শাফা‘আত লাভে ধন্য যারা
আব্দুর রহীম
হোসাইন আল-মাহমূদ 13941 বার পঠিত
আসমান-যমীনের মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাববুল আলামীন মানবজাতির জন্য যে দ্বীনকে মনোনীত করেছেন-তাই হল ইসলাম। পবিত্র কুরআন হল এই দ্বীনের শাশ্বত সংবিধান। মানবজাতির চিরন্তন গাইডলাইন। এই গাইডলাইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা এবং মানুষের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই আল্লাহ মুসলিম জাতির উত্থান ঘটিয়েছেন। এই চিরন্তন গাইডলাইনই মানবজাতির দুনিয়াবী ও পারলৌকিক জীবনে সফলতা-ব্যর্থতার একমাত্র মাপকাঠি। এজন্য কুরআন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত অপরিহার্য এবং ফরয দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার যে, কুরআনের মর্যাদা অনুধাবনে ব্যর্থ হবার কারণেই হোক আর মরীচিকাময় দুনিয়াবী জীবনে শয়তানের ফেরেবে পড়ে হোক, পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন এবং অনুশীলন থেকে অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত গাফেল। এ দেশের মুসলমানদের মধ্যে শতকরা কতজন সঠিকভাবে কুরআন পড়তে জানেন, যারা জানেন তাদের কতজন নিয়মিত পড়েন, যারা পড়েন কতটুকু অর্থ বুঝে পড়েন-এ সকল পরিসংখ্যান অনুসন্ধান করলে বড় ধরনের এক হতাশাব্যঞ্জক চিত্রই যে ফুটে উঠবে, তা বিনা গবেষণায় বলে দেয়া যায়। মুসলিম জাতি হিসাবে এটা আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক ও লজ্জাজনক হতে পারে তা সমাজের মানুষের ভয়াবহ আক্বীদা-আমলগত ত্রুটি-বিচ্যুতিই বলে দেয়। অত্র নিবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে পবিত্র কুরআনের বিশেষত্ব, কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত এবং কুরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল।
কুরআনের পরিচয় :
কুরআন শব্দটির ক্রিয়ামূল হল- قرأ। যার আভিধানিক অর্থ-পাঠ করা বা একত্রিত করা। সেই হিসাবে কুরআন শব্দের অর্থ হয়-যা পাঠকৃত বা একত্রিত। আর পরিভাষায়-আল্লাহ তা‘আলা জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানবজাতির পথপ্রদর্শনের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নামই আল-কুরআন।
কুরআনের বর্ণনায় কুরআনের পরিচয় :
পবিত্র কুরআন স্বয়ং নিজের পরিচয় ব্যক্ত করেছে এভাবে-
|
কুরআনের বিভিন্ন নাম :
কুরআনের বেশ কিহর নাম রয়েছে। যেমন- হুদা (পথনির্দেশক), যিকর (উপদেশ বাণী), ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী), নূর (আলো), বুরহান (প্রমাণ), হাকীম (মহা জ্ঞানপূর্ণ), ইত্যাদি। যেমন কুরআনে এসেছে, تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا ‘তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) নাযিল করেছেন যেন তা জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে’ (ফুরকান ১)।
পবিত্র কুরআনের বিশেষত্বসমূহ :
১. কুরআন আল্লাহ প্রেরিত কিতাব : আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে মানবতার হেদায়াতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোকে আসমানী কিতাব বলা হয়। আল-কুরআন হল সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শনের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-َوَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘নিশ্চয় এ কুরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে (শু‘আরা ১৯২)।
২. কুরআন হল নূর বা আলো : অজ্ঞতার নিকষ কৃষ্ণাধারে দিকভ্রান্ত মানবজাতিকে পথের সন্ধান দেয়ার জন্য চিরন্তন দেদীপ্যমান আলোকবার্তা বা নূর হল আল-কুরআন। আললাহ তা‘আলা বলেন- قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ ، يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيم ‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে এবং নিজ অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়াত দেন’ (মায়িদাহ ১৫-১৬)।
৩. কুরআন মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক : মানবজাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয় কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন -وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ ‘আমি তোমার নিকট এই কিতাব নাযিল করেছি সবকিহরর সুস্পষ্ট বর্ণনা সহকারে। আর এটা আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণকারীদের জন্য হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদস্বরূপ’ (নাহল ৮৯)।
