পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের করণীয় (৫ম কিস্তি)
আব্দুর রহীম
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1479 বার পঠিত
ভূমিকা :
ইখলাছ হল দ্বীনের মূল ভিত্তি এবং সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ, যা ব্যতীত বান্দার ইসলাম অসম্পূর্ণ। আর ইখলাছ ছাড়া আললাহ কোন ফরয বা নফল ইবাদত গ্রহণ করেন না। তাই ইসলামে ইখলাছের গুরুত্ব সর্বাগ্রে। কেননা এর উপরেই নির্ভর করে সমস্ত আমল গ্রহণ হওয়া না হওয়া।
ইখলাছের পরিচয় :
ইখলাছ (الإخلاص) শব্দটি আরবী। এটি বাবে إفعال এর মাসদার। আভিধানিক অর্থ, ةصفية الشيئ و تنقيته ‘কোন বস্ত্তকে পরিষ্কার করা বা স্বচ্ছ করা’। যেমন বলা হয়, خلص الشيئ من الشوائب إذا صفا وخلصه أزال عنه ما يكدره ‘সংমিশ্রিত বস্ত্ত থেকে কোন বস্ত্তকে আলাদা করলে সেটা খাঁটি বা নির্ভেজাল হয়’।[1]
পরিভাষায় هو قصد المعبود وحده بالعبادة ‘ইবাদতের মাধ্যমে শুধু আললাহকেই উদ্দেশ্য করা’। যেমন আললাহ বলেন, وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘সে তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে শরীক করে না’ (কাহাফ ১৮/১১০)।
ইবনু ‘আশূর (রহঃ) বলেন, أن يكون الداعى إلى الإتيان بالمأمور وإلى ترك المنهى إرضاء الله تعالى ‘দাঈ আললাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর নির্দেশিত বস্ত্ত পালন করবে এবং নিষেধকৃত বস্ত্ত থেকে বিরত থাকবে’।[2]
ইসলামে ইখলাছের অবস্থান :
ইখলাছই হচ্ছে দ্বীনের মূল বস্ত্ত। আললাহ তা‘আলা বলেন, وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আললাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে’ (বাইয়্যেনাহ ৯৮/৫)। অন্যত্র আললাহ বলেন, قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ ‘বলুন! আমি তো আদিষ্ট হয়েছি আললাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে’ (যুমার ৩৯/ ১১)। তিনি আরো বলেন, فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ- أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ‘সুতরাং আপনি আললাহর ইবাদত করুন তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। জেনে রাখুন! অবিমিশ্র আনুগত্য একমাত্র আললাহরই প্রাপ্য’ (যুমার ৩৯/২-৩)।
আর ইখলাছ হচ্ছে রাসূলগণের দাওয়াতের চাবি, যা নিয়ে তাঁরা প্রেরিত হয়েছিলেন। তাদের দাওয়াতের এটিই ছিল সুমহান মূলনীতি। মহান আললাহ বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘আললাহর ইবাদত করার ও ত্বাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি’ (নাহল ১৬/৩৬)।
অন্তরের আমলের মেরুদন্ড হচ্ছে ইখলাছ, যার ফলে বান্দার আমলগুলোর মর্যাদা বেড়ে যায়। এই কথাটি ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) আরো সুস্পষ্ট করে বলেন, ‘অন্তরের আমল হচ্ছে ইবাদতের রূহ ও সারবত্তা, যখন দৈহিক আমল তা থেকে মুক্ত হবে তখন সেটা রূহ ব্যতীত একটি মৃত দেহের ন্যায়। আর নিয়তই হচ্ছে অন্তরের আমল’।[3] তিনি আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে দৈহিক ইবাদত নিয়তের অনুগামী ও পরিপূরক। কেননা নিয়তটা হচ্ছে রূহের স্থলাভিষিক্ত এবং আমল হচ্ছে দেহের ন্যায়। যেমনভাবে শরীর থেকে আত্মা বের হয়ে গেলে সেই শরীরের কোন মূল্য নেই, তেমনই নিয়ত ব্যতীত কোন আমল করলে তা অনর্থক। তাই দৈহিক ইবাদতের হুকুম অবগত হওয়ার চেয়ে অন্তরের হুকুম অবগত হওয়ার গুরুত্ব অত্যধিক। অতএব নিয়ত হল আসল আর আমল হল তার শাখা।
অন্তরের আমল দৈহিক আমলের চেয়ে অধিকতর বড় ফরয। কেননা একজন মুমিনকে মুনাফিক থেকে অন্তরের আমল ব্যতীত বাছাই করা কি সম্ভব? আর অন্তরের আমলের পরিশুদ্ধতা ছাড়া শুধুমাত্র দৈহিক আমলের মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে মুসলিম মনে হলেও আললাহর দরবারে সে মুসলিম হিসাবে স্বীকৃতিলাভ করবে না। এই কারণেই অন্তরের ইবাদত দৈহিক ইবাদতের চেয়ে সুমহান; বরং ওয়াজিব। এজন্য সর্বদা অন্তরের ঈমান থাকা ওয়াজিব এবং কিছ কিছু সময়ে অঙ্গপ্রতঙ্গে ইসলাম থাকা ওয়াজিব। তাই ঈমানের ঘাঁটি হল অঙ্গপ্রতঙ্গ।[4] সেটি হচ্ছে ইবাদত গ্রহণের দু’টি শর্তের একটি । দু’টির কোন একটি ব্যতীত কোন ইবাদত গৃহীত হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ ‘নিশ্চয় আললাহ তা‘আলা নিখাঁদচিত্তে ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনার উদ্দেশ্যে কৃত আমল ছাড়া গ্রহণ করেন না’।[5]
