মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৪র্থ কিস্তি)
আব্দুর রহীম
মুখতারুল ইসলাম 1048 বার পঠিত
ভূমিকা : উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ (১৯৪৫-২০২০)। লাহোরের দারুস সালাম গবেষণা বিভাগের প্রধান এবং ই‘তিছাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। তিনি একাধারে সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির, মুহাক্বিক্ব এবং পাকিস্তান আহলেহাদীছ জামা‘আতের গর্ব। তিনি তার অনন্য রচনা ‘তাফসীর আহসানুল বায়ান’-এর জন্য সুপ্রসিদ্ধ। তিনি বিশেষতঃ তাফসীর সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে গেছেন যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় বাতিঘর হয়ে থাকবে। সদ্য প্রয়াত এই মনীষীর কুরআনী খেদমত সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।
কুরআনী খেদমত :
তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হ’ল তাফসীরে ‘আহসানুল বায়ান’। এতদ্ব্যতীত তাঁর শব্দে শব্দে কুরআনের উর্দূ অনুবাদ অন্যতম। তাঁর এই মহৎ কাজে সহযোদ্ধা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল জাববার। তাঁর সহজ ও ছহীহ-শুদ্ধ অনুবাদ, সাবলীল ভাষা চয়ন, হৃদয় ছোঁয়া কুরআনী স্পন্দন, আরবী ভাষা ব্যঞ্জনার উপযোগী শব্দ চয়ন- সকল শ্রেণীর পাঠকের জন্য অত্যন্ত যুগোপযোগী বলে বিবেচিত। ভারতগুরু শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ)-এর ফার্সী কুরআন অনুবাদ এবং তদীয় পুত্রদ্বয় কর্তৃক অনূদিত কুরআনকে অনুবাদের মূল ভিত্তি হিসাবে তিনি স্বীয় অনুবাদকে ঢেলে সাজিয়েছেন।
দ্যা নোবল কুরআন (ইংরেজী)-এর উর্দু অনুবাদ :
ড. তাক্বীউদ্দীন হিলালী এবং ড. মুহাম্মাদ মুহসিন খান কর্তৃক যে দ্যা নোবল কুরআন সঊদী অর্থায়নে প্রকাশিত হয়েছে তা মূলত হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফের উর্দূ অনুবাদ হ’তে সংযোজিত। এর ইংরেজী ফুটনোটের কাজটি করেছেন ড. মুহাম্মাদ আমীন। দ্যা নোবল কুরআন ইংরেজী অনুবাদের শেষে কিছু প্রবন্ধ সংযোজিত হয়েছে যা পূর্বেই দারুস সালাম রিসার্চ সেন্টার থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
সূরা ফাতিহার তাফসীর :
হাফেয ছালেহুদ্দীন ইউসুফের কুরআনী খেদমতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল সূরা ফাতিহার তাফসীর। তাঁর অনন্য কীর্তি ‘আহসানুল বায়ান’-এর টিকা-টিপ্পনী সাধারণ পাঠকের মণিকোঠায় জায়গা করে নেয়। ফলে তিনি পাঠকের মাঝে সাড়া জাগানো গ্রন্থটির পূর্ণাঙ্গ তাফসীর করতে মনস্থ করেন। কিন্তু বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততায় তার এ মহান কাজটি সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকেই তিনি সূরা ফাতিহার পূর্ণাঙ্গ তাফসীর করতে সক্ষম হন এবং পাঠকের ক্ষুধা মেটাতে ও তাদের খেদমতে পেশ করতে কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রাখেন। অবশেষে পাঠকের চাহিদা বিবেচনায় দারুস সালাম রিয়াদ প্রকাশনী ২৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত সূরা ফাতিহার তাফসীরটি ২০০৬ সালে প্রকাশ করে। সূরা ফাতিহার তাফসীরটি ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক রচিত হওয়ায় তাফসীরটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান : তাফসীরে আহসানুল বায়ান প্রাথমিক অবস্থায় একটি সংক্ষিপ্ত উর্দূ ও টিকা সম্বলিত তাফসীর ছিল মাত্র, যাতে তেমন কোন বিশেষ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বলতে ছিল না। সাধারণ পাঠকদের জন্য তাতে ততটুকুই