَخُصَيْفُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْجَزَرِيُّ ضَعَّفَهُ بَعْضُهُمْ খুছায়ফ বিন আব্দুর রহমান আল-জাযারীকে কতিপয় যঈফ বলেছেন (ঐ)

(৯) হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেছেন, وفي إسناده: خصيف بن عبد الرحمن الجزري، وقد اختلف فيه এর সনদে খুছায়ফ আছেন। তার সম্পর্কে ইখতিলাফ করা হয়েছে (তুহফাতুত ত্বালিব পৃ. ৫২)

(১০) ইমাম বায়হাক্বী লিখেছেন, خُصَيْفٌ الْجَزَرِيُّ غَيْرُ قَوِيٍّ খুছায়ফ শক্তিশালী নন’।[13]

(১৩) ইমাম নাসাঈ বলেছেন, خصيف بن عبد الرَّحْمَن لَيْسَ بِالْقَوِيّ খুছায়ফ বিন আব্দুর রহমান শক্তিশালী নন (আয-যুআফাউল মাতরূকীন, রাবী নং ১৭৭)

দলীল-৪ : حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، أَخْبَرَنَا أَيُّوبُ، عَنْ نَافِعٍ، قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُطِيلُ الصَّلَاةَ قَبْلَ الْجُمُعَةِ، وَيُصَلِّي بَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ فِي بَيْتِهِ، وَيُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ  মুসাদ্দাদ আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, (তিনি বলেছেন) ইসমাঈল আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেছেন) আইয়ূব আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন নাফে হতে। তিনি বলেছেন, ইবনে ওমর (রাঃ) জুম‘আর পূর্বে দীর্ঘ ছালাত পড়তেন। এবং তিনি জুম‘আর ছলাতের পরে নিজের বাসায় চার রাকআত পড়তেন। আর বলতেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ছাঃ) এমনটি করতেন’।[14]

তাহক্বীক্ব : (১) শায়খ আলবানী বলেছেন, وأما قوله: "كان يطيل الصلاة قبل الجمعة" فإن كان المراد بعد دخول الوقت فلا يصح أن يكون مرفوعا لأنه صلى الله عليه وسلم كان يخرج إذا زالت الشمس فيشتغل بالخطبة ثم بصلاة الجمعة وإن كان المراد قبل دخول الوقت فذلك مطلق نافلة لا صلاة راتبة فلا حجة فيه لسنة الجمعة التي قبلها بل هو نفل مطلق وقد ورد الترغيب فيه كما تقدم في حديث سلمان وغيره حيث قال فيه: ثم صلى ما كتب له" আর তার উক্তি ‘তিনি জুম‘আর পূর্বে দীর্ঘ ছালাত পড়তেন’ যদি এর দ্বারা ওয়াক্ত প্রবেশের পরের সময়টি উদ্দেশ্য হয়, তবে এর মারফূ হওয়া ছহীহ নয়। কেননা নবী করীম (ছাঃ) সূর্য হেলে যাওয়ার পরে (ঘর থেকে) বের হতেন। এরপর তিনি খুৎবা অতঃপর জুম‘আর ছালাতে মগ্ন হতেন । আর যদি ওয়াক্ত প্রবেশ করার পূর্বে উদ্দেশ্য হয়, তবে সেটি শর্তবিহীন নফল, নিয়মিত (সুন্নাত) ছলাত নয়। জুম‘আর পূর্বের (চার রাকআত নির্দিষ্ট) সুন্নাতের পক্ষে কোন দলীল এতে নেই। বরং এটি সাধারণ নফল ছলাত। এ সম্পর্কে উৎসাহ প্রদান করা বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি সালমান এবং অন্য হাদীছের মধ্যে গত হয়েছে। যেমনভাবে তিনি বলেছেন, ‘অতঃপর সে ততটুকু ছালাত পড়বে যা ভাগ্যে লেখা হয়েছে’ (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ পৃ. ৫৮)

এ হাদীছে সময় নির্দিষ্ট করা হয় নি এবং এখানে জুম‘আর পূর্বে চার রাকআত নিয়মিত সুন্নাত হিসাবে পড়তে হবে মর্মেও কোন ইশারা নেই। মাযহাবী ভাইগণ প্রথমে বাংলায় আলোচনা করেন। এরপর চার রাক‘আত সুন্নাত নির্ধারিতভাবে পড়েন। অতঃপর আরবীতে খুৎবা প্রদানের পর জুম‘আর ছালাত আদায় করেন। কোন হাদীছেই এমন আমলের অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-ও এমন কোন আমল করেছেন বা করতে বলেছেন মর্মে কোন বিশুদ্ধ রেওয়ায়াত পাওয়া যায় না।