অন্যদিকে এই গুণে যারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিলেন আললাহ তাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি মূসা (আঃ) সম্পর্কে বলেন, وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَى إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا ‘স্মরণ করুন এই কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল বিশেষভাবে মনোনীত এবং সে ছিল রাসূল ও নবী’ (মারইয়াম ১৯/৫১)। ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে বলেন, كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ ‘আমি তাকে মন্দ কর্ম ও অশলীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নির্দেশ দিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অর্ন্তভুক্ত’ (ইউসুফ ১২/২৪)। মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে বলেন, قُلْ أَتُحَاجُّونَنَا فِي اللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ وَلَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُخْلِصُونَ ‘বলুন! আললাহ সম্বন্ধে তোমরা কী আমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক! আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের এবং তাঁর প্রতি আমরা একনিষ্ঠ’ (বাক্বারাহ /২১৩৯)। উক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইখলাছ হচ্ছে নবী ও রাসূলগণের উলেলখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন।
পক্ষান্তরে এর বিপরীতে আললাহ পাক কঠোর শাস্তির কথা উলেলখ করেছেন। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইখলাছ মুক্ত কোন আমল করবে তার জন্য পরকাল অতি ভয়াবহ। আললাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ‘নিশ্চয় আললাহ তাঁর সাথে শিরক করা ক্ষমা করেন না। এ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন’ (নিসা ৪/৪৮)। وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا ‘আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, ‘ঐ সমস্ত আমল, যেগুলো সুন্নাত অনুপাতে ছিল না অথবা তাতে আললাহর সন্তুষ্টি কাম্য ছিল না’।
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘ঐ সব মুশরিকদের আমল, যেগুলোকে তারা মনে করত এই আমলগুলো তাদের নাজাতের মাধ্যম হবে, আর সে আমলগুলো গ্রহণের শর্ত অনুযায়ী ছিল না। শর্তদু’টি হল, আললাহর জন্য একনিষ্ঠভবে আমল করা এবং রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর আনুগত্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ ‘আমি শিরককারীদের শিরক হতে মুক্ত, যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যাতে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করল তাহলে আমি তাকে ও তার অংশীদারকে পরিত্যাগ করলাম’।[6] مَنْ طَلَبَ العِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ العُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলেমদের উপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহেল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আললাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[7] এই কারণে প্রত্যেক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইবাদতে ইখলাছ হচ্ছে মৌলিক উদ্দেশ্য। ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) ইখলাছের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বলেন, ‘ইখলাছ বিহীন আমল ঐ মুসাফিরের ন্যায়, যে তার ব্যাগ বালি দ্বারা পূর্ণ করে বহন করে আর তা তার কোন উপকারে আসে না’।
ইখলাছ অত্যন্ত কঠিন বিষয় :
ইখলাছের বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন নাফসের উপর এটি সর্বাপেক্ষা কঠিন বিষয়। কারণ ইখলাছ এবং প্রবৃত্তি নাফসের মাঝে ঘূর্ণায়মান। তাই ইখলাছ বাস্তবায়ন করতে এবং অটুট রাখতে বড় সাধনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আর এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র জনসাধারণের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আলেম ওলামা, সালাফে-ছালেহীন, আবেদ, নির্বিশেষে সকলেই এর মুখাপেক্ষী। সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, ما عالجت شيئا أشد على من نيتى إنها تنقلب على ‘আমার নিয়তের চেয়ে কঠিন কোন বিষয় সংশোধনের চেষ্টা করিনি। আমার বিপরীতেই তা মোড় নেয়।[8] এ সম্পর্কে ইউসুফ ইবনুল হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সর্বোৎকৃষ্ট বস্ত্ত হল ইখলাছ। আমি কতই না চেষ্টা করেছি আমার অন্তর থেকে রিয়া দূর করতে। আমি যতই চেষ্টা করি তা দূর করতে কিন্তু সেটি অন্যরূপে আবার আবির্ভূত হয়’।[9]
