বাহারুল ইসলাম (কুষ্টিয়া)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
[উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী
বৃটিশ বেনিয়াদের আতংক বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ সাতক্ষীরার অন্যতম মুজাহিদ
ঘাঁটি হাকিমপুরের (বর্তমানে ভারত) অদূরে জন্মগ্রহণ করেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন
বাংলাদেশ’-এর বর্ষীয়ান খাদেম সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব আব্দুর
রহমান (৮১)। ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী জোট সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের
দূর্যোগমুহূর্তে যে সকল বয়োজেষ্ঠ্য মুরুববী আহলেহাদীছ ‘আন্দোলন’ ও
‘যুবসংঘ’-এর নেতাকর্মীদেরকে পিতৃস্নেহ দিয়ে বুকে আগলে রেখে অনন্য
অভিভাকত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ফাসাদপূর্ণ দুনিয়ায়
সর্বত্র স্বার্থপরতা ও নিফাক্বীর ডামাডোলে সাতক্ষীরা যেলার প্রিয়মুখ জনাব
আব্দুর রহমান ছিলেন আমীরে জামা‘আতের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও অন্তঃপ্রাণ
সহযোগী। বয়সের ভারকে উপেক্ষা করে সদা হাস্যজ্জ্বল, সদালাপী ও কর্মচঞ্চল এই
মানুষটি একটি সুসংহত ও শক্তিশালী আহলেহাদীছ জামা‘আত গঠনের মিছিলে আজও
অগ্রসৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছেন। নিজেকে রহমানের একনিষ্ঠ বান্দা হিসাবে
প্রমাণে সদা সচেষ্ট থাকতে চেয়েছেন তার প্রতিটি কথা, কর্ম ও কাজে। সম্প্রতি
তিনি আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পর রাজশাহীতে তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ
করেন তাওহীদের ডাক-এর সহকারী সম্পাদক মুখতারুল ইসলাম]
তাওহীদের ডাক : আপনি কেমন আছেন? আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?
জনাব আব্দুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে এবং সকলের দো‘আর বরকতে আল্লাহ খুবই ভাল রেখেছেন। সুস্থাবস্থায় দেশে আসতে পেরেছি তাই আবারও আলহামদুলিল্লাহ পড়ছি।
তাওহীদের ডাক : আপনার জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
জনাব আব্দুর রহমান : আমার জন্ম ১৯৩৯ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপযেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রাজপুর গ্রামে। বৃটিশ বিরোধী জিহাদ আন্দোলনের সুপ্রসিদ্ধ ঘাঁটি হাকিমপুর আমার বাড়ি থেকে ৩ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। দাদার নাম ছিল ভাটাই সরদার। আমার আববা মুন্সী মুহাম্মাদ আহমাদ আলী সরদার এক বাপের এক ছেলে। তারও আমি একমাত্র ছেলে ও আমার দুই বোন ছিল। মায়ের নাম দুলাল নিছাবিবি। আমার পিতা তদানীন্তনকালে ৬ নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন দীর্ঘদিন। সেই সময় এলাকার কোন মসজিদে ইমাম-মুওয়াযযিন রাখা হত না। তাই আমাদের বাড়ীর সাথে মসজিদ থাকায় আমার পিতা বিনা ভাতায় ইমাম ও মুওয়াযযিন হিসাবে আমরণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমার বাবাকে দেখেছি আমাদের মসজিদে কোন মেহমান আসলে তিনি আমাদের বাড়ীতেই থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। আলেম-ওলামা যে যেখান থেকে আসুক মসজিদের মুতাওয়াল্লী হিসাবে তাঁদের আপ্যায়নের সকল দায়িত্ব বাবা পালন করেছেন। বর্তমানে আমিও করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত করে যাব।
তাওহীদের ডাক : আপনি ‘হাজী ছাহেব’ হিসাবে বিশেষভাবে পরিচিত। এ পর্যন্ত কতবার হজ্জ করেছেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আমার বাবা ১৯৮৩ সালে হজ্জ্ব করার নিয়ত করেন। ঐ বছরেই বাবার শরীরে পক্স উঠলে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তিনি একদিন আমার দুই ভগ্নীপতি ও আমার বড় জামাইসহ সবাইকে ডাকলেন। তিনি বললেন, আমি তো হজ্জের নিয়তে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু চোখে না দেখার জন্য হজ্জে যেতে পারলাম না। তোমাদের কে আমার বদলী হজ্জ করবে? তখন আমি বললাম, আমিই করব ইনশাআল্লাহ! তিনি ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বাবার কথামত প্রথমে আমি আমার নিজের হজ্জ করলাম ১৯৮৫ সালে। তারপর আববার হজ্জ করলাম ১৯৮৭ সালে। সে সময়ের হজ্জ ছিল বর্তমানের তুলনায় খুবই কঠিন। মীনার ময়দানে মানুষ নিজেরাই রান্নাবান্না করত, দূর-দূরান্ত থেকে পানির ব্যবস্থা করত। মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে চলতে হত। কখনও প্রাণহানির আশংকা থাকত। ২০০২ সালে আবার সস্ত্রীক হজ্জ্বে যাই আলহামদুলিল্লাহ। সম্প্রতি ২০১৮ সালেও হজ্জ করার সুযোগ হয়েছে। এবছর ২০২০-এও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু করোনার কারণে আর সম্ভব হ’ল না। যেহেতু আশি-নববইয়ের দশক পর্যন্ত হজ্জ যাত্রা থেকে শুরু করে হজ্জের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য এবং বাংলাদেশী হজ্জযাত্রীর সংখ্যা ছিল খুব কম, সেজন্য হাজীদেরকে সমাজের মানুষ আলাদাভাবে সম্মান করত। এভাবেই তৎকালীন প্রচলন অনুসারে আমার নামের সাথে হাজী সম্বোধন জুড়ে যায়।
তাওহীদের ডাক : আপনি যে হাকিমপুরের কথা বললেন সেখানে কি মাওলানা আকরম খাঁর জন্ম? জিহাদ আন্দোলনের কোন প্রভাব আপনার এলাকায় পড়েছিল বলে আপনি মনে করেন?
