তাক্বলীদ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য
আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস
মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ 1610 বার পঠিত
ভূমিকা :
মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদতের জন্য বান্দাদেরকে ফযীলত ও মর্যাদাপূর্ণ বহু মৌসুম উপহার দিয়েছেন, যেন এগুলোর সদ্ব্যবহার করে বান্দাগণ অল্পশ্রমে বিপুল ছওয়াব ও পুণ্যের অধিকারী হ’তে পারে। পবিত্র মুহাররম মাস এ রকমই একটি বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছে মুহাররম মাসকে যেমন বিশেষ তাৎপর্য, মর্যাদা ও ফযীলত দেওয়া হয়েছে, তেমনি এ মাসের ১০ তারিখ তথা ‘আশূরা’র দিনটিকে আল্লাহর ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপলক্ষ হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। আর এই মাসটিকে ঘিরে আমাদের মুসলিম সমাজে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, ইরান, সিরিয়াতে অসংখ্য বিকৃত ইতিহাস ও শরী‘আত বিরোধী আমল প্রচলিত আছে। আর কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ভ্রান্ত আমল ও আক্বীদার প্রচলন রয়েছে। অথচ আজ আমরা নাজাতে মূসা (আঃ)-এর সঠিক ইতিহাস হ’তে বহুদূরে চলে গেছি। নিমেণ আশুরায়ে মুহাররম করণীয় বর্জনীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
আশুরায়ে মুহাররমের পরিচিতি ও মর্যাদা :
ْعشر শব্দ থেকে عاشوراء শব্দটি উৎসারিত যার অর্থ হলো দশম, বা দশমী ইত্যাদি।[1]
অর্থাৎ মুহাররম মাসের দশম দিনকে আশূরা বলা হয়।[2]
محرم মানে হারামকৃত, নিষিদ্ধ, পবিত্র, আরবী ১ম মাস ইত্যাদি।[3]
অর্থাৎ আশূরায়ে মুহাররম অর্থ আরবী ১ম মাসের দশম দিন বা দশ তারিখ।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর নিকট গণনার মাস বারটি। তার মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের মধ্যে অত্যাচার করো না’ (তওবা ৯/৩৬)। মাস চারটি মুহাররম, রজব, যুলক্বা‘দাহ ও যুলহিজ্জাহ। মুসলিম সমাজে এই চারটি মাসের মর্যাদা অত্যধিক। এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-খারাবী, ফেৎনা-ফাসাদ ইত্যাদি অন্যায়-অপকর্ম থেকে বিরত থেকে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুসলমানের ধর্মীয় দায়িত্ব। মুহাররম মাস একটি বরকতময় ও মর্যাদাবান মাস। মুহাররম মাসকে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সময়ও লোকেরা মর্যাদাবান মাস হিসাবে জ্ঞান করত। এমনকি এ মাসগুলোতে যদি তাদের পিতার হত্যাকারীর সাথে দেখাও হ’ত, তখনও কিছু বলত না। কেননা সমস্ত নবীর শরী‘আতে উল্লেখিত চারটি মাস মর্যাদাবান ছিল, তার মধ্যে একটি হচ্ছে মুহাররম মাস। মূলত সকল মাসেই যুলুম নিষিদ্ধ। বিশেষভাবে চারটি মাসকে খাছ করা হয়েছে এবং এগুলো সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে ‘হারাম মাস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ মাস সমূহে পাপের পরিণতি অন্য মাসের চেয়ে ভয়াবহ এবং আমলে ছালেহ’র ছওয়াব অন্য সময়ের চেয়েও বেশী। সারসংক্ষেপে যে বিষয়গুলো এ মাসের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে তা হ’ল : (ক) বারটি মাসের মধ্যে এ মাসটি সর্বপ্রথম। (খ) এ মাসটিকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে, বলা হয়েছে ‘আল্লাহর মাস মুহাররম’। (গ) স্বয়ং আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন যে চারটি মাসকে সম্মানিত অভিহিত করেছেন তার মধ্যে মুহাররম একটি, যা এ মাসের গুরুত্ব প্রমাণ করে। (ঘ) হারাম মাসগুলোর সম্মানার্থে প্রাক ইসলামী যুগেও মুশরিকরা একে সম্মান করত। যা ইসলামের প্রথম দিকে ঠিক ছিল, কিন্তু তা পরবর্তিতে রহিত হ’লেও এ মাসের সম্মান করা বর্তমানেও জারী আছে। (ঙ) এ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে যাকে ‘আশূরার দিন’ বলা হয়। যে দিনটিতে ছিয়াম রাখলে বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন হয়।
কারবালার ঘটনা বনাম আশূরা :
