ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও তার অসারতা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 950 বার পঠিত
[ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আমাদের সমাজে একশ্রেণীর বোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত একটি বিষয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে উভয়দিকে রয়েছে শক্তিশালী গোষ্ঠী। বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসন প্রভৃতি কল্পিত গুপ্ত দল সম্পর্কে প্রায়শই তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠে। একদল আলেমও এর সাথে যোগ দিয়ে ইমাম মাহদী, দাজ্জাল, ক্বিয়ামত প্রভৃতি নিয়ে আশ্চর্য সব ভবিষ্যৎবাণী করে থাকেন। করোনা মহামারী নিয়েও কম ডালপালা গজায়নি। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দি নিউইয়র্ক টাইমস (২০.১১.২০)-এ When the World Seems Like One Big Conspiracy (গোটা পৃথিবীকেই যখন ষড়যন্ত্রের কবলে বলে মনে হয়) শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত ইসরায়েলী গ্রন্থকার ও তেলআবীব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি রচিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুবসংঘ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল-গালিব -নির্বাহী সম্পাদক]
বিশ্বে অনেক রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা শোনা যায়। ষড়যন্ত্র কথাটি শুনলে মনের মধ্যে এক ধরণের টানটান উত্তেজনা অনুভূত হয়। বারবার মনে উকিঁঝুকি মারতে থাকে, কি জানি হয়ত গোটা পৃথিবীই কোন এক ধরণের ভয়ানক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে আছে। এ বিষয়ে মজাদার আলোচনার ইতিবৃত্ত বলতে গেলে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত ‘গ্লোবাল কেবাল তত্ত্ব’ (Global Cabal Theory) একবার ঢুঁ মেরে আসতে হবে।[1] পর্দার ওপাশ থেকে একদল লোক বিশ্বের সব কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রকৃত প্রস্তাবে পৃথিবীটা তারাই চালায়, এরকম কোনো তত্ত্বে বিশ্বাস করে কিনা মর্মে সম্প্রতি বিশ্বের ২৫টি দেশের ২৬০০০ মানুষের উপর একটি জরিপ চালানো হয়েছে।
এতে ৩৭% আমেরিকান মনে করেন, ‘এধরনের কিছু সত্যিই আছে বা এমন কিছু থাকা সম্ভব’। ঠিক এমনই মতামত জানিয়েছেন ৪৫% ইটালিয়ান, ৫৫% স্প্যানিশ এবং প্রায় ৭৮% নাইজেরিয়ান।
একথা সত্য যে, QAnon-ই[2] প্রথম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাযির করেনি, বরং এধরনের তত্ত্ব হাজার বছর ধরে বিরাজ করছে। উপরন্তু এসব তত্ত্বের কোন কোনটা তো বিশ্ব ইতিহাসে ব্যাপক প্রভাবও ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ নাৎসিবাদের কথা বলা যেতে পারে। নাৎসিবাদকে সাধারণত কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসাবে দেখা হয় না। কারণ এটা যেহেতু একটা গোটা দেশের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আমরা এটাকে সাধারণভাবে একটা ভাবাদর্শই (Ideology) মনে করি, যদিও সেটি মন্দ।
এদিকে নাৎসিবাদও (Nazism) আবার গড়ে উঠেছে এন্টি সেমিটিক[3] (ইহুদি-বিরোধী) একটি মিথ্যা তত্ত্বের উপর ভর করে। তত্ত্বটি হ’ল, ‘আড়ালে থাকা একদল ইহুদি ধনকুবের বিশ্বটা চালায় আর আর্য জাতিকে তারা বিনাশ করতে চায়। তারাই রুশ বিপব ঘটিয়েছে; পশ্চিমা গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে; গণমাধ্যম আর ব্যাংকব্যবস্থা ওদেরই কব্জায়। একমাত্র হিটলারই ওদের ষড়যন্ত্র ধরতে পেরেছেন। আর কেবল তিনিই পারেন ওদেরকে প্রতিহত করে মানবতাকে রক্ষা করতে। এসব তত্ত্বের কমন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে কেন এগুলো এত আকর্ষণীয় ভিত্তিহীন হওয়া সত্ত্বেও।