জনাব আব্দুর রহমান : জ্বী, ভারতের চবিবশ পরগনায় হাকিমপুরে প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাওলানা আকরম খাঁর জন্ম। আমার যতদূর জানা, মাওলানা আকরাম খাঁর পিতা ও পিতামহরা বড় বড় আলেমে দ্বীন ছিলেন। পাক-ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে আহলেহাদীছদের পবিত্র জিহাদ আন্দোলন পরিচালিত হত এই হাকিমপুর কেন্দ্র থেকে। বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি ঐ সময় হিন্দু জমিদাররা খুবই প্রভাবশালী ছিল। ওদের বেধে দেয়া নিয়ম সবাইকে মেনে চলতে হত। যেমন বড় বড় প্রজাদের কাছে পূজার সময় তারা বলী দেওয়ার জন্য পাঠা নিত। একেক বছর একেক জনকে বলত তোমাকে এবার পাঠা দিতে হবে। আমাদের এলাকাতেও তাদের জমিজমা ছিল। তারা আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও এসব কাজে বাধ্য করত। অবশেষে হাকিমপুর কেন্দ্রের দাওয়াতের বরকতে আমাদের এলাকা হিন্দু প্রভাব মুক্ত হয় এবং আহলেহাদীছ অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়।
তাওহীদের ডাক : আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
জনাব আব্দুর রহমান : সত্য বলতে কি, আমি পড়াশোনা বেশী দূর করিনি। অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান হিসাবে সব সুযোগই ছিল, কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে তো আর হয়না। আমার আববা আম্মা বেঁচে থাকার পরও পড়তে পারিনি। তার কারণ ছিল তখন স্কুল-কলেজ এত নিকটে ছিল না। হাইস্কুল ছিল আমার বাড়ী থেকে ১০ কি.মি. দূরে কলারোয়া। আর প্রাইমারী স্কুলে যেতে হত আমার বাড়ী থেকে সোনাই নদী পার হয়ে ভেলা, ডোঙ্গা অথবা নৌকায় চড়ে। সোনাই নদীর পূর্ব পাড়ে হ’ল প্রাইমারী স্কুল। তারপরেও মাঝে মাঝে নদী সাতরিয়েও ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সেই স্কুলে পড়েছি। তারপরে ৭ম শ্রেণী পাশ করে ৮ম শ্রেণীতে উঠে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আর স্কুলে যাইনি। তারপরে বাড়ীতে ঘরোয়াভাবে আরবী শিক্ষা অর্জন করেছি। সাতক্ষীরা যেলার সুপরিচিত ক্বারী শাহাদাতকে বাড়ীতে রেখে মাখরাজসহ বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করার চেষ্টা করেছি এবং শিখেছি।
তাওহীদের ডাক : আপনার ছাত্রজীবনের ইতি টেনে আপনি কি কোন পেশায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন?
জনাব আব্দুর রহমান : লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আমার বাবার গৃহস্থালীর হাল ধরি। তিনি পৈত্রিক সূত্রে প্রচুর জায়গা-জমি, বাগ-বাগিচা ও পুকুর পেয়েছিলেন। তারই উপর আমি চাষাবাদ করতাম আলহামদুলিল্লাহ। পরবর্তীতে কৃষি কাজের পাশাপাশি কলারোয়ায় নিজস্ব গোডাউনে দীর্ঘদিন ব্যবসায় যুক্ত থাকি। এক পর্যায়ে দুনিয়াবী ব্যস্ততা ছেড়ে সংগঠনে মন দিই এবং যুবসংঘ- আন্দোলনে প্রচুর সময় দিতে থাকি। সেই থেকে আমীরে জামা‘আতের নির্দেশে আমি এখনও পর্যন্ত প্রাণপণে আহলেহাদীছ আন্দোলন ও যুবসংঘকে এগিয়ে নিতে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। সবাই দো‘আ করবেন যেন মৃত্যু অবধি এ ধারা অব্যাহত থাকে।
তাওহীদের ডাক : আপনি কখন বিয়েশাদী করেছেন? আপনার ছেলে-মেয়ে কতজন? তারা এখন কোথায় কী করে?
জনাব আব্দুর রহমান : আমি বাংলা ১৩৬৪ (১৯৫৮ইং) সালে বিয়ে করেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার মোট ১০ জন সন্তান। ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ে। সবারই বিয়ে দিয়েছি। আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক শাসমুল আলম আমার এক জামাই এবং পিস টিভির আলোচক ও দাঈ হাফেয আখতার মাদানী আমার আরেক জামাই। বাকি মেয়েদের অন্যান্য জায়গায় বিয়েশাদী দিয়েছি। আর ছেলেদের মধ্যে আমার বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী এবং ছোট ছেলেটা কানাডা প্রবাসী। আরেক ছেলের সাথে প্রবীণ আলেমে দ্বীন মরহূম মাওলানা বদীউযযামানের মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সে চাকুরী করে। বাকিরা দেশে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত।
তাওহীদের ডাক : আহলেহাদীছ আন্দোলনের দূর্গ বলে পরিচিতি সাতক্ষীরাতে বিশুদ্ধ ইসলামী দাওয়াত কিভাবে এত প্রসার লাভ করল বলে আপনি মনে করেন?