দলীল-৫ : حَدَّثَنَا أَبُو مُوسَى مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي الوَضَّاحِ هُوَ أَبُو سَعِيدٍ المُؤَدِّبُ، عَنْ عَبْدِ الكَرِيمِ الجَزَرِيِّ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعًا بَعْدَ أَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَقَالَ: «إِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَأُحِبُّ أَنْ يَصْعَدَ لِي فِيهَا عَمَلٌ صَالِحٌ وَفِي البَابِ عَنْ عَلِيٍّ، وَأَبِي أَيُّوبَ: حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَرُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الزَّوَالِ، لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ ‘আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্না আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেছেন) আবূ দাঊদ (আত-ত্বায়ালিসী) আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেছেন) মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বিন আবুল ওয়ায্যাহ আবূ সাঈদ আল-মুওয়াদ্দিব, আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন আব্দুল কারীম আল-জাযারী হ’তে, তিনি মুজাহিদ হ’তে, তিনি আব্দুলস্নাহ ইবনুস সায়েব হতে যে, নিশ্চয়ই রাসূল (ছাঃ)  যোহরের পূর্বে অর্থাৎ যোহরের ফরযের আগে- সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে চার রাক‘আত পড়তেন। তিনি বলেছেন, এটি সেই মুহুর্ত যেসময় আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর আমি পছন্দ করি যে, আমার এই সময় আমলে ছালেহ উর্দ্ধে উঠানো হোক’।[15] 

পর্যালোচনা : হাদীছ ছহীহ। কিন্তু এর দ্বারা জুম‘আর পূর্বে খাছভাবে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা প্রমাণিত হয় না। যেমন-

(১) মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেছেন, وَتِلْكَ الرَّكَعَاتُ الْأَرْبَعُ سُنَّةُ الظُّهْرِ الَّتِي قَبْلَهُ، كَذَا قَالَهُ بَعْضُ الشُّرَّاحِ مِنْ عُلَمَائِنَا ‘এই চার রাক‘আত হ’ল যোহরের পূর্বের সুন্নাত। যেমনটি আমাদের কতিপয় ব্যাখ্যাকারী আলেম বলেছেন’।[16] 

(২) আল্লামা উবায়দুল্লাহ মোবারকপুরী (রহঃ) বলেছেন, أي قبل فرضه وهل هي سنة الزوال أو سنة الظهر القبلية؟ فيه خلاف علم مما نقدم. ‘অর্থাৎ ফরযের পূর্বে। এটি কি সুন্নাতুয যাওয়াল নাকি যোহরের পূর্বের সুন্নাত? এ মর্মে মতানৈক্য রয়েছে’।[17]

(৩) ইমাম নববী (রহঃ)  একে ‘যোহর-এর সুন্নাত’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন।

মোটকথা, যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত আদায় করা সুন্নাত। জুম‘আর পূর্বে নয়। খুত্ববার পূর্বে চার রাক‘আত আদায় করা যাবে নফল হিসাবে। শুধু চার রাক‘আত নয় বরং যত মন চায় নফল পড়া যাবে সময় থাকার শর্তে। এখানে কোন নির্দিষ্ট রাক‘আত সংখ্যা নেই।

(ক্রমশঃ)

[1]ইবনে মাজাহ হা/১১২৯; ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর হা/১৬৪০

[2]যঈফা হা/১০০১

[3]নাছবুর রায়াহ ২/২০৬

[4]শরহে আবুদাঊদ হা/১০৯৯-এর আলোচনা দ্রঃ; উমদাতুল ক্বারী হা/৯৩৩৭ এর আলোচনা দ্রঃ

[5]ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর হা/১২৬৭৪

[6]ত্বাবারানী, আল-মুজামু আওসাত্ব হা/১৬১৭

[7]সিলসিলাহ যঈফা হা/৫২৯০

[8]ফাৎহুল বারী ২/৪২৬

[9]সিলসিলাহ ছহীহা হা/১৭০১ অন্যত্র তিনি বলেছেনالثانية: أبو إسحاق السبيعي، ثقة ولكنه على اختلاطه مدلس 

[10]ত্বাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৩৯৫৯

[11]ফাৎহুল বারী ২/৪২৬

[12]তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৪৮

[13]আস-সুনানুল কুবরা হা/৮৯৭৯

[14]আবুদাঊদ হা/১১২৮

[15]তিরমিযী হা/৪৭৮; মিশকাত হা/১১৬৯

[16]মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা/১১৬৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ

[17]মিরআতুল মাফাতীহ হা/১১৭৬ এর ব্যাখ্যা দ্রঃ




বিষয়সমূহ: ইসলামের সৌন্দর্য
আরও