ইউসুফ ইবনু আসবাত বলেন, تخليصُ النِّيةِ مِنْ فسادِها أشدُّ على العاملينَ مِنْ طُولِ الاجتهاد ‘নিয়তকে তার গোলযোগ থেকে স্বচ্ছ রাখা দীর্ঘ পরিশ্রম করার চেয়েও অধিক কঠিন’।[10] একদা সাহল ইবনু আব্দুললাহকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনার উপর কোন বস্ত্ত সর্বাপেক্ষা কঠিন? উত্তরে তিনি বলেন, ইখলাছ।[11] এ কারণে রাসূলুললাহ (ছাঃ) বেশী বেশী নিমেণাক্ত দো‘আটি পাঠ করতেন-يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِى عَلَى دِينِكَ ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখুন’।[12] রাসূলুললাহ (ছাঃ) শপথের সময়েও এ দো‘আটি পাঠ করতেন, لاَ وَمُقَلِّبِ الْقُلُوبِ ‘(এর বিপরীত) নয়, অন্তরের পরিবর্তনকারীর কসম’। [13]
ইখলাছের পুরস্কার
১. জান্নাতুন নাঈম লাভ :
আললাহপাক তাঁর মুখলেছ বান্দার জন্য অনেক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যে সর্বোত্তম পুরস্কার হল জান্নাতুন নাঈম। মহান আললাহ বলেন,إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ- فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ- فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ- عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ. ‘তবে তারা নয় যারা আললাহর একনিষ্ঠ বান্দা। তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রিযিক। ফল-মূল; আর তারা হবে সম্মানিত সুখ-কাননে’ (ছাফ্ফাত ৩৭/ ৪০-৪৩)।
২. আমলের গ্রহণযোগ্যতা :
ইখলাছ হচ্ছে আমল কবুলের অন্যতম শর্ত। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আললাহ কোন আমল গ্রহণ করেন না দু’টি রুকন ব্যতীত। যথা- (১) শরী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী হওয়া (২) শিরক মুক্ত।[14] আজী বলেন, ইলম পূর্ণতা লাভ করে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে। যথা- (১) আললাহ সম্পর্কিত জ্ঞান (২) প্রকৃত শিক্ষা (৩) একমাত্র আললাহর জন্য একনিষ্ঠ আমল (৪) সুন্নাতী পদ্ধতিতে আমল করা এবং (৫) হালাল রিযিক ভক্ষণ করা। এগুলোর কোন একটি না থাকলে আমল গৃহীত হবে না।[15] অন্যত্র তিনি বলেন,
إِذَا جَمَعَ اللَّهُ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِيَوْمٍ لَا رَيْبَ فِيهِ نَادَى مُنَادٍ مَنْ كَانَ أَشْرَكَ فِي عَمَلٍ عَمِلَهُ لِلَّهِ فَلْيَطْلُبْ ثَوَابَهُ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ.
‘ক্বিয়ামতের দিন, যে দিনের আগমনে কোন সন্দেহ নেই, সেদিন আললাহ যখন পূর্বাপর সকলকে একত্র করবেন, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আললাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে গিয়ে এর মধ্যে কাউকে শরীক করেছে, সে যেন গাইরুললাহর নিকট নিজের ছওয়াব চেয়ে নেয়। কেননা আললাহ শরীকদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’।[16]
৩. আখিরাতে রাসূলের শাফা‘আত লাভ :
বান্দার ইখলাছ যত বেশী হবে সে ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের দ্বারা ততবেশী সফলকাম হবে। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি, যে একনিষ্ঠচিত্তে বলে, আললাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই’।[17] ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এ হাদীছ সম্পর্কে বলেন, ‘তাওহীদের রহস্য হল শুধুমাত্র তাওহীদের মাধ্যমে শাফা‘আত পাওয়া যাবে। অতএব যে ব্যক্তি তাওহীদের দিক থেকে বেশী পরিপূর্ণতা লাভ করবে সেই শাফা‘আতের অধিক উপযোগী হবে। অতঃপর তিনি বলেন, শাফা‘আত হল আহলে ইখলাছদের জন্য, আললাহর সাথে শিরককারীদের জন্য নয়’।[18]
৪. অন্তর বিদ্বেষ মুক্ত হয় :
যে সময় কোন অন্তরে ইখলাছের আগমন ঘটে তখন তাকে পুনরুজ্জীবিত করে, বিপদ থেকে রক্ষা করে, খারাপ গুণ ও অশলীলতা থেকে সুরক্ষা করে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে বলেন,
ثَلاَثٌ لاَ يُغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِخْلاَصُ الْعَمَلِ لِلَّهِ وَالنُّصْحُ لأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَلُزُومُ جَمَاعَتِهِمْ
‘এমন তিনটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো মুমিন ব্যক্তির অন্তর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারবে না। ১. আললাহর জন্য একনিষ্ঠ আমল ২. মুসলিম জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করা ও ৩. মুসলিম জাতির জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা’।[19]
৫. পাপরাশি মার্জনা ও দ্বিগুণ প্রতিদান :
যখন কোন ব্যক্তি ইখলাছযুক্ত আমল করতে সক্ষম হবে, তখন এটি তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দ্বিগুণ প্রতিদানের মাধ্যম হবে। যদিও আনুগত্য বাহ্যিকভাবে অল্প বা কম মনে হয়। এ বিষয়ে ইবনুল মুবারক বলেন, رب عمل صغير تكثره النية ورب عمل كثير تصغره النية ‘অনেক ছোট আমলকে নিয়ত বৃদ্ধি করে দেয়। আর অনেক বেশী আমলকে নিয়ত কম করে দেয়’।[20]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘মানুষ কখনো একই প্রকার আমল করে সেটা এমনভাবে করে যে তার আমলের মধ্যে তার ইখলাছটা শুধুমাত্র আললাহর জন্য পরিপূর্ণভাবে রূপ পায়। অতঃপর আললাহপাক এর বিনিময়ে কাবীরা গুণাহ ক্ষমা করে দেন’। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