জনাব আব্দুর রহমান : মূলতঃ মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের পিতা মাওলানা আহমাদ আলীর দাওয়াতী কর্মকান্ডে সাতক্ষীরায় বিশুদ্ধ ইসলামী দাওয়াতের এত প্রচার-প্রসার হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি সাতক্ষীরায় আহলেহাদীছ জামা‘আতের প্রাণপুরুষ ছিলেন। আমার জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তাকে দেখেছি। আমার বুদ্ধি হওয়ার আগেও উনি আমাদের এলাকায় দাওয়াতী কাজ করেছেন। উনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন দাওয়াতের কাজ করার মত লোক আমার চোখে পড়েনি। পরে মাওলানা মতীয়ার রহমান কাজ করেছেন। উনি পড়াশুনা করে আসার পরে খুলনা-যশোর যেলা জমঈয়তের সভাপতি ছিলেন। তিনি বয়সে উনার অনেক জুনিয়র। মাওলানা আহমাদ আলী ছাহেবের দাওয়াতী তৎপরতার সাথে তার কোন তুলনা নেই। মাওলানা আহমাদ আলী ছাহেব তদানিন্তনকালে যদি দুর্বার গতিতে দাওয়াতের কাজ না করতেন তাহলে আমাদের এলাকার অধিকাংশ আহলেহাদীছ মাযহাবী বা পীর-পুজারী হয়ে যেত। শুনলে আশ্চর্য হবেন যে, তাঁর দাওয়াতের ফসল হিসাবে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা আজও জ্বলন্ত সাক্ষী, যা বর্তমান সময়ে চিন্তাই করা যায় না।
তাওহীদের ডাক : শুনেছি মাওলানা আহমাদ আলী কেবল একজন আলেমই ছিলেন না বরং তিনি একজন শিক্ষানুরাগী, আদর্শ শিক্ষক ও সাহিত্যিক ছিলেন। এ বিষয়ে আপনি তাঁকে কতটুকু চিনেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আজীবন তিনি আহলেহাদীছ আন্দোলনের খেদমতে কাজ করে গেছেন। কীভাবে সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করে ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতের প্রচার-প্রসার ঘটানো যায় সেটাই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। মসজিদ, মাদ্রাসাসহ জনহিতৈষী কাজে তাঁর কোন জুড়ি ছিল না। দক্ষিণবঙ্গ তথা বৃহত্তর খুলনা এলাকায় তাঁর সরব পদচারণা ছিল। জাতিকে শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তুলতে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বস্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। জীবনে তাঁর একটি স্বপ্ন ছিল আহলেদীছদের জন্য স্বতন্ত্র একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা। সেটা তিনি শেষ জীবনে করেও গেছেন। অনেক বাঁধা-বিপত্তি থাকলেও আহলেহাদীছ অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ার কারণে তিনি কাকডাঙ্গাকে বেছে নিয়েছিলেন। আর সেটা হ’ল কাকডাঙ্গা সিনিয়র ফাযিল মাদরাসা। তিনি ছিলেন ঐ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। এর প্রেক্ষাপট ছিল এই যে, সাতক্ষীরার লাউড়ী হানাফী মাদরাসা থেকে মাওলানা শামসুদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে রাফউল ইয়াদায়েন করে ছালাত আদায়ের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়। তখন তিনিসহ বহিষ্কৃত ছাত্ররা এসে মাওলানা আহমাদ আলীর কাছে এসে কান্নাকাটি করেন এবং একটি আহলেহাদীছ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। তখন তিনি এই ঐতিহ্যবাহী মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আর সাহিত্যিক হিসাবেও ছিলেন তৎকালীন দক্ষিণবঙ্গে অদ্বিতীয়। তাঁর লিখিত বই- সংসার পথে (পদ্য ছন্দে), তাহারৎ (পদ্য ছন্দে), আকীদায়ে মোহাম্মদী বা মযহবে আহলেহাদীছ, ছলাতে মোস্তফা বা আদর্শ নামায শিক্ষা, নিয়ত ও দরূদ সমস্যা সমাধান, বিতর্ক ও বিচার, বঙ্গানুবাদ খোৎবা, ছলাতুন্নবী বা মক্তব-মাদরাসার আদর্শ নামায শিক্ষা, সূরা ফাতেহা পাঠের সমস্যা সমাধান, সশব্দে আমীন সমস্যা সমাধান; তারাবীহ সমস্যা সমাধান, রাফ‘উল ইয়াদায়েন ও বুকের উপর হাত বাধা সমস্যা সমাধান, কুরআন ও কলেমাখানী, তিন তালাক সমস্যা সমাধান, বঙ্গানুবাদ মীযানুছ ছরফ, হাদীছে আরবাঈন বা চল্লিশ হাদীছ, সরল আরবী ব্যাকরণ ইত্যাদি বইগুলো আজও জাতিকে পথ দেখায় ও অনুপ্রাণিত করে।
তাওহীদের ডাক : মাওলানা আহমাদ আলীর সুযোগ্য সন্তান আমীরে জামা‘আতও সাতক্ষীরায় বাঁকাল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যে মাদ্রাসার সাথে আপনি নিজেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এ বিষয়ে বিশেষ কোন স্মৃতির কথা যদি আমাদের শুনাতেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আমরা যখন জমঈয়ত থেকে আন্দোলনে এসে কার্যক্রম চালানো শুরু করি, তখন থেকেই উনার একটা স্বপ্ন ছিল সাতক্ষীরা শহরে একটি মাদরাসা করার। সেসময় সাতক্ষীরা যেলার আব্দুল গফূর নামে একজন প্রভাবশালী লোকের কাছে যাওয়া হ’ল। উনি তখন ৪০০ বিঘার সম্পত্তির মালিক। সাতক্ষীরা যেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী এমনকি তিনি একসময় মুসলিম লীগের এমপিও ছিলেন। উনি খুব প্রতিপত্তিওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। সাতক্ষীরা টু চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা টু ঢাকার মাঝে যোগাযোগ উনার দ্বারাই শুরু হয়। তখন তো ফেরী ছিল না। লঞ্চে যাতায়াত করতে হত। এপারে গাড়ী থাকত। আবার ওপার গিয়ে অন্য গাড়িতে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম যেতে হ’ত। উনি আর উনার বেয়াই দু’জনের এই সরাসরি পরিবহন ব্যবসা ছিল। আমীরে জামা‘আতসহ কয়েকজন লোক নিয়ে যাওয়া হ’ল তাঁর কাছে। যাওয়ার পরে হ্যাঁ, হ্যাঁ দেব বলে রাখলেন বহু দিন। কিন্তু কোন কারণে দিলেন না বা সাহায্য করলেন না। অবশেষে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে যেখানে বর্তমানে মাদ্রাসা করা হয়েছে সেখানে ঐ জমির সন্ধান পাওয়া গেল। অতঃপর ঐ জমিটা আমরা ক্রয় করে নিলাম। জমিটা তখন জলাশয়ের মধ্যে। প্রচুর পানি চারিদিকে। ঐখানেই আমীরে জামা‘আতের স্বপ্ন মহান আল্লাহ সফল করলেন। সেখানেই আমরা মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করি।