৪. কুরআন যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতিমুক্ত : পবিত্র কুরআন যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্ত এবং অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং এর হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ‘নিশ্চয় আমি উপদেশবাণী তথা কুরআন নাযিল করেছি এবং নিঃসন্দেহে এর হেফাযতকারী আমি নিজেই’ (হিজর ৯)। আল্লাহ আরো বলেন, أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا ‘তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত’ (নিসা ৮২)।
৫. কুরআন রামাযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে : পবিত্র কুরআন রামাযান মাসের লাইলাতুল ক্বদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ ‘রামাযান এমন মাস যাতে নাযিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। যা বিশ্বমানবতার জন্য হেদায়েত ও সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্যবিধানকারী’ (বাক্বারাহ ১৮৫)।
৬. কুরআন মুমিনদের জন্য রহমত : কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবে নাযিল করা হয়েছে। যারা এ কুরআন পড়বে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে তারা আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا ‘আর আমি কুরআন নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্য শেফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়’ (বনী ইসরাঈল ৮২)।
৭. কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস : কুরআন মাজীদ সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। এতে বর্ণিত সবকিহরই সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, يس (1) وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ ‘ইয়া-সীন, বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ’ (ইয়াসীন ১-২)। بَلْ هُوَ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ فِي صُدُورِ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ ‘বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা (কুরআন) সুস্পষ্ট নিদর্শন (আনকাবুত ৪৯)।
৮. কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ : কুরআনের মত কোন কিতাব মানুষ বা অন্য কোন সৃষ্টির পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়। প্রায় পনেরশত বছর পূর্বের এই চ্যালেঞ্জ আজ পর্যন্ত কেউ মুকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি। আর কিয়ামত পর্যন্ত কেউ সক্ষমও হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ‘বল, যদি মানব ও জ্বিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিহর আনয়ন করবে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিহরই আনয়ন করতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’ (বনী ইসরাঈল ৮৮)।
৯. কুরআন জীবন্ত মু‘জিযা : মক্কার কাফের-মুশরিকরা যখন রাসূল (ছাঃ)কে তাঁর নবুয়তের সত্যতা স্বরূপ মু‘জিযা দেখাতে বলল, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ ‘তাদের জন্য (কাফেরদের) এই কিতাবই কি (মু‘জিযা হিসাবে) যথেষ্ট নয়, যা তাদের সম্মুখে পাঠ করা হয়? অর্থাৎ এই কুরআন নিজেই তো একটি জীবন্ত মু‘জিযা এবং নবুওতের স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ মানবজাতির জন্য।
১০. কুরআন শিক্ষা সহজ : কুরআনকে আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জ্ঞানলাভের জন্য সহজতর করে দিয়েছেন। কুরআনের ঘোষণা- وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ ‘আর আমি তো কুরআন শেখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন উপদেশগ্রহণকারী আছে কি?’ (আল-ক্বামার ১৭)।
কুরআনের প্রতি মানুষের হক্ব :
পবিত্র কুরআন কোন সাধারণ গ্রন্থ নয়। এটা এমন এক গ্রন্থ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন। অতএব কুরআনের প্রকৃত হক্ব আদায় করার জন্য মানুষের উপর অবশ্য পালনীয় কিহর কর্তব্য রয়েছে। যা নিম্নরূপ-
১. কুরআন শিক্ষা ফরয : প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে, তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-إقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (আলাক ১)। আল্লাহ আরো বলেন, كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ ‘আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে (ছোয়াদ ২৯)।
