সোনামণি সংগঠন : বাস্তবায়নের পদ্ধতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আযীযুর রহমান
নিশ্চয় মুসলিম সমাজ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে একটি সম্পর্কের ভিত্তিতে। আর সেই সম্পর্কটি রক্ত বা বৈবাহিক কিংবা চুক্তিভিত্তিক অথবা গোত্রপ্রীতির কারণে নয়। বরং আদর্শ সমাজ বিনির্মানের মূল চালিকাশক্তি হ’ল ইসলাম ও ঈমান। মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কারণে তারা পরস্পর পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে যায়। ফলে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা, অঞ্চল, দেশ, গোত্র তাদের আলাদা করতে পারেনি। ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই’ (হুজুরাত ৪৯/১০)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ- ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান’ (তওবাহ ৯/৭১)।
সুতরাং কখনও রক্তের সম্পর্ক কিংবা বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলেও মুসলিম ভ্রাতৃত্বের স্বরূপ আরো সুদৃঢ় মযবুত হয়।
রাসূল (ছাঃ) এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে সম্পর্কের একটি সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছেন। কেননা এক জনের পক্ষে এই সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব নয়। বরং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এ সম্পর্কে হাদীছ- عَنْ أَبِى مُوسَى رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ- ‘আবু মুসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এক মুমিন আর এক মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য, যার এক অংশ আর এক অংশকে সুদৃঢ় করে। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন’।[1]
ফলে সকলেই একে অপরের সম্পূরক। যার কারণ একজনের আনন্দে অপরজন আনন্দিত হয়। আবার একজনের দুঃখে অপরজন দুঃখিত হয়। একইভাবে একজনের সুখে অপরজন সুখী হয়। সাথে সাথে একজনের ব্যাথায় অপরজন ব্যথিত হয়। তাদের বংশ, গোত্র ও বর্ণ আলাদা হ’লেও মনে হয় তাদের যেন একটি আত্মার বন্ধন। আমাদের এই ভ্রাতৃত্বটি রাসূল (ছাঃ)-এর নিন্মোক্ত হাদীছটি আরো সঞ্চারিত করেছে। عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِى تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى- নুমান ইবন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তুমি মুমিনদের পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। যখন দেহের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ গ্রহণ করে’।[2]
সুতরাং মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কারণে একজন মুমিনের অন্তরে অপর প্রান্তের মুমিনের প্রতিচ্ছবি সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। কেননা সকল মুসলমান সমান সমান। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ ‘সকল মুসলিমের রক্ত সমান’।[3]
মদীনায় ভ্রাতৃত্বের একটি দৃষ্টান্ত
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) হিজরত করে আমাদের কাছে এলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর ও সা’দ ইব্ন রাবী (রাঃ)-এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দিলেন। তিনি (সা’দ) (রাঃ) ছিলেন অধিক সম্পদশালী ব্যক্তি। সা’দ (রাঃ) বললেন, সকল আনছারগণ জানেন যে আমি তাঁদের মধ্যে অধিক বিত্তবান ব্যক্তি। আমি অচিরেই আমার ও তোমার মাঝে আমার সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিব দুই ভাগে। আমার দু’জন স্ত্রী রয়েছে; তোমার যাকে পসন্দ হয় বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত পালন শেষ হলে তুমি তাকে বিয়ে করে নিবে। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবার পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। (এরপর তিনি বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন) বাজার থেকে মুনাফা স্বরূপ ঘি ও পনীর সাথে নিয়ে ফিরলেন।
অল্প কয়েকদিন পর তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে হাযির হলেন। তখন তাঁর শরীরে ও কাপড়ে হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, আমি একজন আনছারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাঁকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি অথবা (বলেছেন) একটি আটি পরিমান স্বর্ণ দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, একটি বকরী দিয়ে হ’লেও ওয়ালীমা কর’।[4]
রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে আবু বকরের ভ্রাতৃত্ব :
