আল্লাহ কি আমার উপর সন্তুষ্ট?
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 706 বার পঠিত
মাঝে
মাঝে ভাবি, মানুষের কাছে যত ভালো সেজে বসে আছি আল্লাহর কাছে তার খানিকটা
হলেও তো নাজাত পেতাম। একটু বুঝিয়ে বলি। ধরুন, যদি ফেসবুকে আমার
ফ্যান-ফলোয়ারদের বিচার করতে দেওয়া হয়, আমাকে তারা কোথায় রাখতে চায়?
জান্নাতে নাকি কষ্টে? তারা সমস্বরে বলবে জান্নাতে। কেন? কারণ তাদের কাছে
আমাদের কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি নাই বললেই চলে। দিনে যে দুই একটা পোস্ট লিখি,
তাতে খালি ইসলাম আর ইসলাম। একারণে আমাদের ভাবমূর্তি প্রায় ফেরেশতাদের
স্তরে।
এবার আসেন মায়ের কথা। তিনি কিন্তু জানেন আমার ছেলেটা এই এই জায়গায় দুর্বল। হঠাৎ রেগে উঠে। এই করেছে, সেই করেছে কত কি! তার কাছে আমি আর ফেরেশতাদের কাতারে নাই। তবে তিনি বিচার করবেন একচোখা। দোষগুলো ফেলে দিয়ে অবিচার করে আমাকে জান্নাতেই রাখতে চাইবেন। ভালো মন্দ যা-ই করি তারই তো ছেলে! মজার বিষয় হ’ল আমার অনেক খারাপ দিক তিনি জানেনই না। এমনকি চিন্তাও করতে পারেননি কোনদিন!
বাবা? তার কাছে আমি পরিচিত ঠিক মায়ের তিন ভাগের একভাগ। তিনি যেমন ভাল দিক কম জানেন, খারাপ তো আরও কম। তার বিচার ধরে নেওয়া যায় আন্দাজের ভিত্তিতেই হবে।
এরপর ভাই-বোন? বাবা-মায়ের চেয়ে আরেকটু বেশি জানে বৈকি। অবশ্য যদি নিজে থেকে বলি। যাইহোক যেভাবেই জানুক, তাদের বিচারও ঐতিহাসিক ও নৈতিকভাবে আমার পক্ষেই যাওয়ার কথা।
এরপর সন্তান? এরাতো আসলে আমাকে এখনো চিনেই না। ফ্যান-ফলোয়ারদের চেয়েও কম চিনে। বয়স বাড়লে হয়তো অনেকটা বাবা-মায়ের মতই চিনতো। আর তাদের বিচারটাও হ’ত যথারীতি একতরফা।
মানুষের মাঝে মানুষকে সবচেয়ে ভালো চেনে তার স্ত্রী। এজন্য বলা হয়েছে সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। কেন? কারণ সে আমাকে যতটুকু চেনে দুনিয়ায় আর কেউ ততটুকু দেখে না, শোনে না, চেনে না। তথাপিও তার নিকট আমার অনেক কিছুই গোপন। অবশ্য তার বিচারের ব্যাপারে আমি কি খুব ভরসা করতে পারি? লেনদেনের অনেক বিষয়ই তো থেকে যায়। কি না রায় দিয়ে বসে বলা যায় না!
এরপর আসেন বন্ধু বান্ধব। এরা আবার আমাকে অন্যভাবে চেনে। এদের কাছে আমি অনেকটাই প্রকাশ্য। ভালো-মন্দ উভয় দিক। এদের মধ্যে ন্যায়বিচারকরা ভালো বিচার করতে পারবে।
এই যত মানুষের কথা আমি উল্লেখ করলাম, এরমধ্যে সবচেয়ে কম চেনে আমার ফেসবুক বন্ধুরা। কিন্তু বিচার করে সবচেয়ে বেশী তারা! এটাই বাস্তব। আমরা কোন তরীকায়, কোন দলের, কোন আক্বীদার-সব বিষয়েই তাদের একটা জাজমেন্ট আছে। সবচেয়ে কম জানে কিন্তু সবচেয়ে বেশী বিচার করবে এরা। যারা ভালোবাসে তারা খারাপ কিছু ধারণা করে না। যারা মনে মনে ঘৃণা করে তারা ভালো কিছু মনে রাখতে চায় না। তাদের কাছে আমার কোন ওযর-আপত্তি চলবে না। কেন এটা করলাম, কেন বললাম কোন শানে নুযুল দেখবে না। যাইহোক তাদের বিচার আসলে সম্পূর্ণই ধারণার উপর ভিত্তিশীল।
দিন শেষে দেখলাম আসলে কেউ আমাকে প্রপার জাজ করতে পারে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। কারণ তিনি আমাকে দেখেন, যখন কেউ আমাকে দেখে না। তিনি আমাকে শোনেন, যখন কেউ আমাকে শোনে না। তিনি আমার সমস্যাগুলো জানেন। আমার সুবিধাগুলো জানেন। তিনি ছোট থেকে ছোট ভালো কাজগুলো, গণনা করেন; বড় থেকে বড় বিষয়গুলোও গননা করেন। তিনি আমার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমস্ত বিষয় জানেন, বোঝেন। সুতরাং তিনিই একমাত্র এবং একমাত্র সত্তা যিনি আমার ন্যায়বিচার করতে পারেন। সুখের বিষয় হ’ল আল্টিমেটলি তার বিচারই কেবল চিরন্তন আর বাকিদের বিচার দিন-কয়েকের বিষয়।
এখন তিনি আমাকে কোথায় দেখতে চান! আমার তো বিশ্বাস তিনি আমাকে আমার মায়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসেন। আমার মনে হয় তিনি আমাকে আমার ফ্যান-ফলোয়ার থেকেও বেশী ভালোবাসেন। এটা আমার বিশ্বাস। তবে বাস্তবতা হ’ল ভয়। যেহেতু তিনি অন্যায়গুলো জানেন তাই একটা আতংক থেকেই যায়। না জানলে ভিন্ন কথা ছিল। সত্যি কথা বলতে কি তার থেকে আমি উচিৎ বিচার চাই না। আমি চাই তিনি আমাকে আমার মায়ের চেয়েও অধিক একরোখা বিচার করে জান্নাতে নিয়ে যাক। আমার মা যেমন আমার ভুলগুলোকে, অন্যায়গুলোকে দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না তেমনি।
সুখের বিষয় হ’ল তিনি যদি একরোখা বিচার করেনও কেউ তাকে আঙগুল তুলে বলতে পারবে না, এটা কেন করলেন! দিন শেষে এটা বড়ই আশার বিষয় যে, তিনি তার বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। আহা কত ভালো হ’ত যদি দুনিয়াতেই তিনি জানিয়ে দিতেন, ‘দেখো তোমাকে আমি ভালোবাসি’। তাহলে আমি সেটা আমার ওয়ালে, দেয়ালে সেটিয়ে রাখতাম। টিশার্টে ডিজাইন করে নিতাম। আর দুনিয়া জুড়ে গল্প করে বেড়াতাম ‘জানো! আমার কোন চিন্তা নাই, তিনি আমাকে ভালোবাসেন’!!
এসএম নাহিদ হাসান, ঢাকা।