হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ (রহঃ)

মুখতারুল ইসলাম 9450 বার পঠিত

বিশিষ্ট আহলেহাদীছ আলেম ও লেখক, পাকিস্তানের ফেডারেল শারী‘আহ কোর্টের প্রাক্তন ধর্মীয় পরামর্শক এবং সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ (৭৫) গত ১১ই জুলাই ২০২০ লাহোরে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন! ১৯৪৫ সালে ভারতের রাজস্থানের জয়পুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পর তাঁর পরিবার পাকিস্তানের করাচীতে পাড়ি জমায়। করাচীতে জামেআ রহমানিয়া থেকে লেখাপড়া শেষে সাপ্তাহিক আল-ইতিছামে কর্মজীবন শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি লাহোরের দারুস সালাম প্রকাশনীর গবেষণা বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি প্রায় শতাধিক গ্রন্থের লেখক এবং তাফসীর আহসানুল বায়ান তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি, যেটি সঊদী সরকারের পক্ষ থেকে হাজীদেরকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া তাঁর সম্পাদনায় বহু বই প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রায় সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ। তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল- আযমাতে হাদীছ আওর উসকে তাক্বাযা, আহলে হাদীছ আওর আহলে তাক্বলীদ, খাওয়াতীন সে মুতা‘আল্লাক বা‘য আহাম মাসায়েল আহাদেছ কী রওশনী মে, নাফায শারী‘আত কিওঁ আওর কেইসে? ইজতিহাদ আওর তা‘বীর শারী‘আত কে ইখতিয়ার কা মাসআলাহ, ইসলামী খুলাফা ওয়া মুলক কে মুতা‘আল্লাকা গালাত্ব ফাহমিয়ূঁ কা ইযালাহ, তাহরীকে জিহাদ আওর আহলেহাদীছ ওয়া আহনাফ প্রভৃতি। পীস টিভি উর্দূ, পয়গাম টিভিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন টিভিতে তিনি নিয়মিত আলোচক ছিলেন। ১২ই জুলাই বাদ যোহর লাহোরের লরেন্স রোডে মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। দু’দফা জানাযায় শায়খ মাসঊদ আলম এবং শায়খ ইরশাদুল হক্ব আছারী ইমামতি করেন। এতে মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছের আমীর সিনেটর সাজিদ মীরসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, আলেম-ওলামা এবং সর্বস্তরের হাযার হাযার এসে মানুষ অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

সদা হাস্যোজ্বল, ঈমানদীপ্ত চেহারা, চোখেমুখে মেধার ঝিলিক, সাদাশুভ্র মুখভর্তি দাঁড়ি, ভিতরে পান্ডিত্যে ভরপুর দিল হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ (৭৫) পাকিস্তানের ফেডারেল শারী‘আহ কোর্টের প্রাক্তন ধর্মীয় পরামর্শক, লাহোরের দারুস সালাম প্রকাশনীর গবেষণা বিভাগের প্রধান এবং সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি একাধারে সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির, মুহাক্কিক, মুফতী, ব্যাখ্যাকার, কলম সৈনিক ও আহলেহাদীছ আন্দোলনের একজন বীর সিপাহসালার ছিলেন। তাঁর কলমের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষায়। বিশেষ করে তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি ‘তাফসীরে আহসানুল বায়ান’ সকল মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। দাওয়াতী ময়দানের একজন তাত্ত্বিক লড়াকু সৈনিক ও প্রজ্ঞাবান বাগ্মী হিসাবে নিজের পান্ডিত্যের স্বভাবসুলভ জাতকে তিনি ভালভাবেই চিনিয়েছিলেন। এই লেখা প্রকাশিত হবার প্রাক্কালে ১১ই জুলাই ২০২০ তিনি পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন! নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন-পরিক্রমা উল্লেখ করা হ’ল।

