ইসলাম আমাকে অপরাধ-জীবন থেকে রক্ষা করেছে
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1135 বার পঠিত
[লন্ডনের
অধিবাসী ঈসা মাত্র ১৩ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করে। ১০ বছর বয়সে এক চাচাতো
বোন তাকে ইসলাম ও কুরআনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। কুরআনে বর্ণিত মাতৃগর্ভে
শিশুর বেড়ে ওঠা, নক্ষত্র, সাগরবিষয়ক বৈজ্ঞানিক তথ্য যা আধুনিক বিজ্ঞানও
সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছে তাকে বিস্মিত করে। তিন বছরের অনুসন্ধান ও
পর্যালোচনার পর ইসলাম গ্রহণ করে সে। অ্যাবাউট ইসলামে তাঁর ইসলাম গ্রহণের
বিবরণ লিখেছেন সেলমা কুক এবং ভাষান্তর করেছেন মোঃ আবদুল মজিদ মোল্লা]
ঈসা মাত্র ১৩ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করে। কুরআনের বৈজ্ঞানিক নিদর্শন তাকে ইসলামে আকৃষ্ট করে। এর আগে তার এক চাচাতো বোন মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তখন ঈসার বয়স ১০ বছর এবং সে স্কুল শিক্ষার্থী। তার সেই চাচাতো বোন প্রথম তাদের পরিবারকে ইসলাম সম্পর্কে জানায়। তার অভ্যাস ছিল ঘরে ফিরে ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করা। পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ ও মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে ঘরে তুমুল বিতর্ক হতো। তবে ঈসা বিতর্ক থেকে দূরে থাকত এবং শুধু তা শুনে যেত। একদিন তার চাচাতো বোন তাকে ঘরে ডেকে নিল এবং কুরআন দেখিয়ে জানতে চাইল, সে কুরআন সম্পর্কে কিছু জানে কি না? ঈসা বলল, সে জানে না। চাচাতো বোন বলল, এটা বাইবেলের মতোই; মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ। এরপর জানতে চাইল, ঈসা মুসলিমদের সম্পর্কে কিছু জানে কি না? সে জানালো, না। কেননা মায়ের কাছ থেকে খ্রিস্টানদের সম্পর্কে জানা বিষয়গুলোর বাইরে ধর্ম বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না। তার চাচাতো বোন তার সঙ্গে মহান আল্লাহ সম্পর্কে আলোচনা করল এবং বলল, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআন লাভ করেছেন।
কুরআনের বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক নিদর্শন ও ব্যাখ্যা ঈসার মনোযোগ আকর্ষণ করে। ইসলাম গ্রহণকারীরা ইসলামের আধ্যাত্মিক শান্তি ও সৌন্দর্যের যে বর্ণনা দেয় তার কাছে তা ছিল কেবল পরিসংখ্যান। তাকে বিস্মিত করেছিল মাতৃগর্ভে শিশুর বেড়ে ওঠা, নক্ষত্র, সাগর ইত্যাদি বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য। আধুনিক বিজ্ঞান যা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছে। তার জানা মতে, এত আগে নক্ষত্র ও মহাকাশ সম্পর্কে বলা কোনো মানুষের বক্তব্য এতটা নির্ভুল ছিল না। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায়, খাদ্যবিধি, পোশাকবিধি অনুসরণ করা তার জন্য কঠিন মনে হয়নি। ঈসার চাচাতো বোন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানানোর পর সে সিদ্ধান্ত নেয় একেক সময় একেক বিষয়ে মনোযোগ দেবে। সর্বপ্রথম ছালাত শেখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে আরবী, অনুবাদ ও সচিত্র ছালাত শিক্ষার একটি বই দেওয়া হ’ল।
ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি প্রথমেই সে কাউকে বলল না। কেননা সে মানুষের মন্তব্য ও সমালোচনা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাছাড়া ইসলামের প্রকৃতি ও তার শিক্ষা সম্পর্কেও তার জ্ঞান পর্যাপ্ত ছিল না। ঈসা জোর দিয়ে বলেছে, মিসর ও ইয়েমেনে ভ্রমণের সময় সে ইসলামের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বহু কিছু শেখে। এরপরও ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি তার ও চাচাতো বোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। ইসলামী বইয়ের দোকান থেকে তাওহীদ, ছালাত, ছিয়াম, মহানবী (ছাঃ)-এর জীবনী বিষয়ক বই সংগ্রহ করে। এরপর সে তিন বা চার মাস পর দক্ষিণ লন্ডনে অবস্থিত আব্দুর রহমান গ্রীনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। এই অনুপ্রেরণামূলক বৈঠক থেকেও সে অনেক কিছু শেখে। একজন উঠতি বয়সী মুসলিম হিসাবে স্কুল ও কলেজে ঈসা সমস্যার মুখে পড়েনি। কিন্তু স্কুলের সময় বা কোনো কোলাহলপূর্ণ জায়গায় যখন ছালাতের প্রস্ত্ততি হিসাবে অযু করত বা পরবর্তী ছালাতের সময় হিসাব করত, তখন তার মনের ভেতর উদ্বেগ কাজ করত।
১৫ বছর বয়সে ঈসা ইসলাম প্রচারে যোগ দেয়। তার আহবানে সাড়া দিয়ে তার এক বন্ধু ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে তাদের নিজস্ব একটা জগৎ তৈরী হয়। স্কুল থেকে শুক্রবার জুমআর জামাতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তারা দুই বন্ধু একসঙ্গে সমস্যায় পড়ে। বয়স অল্প হওয়ার পরও ঈসার কাছে ইসলাম ধর্মকে কঠোর মনে হয়নি; বরং সে ইসলামী বিধানের যৌক্তিকতাই খুঁজে পেতেন। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ। ঈসা চিন্তা করত মানুষের মদ পান করা উচিত নয়, কেননা তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অমুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে তার সম্পর্কও খারাপ ছিল না। তবে তাদের সঙ্গে সে বাইরে যেত না। কোনো অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেত। এভাবে সে ধীরে ধীরে ইসলামের মধ্যে ওতপ্রোতভাবে প্রবেশ করে এবং একজন দাঈ ইলাল্লাহ হিসাবে পরিণত হয়। ফালিল্লাহিল হামদ।
[সূত্র : ইন্টারনেট]