আমার তিন ছেলে আব্দুল মতীন, আব্দুর রাকীব ও আব্দুর রহীমকে দিয়ে বাঁকাল মাদরাসা উদ্বোধন করা হয়েছে বললে ভুল হবে না। আমাদের ঐ এলাকায় ভালো কোন মাদরাসা না থাকায় আমার ছেলে আব্দুল মতীন প্রথম জীবনে নওদাপাড়া মাদ্রাসায় পড়ত। এখানে এক বছর পড়াশুনা করার পর যখন বাঁকালে মাদরাসা করা হ’ল তখন আমি মাদরাসার দায়িত্বশীল হওয়ার কারণে আমার ছেলেকে নিয়ে চলে আসলাম সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাঁকাল মাদরাসায়। আমি বাঁকাল মাদরাসার জন্মলগ্ন থেকে সহ-সভাপতি হিসাবে খেদমত করেছি। সাথে সাথে তাওহীদ ট্রাস্টের দায়িত্ব পালন করতাম। সাতক্ষীরা যেলায় তাওহীদ ট্রাস্টের মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ সহ যেসকল সমাজসেবামূলক কাজ হ’ত, তার দেখাশুনা ও তদারকি জন্য আমীরে জামা‘আত আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
তাওহীদের ডাক : ২০০১ সালে তাওহীদ ট্রাস্টের বেশ কিছু সদস্য অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিল। তাওহীদ ট্রাস্টের একজন সদস্য হিসাবে এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আমি যেহেতু সাতক্ষীরা যেলা সহ এ অঞ্চলের সার্বিক দায়িত্বপালন করতাম, সেজন্য তাওহীদ ট্রাস্টের খুঁটিনাটি মোটামুটি জানতাম। ঐ সময় আমি ট্রাস্টের সদস্য না হলেও পরবর্তীতে আমাকে সদস্য করা হয়েছে। যাহোক আমীরে জামা‘আতের সরলতার সুযোগ নিয়ে বগুড়ার জনৈক ট্রাস্টির নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সদস্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে ট্রাস্টকে দখলে নেওয়ার পায়তারা করে। তারা চক্রান্ত করে আমীরে জামা‘আতের সরল বিশ্বাসের সুযোগে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করত। তাদের সে সকল দুর্নীতি ধীরে ধীরে ফাঁস হতে থাকলে তারা চক্রান্ত করে ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আমীরে জামা‘আতকে সরিয়ে দিয়ে অন্য একজনকে ট্রাস্টের সভাপতি করে ট্রাস্ট দখলের অপচেষ্টা চালায়। এভাবে তারা জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে দুনিয়াবী লোভ-লালসার কাছে বিকিয়ে দেয়। ট্রাস্টের মূল্যবান সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে নষ্ট করে। আল্লাহর আদালতে এবং জাতির কাছে তাদের একদিন এই বিশ্বাসঘাতকতা ও দূর্নীতির হিসাব দিতেই হবে। ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
তাওহীদের ডাক : আপনার সাংগঠনিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
জনাব আব্দুর রহমান : যেহেতু আমরা আহলেহাদীছ তাই আমার জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে জমঈয়তে আহলেহাদীছের সাথে যুক্ত ছিলাম। মানুষকে একনিষ্ঠভাবে দাওয়াত দিতাম। আমাদের কুরআন-হাদীছ ভিত্তিক দাওয়াতে হানাফীরা ভাইয়েরা কোণঠাসা হয়ে পড়ত এবং আমাদের কোন প্রশ্নেরই সদুত্তর তাদের নিকট পেতাম না। তারপর একসময় যুবসংঘের অধীনে আসলাম। যুবসংঘের কার্যক্রম আরম্ভ করার পর কেন যেন জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ কিছুটা হিংসা করতে লাগলেন। তারপরে তো যুবসংঘকে বের করে দেয়া হ’ল। সেই ইতিহাস সকলেরই জানা। পরবর্তীতে আমরা যুবসংঘের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছি। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমার প্রাণের সংগঠন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ গঠিত হ’ল। তখন থেকে অদ্যাবধি যুবসংঘ ও আন্দোলনকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি। আরেকটা মজার ব্যাপার হ’ল আন্দোলনের সর্বোচ্চ ক্যাডার ‘কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য’ হিসাবে কেন্দ্রে গিয়ে আমরা তিনজন ভাই সর্বপ্রথম পরীক্ষা দেই। আমি, রংপুরের আব্দুল্লাহিল বাকী, যিনি মারা গেছেন। আর ঝিনাইদহের ইয়াকুব মাস্টার। এই পরীক্ষা আমীর ছাহেব নিজে নিয়েছিলেন। আমাদের দিয়েই এই বরকতী যাত্রা শুরু হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ।
সাতক্ষীরা যেলা সংগঠনে আমি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করার ক্ষেত্রে আমরা তিনজন আব্দুর রহমান মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। তন্মধ্যে আমার সন্তান সমতুল্য ছিল আমীরে জামা‘আতের খুব নিকটের মানুষ আব্দুর রহমান। আরেক আব্দুর রহমান মাস্টার ছিলেন আমীরে জামা‘আতের ভাগ্নি জামাই। দীর্ঘ দিন ধরে উনি ছিলেন যেলা সভাপতি আর আমি ছিলাম সহ-সভাপতি। খুবই আন্তরিকতার সাথে আমরা কাজ করেছি। যা কিছু করতাম এই তিন আব্দুর রহমান। আর একজন ছিল আমার পৃষ্ঠপোষক বা সহযোগী আমীরে জামা‘আতের ভাগ্নে বদরুল আনাম। আরেকজন লোকের কথা খুব মনে পড়ে। তিনি হলেন আমীরে জামা‘আতের ছোট ভগ্নীপতি জনাব লুৎফর রহমান। তিনি আমার একেবারে ছোট কালের বন্ধু ছিলেন, আবার তাওহীদ ট্রাস্টের হিসাব রক্ষকও ছিলেন। উনিও আমার খুব হিতাকাংখী ছিলেন।
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আতের সাথে আপনার সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কখন এবং কিভাবে শুরু হয়?
জনাব আব্দুর রহমান : আমীরে জামা‘আতের পিতা মাওলানা আহমাদ আলী আমার এক চাচার দূর সম্পর্কের মামাত শশুর হতেন। সে হিসাবে তিনি আত্মীয়ই হতেন। তারপরে আমার আববার নাম আহমাদ আলী, উনার নামও আহমাদ আলী। তিনি মাঝেমধ্যেই তিনি দাওয়াতী কাজে আমাদের এলাকায় আসতেন। তখন তিনি আমার আববাকে ‘মিতা’ বলে ডাকতেন। এভাবে তাঁর পরিবারের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আর সাংগঠনিক জীবনে এই ঘনিষ্ঠতায় মোহাববত মহান আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আমি আহলেহাদীছ আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকে আমীরে জামা‘আতের দক্ষিণ হস্ত ছিলাম। আমার জীবন-মরণ যত দূর সাধ্য ছিল আমার সেই সাধ্য অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে চলা-ফেরা, উঠা-বসা, কাজ-কর্ম সবই করেছি। এ পর্যন্ত তাই করে আসছি। আমৃত্যু করে যাব ইনশাআল্লাহ। আমার চোখে পানি আসে, যখন তাঁর কথা ভাবি। আমি তাঁকে কি দিয়ে আমার ভালোবাসা ও সম্মান দেখাবো জানি না। আল্লাহর কাছে শুধু দোআই করি আল্লাহ যেন আমার আমীরে জামা‘আতকে দীর্ঘজীবী করেন এবং সঠিক রাস্তায় অবিচল রেখে আমৃত্যু দ্বীনের খেদমত নেন। তাঁকে যেন মহান আল্লাহ হায়াতে তাইয়েবাহ দান করেন এবং এদেশের আহলেহাদীছ জামা‘আত তাঁর দ্বারা যে আলোর সন্ধান পেয়েছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। আমীন ছুম্মা আমীন!
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আতের সাথে আপনার কোন বিশেষ স্মৃতির কথা বলবেন কি?
জনাব আব্দুর রহমান : উনার সঙ্গে তো জীবনের বিরাট অংশ কেটেছে। স্মৃতির কোন অন্ত নাই। একটা ঘটনা বলি। হাফেয আখতারের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরের ঘটনা। আমাদের নওদাপাড়া মাদরাসায় মদীনা থেকে একটি টীম আসছিল ছাত্র নেওয়ার জন্য। আমার জামাইও সেখানে পরীক্ষা দিয়েছিল। সে নির্বাচিত হয়ে গেল। এরপর থেকে সে মদীনায় থাকে। এরই মধ্যে আমার মেয়ের একটি মেয়ে হয়। তখন জামাই আমাকে বলল, আমি তো আপনার মেয়েকে এখানে আনতে চাচ্ছি। আমি বললাম, ঠিক আছে আমার কোন আপত্তি নেই। ব্যবস্থা করে দেন। ব্যবস্থা করতে গেলে তো পাসপোর্ট-ভিসা লাগবে। কোন একটি সম্মেলন কিংবা কোন সাংগঠনিক কাজে মেয়েকে নিয়ে ঢাকাতে গেলাম। তিনদিন এ্যামবেসীতে গেলাম। তিন দিনই রিজেক্ট করে দিল। মনটা খারাপ। আমীরে জামা‘আত ঢাকার বংশালে ছিলাম। আমরাও বংশালে এলাম। দেখা করলাম তাঁর সাথে। তিনি বললেন, ভাই মন খারাপ কেন? তাঁকে ঘটনাটি খুলে বললাম, তিন দিন মেয়েকে নিয়ে দাঁড়ালাম। জামাই চাচ্ছে মেয়েকে ওখানে নিয়ে যেতে। কিন্তু ওরা বারবার রিজেক্ট করছে। আমীরে জামা‘আত বললেন, একটা কাগজ নিয়ে আসেন। কাগজ আনলাম। উনি একটা দরখাস্ত লিখলেন আর বললেন, এই কাগজ ওদের দিবেন। ঐ দিনই মেয়েকে নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। চিঠি দেখে ওরা আর কোন কথা বলল না। সঙ্গে সঙ্গে ডাক দিয়ে দিল। এই যে একটা বড় স্মৃতি, যা আমৃত্যু মনে থাকবে। এতবড় একটা সমস্যা আল্লাহ এভাবে তাঁর হাত দিয়ে সমাধান করে দিবে, এটা অলৌকিক বললে ভুল হবে না। কারণ চিঠিটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসাও করা হলো না, কাজ হয়ে গেল। ডেট হয়ে গেল। বলল, অমুক দিন তোমার ফ্লাইট। অবিশ্বাস্য! এমন অনেক উপকার তাঁর মাধ্যমে আমি পেয়েছি।
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আত যখন ২০০৫ সালে গ্রেফতার হলেন তখন আপনি কোথায় ছিলেন এবং পরবর্তীতে কিভাবে সংগঠনের গতি সঞ্চারে ভূমিকা রেখেছিলেন?
জনাব আব্দুর রহমান : যে রাত্রে আমীরে জামা‘আত গ্রেফতার হলেন সে রাত্রে বগুড়াতে আমার জামাই হাফেয আখতার মাদানীর বাসায় ছিলাম। এর আগে থেকেই পত্র-পত্রিকায় আহলেহাদীছরা জঙ্গী মর্মে অপবাদ দেয়া হচ্ছিল। ঐ রাত্রে ১২টার পরে টিভিতে দেখাচ্ছিল যে, ‘জঙ্গীনেতা’ ড. গালিব গ্রেফতার। এটা দেখেতো আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল। এখন কি করব? এর কয়েকদিন পরে বগুড়া থেকে রাজশাহীতে আমার জামাই শামসুল আলমের বাসায় আসলাম। তারপর আমাদের করণীয় সম্পর্কে সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ করতে শুরু করলাম। তারপরে কতদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। আমীরে জামাআত ছাড়া না পেলেও তাঁর বন্দীত্ব একসময় আমাদের জন্য চেতনার উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো। আল্লাহর বিশেষ রহমতে সাড়ে তিন বছর পর তিনি মুক্তি পেলেন। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে ‘ইনছাফ পার্টি’-এর আবির্ভাব নিয়ে ক্রান্তিকাল কেটে গেল। সংগঠনের প্রধান দায়িত্বশীলদের প্রায় সকলেই ইনছাফ পার্টির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু আমরা গুটি কয়েকজন লোক ইনছাফ পার্টির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। আত-তাহরীক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত হোসাইন অনমনীয় দৃঢ়তার সাথে আত-তাহরীকে ইনছাফ পার্টির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সম্পাদকীয় লিখলেন। তাঁর বিরুদ্ধে শোকজ করা হ’ল। আমরা শূরা মিটিং-এ উপস্থিত থেকে আত-তাহরীক সম্পাদকের সমর্থনে জোরালো ভূমিকা রাখি এবং সংগঠনের তথাকথিত রাজনৈতিক প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ি। আমীরে জামা‘আতের সিদ্ধান্তের বাইরে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়াকে আমরা কখনই মানতে পারিনি। আমরা বলেছি তোমাদের সাথে তখনই আমরা একমত হবো যখন আমীরে জামা‘আত বের হয়ে এসে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন জেলখানা থেকে তিনি বললেও আমরা মানব না। উনি যখন বাইরে আসবেন, তখন উনার মতামত সাপেক্ষে আমরা মতামত দিব। এভাবে সাধ্যমত উর্ধ্বতন নেতাদেরকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে নিবৃত করার চেষ্টা করেছিলাম। পরবর্তী ইতিহাস তো সকলেরই জানা।
তাওহীদের ডাক : সে সময় সাতক্ষীরা যেলার অবস্থা কি ছিল?