জন্ম ও জন্মস্থান : উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ ভারতবর্ষ বিভক্তির দু’বছর পূর্বে ১৯৪৫ সালে সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের হাতে গড়ে ওঠা ভারতের পিংক সিটি খ্যাত জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেন।

জয়পুর রাজপুতানা রাজ্যটি মূলতঃ হিন্দু রাজপুতানা রাজাদের শাসনাধীন অঞ্চল ছিল। স্বাধীনতার পর রাজপুতানা নামে পরিচিত রাজপুত শাসিত দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ভারত সরকার রাজপুতানাদের শাসন উৎখাত করে রাজস্থানের অন্তর্ভুক্ত করে। জয়পুর হ’ল ভারতের প্রখ্যাত রাজস্থান প্রদেশের রাজধানী এবং সবচাইতে বড় শহর। বর্তমানে জয়পুরই এ রাজ্যের রাজধানী হিসাবে শোভা পাচ্ছে।

এমন এক ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহরের বাসিন্দা ছিল হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফের পিতা হাফেয আব্দুশ শাকূর। তিনি বড় ধরনের কোন আলেম ছিলেন না বটে। কিন্তু আলেম-ওলামাদের খুবই সম্মান করতেন এবং ভালবাসতেন। তিনি সর্বদাই আলেম-ওলামাদের সাহচর্য পসন্দ করতেন এবং তাদের বিভিন্ন ওয়ায-নছীহত শোনায় মশগুল থাকতেন। এভাবে তিনি জীবন চলার পথে পরকালীন পাথেয় সংগ্রহ করতেন এবং নিজের ও পরিবারের জন্য ইলমী ফায়দা নিতেন।

‘হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ’-এর লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ জয়পুরীর তিনি একান্ত ভক্ত ছিলেন। তাঁর নিকটেই কুরআন মাজীদের অনুবাদ পড়েছিলেন। তিনি মাওলানাকে এতই ভালবাসতেন যে, তাঁর ছেলের নাম মুহাম্মাদ ইউসুফ রাখেন। পরবর্তীতে ছালাহুদ্দীন বড় হয়ে যখন সত্যের পক্ষে কলম সৈনিক হিসাবে বরিত হলেন, তখন তিনি নিজের নামের কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি মুসলিম বীর সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীর সাথে নিজে নাম মিলিয়ে মুহাম্মাদের স্থলে ছালাহুদ্দীন যুক্ত করে ছালাহুদ্দীন ইউসুফ রাখেন। কেননা সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীর নামও ইউসুফ ছিল।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ও সারা ভারতবর্ষে গোলযোগ- হট্টগোল ও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক রায়ট শুরু হয়ে যায়। সে সময় অনেক মানুষ হিন্দুস্থান ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিল। সবর্ত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হলেও জয়পুরে তখনও তেমন কোন হট্টগোলের ছোঁয়া লাগেনি। জয়পুর সবদিক থেকে খুবই নিরাপদ ও শান্তির শহর হিসাবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিল। ফলে আব্দুশ শাকূর ছাহেব মাতৃভূমি হিন্দুস্থানেই থাকার জন্য মনস্থির করেন। ইত্যবসরে ছালাহুদ্দীন ইউসুফের এক বড় ভাই কাউকে কিছু না জানিয়ে বন্ধুর সাথে পাকিস্থানে পাড়ি জমান। কিন্তু কিছুকাল পরে তাঁর বড় ভাই দারুণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পিতার কানে ছেলের অসুস্থতার খবর পৌঁছলে আব্দুশ শাকূর ছাহেবও সন্তানের ভালোবাসার টানে অবশেষে পাকিস্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৯ সালে তিনি পুরো পরিবার নিয়ে পাকিস্থানে স্থানান্তরিত হন। তাঁরা প্রথমে পাকিস্তানের হায়দারাবাদ (সিন্ধু)-এ অবস্থান নেন। পরবতীর্তে করাচীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ছালাহুদ্দীন ইউসুফের পিতারা মোট সাত ভাই। তাঁকে পাকিস্থানে আসতে দেখে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তাঁর সাথে আসতে থাকেন। তাঁর পরিবারে তিনিই শুধুমাত্র আহলেহাদীছ ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর ছোট ভাই আব্দুল ক্বাইয়ূমও আহলেহাদীছ হয়ে যান এবং পাকিস্থানে বড় ভাইয়ের সাথে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর আরেক ভাই আব্দুল গণিও এক পুত্রকে সাথে করে পাকিস্থানে চলে আসেন। বাকিরা অবশ্য ভারতের জয়পুরেই থেকে যান। পাকিস্তানের শরণার্থী জীবন ছিল নিদারুণ কষ্টের। তাঁরা আস্তেআস্তে কষ্টকর জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যান। পরবর্তীতে দুর্দিনের বালা দূর হয়ে আসে সুদিনের আলো।