৬০ হিজরীতে ইরাকবাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, হুসাইন (রাঃ) ইয়াযীদের হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেননি।[4] কুফার লোকেরা দলে দলে এসে তাকে কুফায় যেতে বলেন। এমনকি কূফার নেতাদের নিকট হ’তে প্রায় ১৫০ টি লিখিত চিঠি অনুরোধ পত্র তাঁর নিকটে পৌঁছে’। [5]অথবা ৫ শতাধিক চিঠি পাঠানো হয়’।[6] সত্যতা যাচাই করার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে পাঠান। মুসলিম কূফায় গিয়ে পৌঁছালেন। গিয়ে দেখলেন, আসলেই কূফার লোকেরা হুসাইন (রাঃ)-কেই চাচ্ছে। লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বায়‘আত গ্রহণ করেন, হানী বিন উরওয়ার ঘরে’।[7] প্রায় ১২ থেকে ১৮ হাযার মানুষ বায়‘আত গ্রহণ করেন’।[8] মুসলিম বিন আকীল তাদের চাতুরতা বুঝতে না পেরে হুসাইনকে কূফার আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র লিখেন। তিনি আকীলের কথার উপর ভিত্তি করে কূফার দিকে রওনা হ’লেন। যদিও তাকে কূফার যেতে জালীলুল ক্বদর ছাহাবীরা নিষেধ করেছিলেন। যেমন : আল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), জাবের (রাঃ), যুবায়ের (রাঃ), ইবনে জা‘ফর (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীবৃন্দ’। [9] কিন্তু তিনি সবাইকে নিরাশ করে দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ যা ফায়ছালা করবেন তাই হবে। এই জবার শুনে সবাই ‘ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাই-হি রাজিঊন’ বলে উঠলেন’।[10]
হুসাইন (রাঃ)-এর আগমনের খবর শুনে কূফার গর্ভনর নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) জনগনকে ডেকে বিশৃংঙ্খলা না ঘটাতে উপদেশ দেন। ফলে কুচক্রীদের পরামর্শ ক্রমে তাকে গর্ভনর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ঐদিকে ওবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ একই সাথে বছরা ও কূফার গর্ভনর পদে নিযুক্ত হয় ও মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করে। অতঃপর পথিমধ্যে হুসাইন (রাঃ) পরিস্থিতি অবগত হয়ে রাস্তা পরিবর্তন করেন এবং পথিমধ্যে ওবাইদুল্লাহর সেনাপতি তাঁর গতিপথ রোধ করে। তিনি ইবনে যিয়াদ এর নিকট ৩টি প্রস্তাব দিয়ে চিঠি লিখেন। ১. আমাকে সীমান্তের কোন এক স্থানে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার হোক ২. মদীনার ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক ৩. আমাকে ইয়াযীদের হাতে হাত রেখে বায়‘আত গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু ইয়াযীদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মেনে নিল না। যদিও সেনাপতি সা‘দ বিন আবী ওয়াকক্বাছ উক্ত প্রস্তাব মেনে নেন। কিন্তু কুটকৌশলী ওবাইদুল্লাহ মেনে নেননি এমনকি তার হাতে বায়‘আত গ্রহণের নির্দেশ পাঠায়’।[11] সঙ্গত কারণে হুসাইন(রাঃ) তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন এমননি যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে’।[12] যদিও সেনাপতি হুর বিন ইয়াযীদ তার পক্ষ অবলম্বন করেন ও ইবনে যিয়াদের দু’জন সেন্যকে নিহত করেন। অতঃপর শাহাদাত বরণ করেন’।[13]
ত্বাবারনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, যখন শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে হুসাইন (রাঃ)-এর কোলে অশ্রিত শিশু পুত্রের বক্ষ ভেদ করল; তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ফায়ছালা কর আমাদের এবং ঐ কওমের মধ্যে যারা আমাদের সাহায্যের নাম করে ডেকে এনে হত্যা করছে’।[14]
অতঃপর হুসাইন (রাঃ) স্বল্প সংখ্যক সেন্য নিয়ে বীবদর্পে তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন; অবশেষে নিকৃষ্ট এক ব্যক্তি হুসাইন (রাঃ)-কে বর্শা দিয়ে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলেন। তার নাম ‘শিমার বিন যিন-যাওশান’।[15]
৬১ হিজরীতে ১০ই মুহাররম রাসূল (ছাঃ)- এর কনিষ্ঠ নাতি হুসাইন বিন আলী (রাঃ) শাহাদতের অমীয় সুধা পান করলেন’। এভাবেই ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক কালো ইতিহাসের যবানীপাত হলো।
বর্তমানে আমরা দেখেছি প্রায় সর্ব মহল থেকে আশূরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়। ইসলামের আগমনের পূর্বে আশূরা ছিল। যেমন আমরা হাদীছ দ্বারা জানতে পেরেছি। তখন মক্কার মুশরিকরা যেমন আশূরার ছিয়াম পালন করত তেমনি ইহুদীরা মূসা (আঃ)-এর বিজয়ের স্মরণে আশূরার ছিয়াম পালন করত। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আশূরার ছিয়াম পালন করেছেন জীবনের প্রতিটি বছর। তার ইন্তেকালের পর তার ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আশূরা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর হিজরী ৬১ সালে কারবালার ময়দানে জান্নাতী যুবকদের নেতা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রিয় নাতী সাইয়েদুনা হুসাইন (রাঃ) শাহাদত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। ঘটনাক্রমে এ মর্মান্তিক ইতিহাস উক্ত আশূরার দিন সংঘঠিত হয়েছিল।