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (ওমর (রাঃ) তাঁকে বলেছেন) ওমর ইবন খাত্তবাবের কন্যা হাফসার স্বামী খুনায়স ইবন হুযাফা সাহামী (রাঃ) যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবী ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, মদীনায় ইন্তেকাল করলে হাফসা (রাঃ) বিধবা হয়ে পড়লেন। ‘ওমর (রাঃ) বলেন, তখন আমি ‘ওছমান ইবন আফফানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁর নিকট হাফসার কথা আলোচনা করে তাঁকে বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে ওমরের মেয়ে হাফসাকে বিয়ে দিয়ে দেব। ওছমান (রাঃ) বললেন, ব্যাপারটি আমি একটু চিন্তা করে দেখি। (ওমর (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে) আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। পরে ওছমান (রাঃ) বললেন, আমার সুস্পষ্ট অভিমত এই যে, এই সময় আমি বিয়ে করব না।
ওমর (রাঃ) বলেন, এরপর আমি আবু বকরের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনার ইচ্ছা করলে ওমরের কন্যা হাফসাকে আমি আপনার নিকট বিয়ে দিয়ে দেব। (এ কথা শুনে) আবু বকর (রাঃ) চুপ করে রইলেন এবং আমাকে কোন জবাব দিলেন না। এতে আমি ওছমানের (অস্বীকৃতির) চেয়েও অধিক দুঃখ পেলাম।
এরপর আমি কয়েকদিন চুপ করে রইলাম, এমতাবস্থায় হাফসার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)- নিজেই প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে বিয়ে দিলাম। এরপর আবু বকর (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমার সাথে হাফসার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি কোন উত্তর না দেওয়ার ফলে সম্ভবত আপনি মনকষ্ট পেয়েছেন। (ওমর (রাঃ) বলেন) আমি বললাম, হ্যঁা। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, আপনার প্রস্তাবের জবাব দিতে একটি জিনিসই আমাকে বাঁধা দিয়েছে আর তা হ’ল এই যে, আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেই হাফসা (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন, তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করার আমার ইচ্ছা ছিল না। (এ কারণেই আমি আপনাকে কোন উত্তর দেইনি।) যদি তিনি (রাসূল ছাঃ) তাঁকে গ্রহণ না করতেন, অবশ্যই আমি তাঁকে গ্রহণ করতাম’।[5]
ভ্রাতৃত্বের উদ্দেশ্য :
ভ্রাতৃত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য হ’তে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। কেননা হাদীছে এসেছে, قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي ذَرٍّ يَا أَبَا ذَرٍّ! أَيُّ عُرَى الْإِيمَانِ أَوْثَقُ؟ قَالَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ الْمُوَالَاةُ فِي اللَّهِ، وَالْحُبُّ فِي اللَّهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবু যার (রাঃ)-কে বললেন, হে আবু যার! ঈমানের কোন শাখাটি অধিক মযবুত? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক অবগত। তিনি (ছাঃ) বললেন, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর সখ্যতা স্থাপন করা এবং শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করা’।[6]
অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا ، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ- ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়। (১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া। (২) কাউকে একমাত্রভালবাসা। (৩) কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা’।[7]
অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ ...وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِى اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ ‘যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবেনা সে দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তন্মন্ধে একটি হ’ল সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর জন্য, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথক হয় আল্লাহর জন্য’।[8]
ভ্রাতৃত্ব রক্ষায় মুসলিমের হক্ব
ঈমানী দৃঢ়তার এক অপর দৃষ্টান্ত মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা চান মুমিনরা ভ্রাতৃত্বে ও ভালবাসার মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকুক। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) চান মুমিনরা যেন এক দেহ এক আত্মার ন্যায় থাকে। সুতরাং এই ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক্ব রয়েছে। সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়ে হাদীছ এসেছে, قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَقّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ: مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: " إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মুসলমানের প্রতি মুসলমানের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হ’ল, সেগুলো কী, হে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! ইরশাদ করলেন (সেগুলো হ’ল) ১. তার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হ’লে তাকে সালাম দিবে। ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি গ্রহণ করবে। ৩. সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে, তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দিবে। ৪. সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের দো‘আ করবে। ৫. সে অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং ৬. সে মারা গেলে তার (জানাযার) সঙ্গে যাবে’।[9]