আব্দুশ শাকূর ছাহেব শিক্ষিত কম হ’লেও খুবই পরহেযগার লোক ছিলেন। তিনি সামান্য হাফেয হয়েও তাঁর পরিবারে দ্বীনের তাবলীগ করতেন। বাড়িতে প্রত্যেকদিন কুরআন তেলাওয়াত, অনুবাদ, প্রাত্যহিক জীবনে যরূরী মাসআলা-মাসায়েলসহ ইসলামের বিভিন্ন বুনিয়াদী বিষয়ে আলোচনা রাখতেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আহলেহাদীছ আলেম-ওলামাদের সখ্যতা কখনো পরিত্যাগ করেননি।

ভারতে থাকতে মাওলানা আব্দুল জাববার গোন্দলভী তাঁর বাড়িতেই সর্বদা তাশরীফ আনতেন। পাকিস্তানের করাচীতে থাকাবস্থায় করাচীর বাসিন্দা মাওলানার ছেলে ক্বারী আব্দুল খালেক রহমানীও তাঁর বাড়িতেই আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন।

শিক্ষা : বাড়িতেই দ্বীনী পরিবেশে পিতার নিকটে উর্দূ কিতাব দিয়ে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ১০-১১ বছর বয়সে করাচীতে ‘আহলেহাদীছ মসজিদ রহমানিয়াতে’ প্রাতিষ্ঠানিক মক্তব জীবন শুরু করেন। তাঁর পিতা ‘জামেঊল উলূম আস-সঊদিয়্যাহ’ মাদরাসায় ক্বারী মুহাম্মাদ বাশীরের নিকট কুরআন মাজীদ নাযরানা পড়তে দেন। শিক্ষক তাঁর তীক্ষ্ণ মেধায় আশ্চর্য হয়ে যান। বাশীর ছাহেবের পীড়াপীড়িতে তিনি ছেলেকে হানাফী দেওবন্দী হাফেয ক্বারী মুহাম্মাদ ইশফাকের নিকট হিফয করতে দেন। তিনি এক বছরের মধ্যেই পবিত্র কুরআনুল কারীম হিফয সম্পন্ন করেন। অতঃপর দ্বীনী ইলম হাছিল করার জন্য উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। করাচীতে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানেই ছোট্ট পরিসরে চালু হওয়া জামেঊল ঊলূম মাদরাসায় দারসে নিযামীতে ভর্তি হন। তিনি আল্লামা শায়খুল হাদীছ মুহাম্মাদ ইউসুফ কালকাত্তাবীর নিকট দারস নেন। ইত্যবসরে তিনি পাঞ্জাবে চলে গেলে প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞ আলেম হাকেম আলী দেহলভীর নিকট পড়াশোনা চালিয়ে যান। হাকেম আলী দেহলভীর নিকট তিনি মানকূলাত ও মা‘কূলাতের উপর বিশেষ পান্ডিত্য অর্জন করেন। পরবর্তীতে মাদরাসাটির পরিসর বড় হ’লে সুফায়েদ মসজিদ সোলজার বাযারে স্থানান্তরিত হয়। তখন মাদরাসার নাম পরিবর্তন করে ‘দারুল হাদীছ রহমানিয়া’ রাখা হয়। সেখানে মুহতামিম আতাউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র শায়খ আব্দুল ওয়াহহাব (দিল্লী)-এর মত দেশবরেণ্য আলেমদের দেখা পান এবং ইলমী ইযাফাহ হাসিল করেন। মুহতামিম ছাহেব তাঁর পিতার দিল্লীর মাদরাসার স্মৃতি রক্ষার্থে ‘জামেঊল উলূম আস-সঊদিয়্যাহ’ মাদরাসাটিকে ‘দারুল হাদীছ রহমানিয়া’ মাদরাসায় রুপান্তরিত করেন। মাদরাসায় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষক হাকেম আলীর দেহলভীর হালাক্বায় বা বিশেষ কোর্সে তিন বছর যাবৎ অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

