আমাদের শারীরিক গঠন ও আল্লাহর অসীম কুদরত
হারুন ইয়াহইয়া
হারুন ইয়াহইয়া 900 বার পঠিত
১. একটি অপূর্ণাঙ্গ চোখ দেখতে পারে না’
‘চোখ’ শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মনে সর্কপ্রথম কোন্ ভাবনার উদয় হয়? দেখবার ক্ষমতা যে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- সে সম্পর্কে আপনি কি সচেতন আছেন? ধরে নিচ্ছি, আপনি এ ব্যাপারে সচেতন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখছেন, আপনার চোখ স্রষ্টার কোন্ কোন্ নিদর্শন (sing) বহন করছে? মানুষসহ অন্যান্য জীবিত প্রাণী যে সৃষ্ট, তার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণগুলোর একটি হচ্ছে এই ‘চোখ’। চোখ মানেই পারফেক্ট ডিজাইন। মানুষসহ সকল জীব-জানোয়অর যে অঙ্গটি দিয়ে তার চারপাশের সবকিছু দেখে বা দেখতে পারে সে অঙ্গটিকে ‘পারফেক্ট ডিজাইন’-এর উদাহরণ বলা যেতে পারে। এই অসাধারণ অঙ্গটি এমন জটিল যে, মনুষ্যসৃষ্টি সবচেয়ে সফিসটিকেটেড (sophisticated) ও জটিল যন্ত্রও এর কাছে নস্যি। একটা চোখ দিযে কখন দেখা য়ায়? উত্তর : যখন চোখের সবগুলো অংশ সহবস্থান করে এবং একসঙ্গে কাজ করে। ধরা যাক, চোখের পাতা (eyelid) ছাড়া একটি চোখের কর্নিয়া আছে, আছে চোখের তারা, লেন্স, কনীনিকা(iris), রেটিনা, চক্ষুপেশী, আশ্রুগ্রন্থি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সকল উপাঙ্গ। কী ঘটবে? খুব দ্রুত চোখ তার দেখার ক্ষমতা হারাবে। আবার ধরা যাক, চোখের পাতাসহ চোখের অন্যসব উপাঙ্গই বর্তমান আছে, শুধু চোখে অশ্রু উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কী গটবে কুব দ্রুত চোখ শুকিয়ে যাবে এবং এক সময় তা অন্ধ হয়ে যাবে। বিবর্তনবাদীদের বিশ্বাস এই চোখের কাছে এসে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য। তারা বিশ্বাস করে যে, জীব-জন্তুদের (মানুষসহ) অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সরল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে জটিলতর হয়েছে দৈবক্রমে।যদি তা-ই হয়, তবেচোখকে ব্যাখ্যা করা যায় কি প্রকারে? চোখ হচ্ছে অনেকগুলো উপাঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত জটিল একটি অঙ্গ এবং যেমনটি ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে সকল সকল উপাঙ্গ একসাঙ্গে কাজ করলেই কেবল এটি দেখরার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। কোন অবস্থাতেই একটি অপূর্ণঙ্গ চোখ কাজ করে না: না একটি অর্ধগঠিত (half-developed) চোখ পূর্ণাঙ্গ চোখের তুলনায় অর্ধক দেখতে পারে। এ প্রসঙ্গে একজন বির্বনবাদী বিজ্ঞানের বক্তব্য শুনুন: ‘‘(জীব-জন্তুর)’’ চোখ এবং (পাখিদের) পাখার বিশেণ বৈশিষ্ট্য এমন যে, এগুলো পূর্ণাঙ্গ এবং পূর্ণবাবে বিকশিত অবস্থাতেই কেবল কাজ করতে পারে। অন্যভাবে বললে, একটি অর্ধ-বিকশিত (halfway-developed) চোখ দেখতে পারে না, না একটি অর্ধ বিকশিত পাখাওয়অলা পাখি উড়তে পারে।’’ {সূত্র : Billim ve Teknik magazine (Science and Technology Magazine), vol. 203, p.23] এখন আমরা আবারো সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়: কে চোখের সকল অংশ বা প্রত্যঙ্গগুলো একসঙ্গে সৃষ্টি করেছেন? এটা তো স্পষ্ট যে, মানুষসহ কোন জন্তু-জানোয়ারই নিজেদের চোখর গঠন ও ধরন কেমন হবে-তা ঠিক করেনি; না তারা নিজেরাই নিজেদের চোখ সৃষ্টি করে নিজেদের দেহে সংযুক্ত করে নিয়েছে। তাহলে? কে তিনি- যিনি চোখের মত জটিল ও অসাধারণ একটি অঙ্গের ডিজাইন করেছেন এবং এক অস্তিত্বে এনেছেন? কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেন যে, অচেতন কোষ হঠাৎ করেই এবং দৈবক্রমে সচেতনতা লাভ করার ফলেই প্রাণীরা দেখার ও শুনার ক্ষমতা অর্জন করেছে। এ দাবি যে কতো অযৌক্তিক ও অবাস্তব তা ব্যাখ্যা করে বোঝাবার দরকার পড়ে না। প্রশ্ন হচ্ছে : তাহলে কিভাবে চোখ বা কানের মতো বিশেষ অঙ্গের সৃষ্টি সম্ভব হলো? এখানে এসেই আমাদের স্বীকার করে নিতে হয় একজন মহাজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান স্রষ্টার অসিস্তত্বকে। একজন মহান স্রষ্টাই মানুষসহ অন্যান্য জীব-জন্তুকে দিয়েছেন দেখবার ক্ষমতা। আল কুরআন বলছে যে, একজন মহান স্রষ্টার সৃষ্টি করেছেন দৃষ্টিশক্তি : ‘‘বল’’ ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’’ (সূরা কালাম, আয়াত ২৩)।
২. কোষগুলো পরস্পকে চেনে কিভাবে?