আব্দুললাহ ইবনু আমর ইবনু ‘আছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টির সামনে আমার এক উম্মতকে ডাকা হবে। অতঃপর তার সামনে নিরানববইটি দফতর পেশ করা হবে। প্রতিটি দফতর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দীর্ঘ হবে। মহান আললাহ বলেন, তুমি কী এর কোন কিছু অস্বীকার কর? সে বলবে, না, হে আমার প্রভু! আললাহ বলবেন, তোমার উপর আমলনামা লেখক আমার ফেরেশতাগণ কী যুলুম করেছে? অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার নিকট কোন নেকি আছে? সে ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং বলবে, না। তখন আললাহ বলবেন, হ্যঁা, আমার নিকট তোমার কিছু নেকী জমা আছে। আজ তোমার উপর যুলুম করা হবে না। অতঃপর তার সামনে একটি চিরকুট তুলে ধরা হবে, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আললাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’। আললাহ বলবেন, তুমি তোমার (আমলনামা ওযনের সময়) উপস্থিত থাক। সে বলবে, হে আমার রব! এত বৃহৎ দফতর সমূহের তুলনায় এই ক্ষুদ্র চিরকুট আর কী উপকারে আসবে! তিনি বলবেন, তোমার প্রতি অন্যায় করা হবে না। অতঃপর সেই বৃহদাকার দফতর সমূহ এক পাললায় এবং সেই ক্ষুদ্র চিরকুটটি আর এক পাললায় রাখা হবে। এতে বৃহদাকার দফতর সমূহের পাললা হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং ক্ষুদ্র চিরকুটের পাললা ভারী হয়ে যাবে।[21]
হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ফযীলত ঐ ব্যক্তির জন্য, যে কালেমা শাহাদত ইখলাছের সাথে বলবে। তবে কাবীরা গুণাহগাররা যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে তারাও তো لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলত। কিন্তু তাদের বলাটা তাদের গুণাহর চেয়ে ভারী হবে না। যেমনটি لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّه -এর কথকের কার্ডটি ভারী হয়েছিল। অতঃপর তিনি ব্যভিচারীর হাদীছ উলেলখ করেন যে, কুকুরকে পানি পান করিয়েছিল, অতঃপর আললাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ঐ ব্যক্তির ঘটনা, যে ব্যক্তি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানোর ফলে আললাহ তাকে ক্ষমা করেছেন। তিনি এভাবে বলেন যে, এই মহিলাটি কুকুরকে পানি পান করিয়েছিলেন সাথে তার অন্তরে খালেছ ঈমান ছিল অতঃপর আললাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। নচেৎ আললাহ কী প্রত্যেক ব্যভিচারী, যে কুকুরকে পানি পান করাবে আর তাকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন? অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়েছিল সেও খালেছ ঈমানের সাথে করেছিল, বিধায় আললাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
অতএব আমল শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে অন্তরের ঈমান ও ইখলাছের ভিত্তিতে; যেমনভাবে দু’জন ব্যক্তি একই কাতারে ছালাত আদায় করে কিন্তু তাদের ছাওয়াবের ব্যবধান হল আসমান-যমীনের ন্যায়। সুতরাং যারা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরাবে তাদের প্রত্যেকেই ক্ষমা করা হবে না।[22]
অপরপক্ষে বান্দা কোন কাজ ইখলাছমুক্ত অবস্থায় করলে তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা উলেলখ করা হয়েছে। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন,لَا تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ وَلَا لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ وَلَا تَخَيَّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ ‘তোমরা আলেমদের উপর বাহাদুরী প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা কর না। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন।[23]
৬. সহায়তা ও দৃঢ়তা লাভ :
ঈমানদারগণ তাদের আমলগুলো ইখলাছের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে। ফলে তারা আললাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হয়।
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَشِّرْ هَذِهِ الأُمَّةَ بِالنَّصْرِ وَالسَّنَاءِ وَالتَّمْكِينِ فَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ عَمَلَ الآخِرَةِ لِلدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ فِى الآخِرَةِ نَصِيبٌ.