আলোচ্য হাদীছে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। এক মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য তার অন্তরে ভালবাসার জায়গা, পরস্পরের প্রতি দয়া, কারো কষ্টের সময় সহযোগিতাসহ তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে তা সুনিপুণভাবেই অলংকৃত করা হয়েছে। যা নিম্নরূপ-
১. সালাম বিনিময় :
মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রথম দৃষ্টান্ত হ’ল পরস্পর সাক্ষাৎ হ’লে হাসিমুখে সালাম বিনিময় করা। অর্থাৎ একজন অপরজনের সাথে সাক্ষাৎ হলেই পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা এমন উৎকৃষ্ট পদ্ধতি অন্য কোন ধর্ম বা সংস্কৃতিতে আছে বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং সালাম হ’ল সর্বোত্তম সম্ভাষণ, যাতে পরস্পরের মাঝে নিরাপত্তা, শান্তি ও অন্তরের তুষ্টি অর্জিত হয়। সুতরাং মুসলিম সমাজে সালামের প্রচলন ঘটালে নিজেদের জীবন, পরিবার ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা লাভ হবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَفْشُوا السَّلاَمَ تَسْلَمُوا তোমরা সালামের বহুল প্রচলন করো, শান্তিতে থাকতে পারবে’।[10]
ইসলামী শারঈ মানদন্ডে সালামের প্রসার একটি মহৎ কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ- ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে’।[11]
যার মধ্যে ঈমান ও ইসলামের চিহ্ন পাওয়া যায়; সে পরিচিত হোক বা অপরিচিত তাকে সালাম দিতে হবে। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক মযবুত ও সুদৃঢ় হবে। আর সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও নৈকট্যশীল হবে। কেননা সে একনিষ্ঠ চিত্তে সালাম বিনিময় করে। আর সে অপরের সালামের অপেক্ষা করেনি কিংবা এতে তার কোন মজুরীও নেই। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ- عَنْ أَبِى أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللَّهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلاَمِ- আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তি শ্রেয়, যে আগে সালাম দেয়’।[12]
সালাম মুসলিম সমাজে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে মেলবন্ধন হিসাবে কাজ করে। এতে ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। আর সাথে সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাত ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا.أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ- ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না ঈমান আন আর তোমরা ঈমানদার হ’তে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হ’ল, তোমরা পরস্পর বেশী সালাম বিনিময় করবে’।[13]
সালাম দিয়ে কথা আরম্ভ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তাতে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। ছেড়ে দেওয়ার কোন ওযর নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ‘আর যখন তোমরা সম্ভাষণ প্রাপ্ত হও, তখন তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ প্রদান কর অথবা ওটাই প্রত্যুত্তর কর’ (নিসা ৪/৮৬)।
মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে ও নিজেকে নিরহংকার রাখতে আগে সালাম দেওয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِى يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ ‘কোন ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছেদ করে থাকা বৈধ নয়। (সম্পর্ক ছেদের চিহ্ন স্বরূপ) তাদের দু’জনের সাক্ষাত হ’লে দু’জনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সে-ই উত্তম হবে, যে প্রথমে তার সঙ্গীকে সালাম দিবে’।
সালাম বিনিময়ের নেকী সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ. فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَشْرٌ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ عِشْرُونَ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ. فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ثَلاَثُونَ- ইমরান ইবন হুসাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। নবী করীম (ছাঃ) তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, সে দশটি নেকী পেয়েছে। এরপর এক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, সে বিশটি নেকী পেয়েছে। এরপর এক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহে ওয়াবারকাতুহু। নবী করীম (ছাঃ) তার সালামের জবাব দিলে সে বসে পড়ে। তখন তিনি বলেন, সে ত্রিশটি নেকী পেয়েছে’।[14]
সুতরাং পরস্পর সালাম বিনিময় যেমন পুণ্যের তেমনি এর দ্বারা সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ বহু গুণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
২. দাওয়াত গ্রহণ :
