সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিকতা
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মুযাফফর বিন মুহসিন 912 বার পঠিত
বাংলাদেশ
আহলেহাদীছ যুবসংঘ প্রতি দুই বছর অন্তর দ্বি-বার্ষিক কর্মী সম্মেলন আয়োজন
করে থাকে। সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত অগ্রসরমান সচেতন কর্মী, সুধী এবং বিভিন্ন
পর্যায়ের দায়িত্বশীল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আমন্ত্রিত অতিথি, সম্মানিত
ওলামায়ে কেরাম ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলগণের বক্তব্যে তারা অনুপ্রাণিত হন।
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, তাৎপর্যপূর্ণ দিক-নির্দেশনা এবং সাংগঠনিক কর্মকৌশল
প্রাপ্ত হয়ে সারা দেশে তাওহীদী জাগরণ সৃষ্টি করেন। উক্ত ধারাবাহিকতায় আগামী
২০শে সেপ্টেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্বি-বার্ষিক
কর্মী সম্মেলন-২০১২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। মূলতঃ কর্মীদের
চেতনাকে উজ্জীবিত ও শাণিত করাই এর আসল উদ্দেশ্য। যা দাওয়াতী ময়দানে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ দৃঢ় তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত এদেশের একক যুবসংগঠন। ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আজও সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও নিজস্ব সাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যকে অাঁকড়ে ধরেই পথ চলবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামের নামে সমাজে প্রচলিত শিরক-বিদ‘আত মিশ্রিত আক্বীদা ও আমলের বিরুদ্ধে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ চিরদিনই আপোসহীন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে কালিমামুক্ত করে নির্ভেজাল তাওহীদ ও সুন্নাতের মশাল জ্বালানোই এর আসল সংগ্রাম। মানবরচিত যেকোন দর্শন, মতবাদ, থিউরি, ইজমকে উপেক্ষা করে একমাত্র মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শকে প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব পালন করছে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’।
আল্লাহ প্রেরিত বৈপ্লবিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কর্মীদের অবদান অবিস্মরণীয়। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রতিকূল পরিবেশে জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে ‘যুবসংঘ’কে অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যারা শিরক-বিদ‘আতের বশংবদ তারা তথাকথিত ইসলামের ধ্বজা নিয়ে যুবসংঘের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। আর যারা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দোসর তারা পাশ্চাত্যের রসদ পান করে রাজনীতির অযুহাত দিয়ে যুলুম-অত্যাচার ও কারাগারের নির্মম খড়গ চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ‘যুবসংঘ’ সমস্ত বাধাকে ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এসেছে; বিজয় তাদেরকে হাতছানি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। তাক্বওয়া ও খুলূছিয়াতই এর একমাত্র কারণ অন্য কিছু নয়।
তাক্বওয়ার বলে বলিয়ান প্রকৃত কর্মী দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে গেলে বাতিল মাথা নত করতে বাধ্য। কারণ আল্লাহর বাণী, ‘বলুন! হক্ব এসেছে বাতিল চুরমার হয়েছে। বাতিল তো নিশ্চিহ্ন হয়েই থাকে’ (বানী ইসরাঈল ৮১)। উক্ত দাওয়াত সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দারুণ প্রভাব বিস্তার করে। এটা মূলতঃ ইলাহী প্রভাব। সুতরাং পৃথিবীতে তাক্বওয়ার কোন জুড়ি নেই। আল্লাহ তা‘আলার চিরন্তন ঘোষণা, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথেই আছেন যারা তাক্বওয়াশীল এবং সৎকর্মপরায়ণ’ (নাহল ১২৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যে তাক্বওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার পথ উন্মুক্ত করে দিবেন। আর তাকে তিনি কোথায় থেকে রুযী দান করেন সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন, আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেই’ (তালাক ২-৩)। এদিকে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে তাক্বওয়া অর্জনের জন্য অছিয়ত করছি। কারণ তাক্বওয়া সকল কিছুর শিকড়’ (আহমাদ হা/১১৭৯১, সনদ ছহীহ)।
উক্ত বাণীগুলোই ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কর্মীদের একমাত্র সম্বল। রাসূল (ছাঃ) যখন গারে ছাওরের মধ্যে অবস্থান করছিলেন তখন আবুবকর (রাঃ) শঙ্কিত হলে রাসূল (ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি চিন্তা করো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’ (তওবা ৪০)। কাফের-মুশরিকরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাদেরকে দেখতে পায়নি। অথচ তাঁরা সেখানেই ছিলেন। আল্লাহ তাঁদের জন্য রহমতের বেষ্টনি করে দিয়েছিলেন। ইবরাহীম (আঃ)-কে যখন আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনিই সর্বোত্তম তত্ত্বাবধায়ক’। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ঠান্ডা ও শীতল হয়ে গিয়েছিল। রহমতে ইলাহীর কারণে আগুন তাকে না পুড়িয়ে শীতল-ছায়া দান করেছিল। এগুলোই তাক্বওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত (আলে ইমরান ১৭৩; বুখারী হা/৪৫৬৩)। আরো যে কত দৃষ্টান্ত ইসলামের সোনালী ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে তার ইয়ত্তা নেই। যিনি যত তাক্বওয়াশীল বলে আল্লাহর কাছে মনোনীত হয়েছেন তিনি তত সফলতা লাভ করেছেন। আর এটা দুনিয়াবী সফলতা নয়; পরকালীন সফলতা।
ছাহাবায়ে কেরামের ধারা মোতাবেকই ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কর্মীরা সর্বক্ষেত্রে নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা একান্তভাবে আশা করছি তাক্বওয়ার শিক্ষাই হবে এই সম্মেলনের মূল শিক্ষা। আল্লাহ যেন তাক্বওয়াশীল দাঈ হিসাবে ‘যুবসংঘে’র কর্মীদেরকে কবুল করেন নেন। আল্লাহ তা‘আলা সম্মেলনকে কবুল করুন এবং কর্মীদেরকে যথাযথ প্রতিদান দান করুন-আমীন!!