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘এই উম্মতকে সাহায্য, উচ্চমর্যাদা ও শক্তি দিয়ে বিজয় দান করার সুসংবাদ প্রদান কর। তবে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য আখেরাতের আমল করবে তার জন্য আখেরাতে কোন কল্যাণকর অংশ থাকবে না।[24]
সুধী পাঠক! আমরা যদি সালাফে ছালেহীনদের জীবনী একটু ভেবে দেখি তাহলে সহজেই বুঝতে পারব যে, তারা শুধুমাত্র তাদের ঈমানী শক্তি, আত্মপরিশুদ্ধি ও অন্তরের ইখলাছের বিনিময়ে সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছিলন।
এ প্রসঙ্গে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, فَمَنْ خَلُصَتْ نِيَّتُهُ فِي الْحَقِّ وَلَوْ كَانَ عَلَى نَفْسِهِ كَفَاهُ اللهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّاسِ ‘হক্বের ক্ষেত্রে যার নিয়ত নির্ভেজাল হয়, যদিও স্বয়ং তার মনের বিপক্ষে হয়, তাহলে তার মাঝে এবং মানুষের মাঝে আললাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়’।[25]
৭. ইহকালে মানুষের ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন :
আললাহ তা‘আলা মুখলিছ ব্যক্তির জন্য সৃষ্টির অন্তরে ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে দেন। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি রিয়া প্রদর্শন করে প্রসিদ্ধ এবং মর্যাদা অর্জন করতে চায় আললাহ তার উদ্দেশ্য ভন্ডুল করে থাকেন। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ ‘যে ব্যক্তি লোক শোনানো ইবাদত করে আললাহ এর বিনিময়ে তার লোক শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করবে আললাহ তার বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন’।[26] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ فَرَّقَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الْآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ أَمْرَهُ وَجَعَلَ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ ‘পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আললাহ তা‘আলা তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দারিদ্রতা তার নিত্য সঙ্গী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আললাহ তার সব কিছু সুষ্ঠু করে দিবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাযির হবে’।[27]
৮. মুবাহ কর্ম মহৎ-এ রূপান্তর :
বান্দার যাবতীয় কর্ম বিশুদ্ধ ও সৎ নিয়তের ভিত্তিতে সংঘটিত হলে তা গৃহীত হিসাবে গণ্য হয়। হাদীছে এসেছে,
‘তোমাদের স্ত্রী মিলনেও রয়েছে ছাদাক্বার ছাওয়াব। (ছাহাবীগণ) বললেন, হে আললাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের কেউ তার প্রবৃত্তি কামনা পূর্ণ করবে আর তাতে তার ছাওয়াব হবে? রাসূল (সঃ) বললেন, তোমরা কি মনে কর, যদি সে তার প্রবৃত্তি কামনা হারাম (যেনার) কাজে ব্যবহার করত, তাহলে কি সে ক্ষেত্রে পাপ হত না? অনুরূপভাবে যখন সে তার প্রবৃত্তি কামনা হালাল (স্ত্রীর সাথে) পথে ব্যবহার করবে তখন তার ছাওয়াব হবে’।[28] তিনি আরো বলেন,إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فَمِ امْرَأَتِكَ ‘তুমি আললাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও (প্রতিদান পাবে)’।[29]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, যখন মুবাহ আমলের মাধ্যমে আললাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়, তখন সে আমল মহৎ কর্মে পরিণত হয় এবং তার প্রতিদান দেওয়া হয়। আর রাসূল (ছাঃ) তাঁর এই বাণীর মাধ্যমে সতর্ক করেছেন যে, حَتَّى اللُّقْمَةِ تَجْعَلُهَا فِي فِيِّ امْرَأَتِكَ ‘কেননা স্ত্রী দুনিয়াবী বস্ত্তগুলোর মধ্যে সর্বশ্রষ্ঠ। যখন সে তার স্ত্রীর মুখে গ্রাস তুলে দেওয়ার বিনিময়ে আললাহ তাকে ছাওয়াব দেন’। আর এমন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয় স্ত্রীর সাথে বিনোদনের সময়ে; অথচ এই সময়টি পরকালের আমল থেকে অনেক দূরের ব্যাপার। তদপুরি আললাহ পাক সে আমলে ইখলাছ থাকার কারণে ছাওয়াব দান করেন। তাহলে অন্য আমলের ক্ষেত্রে ইখলাছের বিনিময়ে আললাহ কতগুণ ছাওয়াব দান করেন? যা সহজে বোধগম্য। এই কারণে সালাফগণ প্রত্যেক মুবাহ কাজে সৎ নিয়ত করতেন, যাতে তাদের কোন আমল ছাওয়াব মুক্ত না হয়। কেননা বান্দার নিয়ত সৎ ও স্বচ্ছ হলে আললাহ তাকে প্রতিদান দেন যদিও একটি গ্রাসের বিনিময়ে হয়। যেমনভাবে ইখলাছ মুবাহ আমলকে মহৎ আমলে উন্নীত করে। পক্ষান্তরে রিয়া (লোক দেখান) আমল, মহৎ আমলকে জঘন্য গুনাহে রূপান্তর করে ফেলে। আললাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ‘হে বিশ্বাসীগণ! দানের কথা বলে বেড়ায়ো না এবং ক্লেশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল করো না, যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আললাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৪)।