তাফসীর ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সংযোজিত ছিল, যা পাঠকের কুরআন বুঝতে দরকার ছিল। তেমনভাবেই তা সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এর প্রথম সংস্করণ ৮৬০ পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল। কিন্তু যখন সঊদী বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয কমপ্লে∙ এটি ছাপানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন তাতে বিস্তারিতভাবে অনুবাদ, তাফসীর এবং টিকা-টিপ্পনীসহ সবকিছু সংযোজিত হয় এবং এর কলেবর বেড়ে ১৭৬৫ পৃষ্ঠার গ্রন্থে রূপ লাভ করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে উপস্থাপন করা হ’ল-
(ক) তাফসীরটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হ’ল, এতে যাবতীয় যঈফ এবং জাল হাদীছ ও ইসরাঈলী কাহিনীর বিপরীতে ছহীহ, হাসান এবং বিশুদ্ধ গ্রহণযোগ্য হাদীছ দিয়ে তাফসীর করা হয়েছে। ফলে এটি একটি অনন্য বিশুদ্ধ তাফসীর গ্রন্থে পরিণত হয়েছে।
(খ) সাধারণ তাফসীর গ্রন্থে শানে নুযূল ও সূরা সমূহের ফযীলত অনেক বেশী বেশী বর্ণনা করা হয়। যেখানে সনদের বিশুদ্ধতার কোন তোয়াক্কা করা হয় না। কিন্তু তাফসীরে আহসানুল বায়ানে শুধু ঐ সমস্ত শানে নুযূল ও ফযীলত স্থান পেয়েছে, যেগুলো বিশুদ্ধতার মানদন্ডে সম্পূর্ণ গ্রহণীয়।
(গ) এটি বিজ্ঞাননির্ভর এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় পূর্ণ। এতদ্ব্যতীত এতে পূর্ণাঙ্গ টিকা-টিপ্পনীসহ প্রতিটি আলোচনার তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়েছে। ফলে কোন বোদ্ধা পাঠক বা গবেষকের তথ্যসূত্র খুঁজে নিতে মোটেই বেগ পেতে হয় না।
(ঘ) সালাফী মানহাজের প্রধান প্রধান তাফসীর গ্রন্থসমূহ যেমন তাফসীর ইবনে কাছীর, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, আয়সারুত তাফাসীরসহ সকল বিশুদ্ধ তাফসীরের নির্যাস এ তাফসীর গ্রন্থটি। এতদ্ব্যতীত আরবী বা উর্দূ ভাষার বিভিন্ন বাতিল ফেরকা বা মতের কোন অশুদ্ধ তাফসীরকে এর আলোচ্যসূচীতে না রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
(ঙ) আয়াতের মর্মার্থ উদঘাটন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সালাফে ছালেহীনদের ব্যাখ্যাকে চূড়ান্ত ও প্রণিধানযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবেঈ-তাবেঈনের আক্বীদার মূল রূহ দিয়ে প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বারি সিঞ্চন করা হয়েছে। যাতে পাঠকগণ খুব সহজেই খুঁজে নিতে পারে সত্যসেবী সালাফে ছালেহীনের জান্নাতী পথের দিশা। মোটকথা সালাফী মানহাজ ও মাসলাকের আধার এ তাফসীরটি।
এর আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হ’ল, তাফসীরটির সর্বত্র খোদা শব্দটি পরিহার করা হয়েছে। খোদা শব্দের পরিবর্তে মহান আল্লাহর সত্ত্বাগত নাম আল্লাহ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি জুনাগড়ী ছাহেবের তাফসীরে খোদা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখান থেকেও তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে। কেননা সালাফী আক্বীদার সাথে আল্লাহর পরিবর্তে খোদা শব্দটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এক নযরে আহসানুল বায়ান :
হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফের তাফসীর গ্রন্থটি পড়লে কুরআনকে একটি জীবন্ত কিতাব বলে মনে হয়। কেননা কুরআনকে তিনি বাস্তবসম্মত, যুগোপযোগী এবং মানবতার কল্যাণে সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান গ্রন্থ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। মনে হয় যেন তার তাফসীরের প্রতিটি শব্দ ও লাইন অবলীলাক্রমে সমস্যাগ্রস্ত মানবকুলের কথা বলে যায়। তিনি তাঁর তাফসীরে বর্তমান দুনিয়ার অবস্থা, বর্তমান মুসলিম বিশ্ব সমস্যা ও সম্ভাবনা, ফিৎনা-ফাসাদপূর্ণ ও মতবাদ বিক্ষুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর উত্তরণের উপায়, আলোচনা- পর্যালোচনা, সমস্যার স্থান, কাল, পাত্রভেদে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পূর্ণ একটি দিক-নির্দেশনামূলক বর্ণনা তিনি জাতির সামনে পেশ করেছেন।
তিনি মুসলিম জাতিকে এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, দৈনন্দিন জীবনের চলার পথের একমাত্র পাথেয় হ’ল আল-কুরআন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ও মুহূর্তের পূর্ণ দিক-নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র আল-কুরআনে।
তাফসীর নিয়ে কিছু কথা :
পবিত্র কুরআনের তাফসীর বিশুদ্ধ দলীলের ভিত্তিতে রচিত হ’তে হবে। কিন্তু বর্তমানে তাফসীরের বর্ণনাগুলি অনুমান নির্ভর এবং মতভেদে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে কুরআনে বর্ণিত বিগত যুগের জাতি ও গোষ্ঠীর কাহিনীগুলিতে যে ধরণের বাড়াবাড়ি এবং খেয়ানত করা হয়েছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য! পাক-ভারত উপমহাদেশে রচিত তাফসীরগুলিতে উপমহাদেশীয় মানুষের রুচিবোধ এবং ধর্মীয় পরিবেশ- পরিস্থিতির মত অসংখ্য অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। বানোয়াট কেচছা-কাহিনী তাদের মূল উপজীব্য। কিন্তু এর বিপরীতে হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক তাফসীর রচনার এক নব দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
নিম্নে তাঁর তাফসীরের কিছু নমুনা উল্লেখ করা হ’ল।
ক. বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনীর সমালোচনা :
মহান আল্লাহ বলেন,وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِمَّا تَرَكَ آلُ مُوسَى وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘তাদের নবী তাদের বললেন, তার শাসক হবার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সেই সিন্দুকটি সমাগত হবে, যাতে থাকবে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূণ পরিবারের পরিত্যক্ত বস্ত্তসমূহ। ফেরেশতাগণ ওটি বহন করে আনবে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (বাক্বারাহ ২/২৪৮)।
আয়াতে বর্ণিত সিন্দুকটি ছিল ইহূদীদের নিকট বরকতের প্রতীক। ইবনু আববাস, রবী বিন আনাস প্রমুখ বলেন, এর মধ্যে হারূণ ও মূসার লাঠি, তাদের কাপড়-চোপড়, তাওরাতের ফলক সমূহ ইত্যাদি সংরক্ষিত ছিল। আমালেকা সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন ইহূদীদের তাড়িয়ে দিয়ে বায়তুল মুক্বাদ্দাস দখল করে, তখন সিন্দুকটি তারা রেখে দেয়। অতঃপর তালূতের শাসক নিযুক্তির নিদর্শন হিসাবে ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমে উক্ত সিন্দুক উঠিয়ে নিয়ে চলে আসে এবং তালূতের সামনে এনে রেখে দেয়, যা সকলে প্রত্যক্ষ করে। তখন সবাই তাকে শাসক হিসাবে মেনে নেয় (ইবনু কাছীর)।
কিন্তু পরবর্তীতে সিন্দুকটিতে বরকতের নামে কত যে কপোলকল্পিত কাহিনী রচিত হয়েছে তার হিসাব কে রাখে। বনু ইস্রাইলী যুগের সিন্দুকটি নিয়ে অনেক তাফসীরকারক নবী করীম (ছাঃ) ও উম্মতে মুহাম্মাদীর স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ ব্যাখ্যা করে থাকেন। শুধু তাই নয় বুযুর্গ খ্যাত ভন্ড পীরেরা পীর-মুরীদী খেলায় মেতে উঠে এবং তারা বিপদে পতিত ও কষ্টক্লিষ্ট মানুষদেরকে বরকত দেওয়ার নাম করে তা দেখার জন্য অনেক গল্প কাহিনী বর্ণনা করেন। আর মানুষরা তাদের ফয়েয হাছিল করার জন্য পাগলপারা হয়ে অনেক দূর থেকে এসে তাদের পায়ের তলায় সিজদায় পড়ে যায়। অথচ এসব কাহিনীর ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই।
