বাস্তবতা ও ন্যায্যতার আলোকে বাবরী মসজিদের রায়!
মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম
মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ 9720 বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি রেস্তোরাঁয় চাকরী করতেন। গত ২৫শে মে তিনি রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে সিগারেট কিনতে গিয়ে নৃশংসভাবে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে প্রাণ হারান। জাল টাকা দিয়ে সিগারেট কিনেছেন এমন অভিযোগ করে দোকানী হটলাইনে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তদন্তের অজুহাতে ফ্লয়েডকে গ্রেফতার করে এবং দু‘হাত পেছনে রেখে হাতকড়া পরায়। অতঃপর পিচঢালা রাস্তায় ফেলে নারকীয় কায়দায় গলার উপর হাঁটু চেপে রেখে হত্যা করে।
ডেরেক চৌভিন নামক ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ফ্লয়েড বারংবার বলতে থাকে প্লিজ... প্লিজ... আমি শ্বাস নিতে পারছিনা অফিসার... শুধু আমার গলাটা ছেড়ে দিন... আমাকে পানি দিন... আমি শ্বাস নিতে পারছিনা ...। এক পর্যায়ে নিস্তদ্ধ ও নিথর হয়ে যায় সুঠামদেহী ফ্লয়েডের দেহ। পানির পিপাসায় কাতর হয়ে সে মারা যায়। তবুও পাষুন্ড পুলিশের মনে একটুও দয়া হয়নি। বরং প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মৃত্যুর পরেও হাঁটু গেড়ে বসেছিল ফ্লয়েডের গলার উপর। যেন সে আরাম কেদারায় বসেছে! প্রায় ৯ মিনিটের হত্যার এ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে এটাকে বর্ণবৈষম্য বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, ভাংচুর এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে যা বর্ণবাদী ইস্যুতে এ যাবৎ কালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিবাদ সমাবেশ। বিক্ষুদ্ধ জনতা হোয়াইট হাউজের সামনে প্রতিবাদ জানাতে আসলে তাদের শান্ত করার পরিবর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার চিরাচরিত বর্ণবাদী মানসিকতা জাহির করে সেনাবাহিনী নামানোর হুমকি দেয়।[1]
এতে মানুষ আরও রোষানলে ফেটে পড়ে। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ চলতে থাকে। ৯ই জুন টেক্সাসে ফ্লয়েডকে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। বিবিসি বাংলা ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের বরাতে লিখেছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে ২০১৯ সালে ১০১৪ জন মারা গেছে। যার বেশীর ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। আর ‘ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স’ নামক বেসরকারী জরিপের দাবী পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশী।[2]
শুধুমাত্র পুলিশের গুলিতে নয়। আফ্রো-আমেরিকানদের সর্বত্র বৈষম্যের শিকার হ’তে হয়। যারা গোটা পৃথিবী হাতের মুঠোয় শাসন করছে অন্য দেশের মানবতাবিরোধীদের বিচার করে গর্বে বুক ফুলিয়ে নিজেদেকে আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক বাহক মনে করে; তারা কালো কুকুরদের প্রতি সন্তানসম সেণহপরায়ণ হ’লেও কালো মানুষদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারে না। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক অত্যাচার বহুদিন ধরে পুঞ্জীভূত হয়ে চলেছে। কেননা আজ যে সভ্যতা সংস্কৃতি ও অর্থনীতির বড়াই তারা করছে তা মূলত গড়ে উঠেছে জোঁকের মত কালোদের রক্ত চুষে খেয়ে। যার উৎপত্তি দাস প্রথার মাধ্যমে। যুগ যুগ ধরে ইউরোপিয়ানরা দাসদের অত্যাচার করে দাসপ্রথাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে। ৮০০-৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইউরোপীয় সভ্যতার পিতৃভূমি প্রাচীন গ্রীসে এবং ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমে অমানবিক দাসপ্রথার প্রবর্তন ঘটে। রোমকদের জৈবিক আনন্দ ও ভোগবিলাসের সামগ্রী জোগানোর জন্য দাসদের চতুষ্পদ প্রাণীর মত পরিশ্রম করতে হতো। পেট ভরে দু‘মুঠো খাবার তাদের নছীবে হতো না। প্রাণ রক্ষার্থে সামান্য খাদ্য জন্তুর মত সামনে ছুড়ে দেওয়া হতো। দিনে কাজ করানোর সময় পায়ে ও কোমরে লোহার বেড়ি পরানো হতো, যাতে পালাতে না পারে। কারণে-অকারণে বৃষ্টির মত পিঠে পড়ত চাবুকের আঘাত। রোমানদের গৃহে পশুর আলাদা ঘর থাকলে এই দাসদেরকে দশ, বিশ বা পঞ্চাশ জন করে রাখা হতো খুপরী ঘরে। তবুও তাদের বেড়ি থেকে মুক্ত করা হতো না।[3]