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ও তার ছাহাবায়ে কেরাম যে আশূরা পালন করেছেন ও যে আশূরা উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রেখে গেছেন, তাতে কারবালার ঘটনার কোনই ভূমিকা ছিলনা। থাকার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ), আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ), আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ), আনাস বিন মালেক (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ), সাহল বিন সা‘আদ (রাঃ), যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ), সালামাতা ইবনুল আওকা (রাঃ) সহ বহু সংখ্যক ছাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গকে অনেক বেশী ভালবাসতেন। তারা আশূরার দিনে কারবালার ঘটনার স্মরণে কোন কিছুর প্রচলন করেননি। মাতম, তাযিয়া মিছিল, আলোচনা সভা কোন কিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায় না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যেভাবে আশূরা পালন করেছেন তারা সেভাবেই তা অনুসরণ করেছেন। অতএব আমরা কারবালা কেন্দ্রীক যে আশূরা পালন করে থাকি, এ ধরণের আশূরা না রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পালন করেছেন, না তার ছাহাবায়ে কেরাম। যদি এ পদ্ধতিতে আশূরা পালন আল্লাহর রাসূলের মুহাববতের পরিচয় হয়ে থাকত, তাহ’লে এ সকল বিজ্ঞ ছাহাবাগণ তা পালন থেকে বিরত থাকতেন না, তারা সাহসী ছিলেন। তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। কিন্তু তারা তা করেননি। তাই যে সত্য কথাটি আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি তা হ’ল, আশূরার দিনে কারবালার ঘটনা স্মরণে যা কিছু করা হয় তাতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবাদের রেখে যাওয়া আশূরাকে ভুলিয়ে দিয়ে বিকৃত এক নতুন আশূরা প্রচলনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল ৬১ হিজরীতে। আর আশূরার ছিয়াম ইসলামে প্রবর্তন হয় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার পর ২য় হিজরীতে। প্রাক ইসলামী যুগেও মুশরিকরা তা পালন করত যা ইতিপূর্বে ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তার কারণ ছিল, মূসা (আঃ) ফেরাউনের অত্যাচার হ’তে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আল্লাহর রহমতে বেঁচে ছিলেন তাই শুকরিয়া আদায় হেতু তিনি ছিয়াম রেখেছিলেন। কিন্তু শরুর সেই মহাসত্য ইতিহাসকে বর্জন করে পরবর্তীতে ৫৮ বছর পর ঘটনাচক্রে একই তারিখে কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর মৃত্যুকে আশূরার ইতিহাস বলা হচ্ছে।
আশূরায়ে মুহাররমকে কেন্দ্র করে আমাদের নামধারী মুসলিম সমাজে বিশেষ করে শী‘আদের মধ্যে অংসখ্য ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমল প্রচলিত আছে। বিশেষ করে আমরা যারা বাঙালী বাংলা সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদ সিন্ধু’ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। অথচ এটি কোন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক কোন গ্রন্থ নয় বরং একটি উপন্যাস মাত্র’।[16]
৩৫২ হিজরীতে শী‘আ আমীর আহমাদ বিন বুইয়া দায়লামী ওরফে ‘মুইযযুদ্দৌলা’ ১০ই মুহাররমকে শোক দিবস ঘোষণা করেন। এই দিনে অফিস, আদালত বন্ধ রাখতে আদেশ প্রদান করেন, এমনকি মহিলাদের চুল ছিঁড়তে, চেহারা কালো করতে, রাস্তায় নেমে শোক গাঁথা গেয়ে চলতে বাধ্য করে। শহরে-গ্রামে সর্বত্র সকলকে শোক মিছিলে যোগদান করতে আদেশ দেন। শী‘আরা খুশী হয়ে এই আদেশ মেনে নেয়। কিন্তু ৩৫৩ হিজরীতে সুন্নীদের উপর দিবস পালনের আদেশ জারী করলে শী‘আ-সুন্নীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। যারই ফলশ্রূতিতে আজ পর্যন্ত এই সংঘাত চলছে।
হুসাইন (রাঃ)-কে হত্যার জন্য কে দায়ী?
হুসাইন (রাঃ)-কে হত্যার জন্য অবশ্যই ইয়াযীদ দায়ী নয় বরং ওবাদুল্লাহ বিন যিয়াদই দায়ী। (আল্লাহই ভালো জানেন) হুসাইনের ভাষণই প্রমান বহন করে এর জন্য ইয়াযীদ নয় বরং ইরাকবাসীরাই দায়ী। তিনি বলেন, ‘তোমরা কি পত্রের মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে আহবান করোনি? আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করোনি? অকল্যাণ হোক তোমাদের! যেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ও তোমরা মিলে ইসলামের শক্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন সেই অস্ত্র তোমরা আমার বিরুদ্ধে চালাতে যাচ্ছ! মাছি যেমন উড়ে যায় তেমনি তোমরা আমার পক্ষের কৃত বায়‘আত থেকে সরে যাচ্ছ! পোঁকা-মাকড়ের ন্যায় তোমরা উঠে যাচ্ছ এবং সকল ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করছ। ধ্বংস হোক এই উম্মতের তাগুতের দলেরা’।[17]
