সত্যানুসন্ধানী
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ 1293 বার পঠিত
অনেকটা
অনধিকার চর্চা করে জিজ্ঞাসা করলাম, এই যুবক! তুমি এখানে কি করছ? যুবক বলল,
বসে আছি। তোমার নাম কি? যুবক উত্তর দিল, শামীম। নাম শুনে জিজ্ঞাসা করলাম-
তুমি কারো জন্য অপেক্ষা করছ? উত্তর দিল আমার বন্ধুরা আসবে তাই অপেক্ষা
করছি। এর মধ্যেই দামী একটি মটর সাইকেলে দু’জন যুবক এসে হাজির। বসে থাকা
যুবক ঐ দু’জন যুবকের সাথে মটর সাইকেলে উঠে যেতে চাইলে ওদেরকে একটু দাঁড়
করিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা এখন কোথায় যাবে? ওরা বলল মহলে। মহল সে আবার কি?
উত্তর দিল- ও আপনি বুঝবেন না। এই যুবক একটু বুঝিয়ে বল দেখি, মহল কি? ওখানে
তোমরা কি কর? আর কেনইবা ওখানে দল ধরে যাচ্ছ? একজন বলল মহল হচ্ছে আমাদের
আড্ডাখানা। তাহলে আড্ডাখানা না বলে মহল বলছ কেন? তারা বলল, আড্ডাখানা বললে
অনেকে খারাপ মনে করে। তাই আমরা মহল বলি। বিষয়টি বুঝতে পারলাম। এই তিনজন
যুবক কোথায় যাচ্ছে? কেন যাচ্ছে? নিশ্চয়ই আড্ডাখানায় নেশা করার জন্য।
বললাম, তোমরা কোথায় যাচ্ছ আমি বুঝেছি? যাও সমস্যা নেই, কিন্তু তোমরা কি আমার কিছু কথা শুনবে? ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল- শুনবো, বলেন। তোমরা কোন না কোন মা-বাবার সন্তান। তোমাদের প্রত্যেকেরই দায়-দায়িত্ব আছে। তবে কোন দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছিলে? বাক্যটি বলার সাথে সাথে ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জামিশ্রিত হাসিতে বলল, না মানে ওটা কোন দায়িত্ব না। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কথা-বার্তা বলা আর জাস্ট একটু আড্ডা দেওয়া এই আর কি? তেমন কোন বিষয় না। বললাম তোমরা লেখাপড়া কর? বলল হ্যাঁ করি। কোন ক্লাশে? উত্তর দিল ইন্টারে। ও, সবাই এক সাথে। বলল, হ্যাঁ একই সাথে। যেই মা-বাবার মাধ্যমে এই দুনিয়ায় এসেছো, সেই মা-বাবা তোমাদের জন্য অর্থ ব্যয় করছেন, তোমরা যাতে মানুষ হতে পার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পার। প্রতিটা মা-বাবার একই ইচ্ছা। কিন্তু সেটা না হয়ে হচ্ছে উল্টোটা। প্রশ্ন করলাম, তোমরা ঐ পথে গেলে কেন? ওরা হতাশ হয়েই বলল, লেখাপড়া শিখে কি লাভ? চাকুরী নেই, কাজ নেই। আজ যুবকরা বেকার, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেও কোন চাকুরী নেই, কর্মসংস্থান হয় না। যেমন ধরুন মেধাবীকে বানান হচ্ছে মেধাশূন্য, আর মেধাশূন্যকে বানান হচ্ছে মেধাবী। তাহলে লেখাপড়া শিখে কি হবে? বললাম, তোমাদের কথাগুলো শুনলাম। তবে লেখাপড়া না শিখে তোমরা ধ্বংস হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছ। এটা কেউই মানতে রাযী হবে না। কারণ ঐ পথটি সবার জন্যই অভিশপ্ত। সবার জন্যই আপত্তিকর। তাই ঐ পথে নয়, শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্যই তোমাদের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। মা-বাবার আশা পূরণ করার জন্যই শিক্ষা লাভ করতে হবে। লাভ হবে জাতির, লাভ হবে দেশের, লাভ হবে সবার। ওরা আনমনে মাথা নাড়ল। অন্তরে ক থাগুলো কতটুকু
ঢুকলো, কে জানে? এরপর ওরা তিনজন মটর সাইকেলে চড়ে সালাম দিয়ে চলে গেল। দেখতে দেখতে অদৃশ্য হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। মনে কল্পনা করলাম আর দোআ করলাম, তারা যেন ঐ পথে আর না চলে।