ইতালীয় নাবিক কলম্বাস ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা আবিষ্কারের পর সেখানে রেড ইন্ডিয়ানদের বসবাস লক্ষ্য করেন। অত্যাচারী কলম্বাস ৫০০ জনকে দাস করে ১৪৯৪ সালে স্পেনের রানী ইসাবেলার কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং বিনিময়ে চেয়েছিলেন শূকর! কিন্তু রাণী তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৪৯৫ সালে দাসরা বিদ্রোহ করলে কলম্বাস কঠোর হস্তে দমন করেন। ইউরোপীয়রা আফ্রিকা উপকূল থেকে কালো মানুষদের ধরে শিকলবন্দি করে আমেরিকার ভার্জিনিয়া উপকূলে জাহাজ ভিড়িয়েছিল ১৬১৯ সালের ২৪শে আগস্ট। মারণাস্ত্র ও নৌশক্তির বলে স্প্যানিশ, বৃটিশ ও ওলন্দাজরা ইউরোপে উৎপাদিত মদ, বস্ত্রসহ নতুন উৎপাদিত পণ্যের বিনিময়ে আফ্রিকার কালো মানুষদের ধরে এনে কৃষি ও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমের চাহিদা পূরণ করত আর পণ্যের মত দাস হিসেবে বিক্রয় করত। এভাবে তারা ধনকুবের হয়েছিল। দাসদের জোর করে জাহাজে তুলে শিকলবন্দি অবস্থায় কঠোর পরিশ্রম করানো হ’লেও খাদ্য পানীয় থেকে বঞ্চিত করা হত। অসুস্থ হ’লে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হতো। যাত্রার আগে দাসদের খোলা থেকে বের করে নারী-পুরুষ সবাইকে উলঙ্গ করে দাঁড় করানো হত এবং মাথা মুড়িয়ে লবণ মেশানো পানিতে শরীর ধুইয়ে বসানো হতো খেতে। বুকে সীলমোহর গরম করে ছেঁকা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হতো বিশেষ চিহ্ন। বিক্রয়ের পর মালিক তপ্ত সিলমোহর বসাতো কপালে। একদিকে কঠোর পরিশ্রম, অন্যদিকে নির্যাতনের যাতাকলে পিষে তিলে তিলে শেষ করা হতো আফ্রো দাসদের। ১৮০৮ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে দাসপ্রথা বিলোপ করা শুরু হয়। ১৮৬০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশই ছিল ক্রীতদাস। আমেরিকায় দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলন সক্রিয় হ’লে আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথা বিলোপ করবেন বলে দাসদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৮৬০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়। কিন্তু দাস প্রথা জিইয়ে রাখা গোষ্ঠীর হাতেই আব্রাহামের মৃত্যু ঘটে’।[4]
এ প্রথার বিলুপ্তির পরেই আমেরিকানদের ঘৃণা-বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা এসে পড়ে আফ্রিকানদের রেখে যাওয়া প্রজন্মদের উপর। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাদের একসাথে পড়ার অধিকার ছিল না। একই বাসে বসার অধিকার ছিল না; ভোটাধিকার ছিল না। চাকুরীতে অধিকার ছিল না। এক কথায় সবদিক থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চিত করা হতো। তাইতো আফ্রিকান বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের শ্রমের বিনিময়ে আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করেছি। মাটির গভীর থেকে সোনা, হীরা, কয়লা তুলে এনে আমরা সাদা মানুষদের হাতে সমার্পণ করেছি। কেবলমাত্র সাদা চামড়ার অধিকারী হওয়ার ফলে তারা সমস্ত সম্পদের অধিকারী হয়েছে।[5]