উম্মতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, تعلموا القرآن وسلوا الله به الجنة قبل أن يتعلمه قوم يسألون به الدنيا فإن القرآن يتعلمه ثلاثة نفر رجل يباهى به ورجل يستأكل به ورجل يقرأه لله ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং কুরআনকে আল্লাহ্র নিকট জান্নাত লাভের অসীলা বানিয়ে নাও, সেই দিন আসার পূর্বে যেদিন মানুষ দুনিয়াবী স্বার্থে কুরআন শিখবে। কেননা তিন প্রকার মানুষ কুরআন শিক্ষা করে-(১) ঐ ব্যক্তি যে তা নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে। (২) ঐ ব্যক্তি যে তা দিয়ে পেট চালাতে চায়। (৩) যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহ্র উদ্দেশ্যেই তা পাঠ করে (বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৮)।
তিনি আরো বলেন, خَيْركُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآن وَعَلَّمَهُ ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই, যে কুরআন নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, মিশকাত ২১০৯)।
২. কুরআনের চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া : কুরআন শুধু শিক্ষা করাই যথেষ্ট নয়; বরং কুরআনের শিক্ষাকে নিজের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করতে হবে। আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তোমরা কি কুরআন পড়নি? كان خلقه القرآن ‘তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন’ (আহমাদ হা/২৪৬৪৫)। আলী (রাঃ) বলেন, اعْمَلُوا بِهِ ، فَإِنَّمَا الْعَالِمُ مَنْ عَمِلَ بِمَا عَلِمَ وَوَافَقَ عِلْمُهُ عَمَلَهُ ، وَسَيَكُونُ أَقْوَامٌ يَحْمِلُونَ الْعِلْمَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ ‘হে কুরআন বহনকারী! বা হে জ্ঞানী! তুমি কুরআনের উপর আমল কর, কেননা ইলম আমলের উপর নির্ভরশীল। কুরআনের ইলমের সাথে তোমার আমলকে মিলিয়ে নাও। কেননা অচিরেই এমন সম্প্রদায়ের অবির্ভাব হবে যারা জ্ঞানের অধিকারী হবে বটে; কিন্তু তাদের জ্ঞান তাদের কণ্ঠনালীও অতিক্রম করবে না’ (দারেমী হা/৩৮২, সনদ ত্রুটিযুক্ত)।
৩. কুরআনের শিক্ষাকে প্রচার করা : কুরআনের শিক্ষাকে প্রচারের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ‘হে রাসূল! আপনার প্রভুর পক্ষ হতে আপনার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দিন এবং যদি আপনি না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাত পেঁŠছালেন না (মায়েদা ৬৭)।’ এ নির্দেশের আলোকে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম কুরআনের প্রচার-প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন। উম্মতকেও এ দায়িত্ব পালনের জন্য জোর তাক্বীদ দিয়ে তিনি বলেন, بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে (আল্লাহ্র বাণী) পৌঁছিয়ে দাও, যদি একটি আয়াতও হয় (তবুও)’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮)।
৪. কুরআন নিয়মিত তেলাওয়াত করা : কুরআন তেলাওয়াত একটি বড় ইবাদত। পবিত্র কুরআন ও হাদীছে বহু স্থানে কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত নিয়ে আলোচিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) প্রতি রাতে দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকতেন। আবু হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে রাতের ছালাত আদায় করলাম। এসময় তিনি এক রাক‘আতেই সূরা বাক্বারা, আলে ঈমরান ও নিসা পড়েন (নাসাঈ হা/১০০৯, ছহীহ)। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কুরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেন, يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ- قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا- نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا- أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا ‘হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ কর, তবে কিহর অংশ ব্যতীত। রাতের অর্ধেক কিংবা তারচেয়ে কিহরটা কম কর। অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তেলাওয়াত কর (মুয্যাম্মিল ১-৪)।
কুরআনকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা : কুরআনকে অবশ্যই কুরআনের মর্যাদা দিতে হবে। কুরআনকে সর্বদা উঁচু স্থানে রাখতে হবে। কেননা কুরআন অন্যান্য গ্রন্থের মত নয়। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ ‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই’ (হজ্জ ৩২)। সুতরাং কিতাব খোলা রেখে গল্পগুজব করা বা উঠে যাওয়া অসম্মানজনক কাজ। মানুষের হৈ-হল্লা হয় এমন স্থানেও কুরআন তেলাওয়াত বাজানো ঠিক নয়। কিতাবের পৃষ্ঠা মুড়া বা অহেতুক দাগাদাগি করাও ঠিক নয়। আল্লাহ বলেন, وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর’ (আ‘রাফ ২০৪)।