নবী পাগল কোন কোন মানুষ রাসূল (ছাঃ)-এর জুতার আদলে প্রতীকী জুতা বানিয়ে বরকত হাসিলের হাস্যকর খেলায় মেতে উঠে। তারা প্রতীকী জুতাকে নানা ধরণের নতুন নতুন মিথ্যা কাহিনীর আবরণে ঢেকে নববী জুতার আবেগ আবহ সৃষ্টি করে। বাড়ির এক কোণে সেই জুতা লটকিয়ে রেখে বৈষয়িক যাবতীয় চাওয়া পাওয়া ও মুশকিলে আসান বা সকল সমস্যার সমাধাকারী অসীলা হিসাবে গণ্য করে। আর তা ব্যবহারের বিভিন্ন তরীকা ও মতলববাজী তো রয়েছেই। পাশাপাশি তারা পীর-বুযুর্গদের কবরে নযর-নেওয়ায দেওয়ার মাধ্যমে বরকত হাছিলের প্রাণান্তকর চেষ্টা করে থাকে। পীরের কবর ধুয়ে-মুছে ছাফ করা, কবর ধোয়া পানিকে বরকতের পানি মনে করা, পীর সাহেবের কবর ধোয়াকে বায়তুল্লাহ কা‘বাকে ধৌত করার সমান গণ্য করা ইত্যাদি। তারা কিভাবে এ ধরণের দুর্গন্ধময় নোংরা পানিকে বরকতী পানি মনে করতে পারে? তারা বেমালূম ভুলে যান যে, গায়রুল্লাহর নামে এসমস্ত গর্হিত কর্মকান্ড স্পষ্ট শিরক এবং ইসলামী শরী‘আত পরিপন্থী কাজ।
খ. সকল ধর্মকে একই ধর্ম গণ্য করার প্রতিবাদ :
বর্তমান দুনিয়ায় আন্তঃধর্মবাদ নামে নতুন মতবাদের জন্ম হয়েছে, যার মূল কথা হ’ল সকল ধর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। অতএব যে কোন একটি ধর্ম অনুসরণ করলেই ধর্ম পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যায়। এই মতবাদের প্রবক্তারা বলতে চান যে, সকল ধর্মের অভীষ্ট লক্ষ্য (goal) এক, আর তা হ’ল মানব সেবা। এজন্য কোন একটি ধর্মকে অন্য কোন ধর্মের উপরে শ্রেষ্ঠ মনে করা বা প্রাধান্য দেয়া অনুচিত। শান্তিময় ও নিরাপদ দুনিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক ধর্মকে এক ও অভিন্ন গণ্য করা ও গুরুত্ব দেয়া যুক্তিযুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিন হয়েছে এবং ইহূদী, নাছারা ও ছাবেঈদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রভুর নিকটে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/৬২)।
এ দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিক যুগের অনেক বড় বড় মুসলিম বিদ্বান সূরা বাক্বারাহ-এর ৬২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ধোঁকায় পতিত হয়েছেন। প্রকারান্তরে তারা কুরআনের অত্র আয়াতের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়েছেন। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ বলেছেন, কিছু কিছু মুফাসসির আয়াতটির ব্যাখ্যায় মারাত্মক ভুলে পতিত হয়েছেন। আয়াতটি দিয়ে তারা সকল ধর্ম মৌলিকভাবে একই ধর্ম বলার নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন। তাদের কূটকৌশল এবং অপচেষ্টা কুরআন বিকৃতির নামান্তর। তারা এই আয়াত দ্বারা আরো বলতে চান যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর ঈমান আনা যরূরী নয়। বরং যারা যে দ্বীন বা ধর্মমতের উপরে আছে, ঈমান এনেছে এবং ভাল আমল করেছে; তারা সকলে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং আল্লাহর দরবারে নাজাত পেয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এটি নিছক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা স্পষ্টতই শয়তানের ঈমান ছিনিয়ে নেওয়ার ফাঁদ। কেননা আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, ঠিক এর পূর্ববর্তী আয়াতগুলিতে পথভ্রষ্ট ইহুদীদের শাস্তির ব্যাপারে বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। তবে ইহুদীদের মধ্যে যারা তাওহীদপন্থী ছিল তাদের কথা ভিন্ন। শুধু ইহুদী নয়, এ কথা খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা সমসাময়িক নবীদের প্রতি ঈমান এনেছে; তাওহীদে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, সৎ আমল করেছিল; আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, জান্নাত, জাহান্নাম এবং আখেরাত ইত্যাদি ঈমানের বুনিয়াদী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস যাদের ছিল, তারা মূলতঃ তাওহীদপন্থী ছিল। এতে কোন সন্দেহ নাই। আজকের যুগেও একজন মুসলমানকে আল্লাহ, তদীয় রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ), কিতাবসমূহ, ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখতে হবে, নচেৎ সে প্রকৃত মুসলিম নয়। শুধু মুসলমান নয়, এমনকি ইহুদী, খ্রিস্টান, মূর্তিপূজক, মুশরিক যেই হোক না কেন, তাদেরকে অবশ্যই রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রিসালাতে সাক্ষ্য দেওয়ার বিকল্প নাই। রাসূল (ছাঃ)-এর রিসালাতে বিশ্বাস না করলে সে কখনো জান্নাত লাভে ধন্য হবে না। অত্র আয়াত মূলতঃ এসেছে পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের মধ্যে যারা তাওহীদপন্থী ছিল, তাদের প্রাপ্য পুরস্কার সম্পর্কে।
গ. সূদ সম্পর্কে কিছু অপব্যাখ্যার জবাব :
কুরআনে সূদ সম্পর্কে পরিস্কারভাবে বিবৃত হয়েছে। যেকোন ধরণের সূদ ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। বর্তমানে অর্থনীতিবিদরা সূদকে জায়েয করার নানান ফন্দী এঁটেছে। তারা বলতে চায় যে, সূদেরও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এমনকি তারা বলতে চায় যে, সূদ ছাড়া বর্তমান দুনিয়া অচল। ফলে তারা সূদ খাওয়ার মধ্যে মানবতার কল্যাণ খুঁজে পান। শুধু তাই নয়, মানব সভ্যতা যদি আরাম-আয়েশে, স্বাচ্ছন্দ্যে দুনিয়ায় বাঁচতে চায়, তাহলে সূদ-ই হ’ল মানবতার মুক্তির সমাধান।
মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ‘যারা সূদ ভক্ষণ করে, তারা (ক্বিয়ামতের দিন) দাঁড়াতে পারবে না জ্বিনে ধরা রোগীর ন্যায় ব্যতীত। এর কারণ এই যে, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় তো সূদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সূদকে হারাম করেছেন। অতঃপর যার নিকটে তার প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ এসে গেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তার জন্য পিছনের সব গোনাহ মাফ। তার (তওবা কবুলের) বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। কিন্তু যে ব্যক্তি পুনরায় সূদ খাবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)।
হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ অত্র আয়াতের তাফসীরে স্পষ্টভাবে সকল প্রকার সূদকে হারাম ও নাজায়েয ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, রিবার শাব্দিক অর্থ হ’ল অতিরিক্ত, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া। ইসলামী শরী‘আতে রিবাল ফাযল, রিবান নাসীয়াহ নামে দু’ধরনের সূদের অস্তিত্ব রয়েছে।
রিবাল ফাযল সাধারণতঃ ছয়টি জিনিসের লেনদেনে কম বা বেশী, নগদ বা বাকী, পূর্ণ বা অর্ধেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যা পূর্ণাঙ্গভাবে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন গমের লেনদেন গমের মাধ্যমে হওয়া। হাতে হাতে লেনদেন অথবা কম বা বেশী, অথবা হাতে হাতে লেনদেনে অর্ধেক নগদ এবং অর্ধেক বাকীতে, তবুও তা সূদ।