অতঃপর তিনি শায়খ দাউদ গাযনবীর মাদরাসা ‘দারুল ঊলূম তাক্ববিয়াতুল ইসলাম‘ লাহোর থেকে দারসে নিযামীর পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। তিনি পাকিস্থানের তদান্তীনকালের নামীদামী শিক্ষকের নিকট থেকে ইলমী ইযাফাহ অর্জন করেন। তন্মধ্যে  উল্লেখযোগ্য শিক্ষকমন্ডলী হ’ল মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী, ক্বারী বাশীর আহমাদ তিবতী, ক্বারী ওবাইদুল্লাহ বালতিস্তানী, হাফেয মুহাম্মাদ ইসহাক্ব, হাফেয আব্দুর রশীদ, মাওলানা আব্দুর রশীদ মুজাহিদাবাদী এবং মাওলানা আব্দুল হামীদ প্রমুখ।

স্মরণীয় ঘটনা : হাফেয সন্তানের অল্প সময়ে কুরআন হিফয সম্পন্ন হওয়ায় হাফেয পিতার বুকটা খুশীতে ভরে উঠে। বাবার উৎসাহ-উদ্দীপনায় ছালাহুদ্দীন ইউসুফও প্রাণশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। ফলে বাড়িতে যে আলেমই আসতেন, তাঁকে ইউসুফ আগ্রহভরে কুরআন মাজীদ শুনাতেন। একদিন ক্বারী আব্দুল হক রহমানী মেহমান হিসাবে আপ্যায়িত হ’লে তাঁর কাছে কুরআন শুনতে চাইলেন। হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ তাঁকে সাবলীলভাবে সূরা বাক্বারাহর দু’রুকূ শুনিয়ে দিলেন-أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ‘তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের বেলায় তা ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো? তোমরা কি বুঝো না? (বাক্বারাহ ২/৪৪)। তিনি তাঁর মনোমুগ্ধকর পড়া শুনে এতটাই খুশী হলেন যে, উপরোক্ত আয়াতটি শুনে স্নেহচ্ছলে বললেন, তুমি তো আমাকে ভাই ওয়াযই শুনিয়ে দিলে!

তাঁর লেখনী : তিনি ‘দারুল ঊলূম তাক্ববিয়াতুল ইসলাম’ মাদরাসায় ছাত্র থাকাবস্থায় ক্লাসের পাঠ্যবই ও জ্ঞানগর্ভ বিভিন্ন সাহিত্য, জার্নাল, সাময়িকী, পেপার-পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে প্রভূত জ্ঞানার্জন করেন। গুরুত্বপূর্ণ পেপার-পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল তাজাল্লী (দেওবন্দী ভাবধারার), চেরাগে রাহ (করাচী), ফারান (করাচী), সায়ারাহ (লাহোর), তর্জুমানুল কুরআন (লাহোর), মীছাক্ব (লাহোর) রাহীক্ব (লাহোর), দৈনিক শিহাব (লাহোর), সাপ্তাহিক আসিয়া (লাহোর) প্রভৃতি। এসব পত্রিকার মধ্যে নিজেকে তিনি ডুবিয়ে রাখতেন।

