মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৪র্থ কিস্তি)
আব্দুর রহীম
এ. এইচ. এম. রায়হানুল ইসলাম 1682 বার পঠিত
মানবজীবন
দু’ভাগে বিভক্ত। একটি দুনিয়ার জীবন অপরটি আখেরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবন
ক্ষণস্থায়ী হ’লেও আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। আখেরাতের জীবনের শুরু থাকলেও
যেহেতু শেষ নেই সেহেতু দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনের চেয়ে আখেরাতের অনন্ত
জীবনের প্রতি মানুষের পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিত। একইভাবে দুনিয়ার জীবনের প্রতি
অকারণে মোহ থেকে মানুষের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। দুনিয়ার প্রতি মোহ ও
ভালোবাসা সব অন্যায়ের মূল কারণ। আর দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ সব সৎ কর্মের
মূল। দুনিয়া বিমুখতা অন্তর এবং শরীরকে প্রশান্তিতে রাখে। আর দুনিয়ার প্রতি
অধিক আগ্রহ দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি বৃদ্ধি করে। ইসলামী দৃষ্টিতে কোনো বস্ত্ত
বাদ দিয়ে তার চেয়ে উত্তম বস্ত্তর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করাকে যুহুদ বা
দুনিয়া বিমুখতা বলে। অন্তর থেকে দুনিয়ার ভালোবাসাকে বের করে ফেলার নাম
যুহুদ বা দুনিয়া বিমুখতা।
জীবনধারণের অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত বস্ত্ত পরিত্যাগ করার নামও যুহুদ। রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর ছাহাবীরা এ ধরনের যুহুদের মাঝেই জীবনাতিবাহিত করেছেন। অন্তরে দুনিয়ার প্রতি মোহ বা আকর্ষণ রেখে দুনিয়ার দরকারি কাজকর্ম পরিত্যাগ করার নাম যুহুদ নয়; বরং এটা মূর্খ ও অপারগদের যুহুদ। দুনিয়ার চাকচিক্য ও সম্পদের প্রতি অনীহা ও আখেরাতের শান্তির প্রতি আগ্রহী হয়ে নিজের জীবন পরিচালনা করাই যুহুদ। মূলতঃ যুহুদ মানে হচ্ছে- হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহ যা অপসন্দ করেন সেটা থেকেও বেঁচে থাকা। বিলাসিতা প্রকাশ ও অতিমাত্রায় দুনিয়া উপভোগ থেকে দূরে থাকা। পরকালের জন্য উত্তম সম্বল গ্রহণ করা। যুহুদের সবচেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে নবী করীম (ছাঃ) জীবনীতে। যুহুদ অর্থ এই নয় যে, দুনিয়ার মানুষ ও সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল ইবাদতে মশগুল থাকবে। একজন সম্পদশালী মানুষও দুনিয়াবিমুখ বা যাহেদ হ’তে পারে।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করা হ’ল সম্পদশালী মানুষ কি যাহেদ হ’তে পারে? তিনি বললে, হ্যাঁ। إِنْ كَانَ لَا يَفْرَحُ بِزِيَادَتِهِ وَلَا يَحْزَنُ بِنَقْصِهِ ‘যদি সম্পদ বৃদ্ধিতে আনন্দিত না হয় এবং কমে যাওয়াতে চিন্তিত না হয়’।[1]
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আরো বলেন, ُ الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا: قِصَرُ الْأَمَلِ، وَقَالَ مَرَّةً: قِصَرُ الْأَمَلِ وَالْيَأْسُ مِمَّا فِي أَيْدِي النَّاسِ ‘যুহুদ বা দুনিয়া বিমুখতা হ’ল অল্প আকাঙ্ক্ষা, তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, অল্প আকাঙ্ক্ষা ও লোকদের হাতে যে সম্পদ রয়েছে তা থেকে নিরাশ থাকা’।[2]
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, ধনীরা কি যাহেদ হ’তে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ এমন ব্যক্তি যে, إِذَا أُنْعِمَ عَلَيْهِ شَكَرَ، وَإِذَا ابْتُلِيَ صَبَرَ، ‘যখন তাকে নে‘মত দান করা হয় তখন শুকরিয়া আদায় করে। আর যখন (সম্পদ বিনষ্ট করে) পরীক্ষা করা হয় তখন ধৈর্য ধারণ করে’।[3] যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ- ‘যাতে তোমরা যা হারাও তাতে হা-হুতাশ না করো এবং যা তিনি তোমাদের দেন, তাতে উল্লাসিত না হও। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’ (হাদীদ ৫৭/২৩)।
হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ليس الزهد بإضاعة المال ولا بتحريم الحلال، ولكن أن تكون بما في يد الله أوثق منك بما في يد نفسك، وأن تكون حالك في المصيبة، وحالك إذا لم تصب بها سواء، وأن يكون مادحك وذامك في الحق سواء ‘সম্পদ বিনষ্ট ও হালালকে হারাম মনে করে নেওয়ার মধ্যে যুহুদ নেই। বরং আল্লাহর হাতে যা রয়েছে তার প্রতি অধিক আস্থাশীল হও তোমার হাতে যা আছে তা অপেক্ষা। বিপদে ও নিরাপদে সর্বাস্থায় তোমার অবস্থা যেন সমান হয়। তোমার প্রশংসাকারী ও নিন্দাকারী হকের ক্ষেত্রে যেন সমান হয়’।[4]
