হিজাব যেভাবে ইসলামের পথ দেখাল
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
দেলোয়ার হোসাইন 10021 বার পঠিত
নিশ্চয় প্রত্যেকটি
মানুষের দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে নানা ধরণের চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও নানাবিধ
আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। এর রকমফেরের কোন শেষ নেই। আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের
জন্য মানুষের মনে নানামুখী উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন আকুলিবিকুলি করতে থাকে। আর
এটাই স্বাভাবিক যে, মানুষ স্বভাবগতভাবে আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নগুলো তড়িৎ
করতে ও সফল ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে নানান পথ ও পন্থা
বেছে নেয়। কিন্তু জীবনের বিস্তীর্ণ ময়দান এমন একটি যুদ্ধক্ষেত্র যাতে রয়েছে
নানা রকম কষ্ট-ক্লেশ, বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي كَبَدٍ ‘নিশ্চয়ই আমরা সৃষ্টি
করেছি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে’ (বালাদ ৯০/৪)। এ বন্ধুর
পথ পাড়ি দিতে অনেকেরই স্বপ্নভঙ্গ হ’তে পারে, অনেকের স্বপ্ন ম্লান বা ফিকে
হয়ে যেতে পারে। আবার কারো স্বপ্ন ধরা দেয়া বাস্তবে।
লক্ষ্যণীয় হল, যখনই দুনিয়ার সফলতা মানুষের হাতে ধরা দেয় সাধারণত তখনই সে আখেরাত থেকে বিমুখ হ’তে থাকে। যার ফলে দুনিয়াবী জীবনে সফলতা সত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে সে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হ’তে থাকে। ফলে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়।
দুনিয়ার জীবন ক্রমান্বয়ে খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আর ব্যক্তির মান-মর্যাদা, সুনাম-সুখ্যাতি, সফলতা, ধন-সম্পদ অর্জন ও পদমার্যাদা তো তখনই সফল বাস্তবায়ন হয় যখন সে পরিপূর্ণরূপে ঈমানী পোষাক পরিধান করে অতিশয় দয়াবান প্রভুর আনুগত্যে প্রবেশ করে। একজন মুসলিম যুবকও এর ব্যতিক্রম নয়। অতএব সব সময় দুনিয়ার বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও সংকীর্ণতার মধ্য দিয়েই যৌবন অতিবাহিত হয়। নিম্নে একজন মুসলিম যুবকের সফলতার সোপান সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।
১. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পূর্ণ আস্থা, উত্তম ধারনা পোষণ ও তাঁর রহমতের আশায় বুক বাঁধা:
যখন কোন যুবক তার রিযিকের ক্ষেত্রে ও নিজের সকল বিষয় আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করার ব্যাপারে পূর্ণ আস্তাশীল হয় এবং এ বিশ্বাস পোষণ কর যে, প্রকৃত রিযিকদাতা ও মহা দানশীল কেবল তিনিই। তখন আল্লাহ তা‘আলার তার জন্য রিযিকের দরজা খুলে দেন এবং অকল্পনীয় স্থান থেকে তার জন্য রিযিকের ব্যবস্থা করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا- وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا- ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার আদেশ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন’ (তালাক্ব ৬৫/২-৩)। হাদীছে এসেছে, عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُونَ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزِقْتُمْ كَمَا تُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا- উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তা‘আলার উপর নির্ভরশীল হ’তে তাহ’লে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও রিযিক দেয়া হতো। এরা সকাল বেলা খালি পেটে বের হয় আর সন্ধা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে’।[1]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না’।[2]
তাই হে যুবক বন্ধু! আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা কর যাতে তুমি জীবনে সফল হ’তে পার। আর সাবধান, নিজের মেধা, চেষ্টা ও আমলের উপর আস্থাশীল হয়ে পড় না। কেননা এমনটি করলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। ফলে তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যাবতীয় ভরসার কেন্দ্রস্থলই হলো মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা।
২. সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা :
যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হলো সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা। কেননা ছালাত সকল কল্যাণের চাবিকাঠি ও মুসলিম জীবনে সকল নেক কাজের উৎস এবং বরকত লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি। আর (জান্নাতের) শুভ পরিণাম তো কেবল মুত্তাক্বীদের জন্যই’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ-‘এবং ছালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ছালাত যাবতীয় অশ্লীলতা ও গর্হিত কর্ম থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই হ’ল সবচেয়ে বড় বস্ত্ত। আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা করে থাক’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।
হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ فُلاَناً يُصَلِّى بِاللَّيْلِ فَإِذَا أَصْبَحَ سَرَقَ. قَالَ إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا يَقُولُ. আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) ছালাত পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যা তুমি বলছ’।[3]
অতএব যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের পাবন্দ হয়, সে তার জীবনে বিস্ময়কর প্রভাব লক্ষ্য করে। সুতরাং হে যুবক ভাই! তুমি ছালাত আদায়ের প্রতি যত্নবান হও যাতে করে তুমি দ্বীন ও দুনিয়ায় সফলকাম হ’তে পার।
৩. মহা মহীয়ান আল্লাহর নিকট দো‘আ প্রার্থনা করা :
অতি দয়ালু, বদান্য, দানশীল মহান প্রতিপালক আল্লাহকে তাঁর ছিফাতী নাম ও গুণাবলীসহ দো‘আ প্রার্থনা করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা বাঞ্চনীয়। কেননা দো‘আ মানুষের রিযিক বৃদ্ধি ও কষ্ট দূর করার অন্যতম একটি মাধ্যম। নবী করীম (ছাঃ) জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অধিক দো‘আর আমল করতেন ও ছাহাবীদের তা‘লীম দিতেন। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِى الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ. আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) অধিকাংশ সময়ই এ দো‘আ পড়তেন, اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِى الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘হে আমাদের রবব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর’।[4]
আর সালাফে ছালেহীন তো প্রত্যেকটি বস্ত্ত আল্লাহর কাছে থেকে চেয়ে নিতেন। এমনকি চতুষ্পদ জন্তুর খাবার ও নিজের খাবারের লবনটুকুও পর্যন্ত চেয়ে নিতেন।
৪. পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা :
পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা ও কথাবার্থা ও কাজ কর্ম দ্বারা তাদের প্রতি ইহসান করা ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা ও তাদের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করার ব্যাপারেও সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং তাদেরকে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী রাখা এবং তাদেরকে পরিপূর্ণরূপে শ্রদ্ধা করা বিশেষ করে যখন তারা বার্ধক্যে পৌঁছে যায়।
আল্লাহ বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا-وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا- ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন’ (বানী ইস্রাঈল ১৭/২৩-২৪)।
অন্যত্র হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُمَدَّ لَهُ فِى عُمْرِهِ وَأَنْ يُزَادَ لَهُ فِى رِزْقِهِ فَلْيَبَرَّ وَالِدَيْهِ وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ- আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আয়ুষ্কাল ও রিযিক বৃদ্ধি করতে চাই তবে সে যেন পিতা-মাতা ও আত্মীয়ের সাথে সদাচরণ করে’।[5]
কেননা তাদের প্রতি সদাচরণই একজন মানুষের জীবনে বরকত ও কল্যাণের অন্যতম মাধ্যম। বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত দূর করার ক্ষেত্রে এবং উপায়-উপকরণের অনুকল্যতার ক্ষেত্রে তাদের দো‘আ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করতে চায় আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর বান্দাদেরকে তার অধীনে করে দেন ও তার জন্য সফলতার সকল রাস্তা খুলে দেন। সুতরাং তাদের সাথে সদাচরণ করার প্রতি আগ্রহী হও এবং তাদের সন্তুষ্টির জন্য মূল্যবান বস্ত্ত ব্যয় কর। যাতে করে তোমার ধন-সম্পদ পরিবার-পরিজন চেষ্টা-প্রচেষ্টায় বরকত হয়।