তিনি ছিলেন বইয়ের পোঁকা, ভাল নতুন কোন বই পেলেই হ’ল। তাঁর আনন্দ আর দেখে কে! তাঁর প্রিয় লেখকের তালিকায় যাদের নাম সর্বাগ্রে তাঁরা হ’লেন-শায়খ মাসঊদ আলম নাদভী, শায়খ আবুল হাসান আলী নাদভী, শায়খ আব্দুস সালাম নাদভী, ক্বাযী সুলায়মান মানছূরপুরী, শায়খ শিবলী নু‘মানী, শায়খ সুলায়মান নাদভী, আবুল অ‘ালা মওদূদী, আবুল কালাম আযাদ প্রমুখ। 

তিনি ছাত্র বয়সেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। তাঁর জীবনের প্রথম প্রবন্ধ ছিল ‘জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী’ এবং দ্বিতীয়টা হ’ল ‘জার্নালিজম ইন পাকিস্তান’ যা আল-ই‘তিছাম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আল-ই‘তিছাম পত্রিকায় সিরিজ আকারে প্রকাশিত তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ছিল ‘তাজাল্লী’ পত্রিকার সম্পাদক শায়খ আমীর ওছমানী ছাহেব কর্তৃক আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে লিখিত প্রবন্ধের প্রতিবাদে। তিনি আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের দলীল ভিত্তিক সমুচিত জবাব প্রদান করেন।

অতঃপর আল-ই‘তিছাম পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক শায়খ আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানীর বিশেষ দিকনির্দেশনায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে তিনি মাওলানা মওদূদীর লিখিত ‘খিলাফাত ওয়া মুলূকিয়াত’ বইয়ের শারঈ অপব্যাখ্যা অপনোদন করে জাতির সামনে সত্যের দূয়ার উন্মোচন করেন। ২০-২১ বছর বয়সে লিখিত এই বইটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই। শায়খ আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী ‘আল-ই‘তিছাম’ পত্রিকার দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পন করেন। ১৯৭০ সালে তাঁর নাতি মুহাম্মাদ সুলায়মান আনছারী এবং ছেলে হাফেয আহমাদ শাকের ছালাহুদ্দীন ইউসুফের সহযোগী হিসাবে পত্রিকার দায়িত্ব পালন করেন। অবশেষে শায়খ আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী মৃত্যুবরণ করলে প্রায় চবিবশ বছর তিনিই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন  করেন। পত্রিকার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব অর্থাৎ প্রবন্ধ, সম্পাদনা, জীবনী ও বইয়ের উপস্থাপনা সবই তাঁর একহাতে সম্পাদিত হত। মোট কথা তিনি চবিবশটা বছরে হাযার হাযার পৃষ্ঠা লিখেছেন আল-ই‘তিছাম পত্রিকায়।

তিনি পত্রিকার দায়িত্ব পালন শেষে শায়খ আব্দুল মালিক মুজাহিদ প্রতিষ্ঠিত খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা ‘দারুস সালাম পাবলিকেশন্স’-এ গবেষণার কাজে যুক্ত হন। তিনি রিয়াদে প্রকাশনা সংস্থার অফিসে চার মাস অবস্থানরত থাকাকালীন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘তাফসীরে আহসানুল বায়ান’ লিখতে শুরু করেন। লাহোরে প্রকাশনা সংস্থার শাখা অফিস লোয়ার মল থেকে শায়খ মুহাম্মাদ জুনাগড়ীর সংকলিত কুরআনের উর্দূ অনুবাদসহ তাফসীরের সাথে সংযুক্ত হয়ে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর এই উর্দূ তাফসীরটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করায় সঊদী সরকার সারসংক্ষেপ করে কিং ফাহাদ কমপ্রে∙-এর অধীনে পুনরায় প্রকাশ করে। মুসলিম জাহানের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় দারুস সালাম পাবলিকেশন্স তাফসীরটি ইংরেজী ভার্সনে পাঁচ খন্ডে প্রকাশ করে। পরবতীর্তে হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ পুরো কুরআনটি শব্দে শব্দে অনুবাদ করে ‘আহসানুল কালাম’ এবং ‘আল-মাআ‘নীল কুরআনিল কারীম’ হিসাবে দারুস সালাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ করেন। তাঁর লিখিত ও অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহের তালিকা নিম্নরূপ :

