নারীর তিনটি ভূমিকা (৪র্থ কিস্তি)

লিলবর আল-বারাদী 1325 বার পঠিত

আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যুবায়র (রাঃ) আমাকে বিবাহ করলেন, সে সময় একটি ঘোড়া ব্যতীত কোন যোগ্য সম্পদ, গোলাম বা অন্য কিছু দুনিয়াতে তার ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়াটাকে ঘাস খাওয়াতাম, তার পারিবারিক কাজকর্মেও সঙ্গ দিতাম। আমি তার যত্ন নিতাম, তার পানিবাহী উটের জন্যে খেজুর বীচি কুড়াতাম, তাকে ঘাস খাওয়াতাম, পানি নিয়ে আসতাম, তার ঢোল ইত্যাদি মেরামত করতাম এবং (রুটির জন্য) আটা মাখতাম। তবে আমি ভাল রুটি বানাতে পারতাম না। তাই আমার কতিপয় আনসারী সাথী মহিলারা আমাকে রুটি পাকিয়ে দিত। তারা ছিল স্বার্থহীন মহিলা। আমি যুবায়র-এর জমি থেকে, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জায়গীর রূপে দিয়েছিলেন, (সেখান থেকে) খেজুর বীচি (কুড়িয়ে) আমার মাথায় করে বয়ে আনতাম। সেই (জমি) ছিল এক ক্রোশের দু-তৃতীয়াংশ (প্রায় দু’মাইল) দূরে অবস্থিত।

তিনি বলেন, আমি একদিন আসছিলাম আর বীচির বোঝা আমার মাথায় ছিল। পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখা পেলাম, সে সময় তার সাথে সাহাবীগণের একটি ক্ষুদ্র দল ছিল। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং তার বাহনটি বসাবার আওয়াজ করলেন। যেন তিনি আমাকে বাহনের পেছনে উঠিয়ে নিতে পারেন। যুবায়র (রাঃ)-এর আত্মমর্যাদার কথা ভেবে আমি লজ্জাবোধ করলাম। যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! তাঁর সাথে তোমার আরোহণের চাইতে তোমার মাথায় করে বীচি বয়ে আনা অনেক কঠিন ও কষ্টকর ছিল। অতঃপর আমার পিতা আবু বকর (রাঃ) আমার নিকট একজন খাদেম প্রেরণ করলেন। ঘোড়াটি দেখা-শুনার কাজে সে আমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে গেল। সে যেন আমাকে এ দায়িত্ব হ’তে মুক্ত করেছিল।[1]

৭. স্বামীর হক্ব আদায়কারীনী

স্বামীর হক্ব আদায় করা জন্য অতিব গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মুমিন মুসলমান স্বামীর আনুগত্য ও হক্ব আদায় করা মুমিনা নারীর জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। স্ত্রী তার স্বামীর হক্ব আদায়ের ফলে স্বামীর অর্ধেক দ্বীনও পূর্ণ করে থাকে। আল্লাহর পরে সিজদা করার অনুমতি থাকলে স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দেয়া হতো। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক্ব আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক্ব আদায় না করে। এমনকি স্বামী যদি যাত্রাপথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকে আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়’।[2]

শারঈ ওযর ব্যতীত স্বামীর হক্ব আদায়ে স্ত্রী সর্বদা সাড়া দিতে প্রস্ত্তত থাকবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا ، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ. ‘কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর ওপর ফিরিশতারা সকাল পর্যন্ত অভিশম্পাত করে’।[3]

বিয়ের পরে নফল ইবাদতের জন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি কেবল তখন প্রযোজ্য, যখন স্বামী গৃহে অবস্থান করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ ، وَلاَ تَأْذَنَ فِى بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ ‘কোন নারীর উচিত নয় স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া নফল ছিয়াম পালন করা। ঠিক তেমনই কোন নারীর জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়াও অনুচিত’।[4] অন্যত্র এসেছে, وَمَا أَنْفَقَتْ مِنْ نَفَقَةٍ عَنْ غَيْرِ أَمْرِهِ فَإِنَّهُ يُؤَدَّى إِلَيْهِ شَطْرُهُ. ‘যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ব্যতীত তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক ছওয়াব পাবে’।[5]

স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ছিয়াম না রাখা যায় না। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত (নফল) ছিয়াম পালন করবে না’। [6]

আবু সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, هَذِهِ ابْنَتِي أَبَتْ أَنْ تَزَوَّجَ، فَقَالَ: أَطِيعِي أَبَاكِ كُلُّ ذٰلِكَ تُرَدِّدُ عَلَيْهِ مَقَالَتَهَا، فَقَالَتْ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَتَزَوَّجُ حَتَّى تُخْبِرَنِي مَا حَقُّ الزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ، فَقَالَ: حَقُّ الزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ لَوْ كَانَتْ بِهِ قُرْحَةٌ، فَلَحَسَتْهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ، فَقَالَتْ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا، فَقَالَ: لَا تُنْكِحُوهُنَّ إِلَّا بِإِذْنِهِنَّ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার এই মেয়েটি বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মেয়েটিকে বললেন, ‘তুমি তোমার আববার কথা মেনে নাও। মেয়েটি বলল, আপনি বলুন, স্ত্রীর উপর তার স্বামীর হক্ব কী? তিনি বললেন, স্বামীর এত বড় হক্ব আছে যে, যদি তার নাকের দুই ছিদ্র থেকে রক্ত-পুঁজ বের হয় এবং স্ত্রী তা নিজের জিভ দ্বারা চেঁটে (পরিষ্কার করে), তবুও সে তার যথার্থ হক্ব আদায় করতে পারবে না! যদি মানুষের জন্য মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত হত, তাহলে আমি স্ত্রীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামী কাছে এলে তাকে সিজদা করে। যেহেতু আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর এত বড় মর্যাদা দান করেছেন। মেয়েটি বলল, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে আমি বিয়েই করব না। নবী (ছাঃ) বললেন, তোমরা ওদের অনুমতি ছাড়া ওদের বিবাহ দিয়ো না।[7]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لو تعلم المرأة حق الزوج لم تقعد ما حضر غداؤه و عشاؤه حتى يفرغ منه ‘যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হ’লে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না’।[8]

৮. স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি যত্নশীল  

বিবাহের পর স্বামীই তার স্ত্রীর মূল অভিভাবক। অতএব স্বামীর ইচছার বিরুদ্ধাচরণ করা জায়েয হবে না। তবে স্বামী অন্যায়ভাবে এরূপ কিছু করলে স্ত্রী স্বামীকে নিজে বা অন্য কারু মাধ্যমে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু কোনক্রমেই তার অবাধ্য হওয়া যাবে না। হুছাইন ইবনে মিহছান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) জনৈকা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ. قَالَتْ نَعَمْ. قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ. قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ. قَالَ فَانْظُرِى أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ. ‘তোমার কী স্বামী আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তার কাছে কেমন? মহিলাটি বলল, আমি তার সন্তুষ্টি অর্জনে কোন ত্রুটি করি না। তবে আমার সাধ্যের বাইরে হ’লে ভিন্ন কথা। রাসূল (ছাঃ) মহিলাকে বলেন, লক্ষ্য রেখো, তোমার স্বামীই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।[9]

আব্দুল্লাহ্ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে দীর্ঘ রুকূ‘, ক্বিয়াম ও সিজদাসহ সূর্য গ্রহণের ছালাত আদায় করি এবং ছালাত শেষে লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হ’তে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। জওয়াবে তিনি বলেন, إِنِّى رَأَيْتُ الْجَنَّةَ، فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُودًا، وَلَوْ أَصَبْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا، وَأُرِيتُ النَّارَ ، فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ ، وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ. ‘আমি জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়াতে থাকা পর্যন্ত অবশ্যই তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। সেখানে দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী’। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে অধিকাংশ নারী? তিনি বলেন, بِكُفْرِهِنَّ. ‘তাদের কুফরীর কারণে’। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি বলেন, يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ ، وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ، لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ، ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ. ‘তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং তাদের ইহসানকে অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, অতঃপর সে তোমার হ’তে সামান্য ক্রুটি পায়, তাহ’লে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না’।[10]

হযরত উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ثَلاَثَةٌ لاَ تُجَاوِزُ صَلاَتُهُمْ آذَانَهُمُ الْعَبْدُ الآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ. ‘তিন ব্যক্তির ছালাত তাদের মাথার উপরে উঠে না (কবূল হয় না)। এক. পলাতক গোলামের ছালাত, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে আসে। দুই. সে নারীর ছালাত, যে নিজ স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে। তিন. সে আমীরের ছালাত, যার ওপর তার অধীনস্তরা অসন্তুষ্ট’।[11]

স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হ’লে জাহান্নামে যাবে, এ কথা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কেননা স্বামী শরী‘আত বিরোধী কোন নির্দেশ দিলে স্ত্রী তা মানতে বাধ্য নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানী করে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না’।[12]

৯. স্বামীকে কষ্ট দেয় না  

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্ত্রীর মধ্যে প্রধানতঃ যে গুণাবলী থাকা আবশ্যক তা হ’ল- (১) স্বামীর সাথে সর্বদা হাসি মুখে কথা বলা (২) স্বামীর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, যদি তা শরী‘আতের পরিপন্থী না হয় (৩) নিজের ইজ্জত রক্ষা করা (৪) স্বামীর ধন-সম্পদ হিফাযত করা (৫) অল্পে তুষ্ট থাকা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, নারীদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে? তখন রাসূল (ছাঃ) সর্বোত্তম আদর্শবতী স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلاَ تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ- ‘উত্তম স্ত্রী সেই, যার দিকে তাকিয়ে স্বামী আনন্দিত হয়। স্বামী কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং নিজের ব্যাপারে ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছুই করে না।[13]

স্বামীকে কষ্ট দিলে জান্নাতের হুররা স্ত্রীর প্রতি ভৎর্সনা করে থাকে। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تُؤْذِى امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِى الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لاَ تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللَّهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا. ‘পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই (জান্নাতের) বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার (ভাবী) স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না। তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন’।[14]

উত্তম নারী সেই, যার দিকে তাকিয়ে স্বামী খুশী হয়। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى ‘কোন নারী উত্তম? জওয়াবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, যখন স্বামী তার দিকে তাকায়, তখন সে স্বামীকে আনন্দিত করে’।[15] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ مِنْ أَهْل الجَنَّةِ النبي فِي الْجَنَّةِ والصديقُ فِي الْجَنَّةِ وَالشَّهِيْدُ فِي الْجَنَّةِ وَالمَوْلُودُ فِي الْجَنَّةِ والرَّجُلُ يَزُوْرُ أَخَاهُ فِيْ نَاحِيَةِ المِصْرِ لاَ يَزُورُهُ إلاَّ للهِ عَزَّ وَجَلَّ وَنِسائُكُمْ مِن أهلِ الجَنَّةِ الوَدُودُ الْمَولُودُ العَؤُودُ عَلَى زَوْجَهَا الَّتِيْ إِذَا غَضَبَ جَاءَتْ حَتَّى تَضَعَ يَدَهَا فِي يَدِ زَوْجَهَا وَتَقُوْلُ لاَ اذوْقُ غَمَضًا حتَّى تَرْضَى ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের অধিবাসী পুরুষদের সংবাদ দিব না? নবী জান্নাতী, সত্যবাদী জান্নাতী, শহীদ জান্নাতী, নবজাতক শিশু জান্নাতী, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বীনী ভাইয়ের সাক্ষাৎকারী জান্নাতী। আর ঐসব স্ত্রীগণ হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী যারা বন্ধুভাবাপন্ন, স্নেহশীল, বেশী বেশী সন্তান প্রসবকারিণী, স্বামীর প্রতি বারংবার গভীর প্রেম বিনিময়কারিণী। কোন সময় স্বামী রাগান্বিত হ’লে, স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জন না করা পর্যন্ত কোন খাবার খাব না’।[16] (চলবে)

লেখক : লিলবর আল-বারাদী

যশপুর, তানোর, রাজশাহী

[1]. মুসলিম হা/২১৮২।

[2]. ইবনে মাজাহ হা/১৮৫৩; ছহীহাহ হা/১২০৩।

[3]. বুখারী হা/৩২৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩২।

[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩১; সনদ ছহীহ।

[5]. বুখারী হা/৫১৯৫।

[6]. বুখারী হা/৫১৯২।

[7]. মুস্তাদারিক হাকেম হা/২৭৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৪৮।

[8]. ত্ববরানী, ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৫৯।

[9]. আহমাদ হা/১৯০২৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২।

[10]. আহমাদ হা/১৭১১, ৩৩৭৪; বুখারী হা/১০৫২; মুসলিম হা/৯০৭; নাসাঈ হা/১৪৯৩; ইবনে হিববান হা/১৩৭৭; মিশকাত হা/১৪৮২।

[11]. তিরমিযী হা/৩৬০; মিশকাত হা/১১২২; সনদ হাসান।

[12]. শারহুস সুন্নাহ, আহমাদ, তিরমিযী হা/৪৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫২০; মিশকাত হা/৩৬৯৬।

[13]. নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২৭২; ‘বিবাহ’ অধ্যায়, ‘স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ আলবানী

[14]. আহমাদ হা/২২১৫৪; তিরমিযী হা/১১৭৪;; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১৯২; মিশকাত হা/৩২৫৮।

[15]. নাসাঈ হা/৩২৩১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৩৮; মিশকাত হা/৩২২৭।

[16]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮৭; শু‘আবুল ঈমান হা/৮৩৫৮।



বিষয়সমূহ: পর্দা-হিজাব
আরও