কুরআন শিক্ষা ও তিলাওয়াতের ফযীলত :
১. কুরআন তেলাওয়াত এক চিরস্থায়ী লাভজনক ব্যবসা : কুরআন তেলাওয়াত আল্লাহর সাথে বান্দার একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দুটিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ (29) لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, ছালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান (ফাতির ২৯-৩০)।
২. অফুরন্ত ছওয়াব অর্জন : কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট ছওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرَةِ أَمْثَالِهَا أَمَا إِنِّي لَا أَقُولُ: الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلْفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকী প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকী দশটি নেকীর সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ (তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৩৭)।’ এছাড়া নির্ধারিত সময় ও দিনে কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত পাঠে বহু ফযীলত নিহিত রয়েছে। যেমন যদি কোন ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়ে, তবে তা পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়টুকু তার জন্য আলোকিত করে রাখে (অর্থাৎ তার ছওয়াব ও কল্যাণ সে লাভ করে) (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২১৭৫, হাসান)।
৩. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি : কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রভূত কল্যাণ অর্জন করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, মিশকাত ২১০৯)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشُقُّ عَلَيْهِ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ ‘কুরআন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি পুণ্যবান, সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে থাকবে, আর যে ব্যক্তি কষ্টের সাথে বারবার চেষ্টা করে কুরআন পড়ে, তার জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/২১১২)।
৪. কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে : ‘কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, اقْرَؤُوا القُرْآنَ ؛ فَإنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ القِيَامَةِ شَفِيعاً لأَصْحَابِهِ ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২০)।
৫. কুরআন পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন : কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ অর্জন করার সমতুল্য। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহ্র কুরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১০)।
৬. কুরআন তেলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে : কুরআন তেলাওয়াত বান্দাহ্র জন্য এমন উপকারী যে, তা তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’ (আনফাল ২)। কুরআনে আরো এসেছে, الَّذِينَ آتَيْناهُمُ الْكِتابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلاوَتِهِ أُولئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ‘যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই এর প্রতি ঈমান এনেছে’ (বাক্বারা ১২১)।
৭. কুরআন শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি : মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি লাভ কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য কুরআনে বলা হয়েছে, الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহ্র যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায় (রা‘দ ২৮)।
৮. কুরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি : কোন ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সাথে ঈর্ষা করা যাবে অর্থাৎ তার মত হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে, যাকে গিবতাহ বলা হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ ‘একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ঐ কুরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে...(মুত্তাফাক আলাইহ হা/২০২)।