১. রিয়াযুছ ছালেহীন : ইমাম নববী (রহঃ)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তির অন্যতম হ’ল বিশ্ববিশ্রুত হাদীছের সংকলন গ্রন্থ রিয়াযুছ ছালেহীন। এই গ্রন্থের উর্দূ অনুবাদের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন ছালাহুদ্দীন ইউসুফ, যা দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়।

২. খিলাফাত ওয়া মুলূকিয়াত কী তারীখী ওয়া শারঈ হাইছিয়াত : এই কিতাবটি মাওলানা আবুল আ‘লা মওদূদী সাহেব লিখিত ‘খিলাফাত ওয়া মুলূকিয়াত’ বইয়ের জবাব। অত্র বই খানা সম্প্রতি ২০১৮ সালে পাঠকের ব্যাপক চাহিদার ফলে নতুন সংস্করণে ৬০৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত নতুন প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সুযোগ্য সন্তান ওছমান ইউসুফ মাদানীর উদ্যোগে নতুন আঙ্গিকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।

৩. আওরাতুঁ কে ইমতিইয়াযী মাসায়েল ওয়া কাওয়ানীন : এটি নারীদের ব্যাপারে ফিক্বহী মাসআলা-মাসায়েল সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। ইসলামে পুরুষ ও নারীর পারস্পারিক মর্যাদা, নারীদের নেতৃত্ব, তিন তালাক, বহুবিবাহ, সাক্ষ্য গ্রহণ, রক্তপণ, উত্তরাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বইটিতে আলোচিত হয়েছে। ৩১৭ পৃষ্ঠার বিশাল বইটি দারুস সালাম প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।

৪. যাকাত ওয়া ওশর কে আহকাম আওর মাসায়েল ওয়া ফাযায়েল : বইটি যাকাত ও ওশরের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংকলন। ১৩৫ পৃষ্ঠার বইটি দারুস সালাম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

৫. রামাযানুল মুবারক : ফাযায়েল আওর আহকাম ওয়া মাসায়েল : বইটির নামের মধ্যেই এর গাম্ভীর্য লুকিয়ে আছে অর্থাৎ বৃক্ষ তার ফলে পরিচয়। বইটি পরবর্তীতে ইংরেজী ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে।

৬. মাসনূন নিকাহ আওর শাদী-বিয়া কী রুসূমাত : ১১০ পৃষ্ঠার এই বইতে বিয়ে-শাদীর সুন্নাত বনাম বিদ‘আত সংক্রান্ত তুলনামূলক পর্যালোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে।

৭. মাফরূর লাড়কিয়ূঁ কা নিকাহ আওর হামারী আদালাতে : ৮৮ পৃষ্ঠাব্যাপী এই বইটিতে ছেলে-মেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে বিয়ে-শাদী তথা ওলী ছাড়াই কোর্ট ম্যারেজের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে সে বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনার অবতারণা করা হয়েছে। বিশেষকওে এতে বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে বেলায়েত বা অভিভাকত্বের স্বীকৃতির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

৮. রুসূমাত মুহাররামুল হারাম আওর সানিহায়ে কারবালা : ১১২ পৃষ্ঠার বইটিতে মুহাররাম মাস এবং কারবালার নামে অনৈসলামিক কিচ্ছা-কাহিনীর স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। অতঃপর ১০ই মুহাররামের শিরকী-বিদ‘আতী কর্মকান্ড এবং কারবালার প্রকৃত ইতিহাস আলোচিত হয়েছে।