কাঠামো :
এসব তত্ত্ব বলে থাকে, একটি গুপ্ত সঙ্ঘ বহু কিছু ঘটাচ্ছে যদিও আমরা সেসবের যৎসামান্যই জানতে পারছি। অবশ্য এই সঙ্ঘের পরিচয় একেকজনের কাছে একেক রকম। যেমন, কারো কারো ধারণা, পৃথিবীটা চালায় ফ্রিম্যাসন, ডাকিনীবিদ (witch), বা শয়তানি সঙ্ঘ (Satanists)। আবার কারো মতে, এরা হ’ল এলিয়েন বা মানুষরূপী একধরনের সরীসৃপ বা এধরনেরই কোনো গোষ্ঠী।
সঙ্ঘের পরিচয়ে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও, সবার মূল বক্তব্য কিন্তু একইরকম। আর তা হ’ল: আমাদের চারপাশে ঘটে চলা প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে সবার অলক্ষ্যে থাকা একটি গোপন সংগঠন।
মজার ব্যাপার হ’ল, এসব তত্ত্ব খুব সহজে পরস্পর বিরোধী আদর্শকে এক মঞ্চে হাযির করতে পারে। যেমন নাৎসিবাদ দাবি করে, ‘আপাতদৃষ্টিতে কমিউনিজম আর পুঁজিবাদকে চরম বিরোধী বলে মনে হয়, তাই না?-- ভুল। আসলে ইহুদি চক্রটি আমাদের কাছ থেকে এমন ভাবনাই আশা করে। এমনিভাবে আপনারা হয়ত মনে করেন যে, বুশ পরিবার[4] আর ক্লিনটন পরিবার[5] বোধহয় আজন্ম শত্রু। কিন্তু সত্য হ’ল, তারা আসলে নাটক মঞ্চস্থ করছে। আর ভিতরে ভিতরে ঠিকই একই পার্টিতে গিয়ে মাস্তি করছে।
এসব দাবি থেকে আরো একটি তত্ত্ব বেরিয়ে আসে। তা হ’ল, গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের মাধ্যমে আমাদেরকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। উপরন্তু যেসব বিশ্বনেতাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি, তারা আসলে প্রকৃত ক্ষমতাবানদের হাতের পুতুল।
কেন এত আকর্ষণীয়?
ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর সুবিধা হ’ল, এগুলো বহু মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। কারণ, এগুলো আমাদের চারপাশে ঘটে চলা অসংখ্য জটিল ঘটনার খুব সরল ব্যাখা দিতে পারে। যুদ্ধ, সহিংসতা, দারিদ্র্য আর মহামারীর প্রকোপে আমাদের জীবন প্রতিনিয়ত বিঘ্নিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি যদি বিশেষ কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে থাকি, তাহলে আমার পরম আনন্দ হয় এটা ভেবে যে, আমি সব জানি।
সিরিয়ার যুদ্ধ? ওখানে আসলে কী হচ্ছে তা বুঝার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস জানবার কোনো দরকার নেই। কারণ এটা হ’ল সেই বিরাট ষড়যন্ত্রের অংশ। ৫-এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন? (এটা বুঝার জন্য) ফিজিক্স অব রেডিও ওয়েভস নিয়ে গবেষণা করার দরকার নেই। কারণ এটা হচ্ছে ষড়যন্ত্র। করোনা মহামারী, বাস্তুসংস্থান, বাদুর বা ভাইরাসের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটা নিঃসন্দেহে সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।
এভাবেই এক কল্পিত ষড়যন্ত্রের চাবি দিয়ে বিশ্বের সব রহস্যের দ্বার উন্মোচন করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, এটা আমাকে সেই সীমিতসংখ্যক মানুষের দলভুক্ত করে যারা কিনা সমঝদার! ফলে আমি হয়ে যায় আর দশজন মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান আর বিচক্ষণ! এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এটা আমাকে শিক্ষাবিদ-সাংবাদিক বা রাজনীতিবিদের মতো সমাজের বুদ্ধিজীবী আর অভিজাত শ্রেণীরও ঊর্ধ্বে জায়গা করে দেয়। কারণ, তাদের চোখ যা এড়িয়ে যায় বা তারা যা লুকোতে চায়-- আমি সেসবও দেখতে পাই!
এ তত্ত্বের অসারতা কোথায়?
এসব তত্ত্বের বেশ কিছু মৌলিক ক্রুটি আছে। যেমন এগুলোর মতে, ইতিহাস একদম সরল পথে চলে। এ তত্ত্বের উল্লেখযোগ্য দাবি হ’ল, বিশ্বের ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সোজা। কারণ, যুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত বিপ্লব বা মহামারী পর্যন্ত সবকিছু হাতে গোনা কিছু লোক আগে থেকেই জানে এবং তারা সেটাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে।
এমনিভাবে দাবাবোর্ডের সব ঘুঁটি ঐ চক্রটিই নাড়াচাড়া করে। যেহেতু তারাই ভাইরাস সৃষ্টি করে, তাই তারা বলে দিতে পারে, এটি কীভাবে সারাবিশ্বে ব্যাপ্তি লাভ করবে বা পরের বছর অর্থনীতিতে এটা কেমন প্রভাব ফেলবে। তারা রাজনৈতিক সহিংসতা উস্কে দিতে পারে আবার চাইলে তা নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। তারা যুদ্ধ বাধাতে পারে আবার থামাতেও পারে।
কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, পৃথিবীটা এর চেয়েও অনেক বেশি জটিল। উদাহরণ হিসাবে আমেরিকার ইরাক আক্রমণের কথাই ধরুন। গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূল করার পাশাপাশি সাদ্দাম যুগের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে ২০০৩ সালে তৎকালীন বিশ্বপরাশক্তি আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করল। সেসময় কারো কারো সন্দেহ হয়েছিল, পরাশক্তিটি হয়ত পরবর্তীতে অঞ্চলটির উপর ছড়ি ঘুরাবে আর ইরাকী তেলক্ষেত্রগুলো দখল করে নেবে। যাইহোক উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য আমেরিকা এবার বিশ্বসেরা সৈন্য মোতায়েন করল আর কোটি কোটি ডলার ঢালতে লাগলো।
এবার কয়েক বছর পরের দৃশ্য কল্পনা করুন। এতসব তদবিরের ফলাফল কী দাঁড়ালো? চরম ব্যর্থতা। কারণ, সেখানে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি, উপরন্তু দেশটিতে চরম বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ল। সত্যিকার অর্থে, এ যুদ্ধের বিজেতা ছিল ইরান। কারণ, ইরানই তখন অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল!
তাহলে আমরা কি এখন এই বলে উপসংহার টানবো যে জর্জ ডবিউ বুশ[6] এবং ডোনাল্ড রামসফিল্ড[7] আসলে ছিলেন ইরানের এজেন্ট এবং তারা মূলত ইরানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন? কখনোই না। বরং উপসংহার হওয়া উচিত, মানুষের কর্মকান্ডের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা বা তা নিয়ন্ত্রণ করা অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন।
এই বিষয়টা বুঝার জন্য আপনাকে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ আক্রমণ করতে হবে না। বরং আপনি যদি কোনো স্কুল কমিটিতে বা এলাকার কোনো সংগঠনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাহলে আপনি হয়ত ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন যে মানুষের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা কত কঠিন! আপনি হয়ত কোনো পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করলেন, অথচ ফলাফল দাঁড়ালো উল্টো! আপনি হয়ত কোনো কিছু গোপন রাখতে চাচ্ছেন, অথচ পরদিন দেখলেন সবাই সেটা নিয়েই কথা বলছে। আপনি আপনার বিশ্বস্ত বন্ধুর সাথে মিলে একটা পরিকল্পনা করলেন, অথচ দেখা গেল গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সেই আপনার পিঠে ছুরি চালালো।
(বাস্তবতার বিপরীতে) বিশ্ব ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো আমাদের বিশ্বাস করতে বলে যে, ১০০০ বা সামান্য ১০০ মানুষের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা বা তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেখানে কঠিন, সেখানে নাকি প্রায় ৮০০ কোটির পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সহজ (?)।
বাস্তবতা
পৃথিবীতে নিঃসন্দেহে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, চার্চ, দল বা সরকার প্রতি মুহুর্তে বিচিত্র রকমের ফন্দি আঁটছে আর তা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজছে। তবে সমগ্র পৃথিবীকে কব্জা করা বা তার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন।
একথা সত্য যে, ১৯৩০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছিল এবং (এর বিপরীতে) পুঁজিবাদী ব্যাংকগুলো নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করছিল। রুজভেল্ট প্রশাসন চাচ্ছিল নিউ ডিল[8] অনুযায়ী আমেরিকান সমাজকে ঢেলে সাজাতে। আর ইহুদিবাদি আন্দোলনটি তখন ফিলিস্তীনে তাদের স্বদেশ গড়ার পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছিল। এগুলো এবং এগুলোর মতো আরো অসংখ্য পরিকল্পনা প্রায়ই পরস্পর বিরোধী হয়। তাই একক কোনো চক্র থাকা সম্ভব নয় যারা কিনা সব ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ে।
হতে পারে এই মুহূর্তেও আপনি নানা চক্রান্তের শিকার। আপনারই সহকর্মী হয়ত আপনার বসকে আপনার বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। হয়ত প্রভাবশালী কোনো ওষুধ কোম্পানি আপনার শরীরে ক্ষতিকর ড্রাগ প্রয়োগ করার জন্য আপনার ডাক্তারকে ঘুষ দিচ্ছে। হতে পারে কোনো গোষ্ঠী পরিবেশ-সংরক্ষণ-আইন বাতিল করার জন্য নীতিনির্ধারকদের চাপ দিচ্ছে এবং এভাবে তারা পরিবেশ দূষিত করার সুযোগ খুঁজছে। হয়ত কোনো রাজনৈতিক দল আপনার নির্বাচনী এলাকায় অসদুপায় অবলম্বনের ফন্দি আঁটছে। কোন বিদেশী সরকার হয়ত আপনার দেশে জঙ্গীবাদ উস্কে দিচ্ছে। উপরের সবগুলো ষড়যন্ত্রই বাস্তব হতে পারে, কিন্তু এগুলো কোনোভাবেই একটি সামগ্রিক ষড়যন্ত্রের অংশ নয়।
কখনো কখনো একটি গোষ্ঠী বা একটি রাজনৈতিক দল বিশ্ব-ক্ষমতাধরদের একটি বড় অংশকে হাত করতে পারে। তবে এমন ঘটনা ঘটলে তা ধামাচাপা দেওয়া পুরোপুরি অসম্ভব। কারণ ক্ষমতাধরদের কারণে বিষয়টির ব্যাপক প্রচার হয়।
আসলে বহু ক্ষেত্রে বড় ধরনের শক্তি অর্জনের পূর্বশর্তই হ’ল ব্যাপক প্রচারণা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, জনগণের আড়ালে থাকলে লেনিন কখনো রাশিয়ার ক্ষমতায় আসতে পারতেন না। স্ট্যালিনের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, তিনি প্রথম প্রথম আড়ালে থেকে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের একক ক্ষমতাধর পরিণত হওয়ার আগে দেখা গেল যে রাশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত আর বাসাবাড়িতে তার ছবি ঝুলছে। স্ট্যালিনের টিকে থাকার মূলে ছিল তার এই ব্যক্তিত্বের কারিশমা। এক্ষণে (কেউ যদি দাবি করে) লেনিন এবং স্ট্যালিন ছিলেন প্রকৃত ক্ষমতাধরদের হাতের পুতুল মাত্র তাহলে তার এই দাবি সব ঐতিহাসিক দলীলের বিরুদ্ধে যাবে।
কোনো গুপ্ত সঙ্ঘের পক্ষে যে গোটা পৃথিবীটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এই উপলব্ধিটুকু যে কেবল যথার্থ তা-ই নয়, বরং এটা আপনাকে ক্ষমতাবানও করে তোলে। কারণ, (এই উপলব্ধির ফলে) পৃথিবীতে বিবাদমান গোষ্ঠীগুলোর মাঝে আপনি পার্থক্য করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী সমমনা দলগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। আর এটাই হ’ল আসল রাজনীতি।
[1]. এই তত্ত্ব মতে, একটি গুপ্ত সঙ্ঘ সারা পৃথিবীকে কব্জা করে রেখেছে।
[2]. একটি উগ্র-ডানপন্থী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। তাদের মতে, শয়তান-পূজারী শিশুকামীদের একটি চক্র বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধপল্লীতে শিশুদের পাচার করছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে যিনি কিনা ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।।
[3]. ইহুদি জাতির প্রতি বিদ্বেষ।
[4]. এই পরিবার থেকে রিপাবলিকান পাটির হয়ে জর্জ ডবিউ এইচ বুশ আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট (১৯৮৯-১৯৯৩) নির্বাচিত হন। এবং পরবর্তীতে তারই পুত্র জর্জ ডবিউ বুশ আমেরিকার ৪৩তম প্রেসিডেন্ট (২০০১-২০০৯) নির্বাচিত হন।
[5]. ক্লিনটন পরিবার-- এই পরিবার থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পাটির হয়ে বিল ক্লিনটন আমেরিকার ৪২তম প্রেসিডেন্ট (১৯৯৩-২০০১) নির্বাচিত হন। এবং পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আমেরিকার ৬৭তম রাষ্ট্রসচিব (২০০৯-২০১৩) নিযুক্ত হন।
[6]. তার নেতৃত্বে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে।
[7]. তিনি সেসময় মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব ছিলেন।
[8]. নিউ ডিল (New Deal) মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের আমলে নেওয়া অর্থনৈতিক কর্মসূচী।