জনাব আব্দুর রহমান : সেসময় আমাদের বিরুদ্ধবাদী অনেক লোক থাকলেও তারা আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেনি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা সবসময় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আর আমীরে জামা‘আত গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম আমরা সম্মেলন করেছি সাতক্ষীরা সিটি কলেজ ময়দানে। আমরা কারো কোন তোয়াক্কা করিনি। আমরা নির্ভীকভাবে আমাদের মনের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। তারপরে ঢাকাতে সম্মেলন হ’ল। সেখানে আমাদেরকে পল্টন ময়দানে প্রোগ্রাম করতে দিলনা। আমরা সেই দিন মনোবল না হারিয়ে ট্রাকে মু্ক্তাঙ্গনে সম্মেলন করেছি। সৎ সাহসিকতার সাথে আল্লাহ কাজ নিয়েছেন। প্রতিটি কাজেই মহান আল্লাহর বিশেষ সহায়তা ছিল।
তাওহীদের ডাক : এবার আপনার হজ্জ স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই। কিভাবে সেই যুগে হজ্জে গেলেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আমি প্রথমে ১৯৮৫ সালে হজ্জে যাই। হজ্জে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছি। টাকা জমা দেওয়ার আগে আমার ছিল গ্যাস্ট্রিক, আলসার। বাংলাদেশের বহু ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কোন কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত গেলাম কুমুদিনী হাসপাতালে। ওখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলল আপনার কঠিন আলসার। অপারেশন করতে হবে। আমি বললাম, আমি তো অপারেশন করাবো না। আপনি ঔষধ দেন। খেয়ে দেখি কি হয়। ঔষধ দিল। কিন্তু খেয়ে কিছুই হয়না। শেষে এমন অবস্থা হ’ল যে, ভাত খাওয়াই যেত না। খেতে হয় সাবু, বার্লি। যাই খাই বমি হয়ে যায়। পানি খেলেও বমি হয়ে যায়। এতে করে কঙ্কালসার হয়ে গেলাম। তারপরে হজ্জে যাওয়ার ডেট পড়ে গেল। তখন আমি আত্মীয় স্বজন ও দু’চার গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত করলাম বিদায়ী দো‘আ নেওয়ার জন্য। সবাই আসল এসে বলল, আপনার এ অবস্থায় হজ্জে যাওয়া ঠিক হবে না। এত কঙ্কালসার অবস্থা। আপনি কিছুই তো খেতে পারেন না। না যাওয়াই ভাল। তখন আমি বললাম আমি আপনাদের ডেকেছি আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা ও বিদায় নেওয়ার জন্য। আপনারা আমার জন্য বাঁধা সৃষ্টি করবেন না। আমার লাশটা যদি ঢাকা থেকেও ফিরে আসে তবুও নিজেকে আমার সার্থক মনে হবে। আপনারা দো‘আ করে যাতে আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করেন। আমি নিয়ত করেছি আল্লাহর ওয়াদা আছে আমার যে বান্দা এই যমযমের পানি যে নিয়তে পান করবে আমি তার সে নিয়তই পূর্ণ করব। তবে নিয়তটা ছহীহ হতে হবে এবং কোন রকম শরী‘আত বিরোধী হওয়া যাবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি হজ্জে যাব। যমযমের পানি পান করব। আল্লাহ আমায় সুস্থতা দান করবেন ইনশাআল্লাহ। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেট থেকে বাহির হতেই যেন সুস্থ বোধ করতে লাগলাম। হাজী ক্যাম্পে তিনদিন থাকলাম। কিছুটা সুস্থতা বোধ করলাম। তারপর বিমানযোগে সউদীআরব পৌঁছলাম। মক্কাতে গিয়ে বেড-পত্র রেখে তাওয়াফ করতে গেলাম। তাওয়াফ করে আল্লাহর নামে নিয়ত করে যমযমের পানি খেতে লাগলাম। পরিপূর্ণভাবে এত পানি খেলাম, কিন্তু কোন কিছুই মনে হ’ল না। সেখান থেকে আমার এখন পর্যন্ত গ্যাস্ট্রিক বা আলসার তো নেই, তারপরও কোন প্রকার পেটের অসুখও নেই আলহামদুলিল্লাহ। ১৯৮৭ সালে আববার অছিয়ত অনুযায়ী তাঁর বদলী হজ্জ করেছি। এরপর ২০০২ সালে সপরিবারে আম্মার বদলী হজ্জে গেলাম। এই মোট তিন বার হজ্জ করেছি।
তাওহীদের ডাক : এর পরেও কি হজ্জে গিয়েছিলেন?