হুসাইনের এই ভাষণ কোন ভাবেই ইয়াযীদকে দায়ী করেননি। বরং ঘুরেফিরে ইরাকবাসীকেই দায়ী করা হয়েছে। অতঃপর হুসাইন (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করেন; ‘হে আল্লাহ! আপনি যদি তাদের হায়াত র্দীঘ করেন, তাহ’লে তাদের দলেন মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিন। তাদের দলে দলে বিচ্ছিন্ন করে দিন। তাদের শাসকদের উপর কখনোই সন্তুষ্ট করবেন না। তারা আমাদের সাহায্য করবে বলে ডেকে এনেছে। অতঃপর আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা বশত হত্যার জন্য উদ্যত হয়েছে’।[18]
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিলো এমনকি ওবাইদুল্লাহকে নিকৃষ্টভাবে হত্যা করা হয়েছিল’।[19]
আর হুসাইন (রাঃ)-এর ছিন্ন মাথা যখন ইয়াযীদের সম্মুখে আনা হয়। তখন তিনি
আর হুসাইনের ছিন্ন মাথা যখন ইয়াযীদের সম্মুখে আনা হয়। তখন তিনি কেঁদে উঠে বলেছিলেন, ‘ওবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ উপরে আল্লাহ পাক লা‘নত করুন। আল্লাহর কসম যদি হুসাইনরে সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক থাকত, তাহ’লে সে কিছুতেই হুসাইনকে হত্যা করত না। তিনি আরও বলেন, হুসাইনের খুন ছাড়াও আমি ইরাকবাসীকে আমার অনুগত্যে রাযী করাতে পারতাম’।[20] এমনকি হুসাইনকে পরিবারের স্ত্রী কন্যা ও শিশুগণ ইয়াযীদের প্রসাদে প্রবেশ করলে প্রাসাদে কান্নার রোল পড়ে যায়। ইয়াযীদ তাঁদেরকে বিপুলভাবে সম্মানিত ও মূল্যবান হাদিয়া দিয়ে সম্মানে মদীনায় প্রেরণ করেন’।[21]
অনেকেই বলে থাকে যে, ইয়াযীদ লম্পট, নারীভোগী ও হুসাইনের পরিবারের সাথে খারাপ আচরণ করেছে এগুলো ভিত্তিহীন কথা।
ইয়াযীদের চরিত্র সম্পর্কে হুসাইন (রাঃ)-এর অন্যতম বৈমাত্রেয় ছোট ভাই শী‘আদের খ্যাতনামা ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি তার ইয়াযীদ এর মধ্যে ঐ সব বিষয় দেখিনি, যেসবের কথা তোমরা বলছো। অথচ আমি তাঁর নিকটে হাযির থেকেছি ও অবস্থান করেছি এবং তাকে নিয়মিত ভাবে ছালাতে অভ্যস্ত ও কল্যানের আকাংখা দেখেছি। তিনি ফিহক্ব বিষয়ে আলোচনা করতেন আর সুন্নাতের পাবন্দ’।[22]
এমনকি তার পিতা মু‘আবিয়া (রাঃ) হুসাইনের (রাঃ) সম্পর্কে অছীঅত করে বলেছিলেন; ‘যদি তিনি (হুসাইন) তোমার বিরুদ্ধে উত্থান করেন ও তুমি তার উপরে বিজয়ী হও, তাহ’লে তাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। কারণ তার রয়েছে রক্তের সম্পর্ক, যা অতুলনীয় এবং রয়েছে মহান অধিকার’।[23]
মূলকথা মু‘আবিয়া (রাঃ) ইয়াযীদ ও বিভিন্ন ঐতিহাসিকের কথা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হুসাইনের হত্যার জন্য প্রত্যক্ষভাবে ইয়াযীদ দায়ী ছিলেন না।
মু‘আবিয়া (রাঃ) ও ইয়াযীদ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষৎ বাণী :
সমুদ্র অভিযান এবং রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলি বিজয়ের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন : ‘আমার উম্মাতের ১ম বাহিনী যারা সমুদ্র অভিযানে অংশ গ্রহন করবে, তারা জান্নাতকে ওয়াজিব করে নিবে। অতঃপর তিনি বলেন, আমার উম্মতের ১ম সেনাবাহিনী যারা রোমকদের রাজধানী অভিযান করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে’।[24]
মুহাল্লাব বলেন, এই হাদীছের মধ্যে ম‘ুআবিয়া (রাঃ) ও তাঁর পুত্র ইয়াযীদের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ)- এর খেলাফতকালে (২৩-৩৫) সিরিয়ায় গর্ভনর থাকাকালীন সময়ে মু‘আবিয়া (রাঃ) ২৭ হিজরীতে রোমকদের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। অতঃপর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফত কালে (৪১-৬০ হি:) ৪৯ হিজরীতে মতান্তরে ৫১ হিজরীতে ইয়াযীদের নেতৃত্বে রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টনোপল বিজয়ের উদ্দেশ্যে ১ম যুদ্ধ অভিযান প্রেরিত হয়’।[25] ২৭ হিজরীতে মু‘আবিয়া (রাঃ) রোমকদের ‘ক্বাববাছ’ জয় করেন ও ৫১ হিজরীতে ইয়াযীদ রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টনোপল জয় করেন’।[26] ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘ইয়াযীদের সোনাপতিত্বে পরিচালিত উক্তে যুদ্ধে স্বয়ং হুসাইন (রাঃ) সাধারণ সেনা হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন’।[27] এমনকি উক্ত যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর, ইবনু আববাস, ইবনু যুবায়ের, আবু আইয়ূব আনছারী প্রমুখ ছাহাবীগণ অংশ গ্রহণ করেছিলেন’।[28] রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছগুলো দ্বারা মু‘আবিয়া ও ইয়াযীদের ব্যাপারে কি বোঝা যায়?