৯. নামাযে মাসনূন মা‘আ আদ‘ইয়াহ মা’ছূরাহ : বইটিতে ছালাতে দৈনন্দিন পঠিতব্য দো‘আসমূহ বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। ১৫৯ পৃষ্ঠার বইটিতে শুধুমাত্র দো‘আ সংক্রান্ত আলোচনা স্থান পেয়েছে।

১০. নামাযে মুহাম্মাদী : বইটি ছোট বাচ্চাদের ছালাত শিখানোর উপযোগী করে লিখা হয়েছে। এটি সুন্নাতী তরীকায় ছালাত আদায়ের এক গুচ্ছ সম্ভার। ৬৪ পৃষ্ঠার বইটি দারুস সালাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়।

১১. তানক্বীহুর রুয়াত ফী তাখরীজে আহাদীছিল মিশকাত : এটি মিশকাতের আরবী শারাহ গ্রন্থ, যা ‘আহসানুত তাফাসীর’-এর প্রণেতা শায়খ আহমাদ হাসান দেহলভী ৪ খন্ডে শেষ করেন। এর দুই খন্ড দেশভাগের পূর্বেই দিল্লী থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। তৃতীয় খন্ডের তাহক্বীক্বের কাজটি করেছিলেন মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ এবং সর্বশেষ ছালাহুদ্দীন ইউসুফ এবং ক্বারী নাঈমুল হক নাঈম দু’জনে মিলে চতুর্থ খন্ডের তাহক্বীক্বের কাজ সমাপ্ত করেন।

১২. আহলে হাদীছ আওর আহলে তাক্বলীদ : আহলেহাদীছদের মাসলাক অনুযায়ী বিরোধীদের দলীলভিত্তিক জবাব প্রদান করা হয়েছে।

১৩. নামীমাতুছ ছাবীয়ী ফী তারজামাতিল আরবাঈনা মিন আহাদীছিন নাবী : নবাব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী লিখিত ‘তাসহীল ওয়া তানক্বীহ’ বই অবলম্বনে লিখিত। বইটিতে বাচ্চাদের উপযোগী ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ সন্নিবেশিত হয়েছে। ছালাহুদ্দীন ইউসুফ সাহেব পুরাতন উর্দু শব্দাবলীর পরিবর্তে নতুন শব্দাবলী সংযোজন করেন এবং ২৩ পৃষ্ঠার বইটি ‘আদ-দাও‘আহ ওয়াস সালাফিয়্যাহ’ থেকে প্রকাশিত হয়।

১৪. আওরাত কী সারবারাহী কা মাসআলা আওর শুবহাত ওয়া মুগালাত্বাত কা জায়েযাহ : মহিলা নেতৃত্ব সংক্রান্ত বইটি ‘আদ-দাও‘আহ ওয়াস সালাফিয়্যাহ’ থেকে প্রকাশিত হয়।

১৫. ইসলামী খুলাফা ওয়া মুলক কে মুতা‘আল্লাকা গালত্ব ফাহমিয়ূঁ কা ইযালাহ : ইসলামী খেলাফত সংক্রান্ত ভ্রান্তি সমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।

১৬. তাহরীকে জিহাদ আওর আহলেহাদীছ ওয়া আহনাফ : বইটিতে আহলেহাদীছ ও হানাফী আলেমদের জিহাদ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে।

