রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনী পড়ে মুসলিম হয়েছি

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 9661 বার পঠিত

যু্ক্তরাজ্যের অধিবাসী ইউসুফ ডার্বিশায়ার ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলেন মদ ও মাস্তিতে মগ্ন এক ব্রিটিশ যুবক। অবসরে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবনী পড়ে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। মহানবী (ছাঃ)-এর চাচা হামযা (রাঃ)-এর জীবন তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। ফলে তার বোনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের মেয়ের নাম রাখেন সাফিয়া।

তিনি বলেন, মুসলিম হওয়ার আগে আমি ছিলাম একজন সাধারণ ব্রিটিশ বালক। আমি রবিবার সন্ধ্যায় মদপানসহ এমন সবধরনের কর্মকান্ডেই অভ্যস্ত ছিলাম। এ ধরণের কর্মকান্ড যাকে এখন আমি অপকর্ম বলি। এই ধরনের স্বেচ্ছাচারী পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমি বড় হতে থাকি। তবে আমার ভাল গুণ বলতে, অবসরে বা ছুটিতে ভাল ভাল বই পড়ার অভ্যাস আমার ছিল। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি ছুটি কাটাতে গ্রিসে যাচ্ছিলাম। আপনি যখন কোনো এয়ারপোর্টে যাবেন আপনার ব্যাকপ্যাকে পড়ার মত একাধিক বই থাকতে পারে, যা আপনি কোনো সুইমিংপুলের পাশে বসে পড়তে পারেন। যদিও খুব বেশী পড়া হয় না। এমনই একটি ভাল লাগাতে থেকে আমি ভাবলাম, আমার প্রিয় লেখক ডাব্লিউএইচ স্মিথের কোনো বই পড়ার জন্য নিয়ে যাব। কিন্তু তাঁর লেখা মনের মত কোন বই পেলাম না।

আমি ভাবতেই পারিনি যে, কখনো কখনো মানুষ না চাইতেও অনেক ভালো কিছু পেয়ে যায়। বই না পেয়ে ফিরে আসার সময় আমার হাতের নিকটেই একটি বুক শেলফ আমার চোখে পড়ে যায়। টেবিলে বিছানো বইগুলো তোলার সময় একটি বই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বার্নাবি রজার্সনের ‘দ্য প্রফেট মুহাম্মাদ : আ বায়োগ্রাফি’। লাইব্রেরীতে বইটির প্রথম পৃষ্ঠা পড়ার পরই আমার ভালো লেগে যায়। আমি দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়ি এবং ছুটিতে পড়ার জন্য বইটি কিনে নিই। আমি বইটি পড়লাম। বইটি আমার তৃপ্তি বাড়িয়ে দিল। আমার মনে হ’ল, আমার আরও জানা প্রয়োজন। সুতরাং আমি বইটি পড়ে শেষ করলাম এবং স্থানীয় একটি মসজিদে গেলাম; তাদের সঙ্গে কথা বললাম এবং জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। মসজিদের ইমামের সাথে বিভিন্ন বিষয় দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা হওয়ার পরে, তিনি আমার হাবভাব দেখে বললেন, সত্যি বলতে কি ইসলাম বোঝার শ্রেষ্ঠ পথ হলো মুসলিম হওয়া। তখন আমি দ্বিতীয় কোনো চিন্তা না করেই কালেমা শাহাদাত- আশহাদু  আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও  রাসূল) পাঠ করলাম।

হামযা (রাঃ)-এর জন্য ভালোবাসা

আমি একজন নওমুসলিম হিসাবে মহানবী (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের সঙ্গে নিজের মিল খোঁজা স্বাভাবিক। ফলে এ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করি। কেননা তাঁরাও ছিলেন আমার মত ‘ধর্মান্তরিত মুসলিম’। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা হামযা (রাঃ)-এর সঙ্গে আমার মিল রয়েছে। ইসলাম গ্রহণের আগে ও পরে তাঁর জীবনাচারের সঙ্গে আমি নিজের মিল খুঁজে পাই। যেমন তিনি আনন্দময় সময় কাটাতে পসন্দ করতেন, এমন অনেক কিছুই মনে হয় মিলে যায় তাঁর সাথে। সুতরাং হজ্জের সময় আমি ওহুদ যুদ্ধের প্রান্তরে যেখানে হামজা (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন সেখানে যাই এবং সময় কাটাই। ওহুদের প্রান্তরে আমি যখন হাঁটছিলাম, যেন প্রশান্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদছিলাম। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। আমি হাঁটতে হাঁটতে সামান্য উঁচু করে দেওয়া কবরস্থানের প্রাচীরের কাছে পৌঁছে গেলাম এবং হামযা (রাঃ)-সহ ওহুদের শহীদদের জন্য দো‘আ করলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাসে ফিরে এলাম। একজন জানতে চাইলেন কী হয়েছে? আমি বললাম, এখানে এমন একজন ছিলেন যাঁর ভেতর আমি আমার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই। তিনি বললেন, ‘মুহাম্মদ (ছাঃ) যখন জানতে পারলেন তাঁর চাচার সঙ্গে কী হয়েছে, তিনি কেঁদে দিলেন এবং অবিরাম ধারায় তাঁর অশ্রু ঝরছিল। আমি বললাম, তিনি হয়তো পরবর্তীদের জন্য কিছু রেখে গেছেন!

আমি এখন ভাবি হায়! আমি এক অজানা পথের পথিক। কিভাবে প্রভু তাঁর দয়ায় আমাকে সিক্ত করলেন; পথ দেখালেন। ক’দিন আগেও আমি যার খোঁজ রাখতাম না; জানতাম না তার ঠিকানা। তার জন্য আমার অজান্তেই চক্ষু অশ্রু বির্সজন করে, অকপটে কেঁদে যায় আমার দু’ নয়ন। এ তো রক্তের নয়, এ তো রক্তের চেয়েও বেশী। কি অকৃত্রিম এলাহী ভালবাসা।    

(তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট)



আরও