জনাব আব্দুর রহমান : জী, হ্যাঁ। হজ্জে একবার গেলে তো আর লোভ সামলানো যায়না। বইতে পড়েছি, যে ব্যক্তি রামাযান মাসে ওমরাতে যাবে সে আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ্জ করার সমপরিমাণ নেকী পাবে। সেই আলোকে ২০১১ সালে রামাযান মাসে ওমরাতে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আমার মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনী থাকে সঊদী আরবের আল-কাছীম অঞ্চলে। তারা আমার অনিচ্ছা সত্বেও ২০১৮ সালে ভিসা পাঠিয়ে দিল। এটাও রামাযানের আগে ছিল। ঢাকা থেকে আল-কাছীম জামাইয়ের বাসাতে পৌঁছলাম। ৩/৪ দিন পরেই রামাযানের প্রথমে সেখান থেকে একটি কাফেলার মাধ্যমে ওমরাতে চলে গেলাম। ওমরা থেকে চলে আসার কয়েকদিন পরে আমি জামাইকে বললাম, আমি রামাযানের শেষ দশক মসজিদে হারামে ইতেক্বাফ করব। আমাকে সে ব্যবস্থা করে দাও। তারপর ২০ রামাযানের আগেই মক্কাতে চলে আসলাম এবং ওমরাহ আদায় করলাম। একটা মজার ব্যাপার হ’ল এবার মক্কাতে এসে আমার স্নেহাষ্পদ ‘আন্দোলনে’র সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি আব্দুল মান্নানের কাফেলাকে পেয়ে গেলাম। তারা রামাযানে ওমরা করার জন্য লোকজন নিয়ে এসেছে। আমি কয়েকদিন তাদের কাফেলার সাথেই থাকলাম। তারা চলে আসার পূর্বে আমি আব্দুল মান্নানকে বললাম, তোমার যে মুয়াল্লেম আছে তার সাথে আমার পরিচয় করে দিয়ে যাও, যাতে তোমরা চলে যাওয়ার পরে আমি ইতিকাফ শেষে এখানে থাকতে পারি এবং হজ্জের পূর্ব প্রস্ত্ততি এখান থেকেই নিতে পারি। সে বলল, ঠিক আছে চলেন। তো বাড়ির মালিকের নামও আব্দুর রহমান। আব্দুল মান্নান তাকে ফোন দিয়ে বলল, আমি আমার চাচাজীকে নিয়ে আসছি। তিনি খুবই ধনাঢ্য লোক। বাড়ী হ’ল চট্টগ্রাম। গেলাম মাগরিবের আগে সেই বাড়িতে। গিয়ে দেখি রুমের ভিতরে মেঝেতে দস্তর খানা পেতে কত রকম যে ইফতার তৈরী করে রেখেছে! এত খাবার খাবে কে? যাক ঢুকতেই সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর নিলেন। তারপর আব্দুল মান্নান তাকে মামা বলে সম্বোধন করে বলল, উনি আমার চাচাজী হলেও আমার বাবা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে উনাকে আমার আববা হিসাবে জানি। উনি থাকবেন। হজ্জ করে যাবেন। আপনাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। উনি বললেন, উনি আপনার আববা হলে তো আমার নানা। পরিচয় হয়ে গেল। খাওয়া দাওয়ার পরে চলে আসলাম। ওরা ওমরা সেরে চলে গেল আর আমি ইতিক্বাফে বসলাম। ইতিকাফ শেষে আবার ওমরা করলাম। ওমরা শেষে জামাই ফোন দিল যে ওখান থেকে তার পরিচিত লোকজন আসছে, আমি যেন তাদের সাথে আল-কাছিমে চলে আসি। আমি তাদের সাথে জামাইয়ের বাসাতে চলে আসলাম। কিন্তু আমার প্রবল ইচ্ছা আমি হজ্জ করব। যাইহোক ২৬শে যিলক্বদ পর্যন্ত ওমরা চালু থাকে তারপর হজ্জ পর্যন্ত কিছু দিন ওমরা বন্ধ থাকে। আমি আবার ইহরাম বেঁধে মক্কা চলে গেলাম। তারপর সেই আব্দুর রহমান আমাকে এক লোক মারফত নিউ ঢাকা হোটেলে নিয়ে গেল। যাওয়ার পর সেই লোক আমাকে ৪তলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট দেখাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি আমাকে দেখাচ্ছ কেন? সে বলল, আমার বস আমাকে বলে দিয়েছে নানাকে গোটা ফ্ল্যাট দেখাবে। তিনি যেটা পসন্দ করবেন সেটাই তাকে দিয়ে দিবে। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। তারপর সব দেখে এসে বললাম আমি নিচ তলায় থাকব। সে আমাকে ৩ বেড বিশিষ্ট একটা রুমে গিয়ে বলল এই রুমটা আপনার জন্য সম্পূর্ণ ফ্রী। এরপর আব্দুল মান্নানের হজ্জ কাফেলা আসলে তাদের সাথে যোগ দিয়ে ২০১৮ সালের হজ্জ সম্পাদন শেষ করি। ফালিল্লাহিল হামদ। এবছর মুহতারাম আমীরে জামা‘আতও স্বপরিবারে হজ্জ করেন এবং মক্কায় তাঁদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। ২০২০ শেষ বারের মত হজ্জে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, যা সেই আব্দুর রহমান ঠিকঠাক করে দিয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটা করা সম্ভব হয়ে উঠল না।
তাওহীদের ডাক : আপনি সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ফিরলেন। করোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল সেখানে?
