মুহাম্মাদ যুহায়ের আশ-শাবীশ (সিরিয়া)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 10121 বার পঠিত
[সিরিয়ান বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (৬০) ১৯৬০ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোতে ফিলিস্তিনী শরণার্থী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী পরিবারের সাথে সঊদী আরবে আসেন এবং রাজধানী রিয়াদে বেড়ে উঠেন। শায়খ বিন বায ও ইবনুল উছায়মীনের এই সুযোগ্য ছাত্র মুসলিম দুনিয়ায় সাড়া ফেলেছেন মূলত তাঁর পরিচালিত জনপ্রিয় ফৎওয়া ওয়েবসাইট ‘ইসলামকিউএ.ইনফো’ (IslamQA.info) -এর মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে তিনি স্বতন্ত্রভাবে ফৎওয়াভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি চালু করেন, যা আরবী, ইংরেজী, বাংলাস উর্দূসহ ১৬টি ভাষায় বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে। সালাফী মানহাজ অনুযায়ী পরিচালিত এই ওয়েবসাইটটি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাবে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ফালিল্লাহিল হামদ। কর্মজীবনে তিনি সঊদীআরবের আল-খোবার শহরে উমার ইবনুল খাত্তাব মসজিদের খত্বীব। পাঠদান, বক্তব্য, খুৎবা ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে রয়েছে তাঁর বিপুল গ্রহণযোগ্যতা। কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে যুবসমাজের আত্মশুদ্ধির জন্য তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সুস্পষ্ট দলীলভিত্তিক ও সহজবোধ্য লেখনীর জন্য তিনি সুপরিচিত। নিম্নে এই ক্ষণজন্মা মনীষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করা হল]।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা :
শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত রিয়াদেরই বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। অতঃপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি সঊদী আরবের যাহরানে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ পেট্রোলিয়াম ও মিনারেলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। অতঃপর শায়খ বিন বাযের পরামর্শে দ্বীনের দাওয়াতের প্রতি তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। অতঃপর তিনি একে একে শায়খ বিন বাযসহ সমসাময়িক বিখ্যাত আলেমগণ যেমন শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন, আব্দুর রহমান বিন নাছের বার্রাক, মুহাম্মাদ শানক্বিতী, ছালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ গুনাইম, আব্দুল মুহসিন যামেল, আব্দুর রহমান আল-মাহমূদ প্রমুখ বিদ্বানদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত দক্ষতা অর্জন করেন। বিশেষ করে শায়খ বিন বাযের সাথে সুদীর্ঘ প্রায় পনের বছরের সম্পর্ক তাঁর ইলমী জগতের দুয়ার নতুনভাবে উন্মোচিত করে দেয়।
কর্মজীবন :
শায়খ বিন বাযের পরামর্শে ৩০ বছরের পূর্বেই তিনি সঊদী আরবের উত্তরাঞ্চলে জুমআর খত্বীব হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দাঈ ইলাল্লাহ হিসাবে পূর্ণোদ্দমে কাজ শুরু করে। তিনি জুমআর খুৎবাসহ সাপ্তাহিক দারস, হালাকা এবং বিভিন্ন মিডিয়া ও টেলিভিশনে নিয়মিত বক্তব্য পেশ করে থাকেন। এছাড়া লেখালেখিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও গ্রন্থাবলী রয়েছে, যার সংখ্যা অন্যূন তিন হাজার। এছাড়া রয়েছে প্রায় ৫০০০ ঘন্টার বেশী বিষয়ভিত্তিক অডিও-ভিডিও দারস।
রচনাবলী :
মূলতঃ জীবনঘনিষ্ট বিষয়াদিই তাঁর রচনার বিষয়বস্ত্ত। তরুণ ও যুবসমাজের প্রাত্যহিক সমস্যাগুলো নিয়ে রয়েছে তাঁর অসংখ্য রচনা। তন্মধ্যে প্রায় ২৫টি গ্রন্থ বাংলা ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। যেমন :
১. ভাল কাজের সহযোগী হও। ২. বিনয়ী হওয়ার ৩৩টি উপায়। ৩. ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি। ৪. আল্লাহর প্রতি ভরসা। ৫. দুঃশ্চিন্তার চিকিৎসা। ৬. শারঈ বিধি-নিষেধ। ৭. যে সকল হারাম কাজকে মানুষ হালকা মনে করে। ৮. দুর্বল ঈমানের পরিচয়। ৯. দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকার মাধ্যমসমূহ। ১০. আমি তওবা করতে চাই, কিন্তু! ১১. কেমন ছিল তাদের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর আচরণ? ১২. আদর্শ পরিবার গঠনে ৪০টি উপদেশ। ১৩. অন্তরের রোগ, ১৪. অন্তরের আমল, ১৫. বিয়ের উপকারিতা ও শারঈ রূপরেখা প্রভৃতি।
ইসলামকিউএ.ইনফো (IslamQA.info)
শায়খ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ ১৯৯৭ সালে সালাফী মানহাজভিত্তিক ফৎওয়া ওয়েবসাইট ইসলামকিউএ.ইনফো চালু করেন। তৎকালীন সময়ে এটিই ছিল স্বতন্ত্রভাবে ফৎওয়া বিষয়ক একমাত্র ওয়েবসাইট। বিগত কয়েক বছর যাবৎ এটি ইসলাম বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটে প্রায় চার লক্ষাধিক ফৎওয়া প্রকাশিত হয়েছে।
কারাবরণ :
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শেষের দিকে ইয়েমেনের হূছী সম্প্রদায় ও মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমীনের পক্ষাবলম্বনের দায়ে সঊদী সরকার অন্যান্য বেশ কয়েকজন সঊদী আলেমদের সাথে শায়খ ছালেহ আল মুনাজ্জিদকেও গ্রেফতার করেছিল। তারপর থেকে তাঁকে আর জনসম্মুখে দেখা যায় নি। অদ্যবধি তিনি কারারুদ্ধ আছেন বলে ধারণা করা হয়।
মহান আল্লাহ এই দাঈ ও আলেমের মহান খেদমতকে কবুল করুন এবং তাঁকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুন। আমীন!