কারবালা নিয়ে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণসমূহ:
প্রথমত : ইলমী স্বল্পতা বিশেষকরে মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পককে না জানার ফলে মুসলিম সমাজে কারবালার হুসাইনের শাহাদাতকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে তথা ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশে সরলমনা মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি প্রবেশ করেছে।
দ্বিতীয়ত: বিষাদসিন্ধুর কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন গল্প বাহিনীর কারণে। অর্থাৎ মীর মোশাররফের ‘বিষাদ সিন্ধ’ু পড়ে অতি আবেগী হয়ে পড়ি।
তৃতীয়ত : আশূরায়ে মুহাররমকে কেন্দ্র করে সরকারীভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হয় ও সারা দেশে ছুটি পালিত হয় অর্থাৎ শোক পালন করা হয়।
চতুর্থত : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে কারবালার হুসাইনের শাহাদাতের বিভিন্ন আলোচনা-পর্যালোচনা ও চিত্র উপস্থাপনা করা হয়। আর বুঝাতে চেষ্টা করা হয় ইয়াযীদ মালঊন আর হুসাইন মা‘ছূম। আর তারা ভুলেও নাজাতে মূসার কথা উল্লেখ করে না।
পঞ্চমত : আমাদের দেশের শী‘আদের সংখা কম হ’লেও তারা বিভিন্নভাবে কৌশলে সরলমনা মানুষদের মাঝে তাদের বাতিল আক্বীদা প্রচার করে। আবার তারা মর্সিয়া, তা‘যীয়া মিছিল, হুসাইনের প্রতীকী লাশ নিয়ে শোক মিছিল করে, শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত প্রবাহিত করে। শরীরে রক্তের মত লাল রং লাগিয়ে হায় হুসাইন, হায় হুসাইন করে চিৎকার করে এবং বুকে গালে চপেটাঘাত করে’।[29]
ষষ্ঠত : আমাদের একটি বৃহৎ অংশ যারা পীর-মুরীদী ব্যবসাতে বিশ্বাসী। তারাও শী‘আদের সাথে সঙ্গ দেয়। আর তাইতো আশূরার দিনে মাজার-খানকাহ গুলো জমজমাট মেলা ও মানুষের ভীড় থাকে।
অষ্টমত ; হাসান ও হুসাইনের ফযীলতের অতি আবেগী: হাসান ও হুসাইন (রাঃ) দু’জনই রাসূল (ছাঃ) এর নাতী। তাদের ফযীলত বর্ণনা অনেক হাদীছ এসেছে। অনেকেই সেই হাদীছগুলো পড়ে অতি আবেগী হয়ে বাড়াবাড়ি করে।
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন : আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি, তিনি হাসানকে কাঁধে নিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি। সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাসো। আর যে তাকে ভালোবাসে তুমিও তাকে ভালোবাস’।[30]
অন্যত্র বলেন, হাসান ও হুসাইন জান্নাত বাসী যুবকদের সর্দার হবেন’।[31]
মুহাররম মাসের করণীয় :
মুহাররম মাসের করণীয় আমল মূলত আশূরার ছিয়াম পালন করা। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করে ইয়াহুদীদেরকে আশূরার দিন ছিয়াম রাখতে দেখে প্রশ্ন করলেন, এটি কিসের ছিয়াম? তাঁর উত্তরে বলল, এটি একটি মহান দিন। এই দিনে আল্লাহ মূসা (আঃ) ও তাঁর কওমকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরা‘উন ও তার লোকদের ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। ফলে মুসা (আঃ) এই দিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ছিয়াম রেখেছিলেন, তাই আমরাও এই দিন ছিয়াম রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মূসা (আঃ) এর (আদর্শের) অধিক হকদার ও অধিক দাবীদার। অতঃপর তিনি ছিয়াম রাখেন ও সকলকে রাখতে বলেন’।[32]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘জাহেলী যুগে কুরায়েশগণ আশূরার ছিয়াম পালন করত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তা পালন করতেন। মদীনায় হিজরতের পরেও তিনি পালন করেছেন এবং লোকদেরকে তা পালন করতে বলেছেন। কিন্তু (২য় হিজরী সনে) যখন রামাযান মাসের ছিয়াম ফরয হ’ল, তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা কর আশূরার ছিয়াম পালন কর এবং যে ব্যক্তি ইচ্ছা কর তা পরিত্যাগ কর’।[33] মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রাঃ) মদীনার মসজিদে নববীতে খুৎবা দানকালে বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, ‘আজ আশূরার দিন। এ দিনের ছিয়াম তোমাদের উপরে আল্লাহ ফরয করেননি। তবে আমি ছিয়াম রেখেছি। এক্ষণে তোমাদের মধ্যে যে ইচ্ছা কর ছিয়াম পালন কর, যে ইচ্ছা কর পরিত্যাগ কর’। [34] রাসূল (ছাঃ) ১০ই মুহাররমে ছিয়াম পালন করেছেন। ইহুদী ও নাছারারা শুধুমাত্র ১০ই মুহাররমকে সম্মান করত এবং ছিয়াম পালন করত। তাই রাসূল (ছাঃ) তাদের বিরোধিতা করার জন্য ঐ দিন সহ তার পূর্বের একদিন তথা ৯ মুহাররম ছিয়াম পালনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আশূরার ছিয়াম পালন করলেন এবং ছিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ছাঃ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ইহুদী ও নাছারাগণ এই দিনটিকে (১০ই মুহাররম) সম্মান করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ই মুহাররম সহ ছিয়াম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়’ ।