হাসান বাছরী (রহঃ) আরো বলেন, الدُّنْيَا ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ: أَمَا أَمْسِ فَقَدْ ذَهَبَ بِمَا فِيهِ، وَأَمَّا غَدًا فَلَعَلَّكَ لَا تُدْرِكُهُ، وَالْيَوْمُ فَاعْمَلْ فِيهِ ‘দুনিয়াবী জীবন তিনদিনের। (১) গতকাল- যা ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে, (২) আগামীকাল-সম্ভবতঃ তুমি তার নাগাল পাবে না এবং (৩) আজ- অতএব তোমার যা করার তা আজই কর’।[5]
যেমন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, نِعْمَ الْمَالُ الصَّالِحُ لِلْمَرْءِ الصَّالِحِ ‘সৎ মানুষের জন্য পবিত্র মাল কতই না উত্তম!’।[6] তিনি আরো বলেন, لاَ بَأْسَ بِالْغِنَى لِمَنِ اتَّقَى وَالصِّحَّةُ لِمَنِ اتَّقَى خَيْرٌ مِنَ الْغِنَى وَطِيبُ النَّفْسِ مِنَ النِّعَمِ ‘আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্য ক্ষতিকর নয়। আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুযের্র চেয়েও সুস্বাস্থ্য অধিক উপকারী। মনের প্রসন্নতাও নি‘মতের অন্তর্ভুক্ত’।[7] ইমাম যুহরী (রহঃ)-কে যাহেদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, مَنْ لَمْ يَغْلِبِ الْحَرَامُ صَبْرَهُ، وَلَمْ يَشْغَلِ الْحَلَالُ شُكْرَهُ، ‘যাহেদ সে ব্যক্তি যে, যার ধৈর্যের উপর হারাম বিজয়ী হয়না এবং হালাল তার কৃতজ্ঞতা বন্ধ রাখে না’।[8]
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, إِذا أَرَادَ الله بِعَبْد خيرا جعله معترفا بِذَنبِهِ ممسكا عَن ذَنْب غَيره جوادا بِمَا عِنْده زاهدا فِيمَا عِنْده مُحْتملا لأَذى غَيره وَإِن أَرَادَ بِهِ شرا عكس ذَلِك عَلَيْهِ ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার জন্য কল্যাণ চান, তখন তাকে স্বীয় পাপ স্বীকারের যোগ্যতা এবং অন্যের পাপ অন্বেষণ করা থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করেন। আর সে স্বীয় সম্পদ নিয়েই প্রাচুর্য বোধ করে ও অন্যের সম্পদ থেকে বিমুখ থাকে এবং অন্যের দুঃখ-কষ্টের ভার বহন করে। আর যখন কারো অকল্যাণ চান, তখন বিপরীতটাই ঘটে’।[9]
সুফিয়ান বিন উয়ায়না (রহঃ) বলেন, مَنْ سُرَّ بِالدُّنْيَا، نُزِعَ خَوْفُ الآخِرَةِ مِنْ قَلْبِهِ ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকে, তার হৃদয় থেকে আখেরাতের ভীতি দূরীভুত করে দেয়া হয়’।[10]
আল-কুরআনুল কারীমের আলোকে দুনিয়ার চাকচিক্যের মূল্য :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ‘তোমরা জেনে রাখ যে, পার্থিব জীবন খেল-তামাশা, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ভিন্ন কিছু নয়। যা বৃষ্টির উপমার ন্যায়, যার উৎপাদন কৃষককে চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়। যাকে তুমি হলুদ দেখতে পাও। অতঃপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর পরকালে রয়েছে (কাফেরদের জন্য) কঠিন শাস্তি এবং (মুমিনদের জন্য) আলাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)।
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ ‘মানুষের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে তার আসক্তি সমূহকে স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি, স্বর্ণ ও রৌপ্যের রাশিকৃত সঞ্চয় সমূহের প্রতি, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি-পশু ও শস্য-ক্ষেত সমূহের প্রতি। এসবই কেবল পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্ত্ত। বস্ত্ততঃ আল্লাহর নিকটেই রয়েছে সুন্দরতম প্রত্যাবর্তনস্থল’(আলে ইমরান ৩/১৪)। আয়াতটিতে পার্থিব জীবনের বাস্তব চিত্র, তুলে ধরা হয়েছে। যাকে অতিক্রম করেই জান্নাতের পথ তালাশ করতে হবে। সমাজে বসবাস করেই নিজেকে ও সমাজকে শয়তানের পথ থেকে আলাহর পথে ফিরিয়ে নিতে হবে। সমাজকে পরিত্যাগ করে নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে মুসলিম মানুষদের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষদের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না’।[11]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُوَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রূযী প্রশস্ত করেন ও সংকুচিত করেন। কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই উল্লসিত। অথচ পার্থিব জীবন পরকালের তুলনায় তুচ্ছ সম্পদ বৈ কিছু নয়’ (রা‘দ ১৩/২৬)।
