ষড়রিপু সমাচার
লিলবর আল-বারাদী
বর্তমান পৃথিবীতে অনেক মুসলিম দেশ। সংখ্যার বিবেচনায় মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। ২০৫০ সালে সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসাবে মুসলমানদের উত্থান হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে হু হু করে মুসলিম সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাশ্চাত্যে মুসলিম সংখ্যা ঈর্ষণীয় গতিতে বাড়ছে। সংখ্যা, রাষ্ট্র, অর্থ ও সামর্থের বিচারে মুসলমানগণ দুর্বল জাতি এ কথা বলার জো নেই। মুসলমানদের সব থাকলেও, যে জিনিসটি নেই তা হলো বিশ্ব নেতৃত্ব ও উম্মাহকেন্দ্রিক বিশ্বভ্রাতৃত্ব। আজ কোটি কোটি মুসলমান আছে যাদের অন্তরে উম্মাহকেন্দ্রিক ভালবাসা নেই; দরদ নেই। তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতভিত্তিক ঈমানের ভিত্তিতে যে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পরিচয়, পরিচিতি; সেই মুসলমানদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক আজ বড় দুর্বল। বিশেষতঃ মুসলিম শাসকবৃন্দ সবাই আপন স্বার্থের জালে প্রগাঢ়ভাবে বন্দী। তারা আজকের দুনিয়ায় ক্ষমতা, দুর্বৃত্তায়ন আর লুটপাটের রাজনীতিতে মাতোয়ারা। একদিন ইসলাম ও মুসলমানের চিরন্তর আদর্শের কাছে পুরো পৃথিবী শির লুটিয়েছিল। এই কালজয়ী আদর্শ সারা দুনিয়া শাসন করেছিল। পৃথিবীর অর্থনীতি, রাজনীতি, ক্ষমতা সবকিছুই একদিন মুসলিম বিশ্ব কেন্দ্রিক আবর্তিত হত। এ যুগের মুসলিম জনসংখ্যা ও সম্পদের তুলনায় তখন কিন্তু তারা উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ছিল না। শুধু আদর্শিক দৃঢ়তা ও উম্মাহকেন্দ্রিক বিশ্বভ্রাতৃত্বই তাদেরকে এতদূর এগিয়ে দিয়েছিল।
বর্তমানে বিশ্বপরিচালনার মঞ্চে মুসলমানদের উপস্থিতি নেই। আজকে মুসলিম নেতারা অনৈতিকতা, গুন্ডামীপনা, চৌর্যবৃত্তি, দুর্বৃত্তায়নের ধ্বজাধারী বিশ্ব নেতাদের তোষামোদী ও পা চাটায় ব্যস্ত। বর্তমান বিশ্ব নেতারা মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সদ্য বিদায়ী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে ‘দ্য হিল’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্প তিন বছরে প্রকাশ্যে যেসব কথা বলেছেন তার মধ্যে ১৬ হাজার ২৪১টি কথা মিথ্যাচার, অবাস্তবতা ও বিভ্রান্তিতে ভরপুর’। অথচ মুসলমান নেতারা এ সমস্ত মিথ্যুক নেতাদের কাছ থেকে জ্ঞান নেয়। তাদের নেতৃত্বের কাছে সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে কছূর করে না। এসব মিথ্যুকদের তারা সবকিছুতেই সেরা মনে করে। ফলে পৃথিবীর অনেক দুর্বল শক্তিও মুসলমানদের নছীহত করে, জ্ঞান দেয়, মুসলমানদের মানবাধিকার শিক্ষা দেয়।
আজ যখন আমরা মুসলিম পূর্বপুরুষদের অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত হতে দেখি। মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তীন, সিরিয়া, ইয়ামনের মত জনপদের মুসলিম ভাইদের দুঃখগাথা দেখি। সর্বত্র মুসলিমদের রক্তের হোলিখেলা দেখি, তখন হৃদয়টা দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
প্রাচীন সভ্যতার পাদপীঠ ও নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যভূমি শাম তথা সিরিয়া ও ইয়ামন আজ মৃত্যুপুরী। এই শাম বা সিরিয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, طُوبَى لِلشَّامِ. قُلْنَا: لِأَيٍّ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: لِأَنَّ مَلَائِكَةَ الرَّحْمَنِ بَاسِطَةٌ أَجْنِحَتَهَا عَلَيْهَا ‘শামের (সিরিয়া) জন্য কতই না কল্যাণ! আমরা (ছাহাবাগণ) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা কেন? তিনি বললেন, যেহেতু দয়াময় আল্লাহর ফিরিশতা তার উপরে ডানা বিছিয়ে আছেন’।[1]
রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى شَامِنَا وَفِى يَمَنِنَا قَالَ قَالُوا وَفِى نَجْدِنَا قَالَ قَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى شَامِنَا وَفِى يَمَنِنَا. ‘হে আল্লাহ! আমাদের শামে (সিরিয়া) ও ইয়ামনে বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও। তিনি পুনরায় বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের শাম দেশে ও ইয়ামনে বরকত দান করুন’।[2]
রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আপ্রাপ্ত বরকতময় দেশ সিরিয়ায় আমেরিকান, ইস্রাইলী, ব্রিটিশ, ফরাসী, জার্মান এমনকি সুইডিশ যুদ্ধবিমানগুলো পাল্লা দিয়ে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। নীচে হিযবুল্লাহ আর শী‘আ মিলিশিয়ারা হন্যে হয়ে ছুটেছে সুন্নী মিলিশিয়াদের হত্যা করতে। এই যুদ্ধ সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ বলে মনে করা হলেও মূলত এটি বিদেশীদের স্বপ্নের বৃহত্তর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসীদের কাছে এটি ইসরাঈলের অস্তিত্ব চিরকালের জন্য নিষ্কণ্টক করার যুদ্ধ।
অন্যদিকে ইরান রাজনৈতিক কূটচালের মাধ্যমে পাশের দেশ ইরাককে নিজেদের কব্জায় নেওয়ার পর তার শ্যেন দৃষ্টি এখন ইয়ামেনের দিকে। সেখানে তারা শী‘আ হুতী মিলিশিয়াদের দিয়ে ইয়ামনের পবিত্র অঙ্গনকে অপবিত্র করতে সাধারণ জণগনের উপর যুলুমের স্টিম রোলার চালাচ্ছে।
এসবই মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে আরেকবার ছুরি চালানোর জন্য বিদেশী বেনিয়াদের লড়াই। দ্বিতীয় ফিলিস্তীন বানানোর চক্রান্ত। এভাবে সিরিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্বার্থে খেলছে। যেভানে প্রতিনিয়ত শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হচেছ। মাঝখানে বলির পাঁঠা হচেছ সিরিয়ার নিরীহ জনগণ। কেন তিন ভাগের এক ভাগ সিরিয়াবাসীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হ’ল? ছয় লাখ সিরিয়াবাসী কাদের হাতে বলি হ’ল?
পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক থিংকট্যাংকগুলোর তথ্য মতে, সিরিয়া সঙ্কটের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব সবচেয়ে বেশী দায়ী। আমেরিকার ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্ববাসী শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইছে। ভেবেছে মিথ্যুক শাসকদের অধ্যায় শেষ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, বর্তমান বিশ্বমোড়ল আমেরিকার মসনদের আশেপাশে যুদ্ধবাজ নেতাদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান আমেরিকার প্রশাসন দেখলে যে কারো যুদ্ধবাজ নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামার মত কোটি কোটি মুসলিম হত্যাকারীদের প্রতিচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠবে। ২০১১ সালে আরব বসন্তের শুরু থেকেই তারা গণবিপ্লবের পক্ষে ছিল না। যখন দেখল মিসরের হোসনি মোবারক আর তিউনিসিয়ার বেন আলীর টিকে থাকা সম্ভব নয়, তখন বিপলবের পক্ষে মেকি সমর্থন ব্যক্ত করে। পশ্চিমাদের দ্বৈত রাজনীতির ভয়ঙ্কর দিক হচেছ। তারা দুর্বল আর অকেজো মিত্রকে যে কোন সময় বলি দিতে কার্পণ্য করে না এবং সঙ্কটের সময় সব পক্ষের ওপর প্রভাব ধরে রাখে, যাতে ঘটনা যে দিকেই মোড় নিক তাদের স্বার্থ যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।
ইসরাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা তো আছেই, তার ওপর পশ্চিমা জোটের পরিকল্পনা ছিল আরো গভীর ও সুদূরপ্রসারী। মূলতঃ দু’টি লক্ষ্য নিয়ে তারা অপ্রসর হয়। প্রথমতঃ তুরস্ক-সঊদী প্রভাবাধীন সুন্নী রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করা। অথবা যতটুকু পারা যায় দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় করা। এর বিপরীতে ইরানের নেতৃত্বাধীন শী‘আ জোটকে শক্তিশালী করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শী‘আ জোট আর সুন্নী জোটের মধ্যে শক্তির ব্যবধান কমানো, যাতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা যায়। দ্বিতীয়তঃ মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে আরেকবার ছুরি চালানো। তাই তুরস্ক ভেঙ্গে কুর্দিস্তান, ইরাককে তিন টুকরা, সিরিয়াকে ভেঙে নতুন নতুন রাষ্ট্রের জন্ম, লিবিয়াকে সুদানের মত ভেঙ্গে খান খান করা, সঊদী আরবকে টুকরা টুকরা করা, বাহরাইন, কাতার, দুবাই এবং ইয়েমেনে বিচিছন্নতার জন্ম দেয়া- এ সবই তাদের সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ মাত্র। এভাবেই ইসরাইল আর পশ্চিমারা ভাঙাগড়ার এক ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার। ‘জীব হত্যা মহা পাপ’-এর ধ্বজাধারী বিশ্ব নেতারা রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামিয়ে গরীব একটি রাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে, সবকিছু স্তব্ধ করে দেওয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নে কছূর করেনি। মোদ্দাকথা হলো প্রতিটি মুসলিম ও ইসলাম তাদের মূল টার্গেট। এজন্য তাদের যা যা দরকার, তা-ই করে চলেছে।
বস্তুত কাফির-মুশরিক সকলে তাদের স্ব স্ব স্বার্থে এক ও ঐক্যবদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ ‘আর যারা অবিশ্বাসী তারা পরস্পরের বন্ধু। এক্ষণে তোমরা যদি (মুমিনদের মধ্যে বন্ধুত্বের) বিধান কার্যকর না কর, তাহলে যমীনে ব্যাপকভাবে বিশৃংখলা ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে’ (আনফাল ৮/৭৩)। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, الْكُفْرُ كُلُّهُمْ مِلَّةٌ وَاحِدَةٌ، ‘অবিশ্বাসীরা জাতিগোষ্ঠীই এক’।[3]
এখন মুসলমানদের বড় প্রয়োজন বিশ্বভ্রাতৃত্ব। মুসলমানদের বিশ্বভ্রাতৃত্ব আল্লাহর দেয়া অনেক বড় নে‘মত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই নে‘মত থেকে আজ বঞ্চিত। পৃথিবীর সমস্ত কিছু দিয়েও এই ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব না, যদি না তিনি মেহেরবাণী করে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক এই সুসম্পর্ক তৈরী করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘তিনি তাদের অন্তরসমূহে পরস্পরে প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। যদি তুমি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তর সমূহে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে পরস্পরে মহববত পয়দা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (আনফাল ৮/৬৩)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى. ‘মুমিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জবরে আক্রান্ত হয়’।[4]
রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ‘একজন মু’মিন আরেকজন মু’মিনের জন্য ইমারততুল্য, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এই বলে তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন’।[5]
প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব একটি দেহ বা বিল্ডিংয়ের মত। সকল মুসলমান ভাই ভাই। যে ভ্রাতৃত্বকে কোন বর্ণ, জাতি, দেশ ও কাল পৃথক করতে পারে না। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ‘তোমরা সকলে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নে‘মতের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তর সমূহে মহববত পয়দা করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা অগ্নি গহবরের কিনারায় অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় আয়াতসমূহ ব্যাখ্যা করেন, যাতে তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হও’ (আলে-ইমরান ৩/১০৩)।
আজও আমরা মনের দিক দিয়ে হাযারো প্রকারে বিভক্ত। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই পারেন এই উম্মাহর মাঝে আবারো সেই ঈমানী ভ্রাতৃত্ব তৈরী করে দিতে। তিনিই পারেন অনৈক্যের সকল বীজ উপড়ে ফেলতে। যাদের মধ্যে সামান্য ঐক্যের চেতনা আছে তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে উম্মতের ঐক্যের জন্য মনেপ্রাণে দো‘আ করা। নিজেদের মধ্যকার সকল অনৈক্যের উৎসগুলো সরিয়ে ফেলা।
কাফির-মুশরিক ও অবিশ্বাসীদের ব্যাপারে মুসলমানদের সামনে দু’টি রাস্তাই খোলা রয়েছে, হয় মুসলমানরা তাদের মনিব হবে, নতুবা কুকুরের ন্যায় তাদের হাতে লাঞ্ছিত হবে। কাফির-মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের সমতাপূর্ণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনোই সম্ভব নয়।
আজ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঈমানী ঐক্য গড়ে তোলা ও উম্মাহ চেতনাসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমরা পারছি না। দিন দিন আমরা দুর্বল হচিছ। আর শত্রুরা আমাদের এই অনৈক্যের সুযোগ নিচেছ। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার রহমত ও করুণার ছায়ায় আশ্রয় দাও। আমাদের মাঝে মযবুত দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে দাও এবং যোগ্য নেতৃত্বের অধীনে পুরো মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ কর-আমীন!
[লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]
[1]. আহমাদ হা/২১৬০৬; তিরমিযী হা/৩৯৫৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫০৩; মিশকাত হা/৬২৬৪।
[2]. বুখারী হা/১০৩৭; তিরমিযী হা/৩৯৫৩; মিশকাত হা/৬২৬২।
[3]. আল-আছারু লি আবী ইউসুফ ১/১৭১ পৃ.।
[4]. বুখারী হা/৬০১১; মিশকাত হা/৪৯৫৩।
[5]. বুখারী হা/৪৮১; মিশকাত হা/৪৯৫৫।