৫. আল্লাহর নিকট অধিক পরিমাণে তওবা, ইস্তেগফার করা : আল্লাহর নিকট অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার ও তওবা করা। কেননা মুসলিম যুবকের ইস্তেগফার তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে এবং রিযিকের দরজা খুলে দেয় ও তার উপর রহমত বর্ষিত হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا- يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا- ‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগিচাসমূহ সৃষ্টি করবেন ও নদীসমূহ প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ৭১/১০-১২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَاللَّهِ إِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً- ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তেগফার ও তাওবা করে থাকি’।[6]
যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে নিজের উপর আবশ্যক করে নেয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুশ্চিন্তা ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত করেন এবং অকল্পনীয় স্থান থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করেন। তাই হে যুবক ভাই! তুমি প্রতিদিন বেশী বেশী ইস্তেগফার করতে থাকে তাহ’লেই তুমি কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারবে।
৬. দান-ছাদাক্বা :
ফকীর-মিসকীনদেরকে দান ছাদাক্বা করা এবং সাধ্যানুযায়ী সাধারণ মানুষকে প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করা। যেমন সুফারিশ, উপদেশ, সঠিক পথ প্রদর্শন, দুশ্চিন্তা মুক্ত করা, ঋণ-পরিশোধ ইত্যাদি। অর্থনৈতিক উন্নতির পিছনে দান- ছাদক্বার বিরাট প্রভাব রয়েছে। যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া করে তার প্রতি আল্লাহও তার দয়া করেন। যেমন তিনি এরশাদ করেন, قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ ‘বল, আমার প্রতিপালক তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রূযী বাড়িয়ে দেন ও সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু (তাঁর পথে) পথে ব্যয় করবে, তিনি তার বদলা দিবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রূযীদাতা’ (সাবা ৩৪/৩৯)।
হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَ اللَّهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ- ‘আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, তুমি ব্যয় কর, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব’।[7] অন্য হাদীছে এসেছে-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন’।[8]
অতএব হে যুবক ভাই লাগাতার অল্প অল্প ছাদাক্বা করার প্রতি আগ্রহী হও যাতে করে তোমার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় বরকত হয় ও যাত্রা শুভ হয়।
৭. পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা :
প্রতিটি কাজের পেছনে পূর্ব পরিকল্পনা, চিন্তা-ফিকির, সুস্পষ্ট কর্মপদ্ধতি ও লক্ষ্যস্থল নির্ধারণসহ দূরদর্শিতা নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যহীন যাবতীয় চেষ্টা-প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত পন্ডশ্রমে পরিণত হয়। অতএব সফল হতে চাইলে সুপরিকল্পিত কর্মের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ চিন্তাশীল ও সুশৃংখল মানুষদের প্রশংসা করে বলেন, الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ- ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে’(আলে-ইমরান ৩/১৯১)।
৮. অলসতা ও অপারগতা প্রকাশ না করা :
কোন কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ’ল সেই কাজে অব্যাহতভাবে লেগে থাকা ও দিন দিন তৎপরতা বৃদ্ধি করা। রিযিক তালাশ করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করা এবং বাপ-দাদার সম্মান ও অন্যের উপকারের প্রতি ভরসা করে অলসতা ও অপারগতার উপর নির্ভর না করা। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى- وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَى- ‘আর মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে। আর তার কর্ম শীর্ঘই দেখা হবে’ (নাজম ৫৩/৩৯-৪০)।
হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِى كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ فَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّى فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا. وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল মু’মিনের চাইতে উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করো এবং আল্লাহর সাহায্য চাও এবং কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। তোমার কোন ক্ষতি হলে বলো না, যদি আমি এভাবে করতাম, বরং তুমি বল, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা ‘লাও’ (যদি) শব্দটি শয়তানের তৎপরতার দ্বার খুলে দেয়’।[9]