তিনি আরো বলেন, إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত হ’ল বৃষ্টির পানির মত যা আমরা আকাশ থেকে বর্ষণ করি। অতঃপর যমীনের উদ্ভিদ সমূহ তার সাথে মিশ্রিত হয় যা থেকে মানুষ ও গবাদিপশু ভক্ষণ করে। অবশেষে যখন যমীন শস্য-শ্যামল ও সুশোভিত হয় এবং ক্ষেতের মালিক মনে করে যে, এবার তারা ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হবে, এমন সময় হঠাৎ রাত্রিতে বা দিনের বেলায় ঐ ক্ষেতের উপর আমাদের (শাস্তির) নির্দেশ এসে গেল। অতঃপর সেটিকে আমরা খড়-কুটোয় পরিণত করে ফেললাম। যেন গতকাল সেখানে কিছুই ছিল না। এভাবে আমরা আয়াত সমূহকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি চিন্তাশীল লোকদের জন্য’(ইউনুস ১০/২৪)।
দুনিয়াবিমুখ লোকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ ‘যাতে তোমরা যা হারাও তাতে হা-হুতাশ না করো এবং যা তিনি তোমাদের দেন, তাতে উল্লাসিত না হও। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’(হাদীদ ৫৭/২৩)। তিনি আরো বলেন, يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ ‘হে আমার সম্প্রদায়! দুনিয়ার এ জীবন তো সাময়িক ভোগের বস্ত্ত মাত্র। আর আখেরাতই হ’ল চিরস্থায়ী বসবাসের গৃহ।’ (গাফের ৪০/৩৯)। তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)।
তিনি আরো বলেন, وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَا فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُونَ ‘আর যেদিন অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের নিকট উপস্থিত করা হবে (এবং বলা হবে) তোমরা তো পার্থিব জীবনে সব সুখ-শান্তি নিঃশেষ করেছ এবং তা পূর্ণভাবে ভোগ করেছ। সুতরাং আজ তোমাদেরকে হীনকর শাস্তির বদলা দেওয়া হবে এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে দম্ভ করতে এবং তোমরা পাপাচার করতে’ (আহকাফ ৪৬/২০)।
তিনি আরো বলেন, وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ‘এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক বৈ কিছুই নয়। আর পরকালীন জীবন হ’ল চিরস্থায়ী জীবন (যেখানে কোন মৃত্যু নেই)। যদি তারা জানত! (অর্থাৎ সেটা বুঝলে মানুষ নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বর জীবনের উপর প্রাধান্য দিত না) (আনকাবুত ২৯/৬৪)।
তিনি বলেন, مَنْ كانَ يُرِيدُ الْعاجِلَةَ عَجَّلْنا لَهُ فِيها مَا نَشاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلاها مَذْمُوماً مَدْحُوراً - وَمَنْ أَرادَ الْآخِرَةَ وَسَعى لَها سَعْيَها وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولئِكَ كانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُوراً- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে, আমরা সেখানে যাকে যা ইচ্ছা করি দিয়ে দেই। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি। সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায়। আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে এবং ছওয়াব লাভে দৃঢ় বিশ্বাসী অবস্থায় তার জন্য যথার্থ প্রচেষ্টা চালায়, তাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে (ইসরা ১৭/১৮-১৯)। অত্র আয়াতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, পরকালে ছওয়াব লাভের দৃঢ় আকাংখা ব্যতীত কোন সৎকর্ম আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। আয়াতে বর্ণিত وهو مؤمن অর্থ গতানুগতিকভাবে কেবল ‘মুমিন অবস্থায়’ নয়, বরং এর অর্থ হ’ল مصدق بالثواب والجزاء ‘ছওয়াব ও প্রতিদান লাভে দৃঢ় বিশ্বাসী’ অবস্থায় (ইবনু কাছীর)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘আর তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না ঐ সবের প্রতি, যা আমরা তাদের বিভিন্ন শ্রেণীর লোককে ভোগ্য বস্ত্তরূপে দান করেছি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ। যাতে আমরা এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করতে পারি। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালকের দেওয়া (আখেরাতের) রিযিক অধিক উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩১)।আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, لا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلادِ- مَتاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْواهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهادُ - لكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهارُ خالِدِينَ فِيها نُزُلاً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَما عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ لِلْأَبْرارِ ‘(হে রাসূল!) দেশে অবিশ্বাসীদের দর্পিত বিচরণ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। সামান্য ভোগ্য বস্ত্ত। অতঃপর ওদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটি হবে আল্লাহর পক্ষ হ’তে আতিথ্য। আর আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সৎকর্মশীলদের জন্য তা অতীব উত্তম’ (আলে ইমরান ৩/১৯৬-১৯৮)।