লোভ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1088 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا-

(১) ‘আর তোমরা এমন সব বিষয় আকাংখা করো না, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ। তোমরা আল্লাহর নিকটে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞাত’ (নিসা ৪/৩২)

2- مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ-

(৩) ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)

3- أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ- حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ-

(৪) ‘অধিক পাওয়ার আকাংখা তোমাদের (পরকাল থেকে) গাফেল রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে উপনীত হও’ (তাকাছুর ১০২/১-২)

হাদীছে নববী :

6- عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ-

(৬) হযরত কা‘ব বিন মালেক আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশী ধ্বংসকর নয়, যতটা বেশী ধ্বংসাত্মক মানুষের দ্বীনের জন্য তার মাল ও মর্যাদার প্রতি লোভ’।[1]

7- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ: ابْنَ آدَمَ تَفْرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسِدَّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَكَ شُغُلًا وَلَمْ أسُدَّ فقرك-

(৭) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। আমি তোমার হৃদয়কে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। আর যদি অবসর না হও, তাহ’লে তোমার দু’হাত ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না’।[2]

8- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الْإِمَارَةِ وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَنِعْمَ الْمُرْضِعَةُ وَبِئْسَتِ الفاطمةُ.

(৮) ‘তোমরা সত্বর নেতৃত্বের লোভী হয়ে পড়বে। অথচ সেটি ক্বিয়ামতের দিন লজ্জার কারণ হবে। অতএব কতইনা সুন্দর দুগ্ধদায়িনী (কেননা শিশুকে দুগ্ধদান শিশুর জন্য তৃপ্তিকর) ও কতই না মন্দ দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিনী (এজন্য যে, শিশুকে দুধ ছাড়ানো যন্ত্রণাদায়ক। ঠিক অনুরূপই নেতৃত্বের লোভ পরিত্যাগ করা বড়ই কঠিন)’।[3]

9- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ.

(৯) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যুলুমকে ভয় কর। কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ-লালসা থেকে সাবধান থেকো। কেননা এই লোভ-লালসাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। তাদেরকে খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলুব্ধ করেছে’।[4]

10- عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ وَتَشِبُّ مِنْهُ اثْنَتَانِ الْحِرْصُ عَلَى الْمَالِ، وَالْحِرْصُ عَلَى الْعُمُرِ.

(১০) হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আদম সন্তান বার্ধক্যে পৌঁছে যায়; কিন্তু দুটি ব্যাপারে তার আকাঙ্খা থেকে যায়; (১) সম্পদের প্রতি লোভ। (২) বেঁচে থাকার আকাঙ্খা’।[5]

11- عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ قَالَ لِي: يَا حَكِيمُ إِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ. وَكَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ-

(১১) হযরত হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কিছু চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে হাকীম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ব্যতীত) তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয়না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না’।[6]

12- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِينِي الْعَطَاءَ، فَأَقُولُ: أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي، فَقَالَ: خُذْهُ، فَتَمَوَّلْهُ وَتَصَدَّقْ بِهِ، فَمَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا الْمَالِ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلَا سَائِلٍ فَخُذْهُ وَمَا لَا فَلَا تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ-

(১২) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চেয়ে বেশী অভাবগ্রস্থ, তাকে দিন। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলতেন, তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরের লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি প্রার্থী নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করবে। এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করবে না’।[7]

13- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْهُومَانِ لَا يَشْبَعَانِ: مَنْهُومٌ فِي الْعِلْمِ لَا يَشْبَعُ مِنْهُ وَمَنْهُومٌ فِي الدُّنْيَا لَا يَشْبَعُ مِنْهَ-

(১৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দু’জন লোভী ব্যক্তির পেট কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে না। একজন জ্ঞান পিপাসু লোক; ইলম দ্বারা তার পেট কখনো ভরে না। দ্বিতীয়জন হ’ল দুনিয়া পিপাসু; দুনিয়ার ব্যাপারে সেও কখনো পরিতৃপ্ত হয় না’।[8]

14- عَنْ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ مِثْلَ وَادٍ مَالًا لَأَحَبَّ أَنَّ لَهُ إِلَيْهِ مِثْلَهُ، وَلاَ يَمْلَأُ عَيْنَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ-

(১৪) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, বনু আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, তাহলে সে আরও ধন অর্জনের জন্য লালায়িত ধাকবে। বনু আদমের লোভী চোখ মাটি ব্যতীত আর কিছুই তৃপ্ত করতে পারবে না। তবে যে তওবাহ করবে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করবেন’।[9]

মনীষীদের বক্তব্য :

১. রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের লোভ করো’।[10]

২. আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) বলেন, তিনটি ধ্বংসাত্মক জিনিস হলো অহংকার, লোভ এবং হিংসা। কারণ অহংকার করার জন্য শয়তান আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান হারিয়েছিল; লোভ হযরত আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল এবং হিংসা আদমপুত্র নিজের ভাইকে হত্যা করতে প্ররোচিত করেছিল’।[11]

৩. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, অল্পতুষ্টি ও হিংসা কখনো একত্রিত হয়না এবং হিংসা ও লোভ কখনো সঙ্গ ছাড়ে না’।[12]

৪. ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, মনে রেখ, তুমি অল্পে তুষ্ট থাক এবং নির্লোভ জীবনযাপন কর। আর যদি সম্পদশালী হও, তবে সাধ্যমত দান ও কল্যাণের কাজে নিজের সম্পদ ব্যয় কর। সর্বদা লোভ ও কৃপণতা থেকে যোজন যোজন দূরে থাক। কেননা দানশীলতা নবীদের বৈশিষ্ট্য এবং পরকালীন নাজাতের অন্যতম মাধ্যম ।[13]

৫. ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) বলেন, সমস্ত পাপের মূল হলো তিনটি জিনিস। আর তা হলো অহংকার, লোভ ও হিংসা’।[14]

সারবস্ত্ত :

১. লোভ-লালসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়; তাকে বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং তার মধ্য থেকে ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য বিচারের ক্ষমতা নির্মূল করে ফেলে।

২. লোভাতুর দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির জীবনে কখনো শান্তি আসতে পারে না।

৩. ইহকালীন ভোগ-সামগ্রীকে লালসার দৃষ্টিতে দেখার স্বভাব মুমিন ব্যক্তির নয়। ।

৪. জাগতিক যাবতীয় পাপের উৎস ভূমি হ’ল লোভ। লোভে পাপ, আর পাপে মৃত্যু।

৫. লোভ ঠিকানাহীন গন্তব্যের নাম; যা বনু আদমকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়ে।


[1]. তিরমিযী হা/২৩৭৬; মিশকাত হা/৫১৮১, সনদ ছহীহ

[2].তিরমিযী হা/২৪৬৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১০৭; আহমাদ হা/৮৬৮১; মিশকাত হা/৫১৭২।

[3]. বুখারী হা/৭১৪৮; মিশকাত হা/৩৬৮১।

[4]. মুসলিম হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫।

[5]. বুখারী হা/৬৪২১; মুসলিম হা/১০৪৭।

[6]. বুখারী হা/১৪৭২।

[7].  বুখারী হা/১৪৭৩।

[8].  বায়হাক্বী হা/১০২৭৯; মিশকাত হা/২৬০।

[9].  বুখারী হা/৬৪২৩; মুসলিম হা/১০৪৯।

[10].ইবনু মাজাহ হা/৪১৬৮; মিশকাত হা/৫২৯৮।

[11].https://www.diwandb.com/quote

[12].https://muslims-res.com

[13].ইহইয়াউল ঊলূম ৩/২৪৩ পৃ.।

[14].https://www.maqola.net/quote/41505



বিষয়সমূহ: মূল্যহীন দুনিয়া
আরও