আমি ভাবতে থাকি, যুবকদের বিষয়ে পরিবার, সমাজ ও দায়িত্বশীল প্রতিনিধিগণ সকলেই বোধহয় ব্যর্থ। যেখানে যুবকদের সঠিক পথে পরিচালিত করে তাদের যৌবনের উদ্যমকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল পরিবারের, সমাজের, জনপ্রতিনিধিদের, সেখানে আজকে আমরা সবাই ব্যর্থ। পারিবারিকভাবে ছোট্ট অবস্থায় যদি বাবা-মা শিশুদের পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে গড়ে তোলার কাজে সময় দিতেন, তাহলে ঐ শিশুই আজকের যুবক হয়ে উঠত উন্নত চরিত্রে চরিত্রবান। একজন যুবকও নেশাগ্রস্ত হয়ে ধ্বংস হ’ত না। নষ্ট হ’ত না তার সম্ভাবনাময় উঠতি জীবন। পরিবার, সমাজ, জাতি ও দেশ পেত একটি সুন্দর যুবসমাজ। আসলে সমাজে ধরেছে ঘুন। সেই ঘুনে সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এই ঘুনে ধরা সমাজের পরিবর্তন কবে কখন হবে, তা বলা মুশকিল। সমাজ সুন্দর ও স্বচ্ছ হোক, এটা সমাজপতিদের অনেকেই চান না। নোংরা পরিবেশে সমাজ পরিচালিত হ’লে সমাজপতিদের বেশী লাভ। আমরা সবাই জানি, যুবসমাজ কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে। কেন ধ্বংস হচ্ছে। আবার আমরা বলে থাকি যুবকরাই দেশের ভবিষ্যত, জাতির মূল জনশক্তি। কিন্তু যুবকদেরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা বা একজন চরিত্রবান যুবক হিসাবে গড়ে তোলা বা তাদেরকে ধ্বংসের পথ হতে রক্ষা করে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা- এই সব বিষয়গুলো হ’তে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। একজন নেশায় আসক্ত যুবককে নেশামুক্ত করার কাজে আমরা সময় দিতে চাই না। কেবল ব্যাক্যালাপের মধ্যেই আমাদের কর্ম সীমাবদ্ধ থাকে। ময়দানে নেই।
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর যুবশাখা ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ দেশের তরুণ ছাত্র ও সর্বসাধারণ যুবশক্তিকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জান্নাত পিয়াসী যুবশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে নামে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ বলেন, (হে বিশ্বাসীগণ) তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা সংঘবদ্ধভাবে মানুষকে ভাল কাজে অনুপ্রাণিত করবে আর অন্যায় কাজে নিষেধ করবে। তাহলেই তোমরা সকলকাম হবে’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। ভাল কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করার জন্যই ‘যুবসংঘ’-এর জন্ম। এখানে যুবকরা হতাশায় ভুগবে এমন অবকাশ নেই। যে যুবকরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে উঠবে তার মধ্যে কোন হতাশা থাকতে পারে না। বরং এতে আছে উদ্দীপনা, আছে জাগরণ, আছে জান্নাতে যাওয়ার সুমহান প্রেরণা। এখানে যুবকেরা যাবতীয় অপকর্ম থেকে বিরত থাকে। শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত জীবন যাপন করার কাজে ব্যস্ত থাকে। সর্বপরি জীবনটাকে সফল ও স্বার্থক করে গড়ে তুলতে সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালায়। অতএব আসুন! মাদকের ছোবল হতে যুবসমাজকে রক্ষার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করি হতাশা নয়, মাদক নয়, অহীর আলোয় উদ্ভাসিত জীবন গড়াই হ’ল জীবনের প্রকৃত সুখের ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন! আমীন!!