তিনি আরো বলেন, قُلْ مَتاعُ الدُّنْيا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقى وَلا تُظْلَمُونَ فَتِيلاً ‘তুমি বলে দাও যে, দুনিয়ার সম্পদ তুচ্ছ। আর আল্লাহভীরুদের জন্য আখেরাতই উত্তম। সেদিন তোমরা সূতা পরিমাণও অত্যাচারিত হবে না (নিসা ৪/৭৭)। আল্লাহ আরো বলেন, وَما أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتاعُ الْحَياةِ الدُّنْيا وَزِينَتُها وَما عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقى أَفَلا تَعْقِلُونَ ‘তোমাদের যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্ত্ত ও শোভাবর্ধক মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা উত্তম ও চিরস্থায়ী। এরপরেও কি তোমরা বুঝবেনা? (কাছাছ ২৮/৬০)।
ছহীহ হাদীছের আলোকে দুনিয়ার চাকচিক্যের মূল্য :
عَنْ الْمُسْتَوْرِدِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : مَا مَثَلُ الدُّنْيَا فِى الآخِرَةِ إِلاَّ مَثَلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ.
মুসতাওরিদ হ’তে বির্ণত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, দুনিয়ার জীবন দৃষ্টান্ত আখেরাতের জীবনের তুলনায় এমন, যেমন তোমাদের কেউ অকুল সমুদ্রে একটি আংগুল রাখল, তারপর তা তুলে ফেলল, তখন তার আংগুলের সাথে যতটুকু পানি উঠে আসে দুনিয়ার জীবনও আখেরাতের তুলনায় তার মত। সে যেন চিন্তা করে দেখে সমুদ্রের পানির তুলনায় তার আংগুলের সাথে উঠে আসা পানির পরিমাণ কতটুকু’।[12]
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ . وَفِى حَدِيثِ ابْنِ بَشَّارٍ لِيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর সানাদে নবী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় মিষ্টি ফলের মতা আকর্ষণীয়। আল্লাহ তা’আলা সেখানে তোমাদেরকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করছেন যে, তোমরা কিভাবে আমল কর। তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বানী ইসরাঈলদের মাঝে প্রথম ফিতনাহ নারীকেন্দ্রিক ছিল। বাশশারের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি যাতে দেখতে পারেন তোমরা কি আমল করছ’।[13]
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ قَالَ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ دُلَّنِى عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِىَ اللَّهُ وَأَحَبَّنِىَ النَّاسُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: ازْهَدْ فِى الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللَّهُ وَازْهَدْ فِيمَا فِى أَيْدِى النَّاسِ يُحِبُّوكَ-
সাহল বিন সাদ আস সাঈদী হতে বর্ণিত তিনি বলেন,‘জনৈক লোক রাসূলের নিকেট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমলের সন্ধান দিন যা করলে আল্লাহ এবং লোকেরাvা ভালোবাসবে। তিনি বললেন, ‘পার্থিব ভোগ-বিলাস পরিত্যাগ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর লোকের কাছে যা আছে তার লালসা পরিত্যাগ কর। তাহ’লে অন্যরা তোমাকে ভালবাসবেন’। [14]
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ -
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য থাকত, তাহ’লে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না’।[15]
اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَهْ فَأَكْرِمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ -
হে আল্লাহ্! আখিরাতের জীবনই সত্যিকারের জীবন। কাজেই আপনি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করুন’।[16]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ اضْطَجَعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى حَصِيرٍ فَأَثَّرَ فِى جِلْدِهِ فَقُلْتُ بِأَبِى وَأُمِّى يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ كُنْتَ آذَنْتَنَا فَفَرَشْنَا لَكَ عَلَيْهِ شَيْئًا يَقِيكَ مِنْهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِنَّمَا أَنَا وَالدُّنْيَا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا-
আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি খেজুর পাতার চাটাইয়ে শুয়েছিলেন। পরে তিনি যখন জেগে দাঁড়ালেন তখন তাঁর পার্শ্বদেশে এর দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য যদি আমরা একটি নরম বিছানা বানিয়ে নিতে পারতাম! তিনি বললেন, আমার সঙ্গে দুনিয়ার কি সম্পর্ক? আমি তো দুনিয়ায় সেই এক সওয়ারীর মত যে পথ চলতে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিল পরে আবার সে তা পরিত্যাগ করে চলে গেল’।[17]
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ الْعَالِيَةِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْىٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ : أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ . فَقَالُوا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَىْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ قَالَ أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ . قَالُوا وَاللَّهِ لَوْ كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ فَقَالَ: فَوَاللَّهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ –
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) আলীয়া (অঞ্চল) হ’তে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর উভয় পার্শ্বে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট পৌছলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটা নিতে আগ্রহী হবে। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, (বিনা পয়সায়) তোমরা কি উহা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত হ’ত তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ক্ষুদ্র ,ক্ষুদ্র। আর এখন তো তা মৃত, কিভাবে আমরা তা গ্রহণ করব? এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ তোমাদের নিকট যতটা তুচ্ছ, আল্লাহর নিকট দুনিয়া এর চেয়েও অধিক তুচ্ছ’।[18]
عَنْ أَبِى مُوسَى الأَشْعَرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ أَحَبَّ دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى-
আবু মূসা আশ-আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভ করতে বেশী পসন্দ করে, সে তার আখেরাত লাভ করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে অর্জন করতে মহববত করে, তাকে অবশ্যই দুনিয়া অর্জন করতে লোকসান দিতে হবে। সুতরাং, তোমরা যা চিরস্থায়ী তার অর্জনকে ক্ষণস্থায়ী বস্ত্তর অর্জনের উপর প্রাধান্য দাও’।[19]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَخْشَى عَلَيْكُمُ الْفَقْرَ وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمُ التَّكَاثُرَ وَمَا أَخْشَى عَلَيْكُمُ الْخَطَأَ وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمُ الْعَمْدَ –
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দরিদ্রতার আশঙ্কা করিনা। বরং আমি তোমাদের জন্য প্রাচুর্যতার আশঙ্কা করছি। তোমরা ভুল করে কোন অন্যায় করবে এই আশঙ্কা আমি করছিনা। বরং আমি আশঙ্কা করছি তোমাদের ইচ্ছাকৃত ভুলের’। [20]
فَوَاللَّهِ مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ ، وَلَكِنِّى أَخْشَى أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ قَبْلَكُمْ ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا ، وَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ-
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের গরীবী ও অভাব-অনটনের ভয় করি না, বরং ভয় করি পৃথিবীটা তোমাদের জন্য সম্প্রসারিত করা হবে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেভাবে করা হয়েছিল। তারপর তোমরা পৃথিবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাবে, যেভাবে তারা অনুরক্ত হয়েছিল। ফলে পৃথিবী তোমাদেরকে বিনাশ করে দিবে, যেভাবে তাদেরকে বিনাশ করেছিল’।[21]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الشَّيْخُ يَكْبَرُ وَيَضْعُفُ جِسْمُهُ وَقَلْبُهُ شَابٌّ عَلَى حُبِّ اثْنَيْنِ طُولِ الْعُمُرِ وَالْمَالِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ মানুষের বয়স বৃদ্ধি পায় এবং দেহ দুর্বল হয়। আর তার অন্তর দুটি জিনিষের মহববতে যুবক। দীর্ঘ জীবনের মহববত ও ধন-সম্পদের মহববত’। [22]
অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَهْرَمُ اْبنُ آَدَم وَيشب مِنهُ اثْنتَانِ الْحرْصُ عَلَى المَالِ، وَالْحرْصُ عَلَى الْعُمُرِ ‘আদম সন্তান বুড়ো হয়, তবে তার দু’টি জিনিষ জোয়ান হ’তে থাকে। এক-ধন-সম্পদের লোভ, দুই- দুনিয়ার জীবনের লোভ’। [23]