১৯৫৫ সালে রোসা পার্কস নামক এক মহিলা পাবলিক বাসে সাদা চামড়ার ব্যক্তিকে সীট ছেড়ে না দেওয়ায় গ্রেফতার হন। এর প্রতিবাদে পাবলিক বাস বয়কট করে পায়ে হেঁটে অফিস আদালতে যেতে থাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এ সময় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৩ সালে ২৮শে আগস্ট লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে I have a dream নামক বিখ্যাত সেই ভাষণ প্রদান করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তিনি বলেছিলেন ‘যখন আমরা মুক্তিকে ধ্বণিত হ’তে দেখব, যখন প্রতিটি গ্রাম প্রতিটি বসতি প্রতিটি রাজ্য এবং শহরে বাজবে মুক্তির গান; তখন আমরা সেই দিনকে আরো কাছে নিয়ে আসতে পারব, যেদিন কালো মানুষ ও সাদা মানুষ ইহুদী, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক সবাই হাতে হাত ধরে গাইবে সেই নিগ্রা মরমী সংগীত। এত দিনে আমরা মুক্ত হলাম! এত দিনে পেলাম মুক্তি ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমাকে ধন্যবাদ আমরা আজ মুক্ত!’[6]
অবশেষে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার আইন এবং ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন পাশের মাধ্যমে লুথার কিং এর আন্দোলন সফল হয়। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নের আমেরিকা দেখে যেতে পারেননি। ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে বর্ণবাদী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
আজকের মানবাধিকার, অসম্প্রদায়িকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ঝান্ডাবাহী তথাকথিত আমেরিকা রেড ইন্ডিয়ানদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে গুলি করে হত্যা করে, দাসদের রক্তে হোলি খেলে, কালো মানুষদের নির্যাতনসহ তাদের নেতাদের রক্ত মেখে স্বগর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে! সাদা চামড়ার অভ্যন্তরে অমাবশ্যার রাতের ন্যায় বিদঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের কুৎসিত বর্ণবাদী কালো হাত আজও প্রসারিত রয়েছে। র্জজ ফ্লোয়েড তাদের পরিসংখ্যানে এক নতুন সংযোজন মাত্র। ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ নামক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, All are equal before the law and are entitled without any discrimination to equal protection of the law. All are entitled to equal protection against any discrimination in violation of this declaration and against any incitement to such discrimination. অর্থাৎ আইনের চোখে সবাই সমান এবং শ্রেণী, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। এই ঘোষণাপত্রে বর্ণিত অধিকার প্রয়োগ না হ’লে বা প্রয়োগে বাঁধা পড়লে প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে আইনের আশ্রয়ে সেই অধিকারকে কার্যকর করার’।[7]
১৯৭৩-৮৩ পযর্ন্ত এ দশ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত দশক ঘোষণা করেছিল। ১৯৭৮ সালে আগস্ট মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ জেনেভায় বর্ণবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রথম বিশ^ সম্মেলন করেছিল’।[8] জেনেভার সম্মেলন ইতিহাস হয়ে থেকে গেছে, জাতিসংঘের আইনের পাতায় বর্ণবৈষম্যরোধক আইন ঝকঝক করছে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তথাকথিত অত্যাধুনিক সময়েও মানবতার ধারক আমেরিকাদের বর্ণবাদী সাদা হাতের আক্রমণে কৃষ্ণাঙ্গদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে।
সুধী পাঠক! বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্র তরিকা, ইজম বা মতবাদের প্রজনন ক্ষেত্র ইউরোপকে কখনো তাদের দার্শনিক মতবাদ শান্তি, সাম্য সম্প্রীতি ও মানবধিকার দিতে পারেনি। তার একমাত্র কারণ নীতি-নৈতিকতা বর্জন। রোমান সাম্রাজ্য থেকে বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত উপরে যে হানাহানি ও বৈষম্যের ধারাবাহিক চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে যে, দুনিয়াবী তন্ত্র-মন্ত্র মানুষকে কখনই চূড়ান্ত সত্য ও সুন্দরের সন্ধান দেয় না। এর বিপরীতে একমাত্র ইসলামই শান্তি-সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকারের চূড়ান্ত শিক্ষা দেয়। ইসলাম চামড়ার উপরের রংয়ের চেয়ে চামড়ার নিচের লাল রংয়ের মর্ম অনুধাবন করায়। ইসলামে শারীরিক ও মানসিক সকল নির্যাতন হারাম আর কালো বলে নাক শিটকানো তো দূরের কথা, হাসিমুখে মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করাকেও ইবাদত ও ছাদাকাহ গণ্য করা হয়।[9]
কালো বিলাল (রাঃ) দাস হিসাবে মক্কার কুরইশদের অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। কিন্তু সাম্যের ধর্ম ইসলাম দাস বলে কিংবা
কালো বলে তাঁকে তাচ্ছিল্য না করে মানবিক স্নেহ ও সামাজিক মর্যাদা দিয়েছিল। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ পেয়ে তিনি যখন কা‘বার ছাদে আযান দিতে
উঠেছিলেন তখন বর্ণবাদী আবু সুফিয়ানরা কা‘বার মর্যাদা নষ্ট হ’ল বলে রৈ রৈ আওয়াজ তুলে তিরস্কার করে বলেছিল ‘এই কালো কাক আযান দিচ্ছে! আমাদের সৌভাগ্য যে, এমন দৃশ্য দেখার পূর্বেই আমাদের বাবারা মারা গেছেন।[10]
বিদায় হজ্জের দিন রাসূল (ছাঃ) দরাজ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘কালোর উপরে লালের ও লালের উপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই, তাক্বওয়া ব্যতীত’।[11] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও ধন-সম্পদ দেখবেন না। তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর ও আমল সমূহ’।[12]
‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে মায়ের কাছে যেতে দাও’ ফ্লয়েডের যন্ত্রণাকাতর কথাগুলোই এখন প্রতিবাদের প্রতীকী শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তীব্র শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। তার চেয়েও হয়তো বেশী শ্বাসকষ্ট পেয়ে মারা গেছেন জর্জ ফ্লয়েড। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ পুলিশের ওই হাঁটুর মতো সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী দুঃশাসন আজ দেশে দেশে নিপীড়িত মানুষের গলা চেপে ধরেছে। মানুষ শ্বাস নিতে পারছে না। মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের গলায় চেপে বসা সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ ও বর্ণবাদের সে হাঁটু গুড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে সংর্কীণমনা কথিত সভ্যরা মানবতার শ্বাসরোধ করে হত্যা কওে জাহেলী আরবকেও হার মানিয়েছে। তাই সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হ’লে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। বিশ্বময় সকলের কন্ঠে একটাই আওয়াজ উচ্চারিত হৌক, ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহির বিধান কায়েম কর’ এতেই রয়েছে মানবতার চূড়ান্ত মুক্তি।
[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়]
[1]. ২রা জুন, ২০২০ বিবিসি বাংলা (অনলাইন)।
[2]. ২৮শে মে, ২০২০ বিবিসি বাংলা (অনলাইন), প্রতিবেদন শিরোনাম : আমেরিকায় পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার খতিয়ান, সর্বশেষ বলি জর্জ ফ্লয়েড।
[3]. মুহাম্মাদ কুতুব, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম; অনুবাদ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা; পৃ. ৬৮।
[4]. দেখুন; দৈনিক ইনকিলাব, প্রবন্ধ : ক্রীতদাস প্রথা : সভ্যতার অন্ধকার; ১৮ জুন, ২০১৬ পৃ.১১, দৈনিক ইত্তেফাক, প্রবন্ধ : দাস প্রথার সেকাল একাল; ২২ আগস্ট ২০১৫; দৈনিক ইনকিলাব ২৮ আগস্ট, ২০১৯; প্রবন্ধ : দাসত্ব, বর্ণবাদ এবং হত্যা-লুণ্ঠনের বিশ্বব্যবস্থার ইতিহাস।
[5]. বর্ণবাদের কৃষ্ণহাত; জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র, ঢাকা হ’তে প্রকাশিত (সেপ্টেম্বর ১৯৮৩), পৃ. ৪০।
[6]. প্রথম আলো; ২৫-০৫-২০১০; প্রবন্ধ আমি এক স্বপ্ন দেখি, ভাষান্তর : ফারুক ওয়াসিফ।
[7]. মাসিক আত-তাহরীক; জুন ২০১৩, পৃ. ১৭।
[8]. বর্ণবাদের কৃষ্ণহাত; পৃ. ০৫।
[9]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯।
[10]. আত-তাহরীক জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ২০০০; দরসে কুরআন।
[11]. আহমাদ হা/২৪২০৪।
[12]. মুসলিম হা/৬৭০৭-৮।