৯. সৎ নিয়ত আমলের সমপরিমাণ :
কখনো সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থসংকট বা অসুস্থতার কারণে সে সৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হয়। কখনো কল্যাণকর কাজ করতে প্রচেষ্টা করে; কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। আললাহ তা‘আলা তার অন্তরের ইখলাছের ফলে ঐ কর্মে তাকে পুরোপুরি প্রতিদান দিয়ে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَقْوَامًا بِالْمَدِينَةِ خَلْفَنَا، مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلاَ وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ، حَبَسَهُمُ العُذْرُ ‘কিছু ব্যক্তি মদীনায় আমাদের পিছনে রয়েছে। আমরা কোনো ঘাঁটি বা উপত্যকায় চলিনি, তাদের সঙ্গে ব্যতীত। ওযর-ই তাদের বাধা দিয়েছে’[30] এবং إِلَّا شَرِكُوكُمْ فِي الْأَجْرِ ‘তবে তারা তোমাদের সাথে ছাওয়াবে শামিল হয়েছে’।[31] তিনি আরো বলেন,مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتَّى أَصْبَحَ كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের ছালাত পড়ার নিয়ত করে ঘুমাতে যায় কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় ঘুমে বিভোর হয়; এমনকি সে সকাল করল, তার জন্য তাই লেখা হবে যা সে নিয়ত করে। আর তার এই ঘুম-ই হবে আললাহর পক্ষ হতে ছাদাক্বা’।[32] তিনি আরো বলেন, مَنْ سَأَلَ اللهَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ ‘যে সততার সাথে শহীদ হওয়ার কামনা করে আললাহ তাকে শহীদী মর্যাদা দান করেন যদিও সে আপন বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’।[33] রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً ‘যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের নিয়ত করল কিন্তু সে তা পালন করল না, তবুও তার জন্য একটি ছওয়াব লেখা হয়’।[34]
মুখলিছ ব্যক্তির কাজটি যদি যথাস্থানে নাও পৌঁছে, তবুও মহান আললাহ তাকে পূর্ণ ছাওয়াব দান করেন। শুধুমাত্র তার ইখলাছের বিশুদ্ধতার বিনিময়ে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু ছাদাক্বা করব। ছাদাক্বা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, চোরকে ছাদাক্বা দেওয়া হয়েছে। এতে সে বলল, হে আললাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই ছাদাক্বা করব। ছাদাক্বা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিনীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, রাতে এক ব্যভিচারিনীকে ছাদাক্বা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আললাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার ছাদাক্বা) ব্যভিচারিনীর হাতে পেঁŠছল! আমি অবশ্যই ছাদাক্বা করব। এরপর সে ছাদাক্বা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, ধনী ব্যক্তিকে ছাদাক্বা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আললাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার ছাদাক্বা) চোর, ব্যভিচারিনী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়ল! পরে স্বপ্নযোগে বলা হল, তোমার ছাদাক্বা ব্যভিচারিনী পেয়েছে, সম্ভবতঃ সে তার ব্যভিচার হতে পবিত্র থাকবে, ধনী ব্যক্তি তোমার ছাদাক্বা পেয়েছে, সম্ভবতঃ সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আললাহর দেওয়া সম্পদ হতে ছাদাক্বা করবে, আর তোমার ছাদাক্বা চোর পেয়েছে, সম্ভবতঃ সে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে’।[35]
১০. বিপদ থেকে মুক্তিলাভ :
সৎ থাকার কারণে আললাহ দুনিয়ার বালা-মুছীবত থেকে রক্ষা করেন এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন। মহান আললাহ বলেন,وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ. ‘তাদের পূর্বেও পূর্ববর্তীদের অধিকাংশ বিপথগামী হয়েছিল’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৭১)। আললাহ আরো বলেন,
‘তিনি তোমাদেরকে জল-স্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বয়ে যায় এবং তারা তাতে আনন্দিত হয়, অতঃপর এগুলো ব্যাহত এবং সর্বদিক হতে তরঙ্গায়িত হয় এবং তারা তার দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে মনে করে, তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আললাহকে ডেকে বলে, তুমি আমাদেরকে ইহা হতে পরিত্রাণ দিলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অর্ন্তভুক্ত হব। অতঃপর তিনি যখনই তাদেরকে বিপদ-মুক্ত করেন তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে যুলুম করতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের যুলুম বস্ত্ততঃ তোমদের নিজেদের প্রতিই হয়ে থাকে; পার্থিব জীবনে সুখ ভোগ করে নাও, পরে আমারই নিকটে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। যখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা করতে’ (ইউনুস ১০/২২-২৩)।
আললাহ বলেন, وَإِذَا غَشِيَهُمْ مَوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلَّا كُلُّ خَتَّارٍ كَفُورٍ ‘যখন তরঙ্গ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে মেঘাচ্ছন্নের মত, তখন তারা আললাহকে ডাকে তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছান, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে; কেবল বিশ্বাঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নির্দেশাবলীই অস্বীকার করে’ (লুকমান ৩১/৩২)। এ সম্পর্কে একটি হাদীছের সার-সংক্ষেপ করা তুলে ধরা হল-
‘বিপদের সময় তিনজন ব্যক্তি গুহায় আশ্রয় নিলে তাদের সে গুহাটির প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর তারা পর্যায়ক্রমে তাদের জীবনের সৎ আমলের কথা স্মরণ করে এবং শেষে বলে, হে আললাহ! সে আমলটি যদি আপনার মনতুষ্টির জন্য করে থাকি তাহলে আপনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন। এক পর্যায়ে আললাহ তাদেরকে সেই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং সেখান থেকে তারা মুক্তি পায়’।[36] সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর বরাতে মক্কা বিজয়ের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে যে, ‘ইকরিমা সমুদ্রে আরোহণ করে একপর্যায়ে তাদের নৌকাটি বিপদের কবলে পড়লে ইকরিমা তখন বলেন, হে আললাহ! আপনি যদি আমাদের এই বিপদ থেকে নিরাপত্তা দান করেন তাহলে আমি মুহাম্মাদের ধর্মের প্রতি ঈমান আনব। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন’।[37]
১১. শয়তানের প্রতারণা থেকে সুরক্ষা :
শয়তান সর্বদা মানুষকে ধোকায় ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে এবং খারাপ আমলগুলো তার জন্য জাকজমক করে তুলে। কিন্তু আললাহ তাঁর মুখলিছ বান্দাদেরকে তার চক্রান্ত থেকে হেফাযত করেন। আললাহ বলেন, قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ- إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ ‘সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন তার জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত’ (হিজর ১৫/৩৯-৪০)। অন্যত্র তিনি বলেন, قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ- إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِين ‘সে বলল, ‘আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদেরকে সকলকেই পথভ্রষ্ট করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয়’ (ছোয়াদ ৩৮/৮২-৮৩)।
আবু সুলায়মান আদ-দায়ানী বলেন, إذا أخلص العبد انقطعت عن الوساوس والرياء ‘বান্দা যখন তার আমলে ইখলাছ করে তখন তার থেকে কুমন্ত্রণা ও রিয়া দূরীভূত হয়ে যায়’।[38]
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন, যখন কেউ তার রবের জন্য ইখলাছ করে তখন তার রব তাকে পসন্দ করেন। অতঃপর তার অন্তর পুনরুজ্জীবিত করেন। সে তার রবের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তার থেকে সব ধরনের অন্যায় অশলীলতা ফিরিয়ে দেন। এই অন্তরটি ঐ অন্তরের বিপরীত যে অন্তরে আললাহর ইখলাছ নেই। সেটি শুধু (দুনিয়ার) সন্ধানে এবং সাধারণ ভালবাসায় লিপ্ত থাকে। কখনো হারামের দিকে ধাবিত হয়। সে শুধু তার মনের পূজা করে, যার ফলে সে মানুষের নিকট শত্রু এবং সমালোচনার পাত্র হয়ে পড়ে।
১২. কল্যাণ, ভদ্রতা এবং শান্তি অর্জন :
যখন বান্দা তার প্রভুর জন্য তার আমলে ইখলাছ করে তখন তাকে সত্যের সন্ধান দান করে। সাথে সাথে তাকে ভান্ডার দান করা হয় এবং তার আমলে বরকত দান করা হয়। হাকিম বলেন,ما أخلص عبد قط أربعين يوما إلا ينابيع الحكمة من قلبه على لسانه ‘কোন বান্দা যদি ৪০দিন আললাহর জন্য ইখলাছ করে তাহলে তার অন্তর থেকে জিহবায় হিকমাহর ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে’।[39]
১৩. ফিতনা থেকে মুক্তি লাভ :
আললাহ বলেন,وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَنْ رَأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ ‘সেই রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। আমি তাকে মন্দ কর্ম ও অশলীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত’ (ইউসুফ ১২/২৪)।
উক্ত আয়াতে আললাহ ইউসুফ (আঃ)-কে অশলীলতা এবং বেহায়াপনা থেকে রক্ষা করেছেন তার ইখলাছের বিনিময়ে। যে ব্যক্তি আললাহকে ভালবাসে এবং তাঁর জন্যই একনিষ্ঠতা প্রকাশ করে সে ব্যক্তির অন্তরটা তার প্রেমিক আললাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আললাহর জন্য ইখলাছ করে না সে ব্যক্তি অন্তর অন্যের ইবাদত করে’।[40] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, গুনাহের মূলনীতি ৩টি। যথা : (১) অন্তরের ধ্যান আললাহ ছাড়া অন্যের সাথে থাকা। (২) কোন ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কাজ করা ও (৩) কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ। এগুলোর আসল রূপ হল শিরক, যুলুম, অশলীলতা। এ তিনটি একটি অপরটির দিকে আহবান করে। যেমন শিরক আহবান করে যুলুম ও অশলীলতার দিকে। এর বিপক্ষে ইখলাছ এবং তাওহীদ তা প্রতিহত করে। আললাহ বলেন, كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ ‘আমি তাকে মন্দ কর্ম ও অশলীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত’ (ইউসুফ ১২/২৪)। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
[লেখক : ছাত্র, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব]
[1]. মু‘জামু মাক্বায়িসিল লুগাহ ২/২০৮ পৃঃ।
[2]. আত-তাহরীর ওয়াত তানবীর লি ইবনে ‘আশূর ২৩/৩৮ পৃঃ।
[3]. বাদাইয়ুল ফাওয়ায়েদ ৩/১৯২ পৃঃ।
[4]. বাদাইয়ুল ফাওয়ায়েদ ৩/১৮৭-১৯৩ পৃঃ।
[5]. আবুদাঊদ ২/৬৫৯; নাসাঈ ৩১৪০, সনদ ছহীহ।
[6]. মুসলিম হা/২৯৮৫।
[7]. তিরমিযী হা/২৬৫৪, সনদ ছহীহ।
[8]. আল-জামে লিআখলাক্ব আর-রাবী ওয়া আদাব আস-সামে‘ ১/৩১৭।
[9]. ইবনু রজব, জামেঊল উলূম ওয়াল হিকাম ১/৮৪ পৃঃ।
[10]. ঐ, ১/৮৪ পৃঃ ।
[11]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ, পৃঃ ৩৯২ ।
[12]. তিরমিযী হা/২১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৯১, হাসান।
[13]. বুখারী হা/৬৬১৭।
[14]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৩/৪০৩ পৃঃ।
[15]. আল-জামে লি আহকামিল কুরআন ২/২০৮ পৃঃ।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/৪২০৩, সনদ ছহীহ।
[17]. বুখারী হা/৯৯।
[18]. তা‘লীকাত ইবনুল ক্বাইয়িম- সুনান আবুদাঊদ ৭/১৩৪ পৃঃ।
[19]. ইবনু মাজাহ হা/২৩০, সনদ ছহীহ।
[20]. সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা ৮/৪০০ পৃঃ।
[21]. তিরমিযী হা/২৬৩৯; ইবনু মাজাহ হা/৪৩০০; মিশকাত হা/৫৫৫৯, সনদ ছহীহ।
[22]. মিনহাজুস সুন্নাহ ৬/২১৮-২২২ পৃঃ।
[23]. ইবনু মাজাহ হা/২৫৪, সনদ ছহীহ।
[24]. মুসনাদে আহমাদ হা/২১২৬১, সনদ হাসান ছহীহ।
[25]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২১০৪২।
[26]. বুখারী হা/৬৪৯৯।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০৫, সনদ সহীহ।
[28]. মুসলিম হা/১০০৬।
[29]. বুখারী হা/৫৬।
[30]. বুখারী হা/২৮৩৯ ।
[31]. মুসলিম হা/১৯১১।
[32]. নাসাঈ হা/১৭৮৭; ছহীহ তারগীব হা/২১, সনদ হাসান ছহীহ।
[33]. মুসলিম হা/১৯০৯।
[34]. মুসলিম হা/৩৫৪।
[35]. বুখারী হা/১৪২১।
[36]. বুখারী হা/২২৭২; মুসলিম হা/২৭৪৩।
[37]. নাসাঈ হা/৪৬৭, সনদ ছহীহ।
[38]. সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা ৯/৩৪১ পৃঃ।
[39]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/৯২ পৃঃ।
[40]. ইগাছাহ ১/৪৭ পৃঃ।