عَنْ عَبَّاسِ بْنِ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى الْمِنْبَرِ بِمَكَّةَ فِى خُطْبَتِهِ يَقُولُ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ : لَوْ أَنَّ ابْنَ آدَمَ أُعْطِىَ وَادِيًا مَلأً مِنْ ذَهَبٍ أَحَبَّ إِلَيْهِ ثَانِيًا ، وَلَوْ أُعْطِىَ ثَانِيًا أَحَبَّ إِلَيْهِ ثَالِثًا ، وَلاَ يَسُدُّ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلاَّ التُّرَابُ ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ –
আববাস ইবনু সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-কে মক্কায় মিম্বারের উপর তার খুৎবার মধ্যে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হে লোকেরা! নবী (ছাঃ) বলতেন, যদি বনী আদমকে স্বর্ণে ভরা এক উপত্যকা মাল দেয়া হয়, তথাপিও সে দ্বিতীয়টার জন্য লালায়িত হয়ে থাকবে। আর তাকে দ্বিতীয়টি যদি দেয়া হয়, তাহলে সে তৃতীয়টার জন্য লালায়িত থাকবে। বনী আদমের পেট মাটি ছাড়া ভরতে পারে না। তবে যে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবূল করবেন’।[24]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَقُولُ الْعَبْدُ مَالِى مَالِى إِنَّمَا لَهُ مِنْ مَالِهِ ثَلاَثٌ مَا أَكَلَ فَأَفْنَى أَوْ لَبِسَ فَأَبْلَى أَوْ أَعْطَى فَاقْتَنَى وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَهُوَ ذَاهِبٌ وَتَارِكُهُ لِلنَّاسِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বান্দাগণ বলে, আমার মাল আমার মাল। অথচ তিনটই হল তার মাল, যা সে ভক্ষণ করল এবং শেষ করে দিল। অথবা যা সে পরিধান করল এবং পুরাতন করে দিল। কিংবা যা সে দান করল এবং সঞ্চয় করল। এ ছাড়া বাকীগুলো শেষ হয়ে যাবে এবং মানুষের জন্য রেখে যেতে হবে’।[25]
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ مَطْعَمَ ابْنِ آدَمَ جُعِلَ مَثَلاً لِلدُّنْيَا وَإِنْ قَزَّحَهُ وَمَلَّحَهُ فَانْظُرُوا إِلَى مَا يَصِيرُ-
ঊবাই ইবনু কা‘ব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, পৃথিবীকে মানুষের খাদ্য-দ্রব্যের শেষ অবস্থার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর নিশ্চয় এর মসলা ও লবন, লক্ষ্য কর এগুলো কোথায় যায়’।[26] অত্র হাদীছে দুনিয়াকে মানুষের মূল্যহীন দূর্গন্ধময় মল-মূত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ سُفْيَانَ الْكِلاَبِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ: يَا ضَحَّاكُ، مَا طَعَامُكَ؟. قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اللَّحْمُ وَاللَّبَنُ. قَالَ : ثُمَّ يَصِيرُ إِلَى مَاذَا . قَالَ إِلَى مَا قَدْ عَلِمْتَ. قَالَ : فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ضَرَبَ مَا يَخْرُجُ مِنِ ابْنِ آدَمَ مَثَلاً لِلدُّنْيَا-
জাহ্হাক বিন সুফিয়ান কেলাবী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, হে জাহ্হাক! তোমার খাদ্য কি? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গোশত এবং দুধ। তিনি বললেন, এগুলো কোথায় যায়? তিনি বললেন, তা কোথায় যায় আপনি ভালোভাবেই জানেন। তখন তিনি বললেন, মানুষের গুহ্যদ্বার দিয়ে যা বের হয় তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার তুলনা করেছেন’।[27]
عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَلَكُمْ طَعَامٌ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: أَتُنَظِّفُونَ وَتَطْبُخُونَ وَتُقَزِّحُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: وَتَفْعَلُونَ؟ ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: وَلَكُمْ شَرَابٌ؟ " قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: أَتُبَرِّدُونَ، وَتُنَظِّفُونَ، وَتُقَزِّحُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَأَيْنَ مَعَادُهُمَا؟ قَالَ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: فَإِنَّ مَعَادَهُمَا كَمَعَادِ الدُّنْيَا، يَقُومُ أَحَدُكُمْ خَلْفَ بَيْتِهِ فَيُمْسِكُ عَلَى أَنْفِهِ مِنْ نَتَنِ رِيحِهِ-
সালমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদল লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করলে তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের খাদ্য রয়েছে? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা সেগুলো পরিষ্কার কর, মসলা দিয়ে রান্না করে সুস্বাদু কর? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা এমনটি কর। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমাদের পানীয় রয়েছে, তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা তা ঠান্ডা কর, পরিষ্কার ও সুস্বাদু কর। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ দুটোর শেষ পরিণাম কী? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ দুটোর গন্তব্যস্থানকে পৃথিবীর গন্তব্যস্থলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি পায়খানা করার পর এর গন্ধের আশঙ্কায় নাকে কাপড় ধরে’।[28] তিনি আরো বলেন,
إنّ اللَّهَ تعالى جَعَلَ الدُّنْيا كُلها قَلِيلاً وما بَقِيَ منها إلاَّ القَلِيلُ كالثَّغِبِ شُرِبَ صَفْوُهُ وبَقِيَ كَدَرُهُ-
আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র দুনিয়াকে তুচ্ছ হিসাবে গণ্য করেছেন। আর এর অল্পই অবশিষ্ট রয়েছে। দুনিয়ায় যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার উদাহরণ এরূপ যেমন একটি পুকুরের মধ্যে পানি সঞ্চিত হয়েছে। এর স্বচ্ছ পানি তো পান করা হয়েছে, আর নীচের ঘোলা পানি অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছে’।[29]
অনেক মনীষী তার সাথীদের বলতেন, চল আমার সাথে, আমি তোমাদের দুনিয়া দেখাবো। তারপর তাদের তিনি পায়খানায় নিয়ে যেতেন আর বলতেন, দেখ তোমরা তোমাদের ফল-ফলাদি, গোস্ত, মাছ ও পোলাও কোরমার পরিণতি (উদ্দাতুস-সাবেরীন)।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِى قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِىَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَمْلَهَ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا قُدِّرَ لَهُ –
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আখিরাত যার একমাত্র চিন্তা ও লক্ষ্য আল্লাহ তা‘আলা তার হৃদয়কে অভামুক্ত করে দেন এবং বিক্ষিপ্ত বিষয়াবলীকে সমাধান করে দেন এবং তার কাছে দুনিয়া তুচ্ছ হয়ে আসে। পক্ষান্তরে যার চিন্তা ও লক্ষ্য হয় দুনিয়া আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘ চোখের সামনে অভাব তুলে ধরেন, তার সমস্যাগুলোকে বিক্ষিপ্ত করে দেন আর যতটুকু তার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে এর অতিরিক্ত দুনিয়া সে পায় না’।[30]
عَنْ قَتَادَةَ بْنِ النُّعْمَانِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ عَبْدًا حَمَاهُ الدُّنْيَا كَمَا يَظَلُّ أَحَدُكُمْ يَحْمِى سَقِيمَهُ الْمَاءَ-
কাতাদা ইবন নু‘মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি তাকে দুনিয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখেন যেমন তোমরা তোমাদের রোগীকে পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখ’।[31]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত (স্বরূপ)’।[32] অর্থাৎ মুমিনদের হালাল-হারাম ও জায়েয-নাজায়েয বিচার করে জীবন পরিচাললনা করতে হয়।
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَوْ جَاءَ أَحَدَكُمْ فَسَأَلَهُ دِينَارًا لَمْ يُعْطِهِ، وَلَوْ سَأَلَهُ دِرْهَمًا لَمْ يُعْطِهِ، وَلَوْ سَأَلَهُ فِلْسًا لَمْ يُعْطِهِ، وَلَوْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ لَأَعْطَاهُ إِيَّاهَا، ذُو طِمْرَيْنِ، لَا يُؤْبَهُ لَهُ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ-
ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের কেউ কারো নিকট একটি দিনার প্রার্থনা করলে নাও দিতে পারে। একটি দিরহাম চাইলে নাও দিতে পারে। একটি মুদ্রা চাইলে নাও দিতে পারে। কিন্তু আল্লাহর নিকট দু’টি ছিন্নবস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি যাকে ধর্তব্যে আনা হয় না, জান্নাত প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই তাকে দিবেন। সে কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে শপথ করলে তিনি তা অবশ্যই পূর্ণ করেন ( সে হবে জান্নাতের বাদশাহ)’।[33]
عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَحْمِى عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ فِى الدُّنْيَا وَهُوَ يُحِبُّهُ كَمَا تَحْمُونَ مَرِيضَكُمُ الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ تَخَافُونَ عَلَيْهِ-