রিবা নাসিয়াহ ব্যাখ্যায় উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, একশ টাকা কাউকে দেওয়া হ’ল এবং ফেরত নেওয়ার সময় দাতা একশ পঁচিশ টাকা আদায় করে নিল। অথবা এর সাথে সময় জুড়ে দিয়ে বেশী পরিমাণ অর্থ আদায় করে নেওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً فَهُوَ رِبًا ‘কর্য বা ঋণ থেকে উপকার ভোগ করাটাই হ’ল সূদ’।[1]
ব্যক্তিগত হৌক বা ব্যবসায়িক পণ্যের মাধ্যমে লেনদেন হৌক সূদ সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, আমাদের জাহেলী সমাজে উভয় প্রকার সূদের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। ইসলামী শরী‘আতে যাবতীয় সূদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এজন্য আধুনিক যুগের ধ্বজাধারী অনেকে বলেন, কমার্শিয়ালভাবে ব্যাংক থেকে সূদ নেয়া জায়েয। আর ব্যাংকের বাড়তি অর্থকে তারা সূদ-ই মনে করেন না। তাদের যুক্তি হ’ল এটা তো ব্যবসার মত। আর এ থেকে ব্যাংকও উপকৃত হচ্ছে। অতএব দোষটা কোথায়? এ সমস্ত নামধারী পন্ডিতদের চোখে ব্যাংকের অবৈধ সূদী টাকা সূদ বলে বিবেচিত হয় না। অথচ মহান আল্লাহর নিকট এগুলি সবই সূদ।
যারা ব্যবসা করে তাদের ব্যবসায় লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন থাকে। কিন্তু সূদখোরেরা ব্যাংকের টাকায় লাভের স্বপ্নে বিভোর থাকে। অনেক সময় সূদখোরদের ব্যবসায় ধ্বস নামলে পুরো টাকাই ব্যাংককে ফেরত দিতে হয়। তখন তাদের পথে বসা ছাড়া কোন গত্যান্তর থাকে না। তাহলে মানুষের প্রতি এমন প্রকাশ্য যুলুমকে ইসলামী শরী‘আত কিভাবে বৈধ বলতে পারে?
ইসলামী শরী‘আতে নিজের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, ভাই-বোনকে বিনা লাভে ছাদাক্বা করতে হয়। যেখানে শুধু আখেরাতের লাভের আশায় একজন মুমিন বান্দা তা করে থাকে। তাতে দুনিয়াবী কোন স্বার্থই থাকে না। ফলে ইসলামী সমাজ পৃথিবীবাসীর সামনে ভালাবাসা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি, পরস্পর রহমদিল ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অপরপক্ষে সূদ ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব ও স্বার্থপরতায় ভরা এক অসুখী সমাজ উপহার দিয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা অসুস্থতা, দুর্বলতা, ক্ষুধা, দরিদ্রতা ও বেকারত্ব জিইয়ে রেখে মানবসমাজকে ক্লান্ত করে তুলেছে। দুনিয়াদার সূদী কারবারীদের এক্ষেত্রে কি বলার আছে? তবে কি তাদের মত ইসলামী শরী‘আতও এমন নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ মানুষকে শিক্ষা দিবে? সুতরাং ইসলামী শরী‘আত সূদের নামে মানুষের উপর যাবতীয় যুলুম হারাম করেছে। সেটি ব্যবসায়িক যুলুম হৌক বা ব্যক্তিগত যুলুম হৌক না কেন।
ঘ. আধুনিকতাবাদীদের মদের নিষেধাজ্ঞায় আপত্তির জবাব :
পবিত্র কুরআন মাজীদে মদকে প্রথমে পর্যায়ক্রমে হারাম অতঃপর সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত এবং হাদীছগুলি বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট। আধুনিকতাবাদীরা বলছেন, হারাম শব্দটি মদের জন্য ব্যবহৃত হয়নি। শুধুমাত্র নীতিজ্ঞান ও চারিত্রিক বিষয়াদির দিক থেকে মাদকতা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী ও শুভাশুভ নির্ণয়ের তীর সমূহ নাপাক ও শয়তানী কাজ। অতএব তোমরা এসব থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও’ (মায়েদাহ ৫/৯০)।