অন্যত্র এসেছে, عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِىَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ. যুবাইর ইবনুল ‘আওয়াম থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ র©র্শ নিয়ে তার পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রি করা, ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাচ্ঞা করার লাঞ্চনা হ’তে) রক্ষা করেন, আর তা মানুষের কাছে সওয়াল করার চেয়ে উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক’।[10]
আর যদি তুমি অনর্থক সময় নষ্ট কর এবং আরাম-আয়েশকে প্রাধান্য দাও তাহ’লে তুমি জীবনে সফলকাম হতে ব্যর্থ হবে।
৯. জ্ঞানীগুণীদের পরামর্শ ও জামা‘আতবদ্ধ জীবনযাপন করা:
ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজকর্মের ক্ষেত্রে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ কর যাতে কর্ম পরিচালনায় এমন সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পার যে, সার্বিক পরিস্থিতি তোমার শক্তি-সামর্থ্যের অনুকূলে হয়। আর প্রত্যেকটি যুবকের উচিত হ’ল নিজের উপযুক্ত চাকরী বা অন্য বিশেষ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার পরামর্শ নেওয়া। কারণ পিতা-মাতার মায়া-মহববতভিত্তিক পরামর্শই হলো সন্তানদের সফলতার কেন্দ্রস্থল। মহান আল্লাহ বলেন, وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ- ‘যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ- ‘যদি তোমরা না জানো, তাহ’লে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর’ (নাহল ১৬/৪৩)।
আর সাবধান! শুধুমাত্র নিজের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধোঁকা খেয়ো না। আর মাশওয়ারা পরিত্যাগ করা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। মহান আল্লাহ বলেন, وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُون-َ ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হ’ল সফলকাম’ (আলে-ইমরান ৩/১০৪)।
আর এ জন্যই সাংগঠনিক জীবন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ وَهُوَ مِنَ الاِثْنَيْنِ أَبْعَدُ مَنْ أَرَادَ بُحْبُوحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمِ الْجَمَاعَةَ- ‘তোমাদের উপরে জামা‘আতবদ্ধ জীবন অপরিহার্য করা হ’ল। এবং বিচ্ছিন্ন জীবন নিষিদ্ধ করা হ’ল। কেননা শয়তান বিচ্ছিন্নজনের সাথে থাকে এবং সে দু’জন হ’তে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে লোক জান্নাতের মধ্যে সবচাইতে উত্তম জায়গায় থাকতে চায়। সে যেন জামা‘আতবদ্ধ জীবনযাপন করে’।[11] অতএব যুবক ভাইকে শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে জ্ঞানীগুণীদের পরামর্শ ও জামা‘আতবদ্ধ জীবনযাপনের বিকল্প নেই। আর তা পাওয়া যাবে সাংগঠনিক জীবনের মধ্যেই, অন্য কোথাও নয়।
১০. অনর্থক আড্ডাবাজী পরিত্যাগ করা :
সফল জীবনের জন্য অনর্থক আড্ডাবাজী থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কথায় বলে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়’। জীবনের প্রয়োজনীয় মূল্যবান সময়গুলোকে পড়াশোনা, ব্যবসা বা ভাল কোন কাজে না লাগিয়ে জীবনে বেকারত্বের অভিশাপ ডেকে নিয়ে এসো না। অবশ্যই বেকারত্ব খুব খারাপ। কেননা বেকার যুবক জীবনে কখনো সফল হ’তে পারো না। যদিও সে খুব ধনী হয়। মনে রেখ, প্রত্যেকটি বিষয়ের নিদিষ্ট সীমারেখা রয়েছে।
হে যুবক ভাই! শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে নিজেকে হেফাযত কর। যেমন অবৈধ প্রেম-ভালবাসা, মদ সেবন এবং এ জাতীয় খারাপ বিষয়াদি। কেননা এসমস্ত কাবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া ও তাতে অভ্যস্ত হওয়া তোমার উদ্দিষ্ট বস্ত্তকে নষ্ট করে দিবে। কত যুবক এমন রয়েছে যারা সফলতার শিখরে পৌঁছে গিয়েছে এবং তাদের অনেক বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। আমোদ-প্রমোদ দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে। অতঃপর তাদের পদস্খলন ঘটেছে। ফলে তাদের সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। সুতরাং যখন শয়তান তোমাকে ধোঁকায় ফেলতে চাইবে তখন নিজেকে সংযত রাখ এবং সেখানে থেকে প্রস্থান কর এবং সেখানকার সকল সঙ্গী-সাথীদেরকে পরিত্যাগ কর এবং হালাল জিনিস বেছে নেওয়ার ব্যাপারে কখনো ত্রুটি করোনা।
যুবক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ!