মাহমূদ বিন লাবীদ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় মুমিন বান্দাকে দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে এমনভাবে রক্ষা করেন যেমনভাবে তোমরা তোমাদের রোগীদের ক্ষতির আশঙ্কায় খাবার ও পানি থেকে বিরত রাখো’।[34]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى قَبْرٍ دُفِنَ حَدِيثًا، فَقَالَ: رَكْعَتَانِ خَفِيفَتَانِ مِمَّا تَحْقِرُونَ وَتَنْفِلُونَ, يَزِيدُهُمَا هَذَا فِي عَمَلِهِ، أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ بَقِيَّةِ دُنْيَاكُمْ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) একটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, হালকা করে দু’রাক‘আত ছালাত যাকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর ও নফল হিসাবে আদায় কর। এ দু’রাক‘আত তার আমলে যোগ হবে। এ দু’রাক‘আত ছালাত তার নিকট তোমাদের অবশিষ্ট দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম’।[35]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْهُومَانِ لَا يَشْبَعَانِ: مَنْهُومٌ فِي الْعِلْمِ لَا يَشْبَعُ مِنْهُ وَمَنْهُومٌ فِي الدُّنْيَا لَا يَشْبَعُ مِنْهَا-
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী (ছাঃ) বলেছেন, দু’জন লোভী ব্যক্তির পেট কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে না। একজন জ্ঞানপিপাসু লোক- ইলম দ্বারা তার পেট কখনো ভরে না। দ্বিতীয়জন হলো দুনিয়া পিপাসু- দুনিয়ার ব্যাপারে সেও কখনো পরিতৃপ্ত হয় না’। [36]
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَوْضِعُ سَوْطٍ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا-
হযরত সাহল বিন সা‘দ সাঈদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চাইতে উত্তম’।[37]
[চলবে]
[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
[1] . ইবনু রজব হাম্বেলী, জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম ২/১৮৩।
[2] . জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম ২/১৮৪।
[3] . জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম ২/১৮৩।
[4] . ফাছলুল খিতাবে ফীয্যুহুদে ওয়ার রাকায়েকে ১/১২৫।
[5] . ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আয-যুহুদ, ১৯৭ পৃঃ।
[6] . আহমাদ হা/১৭৭৯৮; মিশকাত হা/৩৭৫৬, সনদ ছহীহ।
[7] . ইবনু মাজাহ হা/২১৪১; মিশকাত হা/৫২৯০; ছহীহাহ হা/১৭৪।
[8] . ফাছলুল খিতাবে ফীয্যুহুদে ওয়ার রাকায়েকে ১/১২৫; জামে‘ইল উলুম ওয়াল হিকাম ২/১৮৩।
[9] . আল-ফাওয়ায়েদ, ৯৯ পৃঃ।
[10] . সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৭/২৬৮ পৃঃ।
[11] . তিরমিযী হা/২৫০৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৩২; মিশকাত হা/৫০৮৭।
[12] . ইবনু মাজাহ হা/৪১০৮; হাকেম হা/৬৫১০, সনদ ছহীহ।
[13] . মুসলিম হা/২৭৪২; মিশকাত হা/৩০৮৬।
[14] . ইবনু মাজাহ হা/৪১০২; মিশকাত হা/৫১৮৭; ছহীহাহ হা/৯৪৪।
[15] .তিরমিযী হা/২৩২০; মিশকাত হা/৫১৭৭; ছহীহাহ হা/৬৮৬।
[16] .বুখারী হা/২৯৬১; মুসলিম হা/১৮০৪; মিশকাত হা/৪৭৯৩।
[17] . ইবনু মাজাহ হা/৪১০৯; মিশকাত হা/৫১৮৮; ছহীহাহ হা/৪৩৮।
[18] . মুসলিম হা/২৯৫৭; মিশকাত হা/৫১৫৭।
[19] . আহমাদ হা/১৯৭১৩; মিশকাত হাত হা/ ৫১৭৯; ছহীহুত তারগীব্ হা/৩২৪৭।
[20] . আহমাদ হা/৮০৬০; ইবনু হিববান হা/৩২২২, সনদ ছহীহ।
[21] . বুখারী হা/৩১৫৮; মুসলিম হা/২৯৬১; মিশকাত হা/৫১৬১।
[22] . আহমাদ হা/৮৪০৩; ছহীহাহ হা/১৯০৬।
[23] . মুসলিম হা/১০৪৭; মিশকাত হা/৫২৭০।
[24] . বুখারী হা/৬৪৩৮; মুসলিম হা/১০৪৯; মিশকাত হা/৫২৭৩।
[25] . মুসলিম হা/২৯৫৯; মিশকাত হা/৫১৬৬।
[26] . আহমাদ হা/২১২৭৭; ইবনু হিববান হা/৭০২; ছহীহাহ হা/৩৮২।
[27] . আহমাদ হা/১৫৭৮৫; ছহীহাহ হা/৩৮২।
[28] . মু‘জামুল কাবীর হা/৩১১৯; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৪১।
[29] . বুখারী হা/২৯৬৪; ছহীহাহ হা/১৬২৫।
[30] . তিরমিযী হা/২৪৬৫; ছহীহাহ হা/৯৪৯।
[31] . তিরমিযী হা/২০৩৬; মিশকাত হা/৫২৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৮০।
[32] . মুসলিম হা/২৯৫৬; মিশকাত হা/৫১৫৮।
[33] . মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৫৪৮; ছহীহাহ হা/২৬৪৩।
[34] . আহমাদ হা/২৩৬৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৭৯।
[35] . মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৯২০; ছহীহাহ হা/১৩৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩৯১।
[36] . হাকেম হা/৩১২; মিশকাত হা/২৬০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬২৪।
[37] . বুখারী হা/৩২৫০; মিশকাত হা/৫৬১৩।