[35] অন্য হাদীছে ১০ই মুহাররম সহ পূর্বে একদিন অথবা পরে একদিন ছিয়াম পালনের কথা এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আশূরার দিন ছিয়াম রাখ এবং ইহুদীদের বিরোধিতা কর। তোমরা আশূরার সাথে তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন ছিয়াম পালন কর’।[36] অত্র রেওয়ায়াতটি ‘মারফূ’ হিসাবে ছহীহ নয়, তবে ‘মওকূফ’ হিসেবে ‘ছহীহ’।[37] ৯, ১০ বা ১০, ১১ দু’দিন ছিয়াম রাখা উচিত। তবে ৯ ও ১০ দু’দিন রাখাই উত্তম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘রামাযানের পরে সর্বোত্তম ছিয়াম হ’ল আল্লাহর মাস মুহাররম মাসের ছিয়াম (অর্থাৎ আশূরার ছিয়াম) এবং ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হ’ল রাতের নফল ছালাত’ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের ছালাত’।[38] অন্য হাদীছে এসেছে, আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আমি আশা করি আশূরা বা ১০ই মুহররমের ছিয়াম আল্লাহর নিকট বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফ্রা হিসাবে গণ্য হবে’।[39]
মুহাররম মাসের বর্জনীয় :
মুহাররম মাসে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার ও বিদ‘আত :
মুহাররম মাসে বিশেষ করে আশূরা উপলক্ষে মুসলিম বিশ্বের কিছু কিছু দেশে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি, কুপ্রথা, শিরক ও বিদ‘আতের প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। যা অধিকতর শী‘আদের মধ্যে থেকে চলে এসেছে। এগুলো পরিত্যাজ্য, নাজায়েয, ইসলাম সমর্থিত নয়। আমাদের এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। যার কিছু নমুনা দেওয়া হ’ল :
(১) এ মাসকে শোক, মাতম, দুশ্চিন্তা ও দুঃখের মাস বলা হয়। (২) নারীরা সৌন্দর্যচর্চা থেকে বিরত থাকে। (৩) এ মাসে জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে দুর্ভাগা মনে করা হয়। (৪) এ মাসের প্রথম দিন থেকে বাড়ি পরিস্কার করা হয় এবং বানেয়াট নতুন নতুন ইবাদত করা হয়। (৫) কারবালার কারণে আশূরার মর্যাদা মনে করা হয়। (৬) শাহাদতে হুসাইনের শোক পালনের উদ্দেশ্যে ছিয়াম পালন করা। (৭) চোখে সুরমা লাগানো। (৮) ১০ই মুহাররমে বিশেষ ফযীলতের আশায় বিশেষ পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করা। (৯) হুসাইনের নামে ভুয়া কবর বানিয়ে তা‘যিয়া বা শোক মিছিল বের করা। (১০) ওই কবরে হুসাইনের রূহ আসে বলে বিশ্বাস করা, সালাম করা, সেখানে মাথা নত করা, সিজদা করা এবং তাঁর কাছে কিছু চাওয়া। (১১) মিথ্যা শোক প্রদর্শন করে বুক চাপড়ানো, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা। (১২) হায় হোসেন! হায় হোসেন! বলে মাতম করা। (১৩) রক্তের নামে লাল রঙ ছিটানো। (১৪) লাঠি, তীর, বল্লম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেয়া। (১৫) হুসাইনের নামে কেক বানিয়ে বরকতের কেক বলে চালানো। (১৬) হুসাইনের নামে মোরগ ছেড়ে দিয়ে বরকতের মোরগ বলে চালানো। (১৭) কালো ব্যাজ ধারণ করা। (১৮) এ মাসে বিবাহ-শাদী করা অন্যায় মনে করা। (১৯) এ দিনে পানি পান ও শিশুদের দুধ পান অন্যায় মনে করা। (২০) উগ্র শী‘আরা ‘ইমাম বাড়া’তে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নামে বকরি বেঁধে লঠিপেটা করে আনন্দ করা। (২১) আয়েশা (রাঃ) সহ আরো বড় বড় ছাহাবীদের গালি দেয়া। (২২) অনেক সেমিনারে আশূরাকে মানে কারবালা মনে করা ও হুসাইনকে ‘মা‘ছূম’ এবং ইয়াযীদকে ‘মাল‘ঊন’ প্রমাণ করা, যা সত্য থেকে বহু দূরে। (২৩) বুকে ব্লেড মেরে রক্ত বের করা। (২৪) এ দিনে কবর জিয়ারত করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, ভুয়া কবর জিয়ারত করা শিরক, শোক করা, শোক মিছিল করা ইসলামে হারাম এবং ছাহাবীদের গালি দেওয়া কাবীরা গুনাহ।
আশূরা সম্পর্কিত কতিপয় বিভ্রান্তি :
১০ই মুহাররমের ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। যেমন বলা হয়ে থাকে -
(১) এ দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। (২) এ দিনে আল্লাহ রব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। (৩) এ দিনে আরশ, কুরসী এবং লাওহে মাহফুয সৃষ্টি হয়। (৪) এ দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি ও পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় এবং এ দিনে হাওয়ার মিলন হয়। (৫) নূহ (আঃ)-এর সময় প্লাবন হয় এবং নূহ (আঃ) এ দিনে মুক্তি পান। (৬) এ দিনে আল্লাহ তা’য়ালা ঈসা (আঃ) কে ঊর্দ্ধাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। (৭) এ দিনে আইয়ূব (আঃ) দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন। (৮) এ দিনে মূসা (আঃ) তাওরাত লাভের জন্য তূর পাহাড়ে যান। (৯) এ দিনে ইবরাহীম (আঃ) নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করেন। (১০) এ দিনে ইয়াকুব (আঃ) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান ও ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে মিলিত হন। (১১) এ দিনে সুলাইমান (আঃ) রাজত্ব ফিরে পান। (১২) এ দিনে ইদরীস (আঃ) কে আকাশে তুলে নেয়া হয়। (১৩) এ দিনে ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন। (১৪) এ দিনে আসিয়া মূসাকে লালনের ভার গ্রহণ করেন। (১৫) এ দিনে দাঊদ (আঃ)-এর তওবা কবুল হয়েছিল। (১৬) এ দিনে কাবাঘর নির্মাণ হয়েছিল। (১৭) এ দিনে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়েছিল। (১৮) এ দিনে দাঊদ (আঃ) জালূতকে হত্যা করেন। (১৯) এ দিনে ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। ইত্যাদি আরও কত কিছু প্রচলিত রয়েছে যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক তথ্য নয়।[40]
কারবালা, কিছু জাল-যঈফ হাদীছ :
(ক) জাল হাদীছ :
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, [দীর্ঘ জাল হাদীছ] নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলদের প্রতি বছরে একটি ছিয়াম ফরয করেছিলেন সেটি হ’ল আশূরার দিন। ইহা মুহাররমের দশ তারিখ। এ দিনে তোমরা ছিয়াম রাখ এবং পরিবারের জন্য খানাপিনায় পর্যাপ্ততা ঘটাও; কারণ যে এ দিনে নিজের পরিবার-পরিজনের প্রতি খাদ্যে প্রশস্ত করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সারা বছরে প্রাচুর্যতা দান করবেন। এটি এমন দিন যে দিনে আল্লাহ তা‘আলা আদম (&আঃ)-এর তওবা কবুল করে তাকে শফিউল্লাহ বানিয়েছেন, এ দিনে ইদ্রিস (আঃ) কে উঁচু স্থানে উঠিয়েছেন, নূহ (আঃ) কে কিশতী হতে বের করেন, ইবরাহীম (আঃ) কে নমরুদের আগুন থেকে নিস্কৃতি দেন, মূসা (আঃ) এর প্রতি এ দিনে তাওরাত নাজিল করেন, ইউসুফ (আঃ) কে জেলখানা হতে বের করেন, এ দিনে ইয়াকুব (আঃ)-এর চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন, এ দিনে আইয়ূব (আঃ)-এর বিপদ দূর করেন, ইউনুস (আঃ) কে মাছের পেট থেকে বের করেন, এ দিনে বনী ইসরাঈলদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেন, এ দিনে দাঊদ (আঃ) কে মাফ করেন এবং সুলাইমান (আঃ) কে বাদশাহী দান করেন, এ দিনেই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগের-পরের সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। ইহাই প্রথম দিন যে দিনে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, এ আশূরার দিনে আসমান থেকে সর্বপ্রথম বৃষ্টি নাজিল হয়, আশূরার দিনে সর্বপ্রথম রহমত নাজিল হয়। অতএব, যে আশূরার দিন ছিয়াম রাখবে সে যেন সারা বছর ছিয়াম রাখল। আর ইহা হ’ল সমস্ত নবীদের ছিয়াম । যে আশূরার রাত্রি ইবাদতের মাধ্যমে জাগবে সে যেন সাত আসমানবাসীর ন্যায় ইবাদত করল। আর যে এ রাতে চার রাকাত ছালাত আদায় করবে, যার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার ও সূরা ইখলাছ একান্নবার তার পঞ্চাশ বছরের পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। যে আশূরা দিনে কাউকে পানি পান করাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে রোজ ক্বিয়ামতের দিন এমন পানি পান করাবেন যার পরে তার কখনো পিপাসা লাগবে না এবং সে যেন এক চোখের পলকও আল্লাহর নাফরমানি করেনি বলে বিবেচিত হবে। যে এ দিনে দান-খায়রাত করবে সে যেন কখনো কোন ভি ক্ষুককে ফেরত দেয়নি। আর যে এ দিনে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে সে মৃত্যু ছাড়া এ বছরে আর কোন রোগে আক্রান্ত হবে না। যে এ দিনে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে সে যেন বনী আদমের সমস্ত ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে। আর যে আশূরার দিনে কোন রোগী পরিদর্শন করল, সে যেন সকল বনী আদমের রোগীদের পরিদর্শন করল। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা আরশ, লাওহে মাহফূয ও কলম সৃষ্টি করেছেন। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা জিবরীল (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠিয়েছেন এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে’। [41]
২. নূহ (আঃ) এর কিশতী ছয় মাস চলার পর আশূরার দিন জূদী পাহাড়ে পৌঁছে। সেদিন নূহ (আঃ) ও তাঁর সাথে যারা ছিল এবং জীবজন্তু আল্লাহর শুকরিয়ার জন্য ছিয়াম রাখে’। [42]
৩. যে ব্যক্তি আশূরার দিনে চোখে সুরমা লাগাবে, সে বছর তার চোখ উঠবে না (চূড়ান্ত প্রদাহে আক্রান্ত হবে না) আর যে আশূরার দিনে গোসল করবে সে বছর তার কোন অসুখ হবে না’। [43]
৪. যে আরাফাতের দিন ছিয়াম রাখবে তার জন্য দুই বছরের গুনাহ মাফের কাফফ্রা হবে। আর যে মুহাররম মাসের একদিন ছিয়াম রাখবে তার জন্য প্রতি দিনের ত্রিশ দিনে ছওয়াব মিলবে’।[44]
৫. কল্যাণকর কাজ হ’ল: ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর, শবেবরাত ও আশূরার রাত্রি জাগা’।[45]
(খ) যঈফ হাদীছসমূহ :
১. আশূরার দিন ছিয়াম রাখ এবং এক দিন আগে ও এক দিন পরে ছিয়াম রেখে ইহুদীদের বিপরীত কর’।[46]
২. ‘আশূরার দিন ছিয়াম রাখ; কারণ এ দিনে সমস্ত নবী ছিয়াম রেখেছেন’।[47]