জনাব আব্দুর রহমান : আমার বড় ছেলে ও বউমা আমেরিকাতে গেছে ১৯৯৮ সালে। প্রথমবার আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন আমাকে ভিসা দিয়েছিল ৫ বছরের। ২০২১ সাল পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ আছে। প্রথমবার গিয়ে সস্ত্রীক ৩৬ দিন ছিলাম। প্রায় দিনই আমি ঘুরতে বের হতাম। মাত্র কয়েকদিনে আমেরিকার ৫টা প্রদেশ ভ্রমণ করেছি। ওয়াশিংটন, ম্যারিল্যান্ড, পেন্সিলভেনিয়া, নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি। আমরা ৮টার আগে নাশতা সেরে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে যেতাম আর রাত ১২টা বা ১টা বেজে যেত ফিরতে। আর এবারও সস্ত্রীক গেছি ২০২০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে। যাওয়ার পর কিছুদিন পরিবেশ ভালই ছিল। করোনার সংক্রমণ তখনও শুরু হয় নি। তবে তখন বাড়ী থেকে বের হওয়ার মত কোন সুযোগ ছিল না। এত ঠান্ডা। গেলেই আক্রান্ত হতে হবে নানা অসুখ-বিসুখে। এই ভয়ে আমরা বের হতে পারিনি। আমরা যাওয়ার মাস দেড়েক পর করোনা ছড়িয়ে পড়ল। লকডাউন জারি করা হ’ল। ফলে বাইরে আর বের হওয়া হ’ল না। লকডাউনের আগে আমার ছোট ছেলে ও বউমা কানাডা থেকে নিউইয়র্ক এসেছিল। তারা আমাদের খাওয়ানোর জন্য বড় বড় বোয়াল মাছ, চাঁদা মাছ, গরুর গোশত, নানা প্রকার খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছিল। এই দেখা করে যাওয়ার পরে আমাদের ফ্লাইট ছিল যেদিন তার ৩দিন আগে লকডাউন পড়ে গেল। একারণে আমরা ওখানে আটকা পড়ে গেলাম। এরপর প্রায় ৬ মাস পর জুলাইয়ের ১৩ তারিখে বাড়িতে ফিরেছি। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে করোনার কাছে, তা নিজ চোখে দেখেছি। করোনা ছাড়া অন্য রোগের কোন চিকিৎসা যেন নেই হাসপাতালে। কেউ কারো খোঁজ-খবর নেয় না। প্রতিদিনই আশ-পাশ থেকে কারো না কারো মৃত্যুসংবাদ পাই। আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা থাকলেও মৃত্যুভয় তাড়া করত। বাড়িতে কারো জ্বর এলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তাম আমরা। এর মধ্যে আমার স্ত্রীও কঠিন জ্বরে পড়ল। আলহামদুলিল্লাহ কিছুদিন পর সে সুস্থ হ’ল। জানালা দিয়ে কখনও রাস্তায় তাকাই। ব্যস্ত শহরে কোন যানবাহন নেই। কোথাও কেউ নেই। যেন মৃত জনপদ। সে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা।
তাওহীদের ডাক : আপনার আমেরিকা সফরের বিশেষ কোন স্মৃতি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
জনাব আব্দুর রহমান : আমি যেখানে যে অবস্থায় থাকি সাধ্যমত দাওয়াতী কাজ করি। আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে বিশেষভাবে মন কেড়েছে আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি আর অফুরন্ত নে‘মতরাজি। একবার আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনায় মাছ ধরেছি। জোয়ারের সময় মহাসাগরের মোহনাগুলোতে প্রচুর মাছ উঠে। ভাটার সময় বড়শি ফেললে টপাটপ মাছ উঠে। একদিন আমার ছেলেসহ কয়েকজন গিয়েছিল তারা প্রায় দেড় মণ (৬০ কেজি) মাছ ধরতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের ধরা বড় মাছটি ছিল ৮ কেজি ওজনের, যেটা জাল দিয়ে ধরেছিল। বাকীগুলো বড়শি দিয়ে। আমি যেদিন যাই, সেদিন মাত্র ৬ কেজি মাছ পেয়েছিলাম। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে ফিরে আসতে হয়েছিল। তারপরে আরেকদিন গিয়েছি সেদিন বাপ-বেটা মিলে ২০কেজি মাছ পেয়েছিলাম। মাছ ধরার এই আনন্দ ভোলার মত নয়।
আমেরিকা জুড়ে গাছ-গাছালিতে ভরপুর। তবে কোন গাছেই পাতা-পুতি নেই, ন্যাড়া। মনে হবে সব গাছ মরে গেছে। হঠাৎ ফিরে আসার একমাস আগে আষাঢ় মাসের শেষের দিকে ছোট ছোট পাতা গজানোর মত ফুল বের হচ্ছে। প্রথমে ফুলগুলো ফুটে গেল তারপর পাতা বের হ’ল। এরপর সমগ্র আমেরিকা সবুজ-শ্যামলে ভরে গেল। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। নিউইয়র্কে প্রচুর আপেল বাগান দেখেছি, সেখানে আপেল খেয়েছি। খুব ভালো লাগার বিষয় হলো বিনা পয়সায় ইচ্ছামত আপেল খাওয়ার ব্যাপারটা। শুধুমাত্র একটা ব্যাগ ১৫ ডলারে কিনতে হয় তারপর যতখুশী আপেল খাওয়া অথবা ব্যাগ ভর্তি করে বাড়িতে নিয়ে আসা যায়। এছাড়া হোয়াইট হাউজসহ ওয়াশিংটনের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ফালিল্লাহিল হামদ।
তাওহীদের ডাক : আপনারা আপনাদের পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে কি ভাবছেন?
আব্দুর রহমান : পরবর্তী প্রজন্মকে আমি সাধ্যমত তৈরী করার চেষ্টা করেছি। ইনশাআল্লাহ যদি আল্লাহ রহম করে তো সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশাবাদী আমাদের চাইতেও পরবর্তী প্রজন্ম ভালো কিছু জাতিকে উপহার দিবে ইনশাআল্লাহ।
তাওহীদের ডাক : যুবকদের জন্য আপনার নছীহত কি হবে?
আব্দুর রহমান : যুবকদের বলব, দেশ-বিদেশ যেখানেই যাও তোমরা কোন অবস্থাতেই বাতিলের জন্য ময়দান ছাড়বে না। হকের প্রচার ও প্রসারে কখনো পিছপা হবে না। দাওয়াতী ময়দানের তোমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে সামনে রেখে আমরা পিছনে কাজ করবো। আর্থিক বা দৈহিক যতটুকু শক্তিসামর্থ্য রয়েছে ততটুকু দিয়ে সাধ্যমত তোমাদের সাথে থাকব ইনশাআল্লাহ। যুবসংঘে’র শাখা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীসহ সকলকে আল্লাহ রববুল আলামীন যেন সর্বাঙ্গীন মঙ্গল দান করেন এবং যুবসংঘের কর্মতৎপরতাকে যেন গতিশীলভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাওফীক আল্লাহ দান করেন, সেই দোআই সর্বদা করি।
তাওহীদের ডাক : তাওহীদের ডাক পাঠকদের জন্য আপনার কোন উপদেশ থাকে কি?
জনাব আব্দুর রহমান : তাওহীদের ডাকের জন্য আমাদের সার্বিক দো‘আ ও সহযোগিতা থাকবে। এটি ‘যুবসংঘে’র একটি উপযুক্ত মুখপাত্র। এর প্রতিটি পাঠকের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে নছীহত হল, নিজেদের আগে জানতে হবে এবং দাওয়াত দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তাওহীদের ডাকের মত পত্রিকা সকল ব্যক্তির জন্য বিশেষত যুবকদের জন্য অবশ্য পাঠ্য।
তাওহীদের ডাক : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। মহান আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তাইয়েবাহ দান করুন এবং আপনার প্রত্যাশা কবুল করুন- আমীন! জাযাকাল্লাহ খায়রান।
জনাব আব্দুর রহমান : তোমাদেরকেও ধন্যবাদ। মহান আল্লাহ তোমাদেরকেও ছহীহ-সালামতে রাখুন। আমীন!