এছাড়া তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-

১৭. তাওহীদ ওয়া শিরক কী হাক্বীক্বাত মা‘আ মুগালাত্বাত ওয়া শুবহাত কা ইযালাহম, ১৮. কবর পুরস্তী, ১৯. আহকাম ওয়া মাসায়েলে ঈদুল আযহা, ২০. হিছনুল মুসলিম, ২১. কিয়া খাওয়াতীন কা তরীক্বাহ নামাযে মারদূঁ সে মুখতালিফ হ্যায়, ২২. নাফাযে শারী‘আত কিওঁ আওর ক্যায়সে?, ২৩. ইজতিহাদ আওর তা‘বীর শারী‘আত কে ইখতিয়ার কা মাসআলাহ, ২৪. ঈছালে ছাওয়াব আওর কুরআনী খাওয়ানী, ২৫. হাদ্দে রজম কী শারঈ হাইছিয়াত, ২৬. জানাযা কা আহকাম ওয়া মাসায়েল। ২৭. হুকুকে উম্মাহ ২৮. হুকুকুল ইবাদ ২৯. হুকুকুল ওয়ালেদাইন ৩০. হুকুকুল আওলাদ ৩১. হুকুকুয যাওজাইন ৩২. ওয়াকি‘আহ মি‘রাজ আওর উস কে মাশাহাদাত ৩৩. খানেপিনে কে আদাব ৩৪. সোনে জাগনে কে আদাব ৩৫. সালাম কে আদাব ওয়া আহকাম ৩৬. খাওয়াতীন সে মুতা‘আল্লাক বা‘য আহাম মাসায়েল আহাদেছ কী রওশনী মে ৩৭. আইয়াম মাখছূছাহ মে আওরাত কা কুরআন পাড়হনা আওর সোনা ৩৮. মাসআলা তালাক্ব ছালাছাহ আওর উলামায়ে আহনাফ ৩৯. আযমাতে হাদীছ আওর উসকে তাক্বাযা ৪০. ইসলামী লেবাস : আদাব ওয়া আহকাম ৪১. তরজমায়ে কুরআন ৪২. মিনহাতুল বারী তারজামায়ে আদাবুল মুফরাদ লিল বুখারী।

তাঁর বাগ্মিতা : তিনি বক্তব্যেও পারদর্শী ছিলেন। তিনি দূরদৃষ্টি ও উম্মাহ চেতনাসম্পন্ন বক্তা ছিলেন। বিভিন্ন মসজিদে নিয়মিত জুম‘আর খুৎবা দিতেন। তিনি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন। লাহোরসহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চসহ আধুনিক মিডিয়া জগতে তাঁর সরব পদচারণা ছিল। বক্তব্যেকে তিনি দ্বীন প্রচারের বড় মাধ্যম হিসাবে মনে করতেন। লেখনীর মত তাঁর বক্তব্যও ছিল শানিত তরবারী। তিনি কুরআন-হাদীছের বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পেশ করতে পারতেন। তার বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য মুমিন হৃদয়ে খুবই প্রভাব ফেলত। তার বক্তব্যে বিশেষভাবে ফুটে উঠত হুকুকুল্লাহ, হুকুকুল উম্মাহ এবং হুকুকুল ইবাদের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যা থেকে মানুষ ইহকালীন ও পরকালীন করণীয়গুলো অক্ষরে অক্ষরে বুঝে পেত। জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণই তার বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল।

উপসংহার : হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ সূরা আল-ইসরা নিয়ে বিস্তারিত তাফসীর লিখছিলেন। কিন্তু এটি সমাপ্তির আগেই  রোজ শনিবার ১১ই জুলাই ২০২০ পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। জীবদ্বশায় তিনি পিস টিভি উর্দূ, পায়গাম টিভি এবং পাকিস্থানের নামীদামী সব টিভি চ্যানেলে তিনি উপস্থিত হতেন। এই আল্লাহর পথের দাঈ বর্হিবিশ্বেও পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী কনফারেন্স, সেমিনার-সেম্পোজিয়ামে। তিনি পাকিস্থানের বিখ্যাত পত্রিকা ‘মুহাদ্দিছ’ (লাহোর), বোর্ডের অন্যতম একজন সদস্যও ছিলেন। কত বই, কত পত্রিকাই যে তার বরকতী হাতের ছোঁয়ায় সম্পাদিত হয়েছে তার ফিরিস্তি শেষ হবে না। এমন একজন আহলেহাদীছ ইলমী মহীরুহের বিদায় সত্যিই অপূরণীয়। আল্লাহ তাঁর রেখে যাওয়া বিশুদ্ধ দ্বীন প্রচারের এই মিশনকে আরো বেগবান গতিতে অব্যাহত রাখার তাওফীক দিন-আমীন!



আরও