৩. ‘আশূরা তোমাদের পূর্বের সকল নবীর ঈদের দিন। অতএব, তোমরা সেদিন ছিয়াম রাখ’ ।[48]
৪. ‘আশূরা হলো নবম দিন’ ।[49]
৫. ‘আশূরার দিনে যে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খানাপিনার ব্যবস্থা করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা সারা বছরে স্বচ্ছলতা দান করবেন’ ।[50]
৬. তোমাদের কেউ এ দিনে ছিয়াম রেখেছ? তাঁরা (ছাহাবাগণ) বললেন: না, তিনি বললেন: তোমাদের দিনের বাকি সময় ছিয়াম পূর্ণ কর এবং কাযা করবে। অর্থাৎ আশূরার দিন এভাবে বর্ণনা মুনকার।’[51]
৭. নবী (ছাঃ) এ দিনের গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর ও ফাতেমার দুগ্ধপোষ্যদের ডেকে তাদের মুখে তাঁর থুথু মোবারক দিয়ে দিতেন। আর তাদের মাতাদেরকে রাত্রি পর্যন্ত তাদের দুধ না পান করানোর জন্য নির্দেশ করতেন’ হাদীছটি যঈফ।[52]
৮. যদি তুমি রামাযানের পর কোন পুরো মাস ছিয়াম রাখতে চাও, তাহ’লে মুহাররম মাসের রাখ; কারণ ইহা আল্লাহর মাস, যাতে আল্লাহ তা‘আলা এক জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন’।[53]
উপসংহার : কারবালার শাহাদাতে হুসাইন সত্যিই খুবই মর্মান্তিক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। সকল মুমিন অন্তরই ব্যথিত। তবে এ উপলক্ষে কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করা যাবে না। শুধুমাত্র নাজাতে মূসা (আঃ)-এর নিয়তেই দু’দিন ছিয়াম পালন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহান হোন- আমীন।
[লেখক : রসূলপুর, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ ]
[1]. ‘আল-মু‘জামুল ওয়াফী’ (আরবী-বাংলা), ড. মুহাম্মাদ ফযলুল রহমান রিয়াদ প্রকাশনী, ৮ম সংস্করণ ৬৯৫ পৃঃ।
[2]. ঐ।
[3]. ঐ, ৮৯৯ পৃঃ ।
[4]. ঐ, ৮ পৃঃ ।
[5]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ১ প্রকাশ: মার্চ-২০০৪, ৮ পৃঃ ।
[6]. কারবালার প্রকৃত ঘটনা; ৮ পৃঃ ।
[7]. ঐ, ৮ পৃঃ ।
[8]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ১ প্রকাশ: মার্চ-২০০৪, ৮ পৃঃ ।
[9]. ঐ, ১৪ পৃঃ ।
[10]. আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ -ইসমাঈল ইবনু কাছীর ৮/১৬২-১৬৩; তাহযীবুত তাহযীব-ইবনু হাজার আসক্বালানী ২/৩০৭ পৃঃ ।
[11]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ১ প্রকাশ: মার্চ-২০০৪, ৮ পৃঃ ।
[12]. ঐ ।
[13]. কারবালার প্রকৃত ঘটনা, পৃ : ১১ ।
[14]. ; তাহযীবুত তাহযীব-ইবনু হাজার আসক্বালানী ২/৩০৪ পৃঃ; আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ -ইসমাঈল ইবনু কাছীর ৮/১৯৯ পৃঃ ।
[15]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ১ প্রকাশ: মার্চ-২০০৪, ১৬পৃঃ ; কারবালার প্রকৃত ঘটনা, ১১পৃঃ ।
[16]. ‘সোনামণি প্রতিভা’ নভে-ডিসে -২০১৪, ১৪ পৃঃ, ।
[17]. আল-ইরশাদ নিলমুদীদ: ২৪১ পৃঃ।
[18]. ঐ ।
[19]. কারবালার প্রকৃত ঘটনা ২৬ পৃঃ ।
[20]. ইবনু তাইমিয়াহ, মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ ৩৫০ পৃঃ ।
[21]. ঐ।
[22]. আল-বিদায়াহ: ৮/২৩৬ পৃঃ ।
[23]. তারীখে ইবনে খালদূন ৩/১৮ পৃঃ।
[24]. বুখারী, ১/৪০৯-১৫ পৃঃ (মীরাট-ভারত ছাপা -১৩১৮ হিঃ)।
[25]. ফাৎহুল বারী ৫/১২০-১২১ পৃঃ আশূরায়ে মুহাররম পৃঃ ১১।
[26]. আল-বিদায়াহ ৮/২৩২ পৃঃ।
[27]. ঐ, পৃঃ ৮/১৫৩।
[28]. ইবনু কাছীর, তারীখ ৩/২২৭ পৃঃ ।
[29]. কারবালার প্রকৃত ঘটনা, ৩২-৩৩ পৃঃ।
[30]. বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী) হা/৩৭৪৯।
[31]. তিরমিযী হা/৩৭৮১; ছহীহাহ হা/৭৯৬।
[32]. মুসলিম হা/১১৩০।
[33]. বুখারী হা/২০০২ ।
[34]. বুখারী হা/২০০৩; মুসলিম হা/১১২৯ ।
[35]. মুসলিম হা/১১৩৪; মিশকাত হা/২০৪১, ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪৩।
[36]. বায়হাক্বী ৪র্থ খন্ড-, পৃঃ ২৮৭।
[37]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২০৯৫, ২/২৯০।
[38]. মুসলিম হা/১১৬৩, মিশকাত হা/২০৩৯ ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪১।
[39]. মুসলিম হা/১১৬২, মিশকাত হা/২০৪৪; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪৬।
[40]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, বইটি দেখুন- লেখক ।
[41]. ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৫/২২০-৩০০।
[42]. সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী: ১১ খ- দ্র:।
[43]. ছহীহ ও যঈফুল জামে‘ হা/৫৪৬৭; সিলসিলা যঈফাহ ২/৮৯।
[44]. আল-মাওযুআত: ২/১০৯, তানজিহুশ শারী‘আহ:২/১৫০ ও ছিয়ামু ইয়াওমে আশূরা পৃ: ১৬৮-১৭১।
[45]. মীযানুল ই‘তিদাল-ইবনে হাজার: ২/৩৯৪, ৪৬৪।
[46]. যঈফুল জামে‘-আলবানী হা/৩৫০৬।
[47]. যঈফুল জামে‘-আলবানী হা/৩৫০৭।
[48]. যঈফুল জামে‘-আলবানী হা/৩৬৭০।
[49]. যঈফুল জামে’-আলবানী হা/৩৫৭১ ।
[50]. যঈফুল জামে’-আলবানী হা/৫৮৭৩।
[51]. সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী হা/৫২০১।
[52]. ইবনু খুযায়মা হা/২০৮৯।
[53]. যঈফ সুনানে তিরমিযী-আলবানী হা/১২০।