অত্র আয়াতের মাধ্যমে হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ আধুনিকতাপন্থী ও কুরআন-সুন্নাহ বিরুদ্ধবাদীদের অপবাদের কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি হ’ল মদ হারামের চূড়ান্ত আয়াত। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মদ তিনবার হারাম করা হয়। প্রথম হ’ল রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পর লোকেরা মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নাযিল হয়, قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا ‘এ দু’য়ের মধ্যে কঠিন পাপ ও লোকদের জন্য কিছু কল্যাণ রয়েছে। তবে এ দু’টির পাপ তার উপকার অপেক্ষা অধিক গুরুতর’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)। এরপরেও লোকেরা কিছু কিছু মদ খেতে থাকে। এমতাবস্থায় একদিন জনৈক ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতে ইমামতি করার সময় কেরাআতে গোলমাল করে ফেলে। তখন আয়াত নাযিল হয়, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُوْلُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেদের কথা বুঝতে পার’ (নিসা ৪/৪৩)। উল্লেখ্য যে, বাক্বারাহ ও নিসার আয়াত দু’টি নাযিল হলে প্রতিবারে ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِى الْخَمْرِ بَيَانًا شَافِيًا ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে মদের ব্যাপারে পূর্ণভাবে বর্ণনা করে দিন’! এরপরে কঠিনভাবে মায়েদাহ ৯০-৯১ আয়াত দু’টি নাযিল হয়।
তখন ওমর ফারূক (রাঃ) বলে ওঠেন, انْتَهَيْنَا ‘আমরা বিরত হ’লাম’।[2] মদ্যপানের পরিমাণ কম হৌক বা বেশী হৌক সবটা হারাম। জুয়ায় টাকার লেনদেন হৌক বা না হৌক, সর্বাবস্থায় হারাম। ‘বেদী’ বলতে ঐ পাথর বা মূর্তিকে বলা হয়, যেখানে গিয়ে পূজারীরা তাদের পূজার পশু কুরবানী করে। ‘আযলাম’ ঐসব তীরকে বুঝায়, যেগুলির মাধ্যমে লোকেরা তাদের কোন কাজের মঙ্গলামঙ্গল নির্ধারণ করত (ইবনু কাছীর)। আলোচ্য আয়াতে মদ ও জুয়াকে একইভাবে হারাম করা হয়েছে এ কারণে যে, পরিণামের দিক দিয়ে দু’টিই সমান। দু’টিই মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত থেকে গাফেল করে দেয় এবং দু’টিই মানুষের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে (কুরতুবী)।
সালাফে ছালেহীনরা মদের এ আলোচনা থেকে বুঝতে পারলো যে, মদ আমাদের জন্য চিরতরে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু নামধারী আধুনিকপন্থীরা বলে আল্লাহ কোথায় মদকে হারাম করেছেন? হায় আফসোস! মদ পান করা শয়তানী কাজ, অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। চোখ থাকতে অন্ধদের এ সত্য উপলব্ধি কোথা থেকে আসতে পারে? এ তো কিছুর পরেও এ সমস্থ দলীল-আদীল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট নয়?
তবে কি তারা বলতে চায় যে, মহান আল্লাহ অপবিত্র। তিনি শয়তানী এবং অপবিত্র কাজ পসন্দ করেন অথবা মহান আল্লাহর নিকট নোংরামী, অপবিত্র সকল প্রকার কাজ
জায়েয। আর এজন্য তিনি এগুলি থেকে শুধুমাত্র দূরে থাকার জন্য আদেশ করেছেন। তবে কি যাবতীয় মদপান, শয়তানী কর্মকান্ডের মধ্যেই মানবতার যাবতীয় কল্যাণ নিহিত রয়েছে? ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেঊন! (চলবে)
ড. মুখতারুল ইসলাম
লেখক : কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ।
[1]. ফায়যুর ক্বাদীর শারহুল জামেঊছ ছগীর ৫/২৮ পৃঃ।
[2]. আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৩৬৭০; তিরমিযী হা/৩০৪৯; নাসাঈ হা/৫৫৫৫; ইবনু কাছীর।