হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ (রহঃ)
মুখতারুল ইসলাম
বর্তমান সময়ের পাকিস্তানের অন্যতম সালাফী বিদ্বান ছিলেন শায়খ হাফেয ছানাউল্লাহ মাদানী (রহঃ) (১৯৪০-২০২১ইং)। মুহাদ্দিছ, মুফতী এবং লেখক হিসাবে তিনি ছিলেন অনন্য জ্ঞানের অাঁধার। আর এ কারণেই পাকিস্তানে তিনি হাফেয হিসাবে সুপ্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
নাম ও জন্মঃ প্রকৃত নাম ছানাউল্লাহ, উপনাম- আবুন নাছর; পূর্ণনাম- ছানাউল্লাহ ইবনু ঈসা খান ইবনু ইসমাঈল খান আল কালাসাভী লাহোরী। তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের হাফেয। এজন্য দেশীয় প্রথানুসারে খুব ছোট থেকেই তাকে হাফেয সম্বোধন করে ডাকা হয়। এছাড়া যেহেতু তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সমাপ্ত করেছেন। এজন্য মাদানী বলে সম্বোধন করা হয়।
১৩৬০ হিজরী মোতাবেক ১৯৪০ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের নিকটবর্তী কালাস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজ গ্রামেই ইবতেদায়ী স্তরের প্রাথমিক শিক্ষা শেখেন। খুব অল্প বয়সেই পবিত্র আল-কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পড়াশুনার জন্য লাহোরে যান এবং সেখানে ‘জামি‘আ আহলুল হাদীছ লাহোরে’ ভর্তি হন। সাথে সাথে তিনি ‘জামি‘আ মুহাম্মাদিয়াহ উকাড়া’তেও কিছু সময় পড়াশুনা করেন। এখানেই তিনি তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং তার শিক্ষার্জনের অগ্রপথিক শায়খ আল্লামা হাফেয আব্দুল্লাহ রৌপড়ীর প্রথম সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পান এবং দীর্ঘ আট বছর পর্যন্ত তার সংস্পর্শে কাটানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি তাঁর নিকট থেকে মৌলিক বিষয়াবলীতে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে গভীর ইলম অর্জনে সক্ষম হন। ১৩৮১ হিজরী মোতাবেক ১৯৬১ সালে তিনি এখানে থেকেই ফারাগাত হাছিল করেন।
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকেই তিনি ১৩৮৩ হিজরীতে স্বীয় প্রিয় উস্তায শায়খ আল্লামা হাফেয আব্দুল্লাহ রৌপড়ী রাহিমাহুল্লাহ-এর তাযকিয়া পেয়ে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ পান। তিনি সেখানে শরী‘আহ বিভাগ থেকে ১৩৮৮ হিজরীতে লিসান্স সমাপ্ত করেন। তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ উস্তাযবৃন্দ এবং হারামের মাশায়েখের কাছেও গভীর ইলম অর্জন করেন।
এরপর তিনি দাঈ এবং শিক্ষক হিসাবে মদীনা থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি খেদমতের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা চলমান রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। সাথে সাথে তিনি ঐ বছরেই আরবী সাহিত্যে তাখাসসুস ডিগ্রী অর্জন করেন।
উস্তাযবৃন্দঃ তিনি পাকিস্তানসহ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মসজিদে নববীর দারস মিলিয়ে অনেক উস্তাযের নিকট থেকে ইলম অর্জন করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম উল্লেখ করা হ’ল-
পাকিস্তানে- শায়খুস সুনণাহ আল্লামা হাফেয আব্দুল্লাহ রৌপড়ী, মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-ফালাহ, মুহাম্মাদ হাসান অমৃতসরী, কাদির বখশ ভাওয়ালপুরী, মুহাম্মাদ কুনকুনপুরী, ড. মুজীবুর রহমান [তাফসীর ইবনে কাছীর এর-বাংলা অনুবাদক], তাজুদ্দীন হানাফী প্রমুখ।
সঊদী আরবে- শায়খ আব্দুল আযীয ইবনু বায, শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী, শায়খ মুহাম্মদ আমীন শানক্বীত্বী, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শায়খ আব্দুল্লাহ গুনায়মান, আব্দুল গাফফার হাসান রাহমানী, শায়খ হাম্মাম আনছারী, মুহাম্মাদ গোন্দলভী, তাকীউদ্দীন হিলালী, শায়খ মুখতার শানক্বীত্বী, শায়খ আবু বকর জাযায়েরী, শায়খ মুহাম্মদ আমান আল জামী, মুহাম্মাদ আলী আল লাখাভী, শায়খ আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালিম, মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম আলে শায়খ, শায়খ আব্দুল হক্ব হাশেমী, শায়খ হাফেয ফাতহী পাকিস্তানী রাহিমাহুমুল্লাহ আজমাঈন।
ইজাযাহ কেন্দ্রিক শায়খগণঃ শায়খ রাহিমাহুল্লাহ অনেক উস্তাযের কাছে ইলম অর্জন করেছেন এবং তাঁদের থেকে সনদ ও ইজাযাহ গ্রহণ করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু তুলে ধরা হলো। যথা-
১. আল্লামা হাফেয আব্দুল্লাহ আর রৌপড়ী- তিনি তাঁর কাছে কুতুবুস সিত্তাহসহ হাদীছের প্রায় সকল কিতাব পড়েছেন। সাথে সাথে তিনি সনদ ও ইজাযাহ গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল- আদাবুল মুফরাদ, শামায়েলে তিরমিযী, মুসনাদে শাফেঈ, মুসনাদে ত্বয়ালিসী, হুমায়দী, দারেমী, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, মুজাম আত তবারানী, বুলুগুল মারাম ইত্যাদি। মোটকথা তিনি তাঁর নিবিড় সংস্পর্শে দীর্ঘ আট বছর ছিলেন। এসময়ে সম্ভাব্য সকল কিতাব অধ্যয়ন করেন।
২. হাম্মাদ ইবনু মুহাম্মদ আনছারী মাদানী (মৃ. ১৪১৮ হি.)। শায়খ রাহিমাহুল্লাহ মদীনা অবস্থানকালে তাঁর থেকে দুইবার ইজাযাহ গ্রহণ করেন। এবিষয়ে আল মাজমূ' ফী তারজামাতিশ শায়খ আল্লামা মুহাদ্দিছ হাম্মাম আনছারী [المجموع في ترجمة الشيخ العلامة المحدّث حماد الأنصاري] গ্রন্থে উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর সাথে মদীনায় মাকতাবাতুল হাদীছিয়াহতে কিছু গবেষণা কাজ করেন।
৩. মুহাম্মাদ আব্দুহু ফালাহ ফায়রুযাবাদী (মৃ. ১৪২০ হি.)। তিনি তাঁর কাছে ছহীহ বুখারী এবং তিরমিযী পড়েন এবং ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
৪. মুহাম্মাদ আলী ইবনু মহিউদ্দিন আব্দুর রহমান সালাফী (মৃ. ১৩৯৪ হি.)। তিনি তাঁর থেকে হাদীছের প্রসিদ্ধ সাতটি গ্রন্থের ইজাযাহ গ্রহণ করেছেন।
৫. আব্দুল হক্ব ইবনু আব্দিল ওয়াহেদ হাশেমী মাক্কী (মৃ. ১৩৯২ হি.)। তিনি হারামাইনে তাঁর দারসে নিয়মিত বসতেন। তাঁর থেকে হাদীছের ইজাযাহ বিশেষ করে ইমাম শাফেঈ (রহ.)-এর ‘কিতাবুল উম্ম’-এর ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
৬. তাকীউদ্দীন ইবনু আব্দিল কাদির হিলালী সালাফী (মৃ. ১৪০৭ হি.)। মসজিদে নববীর দারসে তিনি নিয়মিত বসতেন। সেখানে তাঁর থেকে ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
৭. আব্দুল গাফফার হাসান রাহমানী ওমরপুরী (মৃ. ১৪২৯ হি.)। তিনি তাঁর কাছে শায়খ আযীমাবাদীর গায়াতুল মাকসূদ পড়েন এবং ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
৮. ইউসুফ মুহাম্মদ সালাফী। তিনি দারুল হাদীছ মদীনা-এর উছূলে হাদীছের উস্তায ছিলেন। মসজিদে নববীতে দারস দিতেন। তিনি তাঁর কাছে ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী রাহিমাহুল্লাহ-এর তারতীবে ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
৯. হাফেয মুহাম্মদ গোন্দালোভী- তিনি তাঁর কাছে মসজিদে নববীতে ছহীহ বুখারী পড়েন এবং ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
১০. মুহাম্মাদ ইসরাঈল ইবনু মুহাম্মদ ইব্রাহীম সালাফী।
১১. আব্দুল ওয়াকিল ইবনু আব্দিল হক্ব হাশেমী- তিনি কুবাতে তাঁর কাছে দারস নেন। ইজাযাহ গ্রহণ করেন।
১২. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দিল আযীয আল ঊকাইল প্রমুখ থেকে দারস গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন : মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা সমাপ্ত করে দেশে ফিরে তিনি ১৩৮৯ হিজরী থেকে ইলমী খিদমতে নিয়োজিত হন। তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। জামি‘আহ সালাফিয়াহ ফয়সালাবাদের অধ্যক্ষ ছিলেন। এরপর তিনি জামি‘আ ইসলামিয়া লাহোরে শায়খুল হাদীছ হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৪২৯ হিজরীতে তিনি ব্যক্তিগত কারণে এবং লেখালেখিতে মনোনিবেশের জন্য অব্যাহতি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই খেদমত চালিয়ে যান। এছাড়া তিনি মক্কায় হজ্ব মৌসুমে হাজ্বীদের দিক নির্দেশনার খেদমত করেছেন সরকারের পক্ষ থেকে। তিনি সঊদী সরকার কর্তৃক ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাবঊছ তথা দাঈর দায়িত্ব পালন করেন। আর তার ইলমী খেদমতের কারণে তাঁকে ১৪২৮ হিজরীতে লাহোরের মুফতী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পাকিস্তানের সকল গ্রহণযোগ্য আলেমের সম্মতিতে তাঁকে এই সম্মানিত উপাধি প্রদান করা হয়। যার পদমর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
শায়খ রাহিমাহুল্লাহ দ্বীনের জন্য একজন নিবিঢ়প্রাণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি পাকিস্তানে জামি‘আ খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে থেকে প্রায় ১০ হাযার হাফেয উপকৃত হয় নিয়মিত। এছাড়া তিনি ১৪১৫ হিজরীতে ‘মারকায আনসারুস সুন্নাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি আলেমদেরকে ইলমী মুযাকারা এবং বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতার জন্য একত্রিত করতেন। সাথে সাথে তিনি এখানে একটি সুন্দর অত্যাধুনিক লাইব্রেরী গড়ে তুলেছিলেন। আর এখানে থেকেই অনেক উচ্চতর শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আর্থিকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হ’ত। এছাড়াও তিনি লাহোরে ‘জামি‘আ মুহাম্মদ ইবনু আব্দিল ওয়াহহাব’ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শায়খ রাহিমাহুল্লাহ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানে এবং দেশের বাইরে অনেক ইলমী এবং দাওয়াহ সম্মেলনে যোগদান করেন। বিশুদ্ধ আক্বীদার প্রচার ও প্রসারে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম অনস্বীকার্য। বিশেষকরে পাকিস্তান, ভারত, আমেরিকা এবং ইউরোপে। তার তত্ত্বাবধানে লাহোর থেকে ‘ই‘তিছাম’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হ’ত। এছাড়া তিনি ‘সিরহালী জামে মসজিদ’-এর খতীব ছিলেন।
উল্লেখযোগ্য কর্মসমূহ : শায়খ রাহিমাহুল্লাহ-এর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
১. জায়িযাতুল আহওয়াযী ফিত তা‘লীক্বাতি আলা শারহিত তিরমিযী। দুই খন্ডে লিখিত এই গ্রন্থে প্রয়োজনমাফিক সংক্ষিপ্ত, মধ্যম এবং দীর্ঘ ব্যাখ্যা রয়েছে। বিশেষ করে শামায়েল অংশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা, যা প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠায় রচিত হয়েছে।
২. ফৎওয়া গ্রন্থ। উর্দূ ভাষায় রচিত চার খন্ডের এই ফৎওয়া গ্রন্থের প্রথম খন্ড আক্বীদা বিষয়ে লিখিত। আর দ্বিতীয় খন্ড ছালাত বিষয়ে। এখন এই দুই খন্ড পাওয়া যায়।
৩. ছহীহ বুখারীর হাশিয়াহ। কিতাবুছ ছিয়াম পর্যন্ত।
এছাড়া তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ, বিভিন্ন ভ্রান্তির খন্ডন এবং ফৎওয়া লিখতেন।
ছাত্রবৃন্দ : শায়খ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর কর্মজীবনে হাযারের অধিক ছাত্রকে পড়িয়েছেন। যার অধিকাংশই পাকিস্তানের। তন্মধ্যে পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য হ’ল- ড. আব্দুল কাদীর আব্দুল কারীম, ড. আব্দুল গাফফার, কারী আনোয়ার, হাফেয মুহাম্মদ শরীফ, কারী মুহাম্মদ ইব্রাহীম মীর মুহাম্মদী। যিনি জামি‘আ ইসলামিয়া লাহোর-এর কুরআন অনুষদের ডীন ছিলেন, শায়খ মুহাম্মদ ইসহাক যাহেদ, শায়খ আব্দুর রঊফ আব্দুল হান্নান, আব্দুস সাত্তার কাসিম, শায়খ মুহাম্মদ মুনীর নাওয়াবুদ্দীন, ড. হামীদুল্লাহ আব্দুল কাদীর প্রমুখ।
এছাড়া আরবে দাওয়াতী কাজ করা অবস্থায় তাঁর কাছে অনেক ছাত্র অধ্যয়ন করেন। কুয়েতেও তিনি ছহীহ বুখারীর দারস দিয়েছেন। কাতারে ছহীহ বুখারী ও মুসনাদে আহমাদ পড়িয়েছেন। রিয়াদে মুসনাদের দারস দিয়েছেন।
শায়খ সম্পর্কে মন্তব্য :
শায়খ রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে স্বীয় ছাত্র শায়খ ওয়ালীদ মুনীসী মিশরী বলেন, শায়খ হাফেয ছানাউল্লাহ পাকিস্তানের একজন নির্ভরযোগ্য আলেম ছিলেন। তাঁর সময়ে তাঁর সমপর্যায়ের আলেম খুবই কম ছিল। এজন্য পাকিস্তানীদের নিকটে তিনি হাফেয হিসাবে সুপ্রসিদ্ধি লাভ করেন।
শায়খ ফয়সাল আলী বলেন, শায়খ হাফেয ছানাউল্লাহ মাদানী পাকিস্তানের একজন খ্যাতনামা সালাফী বিদ্বান। তিনি ইলম এবং দাওয়াতের প্রচার ও প্রসারে নির্ভীক ও নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। আর এ কাজে তিনি কোন দুনিয়াবী প্রাপ্য গ্রহণ করতেন না।
শায়খ সম্পর্কে তাঁর স্বীয় আরেক ছাত্র বলেন, আমি উস্তাযের সাথে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছি এবং বিভিন্ন দেশে সফর করেছি। শায়খ রাহিমাহুল্লাহ ইলম ও আমলে গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি সুন্নাহর উপর অবিচল থাকতে সদা সচেষ্ট থাকতেন। তিনি যখনই কোন বিজ্ঞ আলেমের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পেতেন, তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করতেন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের কিবারে ওলামাদের অন্যতম শায়খ ছালিহ আল ঊসাইমী, শায়খ ছালিহ আশ-শালাহী, শায়খ আব্দুল্লাহ ওবায়েদ হাফিজাহুমুল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পেলে তিনি তা গ্রহণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। তাদের থেকে ইলম অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিতেন।
পরিবার : শায়খ রাহিমাহুল্লাহ এর দু’জন স্ত্রী ছিল। প্রথম পক্ষের এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং দ্বিতীয় পক্ষের মোট পাঁচ সন্তান রয়েছে।
মৃত্যু : শায়খ রাহিমাহুল্লাহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ফুসফুসের রোগে তিনি দীর্ঘদিন আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে বাড়িতেই পড়ে গিয়ে আঘাত পান। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অতঃপর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলে ১৪৪২ হিজরী মোতাবেক ২০২১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী ৮২ বছর বয়সে দুপুরের কিছু পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। মহান আল্লাহ দ্বীনের এই খাদেমকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন- আমীন!
আব্দুল হাকীম |
[লেখক : শিক্ষার্থী, হাদীছ বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ]