তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1839 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- فَإِذا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ--

‘অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ১৫৯)

২- إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلا غالِبَ لَكُمْ وَإِنْ يَخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِي يَنْصُرُكُمْ مِنْ بَعْدِهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ-

‘যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে, তোমাদেরকে এর পরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর উপরই যেন মুমিনগণ তাওয়াক্কুল করে’ (আলে ইমরান ১২০)

- قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنا هُوَ مَوْلانا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ-

‘তুমি বলে দাও, আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা ছাড়া অন্য কোন বিপদ আমাদের উপর আসতে পারে না, তিনিই আমাদের কর্মবিধায়ক এবং অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরই মু’মিনদের ভরসা রাখা উচিৎ’ (তাওবা ৫১)

4- وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّماواتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَما رَبُّكَ بِغافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ-

‘আসমানসমূহ ও যমীনের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে সব কিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর কর, আর তোমরা যা কিছু কর সে ব্যাপারে তোমার রব অনবহিত নন’ (হুদ ১২৩)

৫- وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ وَكَفى بِهِ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيراً-

‘আর তুমি নির্ভর কর সেই চিরঞ্জীব সত্তার উপর, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস মহিমা ঘোষণা কর। তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে অবহিত’ (আনফাল ৫৮)। 

৬-  إِنَّمَا النَّجْوى مِنَ الشَّيْطانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضارِّهِمْ شَيْئاً إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ-

‘কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ যা মুমিনদের দুঃখ দেয়ার জন্য তৈরী করা হয়; তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। মুমিনদের কর্তব্য আল্লাহর উপর নির্ভর করা’ (মুজাদালাহ ১০)

৭- وَلا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ وَدَعْ أَذاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ وَكَفى بِاللَّهِ وَكِيلًا-

‘আর তুমি কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না; তাদের নির্যাতন উপেক্ষা কর এবং তুমি নির্ভর কর আল্লাহর উপর; অভিভাবক হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট’ (আহযাব ৪৮)

8- الَّذِينَ قالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيْمَاناً وَقالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ-

‘যাদেরকে (উহুদের ময়দানে উপস্থিত ঈমানদারগণকে) মানুষেরা বলেছিল যে, নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু তা তাদের ঈমান আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক (আলে ইমরান ১৭৩)। 

10-وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْ ءٍ قَدْراً-

‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ তাঁর জন্য উপায় বের করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ/সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন’ (ত্বালাক ৩)

11- وَالَّذِينَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ اللَّهُ حَفِيظٌ عَلَيْهِمْ وَما أَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيلٍ-

‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সম্যক দৃষ্টিদাতা এবং তুমি তাদের তত্বাবধায়ক নও’ (শূরা ৬)

12- وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْ ءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ذلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ-

‘যে বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর না কেন, তার ফায়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই ওপর আমি তাওয়াক্কুল করি এবং তাঁরই অভিমুখী হই’ (শূরা ১০)

১৩- فَما أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْ ءٍ فَمَتَاعُ الْحَياةِ الدُّنْيا وَما عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقى لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ-

‘আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্য যারা ঈমান আনে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াক্কুল করে’ (শূরা ৩৬)

14- وَما لَنا أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ وَقَدْ هَدَانا سُبُلَنا وَلَنَصْبِرَنَّ عَلى مَا آذَيْتُمُونا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ-

‘আর আমরা (রাসূলগণ) কেন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করব না, অথচ তিনিই আমাদেরকে আমাদের পথের দিশা দিয়েছেন। আর তোমরা আমাদের যে কষ্ট দিচ্ছ, আমরা তার উপর অবশ্যই ছবর করব। আর নির্ভরকারীদের আল্লাহর উপরই নির্ভর করা উচিৎ’ (ইবরাহীম ১২)

15- وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ-

‘(মূসা আ. ফেরআউনকে) আর আমার বিষয়টি আমি আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যপারে সর্বদ্রষ্টা’ (মুমিন ৪৪)

16- إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ-

‘(শু‘আইব আ. তাঁর কওমকে) আমি কেবল আমার সাধ্যমত সংশোধন করে দিতে চাই। আর আমার যা কিছু তাওফীক হয় তা শুধু আল্লাহর সাহায্যেই হয়ে থাকে; আমি তাঁরই উপর ভরসা রাখি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করি’ (হুদ ৮৮)

হাদীছে নববী থেকে :

18-عن عُمَر قَالَ سمعتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يقول : لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ، تَغْدُو خِمَاصاً

وَتَرُوحُ بِطَاناً-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথার্থভাবে ভরসা করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দিতেন যেভাবে তিনি পাখিকে রিযিক দেন। সকালে তারা খালিপেট নিয়ে উড়াল দেয়, সন্ধ্যায় ফিরে আসে উদরপূর্তি করে’ (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৫২৯৯, সনদ ছহীহ)

19-عن ابنِ عباسٍ رضي الله عنهما ، قَالَ : كنت خلف النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - يوماً ، فَقَالَ : (( يَا غُلامُ ، إنِّي أعلّمُكَ كَلِمَاتٍ : احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ ، إِذَا سَألْتَ فَاسأَلِ الله ، وإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ باللهِ ، وَاعْلَمْ : أنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبهُ اللهُ لَكَ ، وَإِن اجتَمَعُوا عَلَى أنْ يَضُرُّوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحفُ-

রাসূল (ছাঃ) ইবনে আববাস (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে বৎস! আল্লাহর বিধানসমূহ যথাযথভাবে মেনে চল, আল্লাহ তোমাকে হেফাযতে রাখবেন। আল্লাহর হক্ব আদায় কর, তবে তুমি আল্লাহ্কে তোমার সম্মুখে পাবে। আর যখন তুমি কারো কাছে সাহায্য চাইতে হয় তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রেখ, যদি সমস্ত মাখলুক একত্রিত হয়ে তোমার ক্ষতি করতে চায় তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ব্যতীত তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং দফতরসমূহ শুষ্ক হয়ে গেছে (অর্থাৎ তাক্বদীর লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। তাতে আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই)’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৩০২, সনদ ছহীহ)

20- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَاتَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحَارِبَ بْنَ خَصَفَةَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْهُمْ يُقَالُ لَهُ غَوْرَثُ بْنُ الْحَارِثِ حَتَّى قَامَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالسَّيْفِ فَقَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَسَقَطَ السَّيْفُ مِنْ يَدِهِ فَأَخَذَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قَالَ كُنْ كَخَيْرِ آخِذٍ ... فَخَلَّى سَبِيلَهُ-

(রাসূল (ছাঃ) স্বীয় তরবারী গাছে ঝুলিয়ে গাছের নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন। এক বেদুঈন এই সুযোগে রাসূলের তরবারী হস্তাগত করল) তাকে গওরাছ বিন হারেছ নামে ডাকা হত। সে রাসূল (ছাঃ)-এর উপর তরবারী উচিয়ে দাঁড়াল এবং বলল, ‘‘কে আপনাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে?’’ রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘‘আল্লাহ’’। ফলে বেদুঈনের হাত থেকে তরবারী পড়ে গেল। রাসূল (ছাঃ) তা কুড়িয়ে নিয়ে এবার তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘‘বল! কে তোমাকে রক্ষা করবে আমার হাত থেকে?’’ তখন সে বলল, ‘‘(আশা করি) আপনি উত্তম তরবারী ধারণকারী হবেন (অর্থাৎ ক্ষমা করে দেবেন)’’...এরপর রাসূল (ছাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন (আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩০৫)

21-عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ، ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأَدْمَوْهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ وَيَقُولُ: (اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ)

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখনো রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে আছি যখন তিনি কোন একজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, যাকে তার কওমের লোকেরা প্রহার করে রক্তাক্ত করেছিল; আর তিনি নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেন ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কওমের কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা অজ্ঞ’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩১৩)

22-عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জান্নাতে এমন কিছু লোক প্রবেশ করবে যাদের অন্তর পাখির অন্তরের মত (অর্থাৎ আল্লাহর উপর পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুলকারী) (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬২৫)।’

23- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم : الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِى كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجَزْ وَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّى فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল ঈমানদারের হতে অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। প্রত্যেক যা কিছুতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা প্রতিপালনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। আর তাতে দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, ‘‘যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার জন্য অমুক অমুক হত।’’ বরং বল, ‘‘আল্লাহ এটাই তাক্বদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।’’ নিশ্চয় ‘‘যদি’’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)

26- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم – قَالَ : يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِى سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ ، هُمُ الَّذِينَ لاَ يَسْتَرْقُونَ ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের সত্তর হাযার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে বিনা হিসাবে। তারা হচ্ছে যারা মন্ত্র-তন্ত্র করায় না, অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না এবং তাদের রবের উপর ভরসা রাখে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬৪৭২)

বিদ্বানদের কথা :

  1. সাঈদ বিন যুবায়ের (রাঃ) বলেন, ঈমানের সামগ্রিক পরিচয় হল তাওয়াক্কুল (হান্নাদ বিন সারী, কিতাবুয যুহদ ১/৩০৪ পৃঃ)
  2. ইমাম আহমাদ বলেন, তাওয়াক্কুলকারীর অবশ্যই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। যদি সে চেষ্টা ছাড়াই কেবল ভরসা করে বসে থাকে তবে সেটা হবে নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা (আদাবুশ শারঈয়াহ ৩/২৭০ পৃঃ)
  3. ইবনু তায়মিয়া বলেন, তাওহীদ, সুস্থ বুদ্ধি এবং শরী‘আতের একত্রিত রূপ হল তাওয়াক্কুল (ইবনু কাসেম, কিতাবুত তাওহীদ ২৫১ পৃঃ)
  4. ইবনুল কাইয়েম বলেন. তাওয়াক্কুল হল সবচেয়ে বড় প্রতিরোধক যার মাধ্যমে মানুষ লোকের দেয়া কষ্ট, বিপদ, শত্রুতা থেকে রক্ষা পেতে পারে (তাফসীরে ইবনুল কাইয়েম, ৫৮৭ পৃঃ)
  5. ইবনুল কাইয়েম বলেন, তাওয়াক্কুল হল ঈমানের অর্ধেক। কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া ঈমানের বাকী অর্ধেক। আর দ্বীন হল আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। তাওয়াক্কুল হল সাহায্য প্রার্থনা এবং কর্ম হল ইবাদত (মাদারিজুস সালেকীন ২/১১৮ পৃঃ)

সারবস্ত্ত

  1. তাওয়াক্কুল হল ঈমানের পূর্ণতা এবং ইসলামের সৌন্দর্য।
  2. তাওয়াক্কুল আল্লাহর ভালবাসা, সাহায্য ও বিজয় অর্জনের মাধ্যম।
  3. তাওয়াক্কুল অন্তরে প্রশান্তি আনে এবং ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্তি দান করে বাস্তববাদী হতে শেখায়।
  4. আল্লাহর প্রতি ভরসা মানুষকে জীবনের মৌলিক লক্ষ্যের উপর অটল রাখে।


বিষয়সমূহ: আমল
আরও