এ যুগে এটি খুবই আফসোসের বিষয় যে, বিধর্মী কাফের- মুশরিকরা দুনিয়ার চাকচিক্যতা, মান-মর্যাদা ও পৃথিবীর কেন্দ্রীয় শাসন ক্ষমতায় নিজেদেরকে অধিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে শক্তি ও নেতৃত্বহারা যুবসমাজ, দিশেহারা জাতি নিজেদের শৌর্য-বীর্য বিসর্জন দিয়ে উন্মাদের মত তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের সর্বশেষ ধ্বংসের প্রহর গুনছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গাফলতির মসনদে বসে দম্ভ ও অসার নীল স্বপ্নের পেছনে দিনাতিপাত করে নিজেদের মূল্যবান সময় ও জীবন দু’টিই নষ্ট করে চলেছে।
সুতরাং যুবক ভাইদের প্রতি প্রশ্ন-
হে যুবক! মাঠে-ময়দানে বলের পিছনে এলোপাতাড়িভাবে লাথি দেওয়া যায় এবং তার প্রতিউত্তরও দেওয়া যায় কিন্তু ছালাত আদায় করা যায় না কেন?
-মুসলমানিত্ব দাবী করা যায় অথচ নিজে ইসলাম থেকে মুক্ত কেন?
-সে মসজিদ জাঁকজমক করার প্রতি আগ্রহী কিন্তু তাকে মসজিদের কাতারে দেখা যায় না কেন?
-সে গান শুনতে ভালবাসে, যা শয়তানের বার্তা। অথচ কুরআনুল কারীম যা আল্লাহ তা‘আলার অহি যা অন্তরের সুস্থতা, মানুষের জন্য রহমত ও হেদায়াত, তা শ্রবণ করা তার সহ্য হয়না কেন?
-গায়ক, নায়ক, খেলোয়াড়দের সকলকে পসন্দ হয় ও তাদের সংবাদ শুনতে মন চায় এমনকি তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নাম পর্যন্ত মুখস্ত থাকে অথচ যেই আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাকে চিনি না কেন?
-সে নির্লজ্জ কবিতার বই ও ভ্রান্ত বর্ণনা পাঠ করে এবং সমস্ত পত্র-পত্রিকা অধ্যায়ন করে যা ধ্বংস ডেকে আনে, অথচ মাসের পর মাস কেটে যায় সে কুরআন স্পর্শ করে না কেন?
-সে উপদেশ শ্রবণ করে কিন্তু উপদেশ গ্রহণ করে না। সত্য দেখে কিন্তু মানে না। উপদেশ গ্রহণকারীদের প্রতি মনোযোগ দেয় কিন্তু যা বলা হয় তা বাস্তবায়ন করেনা কেন?
যুবক ভাইদের প্রতি বিশেষ নছীহত :
(১) দো‘আকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও এবং তার নিকট প্রার্থনা কর যেন তিনি তোমাকে হেদায়াত ও কবুলিয়াতের জন্য সাহায্য করেন এবং গুনাহর প্রতি তোমার আগ্রহকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দেন। আর আল্লাহর নিকট প্রার্থনার জন্য কিছু সময় নির্ধারণ কর যেমন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে এবং আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
(২) যে সমস্ত বস্ত্ত তোমাকে গুনাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখ এবং প্রতিটি নেক কাজ শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য কর এবং ধনী হওয়ার জন্য লালসার পথ থেকে নিজেকে দূরে রাখ। আর এ কথা সর্বদা স্মরণ রাখ যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন কিছু ত্যাগ করে আল্লাহ তাকে আরো উত্তম বস্ত্ত দান করেন।
(৩) দৈনন্দিন কুরআন তিলাওয়াত কর ও পাবন্দির সাথে যিকির-আযকার কর। সাথে সাথে ফরয ও নফল ইবাদতগুলিও পালনে মনযোগী হও।
(৪) তোমার জন্য আবশ্যক হ’ল জ্ঞানীদের সাথে চলাফেরা করা। আর তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা ও সুপরামর্শ অনুযায়ী ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।
(৫) অতীতের যেই বন্ধু-বান্ধব তোমাকে গুনাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের থেকে বিরত থাক। অতঃপর যখন তুমি ভাল দ্বীনদার হবে এবং তোমার সকল দলীল প্রমাণ পাকা-পোক্ত হবে এবং কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হ’লে তার উত্তর দিতে পারবে, তখন তাদেরকে হেদায়াতের পথে আহবান করতে থাক।
(৬) তুমি একটি সময় নির্ধারণ কর যা তুমি ধর্মীয় গান শ্রবণ কিংবা সুস্থ-হালাল বিনোদনে ব্যয় করবে। কেননা এর দ্বারা ঈমান শক্তিশালী হয় এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মযবুত হয়। সাথে সাথে উপকারী জ্ঞানও বৃদ্ধি পায়।
(৭) যখন তোমার আশাপাশের কাউকে হতোদ্যম দেখবে তখন তাদের অবস্থার উপর দয়ার দৃষ্টি দিও। এটা ভেবে যে তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট সকলের জন্য হেদায়াতের প্রার্থনা করবে। আর একথা স্মরণ রাখ যে জান্নাতে কেবল মুমিন আত্মাই প্রবেশ করবে। মহান বলেন, وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)। আর ক্বিয়ামতের মাঠের পাঁচটি প্রশ্নের প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ- ‘ক্বিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট হ’তে সরাতে পারবেনা। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হ’তে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কি কি আমল করেছে? [12]
তুমি কি সঠিকভাবে চিন্তা করেছ যে কেন তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? তুমি কি কখনো কবরের আযাব, ক্বিয়ামতের বিভীষিকা, মীযান ও পুলসিরাত পার হওয়াকে ভয় করেছে? তুমি কি জাহান্নাম নিয়ে চিন্তা করেছ নাকি তা মানুষ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সৃজিত? নাকি জান্নাত প্রবেশের ব্যাপারে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে? তুমি কি পূর্বের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাও?
উত্তর জানার পূর্বে নীরবে অন্তরের সাথে হিসাব-নিকাশ কর তুমি তাকে বল কত দিন নাফরমানীতে লিপ্ত থাকবে হে নাফস! অথচ তুমি প্রতিনিয়ত শুনছো যে অমুক মারা গেছে, আল্লাহর কসম! এক সময় ঐ দিন আসবে যেদিন লোকেরা বলবে যে তুমি মারা গেছ। তুমি নিজেকে বল যে জান্নাতে যেতে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। তুমি নিজেকে বল যে, অমুকে হেদায়াত প্রাপ্ত হ’ল তাহ’লে আমার কি হলো যে আমার কোন নড়াচড়া নেই!
তবে কি তুমি ভাবছো যে, আমার অন্তর আল্লাহমুখী নয় এবং কলব সর্বদা হারামের মহববত ও কামভাবের সাথে জড়িত আর ঈমান অত্যন্ত দুর্বল? এটাই হ’ল দুর্বল ঈমানের পরিচয় যা হারামের মহববত দূর করতে পারে না। তাহ’লে কিভাবে আমরা ঈমানকে শক্তিশালী করবো যার দ্বারা হারামের মহববত দূর করা যায়? জেনে রাখ! তোমার সামনে রয়েছে মৃত্য, অতঃপর হিসাব, অতঃপর জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। সুতরাং নিজের হিসাব-নিকাশ এখনই করে নাও। সময় অতীব সংক্ষিপ্ত। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!
[লেখক : মধ্যনগর, নান্দাইল, ময়মনসিংহ]
[1] . আহমাদ হা/ ২০৫; তিরমিযী হা/২৩৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৪১৬৪; মিশকাত হা/৫২৯৯।
[2] . তিরমিযী হা/২৪৬৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১০৭; মিশকাত হা/৫১৭২।
[3] . আহমাদ হা/৯৭৭৭; মিশকাত হা/১২৩৭।
[4] . বুখারী হা/৬৩৮৯; তিরমিযী হা/৩৪৮৮ মিশকাত হা/২৫৮১।
[5] . আহমাদ হা/১৩৪২৫; মিশকাত হা/৪৯১৮।
[6] . বুখারী হা/৬৩০৭; মিশকাত হা/২৩২৩।
[7] . বুখারী হা/৫৩৫২; মিশকাত হা/১৮৬২।
[8] . বুখারী হা/১৪৪২; মুসিলম হা/১০১০; মিশকাত হা/১৮৬০।
[9]. মুসলিম হা/৩৪; ইবনু মাজাহ হা/৭৯; মিশকাত হা/৫২৯৮।
[10]. বুখারী হা/১৪৭১; ইবনু মাজাহ হা/১৮৩৬; মিশকাত হা/১৮৪১।
[11]. আহমাদ হা/২৩১৯৪; তিরমিযী হা/২১৬৫।
[12] . তিরমিযী হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭।