বিপর্যস্ত দেশ : নৈতিক শক্তির জাগরণ আশু কাম্য

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 787 বার পঠিত

ক্ষমতা লাভ ও ক্ষমতা স্থায়ীকরণের দ্বৈত নীতির হিংস্র আক্রমণে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশ আজ চরমভাবে বিপর্যস্ত। পোড়া দেহের দুর্গন্ধে বাংলার বাতাস দূষিত। হরতাল-অবরোধে জনজীবন অতিষ্ঠ। পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে গাছ, জ্বলছে বাস-ট্রাক, পুড়ছে ঘর-বাড়ী ও বিভিন্ন আসবাবপত্র। বিপন্ন আজ জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পেট্রো্লবোমা ও ককটেলের আতঙ্কে মানুষ আজ দিশেহারা। বার্ন ইউনিটগুলোতে অগ্নিদগ্ধ অসহায় মানুষের আর্তনাদ ও স্বজনহারানো মানুষের কান্নার রোল তথাকথিত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। হুমকির সম্মুখীন করেছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে। সচেতন দেশবাসীসহ সকলের একটিই প্রশ্ন, একি অবস্থা একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন জনগণের! যেখানে জীবনের এতটুকু নিরাপত্তা নেই। এরই নাম কি স্বাধীনতা! এরই নাম কি মানবাধিকার! দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতকিছুর পরেও দেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক জোটের নেতৃবৃন্দ আজ ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছেন। কেউ কাউকে সামান্যতম ছাড় দিতে প্রস্ত্তত নন। ন্যায়-অন্যায় তাদের রঙ্গিন চোখে ঠাহর পাচ্ছে না। ফলে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।

হরতাল-অবরোধে চলছে নির্বিচারে পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস। যার আগুন গ্রাস করছে নিরীহ সাধারণ মানুষের জীবন। নারী-শিশু, বৃদ্ধ-তরুণ, শ্রমজীবী-পেশাজীবী কেউ রেহাই পাচ্ছে না এর নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে। পৈশাচিক এ সহিংসতায় প্রতিনিয়ত বিপন্ন হচ্ছে মানবতা ও মানবাধিকার। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের গগণবিদারী আর্তচিৎকার বিবেককে করেছে ক্ষতবিক্ষত। লাঞ্ছিত মানবতার আহাজারী ও বেদনাদায়ক দৃশ্য হৃদয়কে করেছে হাহাকার। ‘আমি আসলে দিনমজুর। কত রকম কাজ করে যে আমাকে সংসার চালাতে হয়। এখন কী করব। আমাকে কেন আগুনে পুড়ানো হল?’, ‘আমার কিছু হলে আমার পিতা-মাতাকে কে দেখবে?’, ‘আমার সন্তান আমার জন্য অপেক্ষা করছে’ ইত্যাদি রকমের হাযারো লাঞ্ছিত মানবতার আর্তচিৎকারে বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অথচ ইহূদী-খ্রিষ্টানদের পা চাটা গোলাম মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। অতএব এভাবেই লাঞ্ছিত মানবতা কি শুধু আর্তনাদ করেই ক্ষান্ত হবে?

শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী আজ কোণঠাসা। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস ও পরীক্ষা সবই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত। ফলে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর জীবন আজ অনিশ্চয়তার পথে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। দৈনিক কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এফবিসিসিআই-এর পরিসংখ্যান মতে গত ৪৪ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ২০ হাযার কোটি টাকা। বাণিজ্য বন্দরগুলোতে মাল খালাস হচ্ছে না, আমদানীকৃত মালামাল সময়মত পৌঁছাচ্ছে না। দেশের টন টন উৎপাদিত কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে। পচনশীল সবজী ডাস্টবিনের খোরাকে পরিণত হচ্ছে। সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়-রোজগার কমে গেছে। যে দেশে রাত্রিবেলায় যানবাহন বন্ধ থাকে, প্রশাসন প্রহরায় মালবাহী ট্রাক পারাপারা হয় সে দেশকে কি প্রকৃতঅর্থে স্বাধীন রাষ্ট্র বলা চলে?

এভাবে কোন দেশ, কোন সমাজ চলতে পারে না। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে নৈতিকতাহীন রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আমরা কোন কল্যাণের আভাষ পাচ্ছি না। প্রকৃতপক্ষে নৈতিক শক্তির জাগরণ ছাড়া এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কোনই সুযোগ নেই। সেজন্যই নৈতিকতার জাগরণে আলেম সমাজের ভূমিকাই হবে অগ্রগণ্য। যদি বরাবরের মত এগুলোকে রাজনৈতিক গন্ডগোল কিংবা দলাদলির বিষবাষ্প হিসাবে চিহ্নিত করে এড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে সেটা প্রকৃতপক্ষে আমাদের দায়িত্বহীনতার দিকটাই উন্মোচিত করবে। সুতরাং আমরা দেশের এই সংকট মুহূর্তে জাতিকে উদ্ধারের জন্য ইসলামী শক্তিসমূহের জাগরণ কামনা করছি এবং সমস্যা সমাধানে তাদের বলিষ্ঠ ও নৈতিক ভূমিকা কামনা করছি। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!! 



বিষয়সমূহ: শিক্ষা-সংস্কৃতি
আরও