৯. জান্নাত লাভ : প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হল জান্নাত লাভ। কুরআন শিক্ষা করা মানুষের জন্য জান্নাত লাভের কারণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -- وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ ‘ছিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...কুরআন বলবে, হে আমার রব! আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/১৯৬৩)।
কুরআন শিক্ষা না করার পরিণতি :
১. রাসূল (ছাঃ)-এর অভিযোগ পেশ : কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূল (ছাঃ) উম্মাতের জন্য শাফা‘আত করবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক্ব রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী (ছাঃ) তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবেন। কুরআনে এসেছে, وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا ‘আর রাসূল বলবেন, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’ (ফুরকান ৩০)। ইবন কাছীর বলেন, কুরআন না পড়া, তা অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা, এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল (৬/১৮৮ পৃঃ)।
২. কিয়ামত দিবসে অন্ধ, মূক ও বধির হয়ে উঠবে : যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা থেকে বিমুখ হয়ে থাকল, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন অন্ধ, মূক ও বধির হয়ে উঠবে। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى * قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا * قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى ‘আর যে আমার যিকর (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাব। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন? তিনি বলবেন, অনুরূপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’ (ত্বহা ১২৪-১২৬)। আল্লাহ আরো বলেন,وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا ‘আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নির দাহিকাশক্তি আরও বাড়িয়ে দেব’ (বনী-ঈসরাইল ৯৭)।
৪. গাফেল হিসাবে চিহ্নিত হবে : কুরআন শিক্ষা না করা ব্যক্তি গাফেল। কুরআনের ভাষায় তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত অজ্ঞানতা ও মূর্খতার মাঝে নিমজ্জিত রয়েছে। আল্লাহ বলেন,أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট। এরাই হল গাফেল’ (আরাফ ১৭৯)।
৫. কুরআন বিরোধী দলীল হিসাবে উপস্থাপিত হবে : কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলীল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, وَالْقُرْآنُ حَجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ ‘কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮১)।
৬. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে : কুরআন শিক্ষা না করা জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْقُرْآنُ شَافِعٌ مُشَفَّعٌ ومَاحِلٌ مُصَدَّقٌ ، فَمَنْ جَعَلَهُ إمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ قَادَهُ إِلَى النَّارِ ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। কুরআন বিতর্ককারী এবং তার বিতর্ক সত্যায়ন করা হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে’ (ছহীহ ইবনে হিববান হা/১২৪)।
৭. আখেরাতে জবাবদিহি করতে হবে : কুরআন শিক্ষা না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَكَ وَلِقَوْمِكَ وَسَوْفَ تُسْأَلُونَ ‘নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে (যুখরুফ ৪৪)।
কুরআন তেলাওয়াতের আদব :
১. প্রাথমিক আদব : কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে ইখলাসের সাথে পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ মন নিয়ে। ‘মাছহাফ’ নিয়ে বসলে অযু করে পবিত্র হয়ে বসাটাই সর্বোত্তম, কেননা কুরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত। তবে অযু না থাকলেও প্রয়োজনে মাছহাফ স্পর্শ করে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে (অপবিত্র অবস্থায় না থাকলে)। তেলাওয়াত শুরুর পূর্বে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ পাঠ করে শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহ্র নিকট পরিত্রাণ চাইতে হবে (নাহল ৯৮)। অতঃপর কোন সূরার শুরু থেকে হলে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ বলে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করতে হবে, নতুবা ‘আউযুবিল্লাহ’ই যথেষ্ট। মসজিদে বা পবিত্র কোন জায়গায় বসে তেলাওয়াত করতে হবে। তবে এমনিতে দাড়িয়ে, শুয়ে, আরোহী হয়ে সর্বাবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা যায় (আলে ঈমরান ১৯১)।
২. তেলাওয়াতের সময় অন্তরকে একনিষ্ঠ করতে হবে : তেলাওয়াত করার সময় অন্তরকে আল্লাহ্র দিকে একনিষ্ঠভাবে রুজূ‘ করে দিতে হবে। কেননা ইবাদতের মূল হল খুলূছিয়াত বা একনিষ্ঠতা (বাইয়েনাহ ৫, ফুছছিলাত ১৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, اقْرَءُوا الْقُرْآنَ وَابْتَغُوا بِهِ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ قَوْمٌ يُقِيمُونَهُ إِقَامَةَ الْقِدْحِ يَتَعَجَّلُونَهُ وَلَا يَتَأَجَّلُونَهُ ‘তোমরা কুরআন পড় এবং এর বিনিময় আল্লাহ্র কাছে কামনা কর, ঐ সম্প্রদায় আসার পূর্বেই, যারা কুরআনকে তীর রাখার মত করে রাখবে। তারা কুরআন থেকে পরকালীন লাভের পরিবর্তে দুনিয়াবী লাভ আশা করবে (আহমাদ হা/১৪৮৫৫, ছহীহ)।
৩. কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে তাজবীদ সহকারে : কুরআন ধীরে-সুস্থে তারতীলসহ পড়া অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا ‘এবং তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর তারতীল সহকারে’ (মুযাম্মিল ৩)। রাসূল (ছাঃ) ধীরে ধীরে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করে তেলাওয়াত করতেন, কোন তাড়াহুড়া করতেন না (আবুদাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২২০৫, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, زيّنوا القرآن بأصواتكم ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর সুন্দর কণ্ঠে (আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/২১৯৯, ছহীহ)। বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর চেয়ে সুমধুর কণ্ঠে তেলাওয়াত আর শুনিনি (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৪)। ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, তোমরা কুরআনকে বালুর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে না আবার সঙ্গীতের মত উচ্চ বা হ্রস্ব সুরে ঝুলিয়ে পড়বে না বরং পড়ার সময় কুরআনের মু‘জিযাকে থেমে থেমে অনুধাবন করবে এবং অন্তরকে আন্দোলিত করে পড়বে।
৪. অর্থ বুঝে পড়তে হবে : পবিত্র কুরআন বুঝে পড়া আবশ্যক। কারণ কুরআন নাযিল করা হয়েছে যেন জ্ঞানীরা তাতে চিন্তা-ভাবনা করে। পবিত্র কুরআনে বারবার কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার কথা বলা হয়েছে। অর্থ না বুঝলে অনুবাদের সহযোগিতা নিয়ে যথাসম্ভব বুঝার চেষ্টা করতে হবে। নতুবা কুরআন নাযিলের মৌলিক উদ্দেশ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। ছাহাবায়ে কেরাম সাধারণতঃ দশটি আয়াতও অতিক্রম করতেন না যতক্ষণ তাতে কি রয়েছে তা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ না করতেন এবং তা আমলে পরিণত না করতেন। রাসূল (ছাঃ) কুরআন তেলাওয়াত করার সময় এতটাই একনিষ্ঠতা নিয়ে পড়তেন যে, যখন কোন তাসবীহের আয়াত আসত, তিনি মনে মনে তাসবীহ পড়তেন; প্রার্থনার আয়াত আসলে প্রার্থনা করতেন এবং আশ্রয় প্রার্থনামূলক আয়াত আসলে আশ্রয় চাইতেন (নাসাঈ হা/১৬৬৪, ছহীহ)।
৫. অন্তরকে বিগলিত করে পড়তে হবে : কুরআন তেলাওয়াতের সময় রাসূল (ছাঃ) এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তেন যে, কান্নায় তার বক্ষদেশ থেকে ফুটন্ত পানির মত শব্দ হত (আহমাদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০০)। আল্লাহ বলেন, وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ ‘আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুসজল হচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে (মায়েদা ৮৩)।’
৬. তেলাওয়াত শ্রবণে একাগ্রতা : রেডিও-টিভিতে কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণের সময় গভীরভাবে হৃদয় দিয়ে তা শুনতে হবে। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে একদিন রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমাকে কুরআন পড়ে শোনাও। আমি বললাম, আপনার উপরই কুরআন নাযিল হয়েছে, আর আমি আপনাকে পড়িয়ে শোনাব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি অন্য কারো কাছ থেকে কুরআন পড়া শুনতে ভালবাসি। অতঃপর আমি সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। যখন আমি ৪৪ নং আয়াতে পৌঁছলাম, রাসূল (ছাঃ) আমাকে থামিয়ে দিলেন। আমি দেখলাম, আয়াতটি শ্রবণে তাঁর দু’চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় ক্রন্দনধারা ঝরছে (বুখারী, মিশকাত হা/২১৯৫)।
কুরআন শিক্ষার জন্য করণীয় :
ছহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করা অত্যন্ত যরূরী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত জানা মানুষের সংখ্যা খূবই কম, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমাদের যথেষ্ট অবহেলারই পরিচায়ক। ভালভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষার জন্য আমরা নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে পারি।
১. ভাল শিক্ষকের কাছে পড়া : যিনি ছহীহভাবে কুরআন পড়তে পারেন তার নিকটই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে যে শিক্ষকের কুরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে তার কাছে পড়লে আরো ভাল হয়।
২. নিয়মিত পড়া : ছহীহভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেয়া দরকার। যদিও কম সময় হয়। প্রতিদিন শেখার মধ্যে থাকলে ছহীহভাবে কুরআন শিক্ষা সহজ হবে এবং যা শেখা হবে তা আয়ত্ত্বে থাকবে।
৩. নিয়মিত মশক বা অনুশীলন করা : কোন যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করলে পড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মশক হলো- শিক্ষক পড়বে তারপর সেভাবে ছাত্রও পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিডির মাধ্যমেও মশক করা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী মিনশাভীর কুরআন প্রশিক্ষণ সিডির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
৪. পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের শিক্ষা দেয়া : প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে এসেছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন,عَلَيْكُم بِالْقُرْآَن ، فَتَعَلَّمُوه وَعَلَّمُوه أَبْنَاِئِكُم ، فَإِنَّكُم عَنْه تُسْأَلُوْن ، وَبِه تُجْزَوْن ‘কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে’ (ইবনু বাত্তাল, শরহে সহীহ বুখারী, ১০/২৬৬ পৃঃ)।
৫. ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো বেশী বেশী পড়া : ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَيَعْجِزُ أحَدُكُمْ أنْ يَقْرَأَ بِثُلُثِ القُرْآنِ فِي لَيْلَةٍ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ ، وَقَالُوا : أيُّنَا يُطِيقُ ذَلِكَ يَا رسولَ الله ؟ فَقَالَ : قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ اللهُ الصَّمَدُ: ثُلُثُ الْقُرْآنِ ‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াতে সক্ষম? তারা বিষয়টি কঠিন মনে করলেন এবং বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়বে? তিনি বললেন, (সূরা ইখলাছ) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৭)।
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার। এর মধ্যে রয়েছে, সূরা বাক্বারা, সাজদাহ, দাহর, ওয়াক্বিয়া, রহমান, ইয়াসীন, মুলক, আ‘লা, গাশিয়া, ইখলাছ, ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি।
শেষকথা :
এ কথা সকল মুসলিমের জানা উচিৎ, কেবলমাত্র মুসলিম হওয়াই জান্নাত লাভের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং ইসলামী জীবনবিধানকে অনুসরণ করতে হবে অনুসরণ করার মত। তবেই কেবলমাত্র সফলতা আসতে পারে। আল্লাহ বলেন, فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدىً فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى ‘অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না’ (ত্বহা ১২৩)।
ইসলামকে অনুসরণের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ জ্ঞান। বিশুদ্ধ জ্ঞানের একমাত্র উৎস পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। সুতরাং ইহলৌকিক জীবনে সুপথ প্রাপ্ত হওয়া এবং পারলৌকিক জীবনে মুক্তিলাভের জন্য আমাদেরকে মানবজাতির উদ্দেশ্যে মহান রাববুল আলামীন প্রেরিত এই মহা হেদায়েতগ্রন্থ পবিত্র কুরআনকে যে কোন মূল্যে শিখতে হবে। কুরআনের নির্দেশাবলী জানতে হবে। নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব।
অতএব প্রিয় যুবক ভাইদের উদ্দেশ্যে আমাদের আন্তরিক আহবান, এ ক্ষণস্থায়ী জীবন পরিসমাপ্তির পর যে অন্তহীন জীবন আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে সে জীবনে আমাদের একমাত্র সাথী হবে পবিত্র কুরআন। এই চিরস্থায়ী সাথীকে তাই সময় থাকতেই যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সুতরাং আসুন! সাধ্যমত কুরআনের পঠন-পাঠনে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি। আমাদের আত্মীয়-পরিজন এবং সমাজকে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময় আবশ্যকভাবে কুরআনের জন্য ব্যয় করি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন। আমীন!