মুসলিম সমাজে অধিকাংশ ওয়ালীমা বা ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয় বিবাহ উপলক্ষে বা কোন সাফল্য অর্জিত হলে কিংবা সন্তান ভূমিষ্ট হলে। এছাড়াও অন্যান্য কারণেও ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বভাবসূলভ বৈশিষ্ট্য হ’ল মুসলমানরা তাদের এই অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সহপাঠী ও সহকর্মীদের দাওয়াত করে থাকে। তখন উচিত হবে আনন্দচিত্তে তা গ্রহণ করা। তার বাড়ীতে যাওয়া ও তার পরিবেশিত খাবার গ্রহণ করা। এতে করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের গুরুত্ব ও আন্তরিকতা উভয়ের মাঝে বৃদ্ধি পাবে।
রাসূল (ছাঃ) একে অপরের দাওয়াত গ্রহণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। দাওয়াত প্রতাখ্যান করাকে নিন্দা করেছেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيمَةِ فَلْيَأْتِهَا- হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবে’।[15]
ইবন উমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন যে, إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُجِبْ عُرْسًا كَانَ أَوْ نَحْوَهُ- নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার ভাইকে দাওয়াত দেয় সে যেন তার দাওয়াতে সাড়া দেয়, বিয়ে অনুষ্ঠানই হউক বা সে রকম অন্য কোন অনুষ্ঠান’।[16]
জাবির (রাঃ) হ’ত বর্ণিত, তিনি আরো বলেনরإِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ فَلْيُجِبْ فَإِنْ شَاءَ طَعِمَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন দাওয়াতে সাড়া দেয়।
তারপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে’।[17]
অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, إِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ فَإِنْ كَانَ صَائِمًا فَلْيُصَلِّ وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا فَلْيَطْعَمْ ‘যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে ছায়েম হয় তাহ’লে সে (দাওয়াতদাতার) জন্য দো‘আ করে। আর যদি ছায়েম না হয় তাহ’লে সে যেন খায়’।[18]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ يُمْنَعُهَا مَنْ يَأْتِيهَا وَيُدْعَى إِلَيْهَا مَنْ يَأْبَاهَا وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ- নিকৃষ্টতম খাদ্য হ’ল ওলীমার খাদ্য যেখানে আগমনকারীদের বাঁধা দেওয়া হয়। আর অনিচ্ছুকদের দাওয়াত দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াতে সাড়া দেয় না সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নাফরমানী করল’।[19]
দাওয়াত গ্রহণের দ্বারা সম্পর্ক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। সুতরাং বিনা কারণে দাওয়াত গ্রহণ না করলে আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন। এটা হ’ল দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا. الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ. التَّقْوَى هَا هُنَا. وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে হিংসা পোষণ করবে না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে পশ্চাতে শক্রতা করো না এবং একের বেচাকেনার উপর অন্যে বেচাকেনার চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাক। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং হেয় করবে না। তাক্বওয়া এইখানে, এই কথা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনবার তার সীনার প্রতি ইশারা করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। কোন মুসলমানের উপর প্রত্যেক মুসলমানের জান-মাল ও ইযযত-আবরু হারাম’।[20](চলবে)
[লেখক : আলিম দ্বিতীয় বর্ষ, তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা, টঙ্গী শাখা, ঢাকা]
[1]. বুখারী হা/২৪৪৬, ৬০২৬; মুসলিম হা/২৫৮৫।
[2]. বুখারী হা/৬৭৫১; মুসলিম হা/২৫৮৬।
[3]. বুখারী হা/৬৭৫১; মুসলিম হা/২৫৮৬।
[4]. বুখারী হা/৩৭৮১।
[5]. বুখারী হা/৪০০৫।
[6]. শু‘আবুল ঈমান হা/৯৫১৩; ছহীহাহ হা/১৭১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৩৯।
[7]. বুখারী হা/১৬; মুসলিম হা/৪৩; তিরমিযী হা/২৬২৪।
[8]. বুখারী হা/১৪২৩; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১।
[9]. আবু দাঊদ হা/২৭২৫; ইবনু মাজাহ হা/২৬৮৩; মিশকাত হা/৩৪৭৫।
[10]. আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৯; আহমাদ হা/১৮৫৫৩।
[11]. বুখারী হা/১২,২৮; মুসিলম হা/৩৯।
[12]. আবু দাঊদ হা/৫১৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৮২।
[13]. মুসলিম হা/৯৩; আবু দাঊদ হা/৫১৯৩; ইবনু মাজাহ হা/৬৮।
[14]. আবু দাঊদ হা/৫১৯৫; তিরমিযী হা/৩৩১১; মিশকাত হা/৪৬৪৪।
[15]. বুখারী হা/৫১৭৩; মুসলিম হা/১৪২৯; মিশকাত হা/৩২১৬।
[16]. মুসলিম হা/১৪২৯; আবু দাঊদ হা/৩৭৩৮; আহমাদ হা/৬৩৩৭।
[17]. মুসলিম হা/১৪৩০; আবু দাঊদ হা/৩৭৪০; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫১।
[18]. মুসলিম হা/১৪৩১; আবু দাঊদ হা/২৪৬১; তিরমিযী হা/৭৮১।
[19]. মুসলিম হা/১৪৩২; বুখারী হা/৫১৭৭; মিশকাত হা/৩২১৮।
[20]. মুসলিম হা/২৫৬৪; আহমাদ হা/৭৭১৩।