আমাদের মধ্যে অনেকেই মানব-শরীরের গঠন সম্পর্কে জানি। আমরা জানি কিভাবে মায়ের জরায়ুতে মধ্যে ধীরে ধীরে একটি মানবশক্তির শরীর বিকশিত হয়। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের প,, মায়ের পেটে যে ভ্রূণের সৃষ্টি হয় তা মূলত একখন্ড মাংসপিন্ড বৈ আর কিছু নয়। এ ভ্রূণই ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মানবশিশুতে রূপান্তরিত হয়। আমরা জানি, শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের ফলে জাইগোটের (Zygote) সৃষ্টি হয়। সে জাইগোটে প্রথমে থাকে মাত্র দুটি কোষ বা cell। তারাপর দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি, আটটি থেকে ষোলটি- এভাবে কোষের সংখ্যা জ্যামিতিক হরে বাড়তে থাকে। ক্রমবর্ধমান ওই কোষগুলো বিভিন্ন ভাগে বিভত্ত হয়ে যায় এবং কিছু কোষ মিলিত হয়ে হাত সৃষ্টি করে, কিছু কোষ সৃষ্টি করে শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কিছু কোষ মিলিত হযে সৃষ্টি করে চোখ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিটি কোষ জানে যে, কোথায় তাকে যেতে হবে এবং কোন কোষগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়ে কোন অঙ্গ সৃষ্টি করতে হবে। মায়ের পেটে ভ্রূণের বিকশিত হবার অত্যাশ্চর্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওযা যাবে নিচের উদ্ধৃতি থেকে :
গবেষণাগারের উপযুক্ত পরিবেশে (ক্যালসিয়ামের পরিমাণ হ্রাস করে) যদি আমরা ভ্রূণের সকল কোষকে - যে কোষগুলো বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত- আলাদা করে ফেলি এবং পরে আবার উপযুক্ত পরিবেশ সেগুলোকে এলোমেলোভাবে মিলিয়ে দিই,তবে দেখা যাবে যে, কোষগুলো ঠিকই মিলিত হযে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ তৈরি করছে।’’ (pro. Dr. Ahmet Noyan, physioloqy in life and in the field of Medicine, Meteksan publishing Ankara, 1998,Edition 10. p. 40) অর্থ্যৎ কোন্ কোন্ কোষ মিলে কোন্ কোন্ অঙ্গ গঠিত হবে তা পূর্বনির্ধারিত। শুধু তাই নয়, কোষগুলো নিজেদের কাজ সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকিফহাল। হাত সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত কোষগুলো একটিও কখনো চোখ সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত কোসগুলোর সঙ্গে মিলিত হবে না। কারণ, একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের জন্য নির্ধারিত কোষগুলো পরস্পরকে ভালোভাবেই চেনে। ভ্রূণের এই কোষগুলোর কোন ব্রেন নেই, নেই কোন নার্ভাস-সিস্টেম, চোখ বা কান। তাহলে, এরা কি প্রকারে একে অপরকে চিনতে পারে? কিছু পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত এবং চেতনা ও জ্ঞান-বুদ্ধিবিহীন এই কোষ কি প্রকারে সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্য কোষকে ভিন্নবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বহু কোষের মধ্য থেকে আলাদা করতে পারে? কিভাবে এরা জানে যে, এরা মানবশিশুর জন্মের প্রক্রিয়ার এক পর্যাায়েপরস্পর মিলিত হয়ে একই অঙ্গ গঠন করবে? অচেতন পরমাণুর সচেতন আচরণ-এর পেছনে কোন শক্তি কাজ করছে? বলাবাহুল্য,এ শক্তি হচ্ছে আল্লাহ্ -যিনি জগতসমূহের রব এবং যিনি জগতসমূহ সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে। কুরআন বলছে : ‘‘আমি তাদের জন্য আমর নিদর্শনাবলি ব্যক্ত করব-বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এটি সত্য।এটা কি তোমাদে প্রতিপালকের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত?’’(সূরা হা-মীম আস্ -সাজদা, আযাত ৫৩)।
৩.মানুষের শরীরের অভ্যন্তরের সৈন্যবাহিনী
প্রতিদিন,আপনার অজান্তেই, আপনার শরীরের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে একপক্ষ আছে অসংখ্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। এরা আপনার শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে আগ্রহী। যুদ্ধের অপরপক্ষ হচ্ছে আপনার শরীরের অসংখ্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কোষ- যেগুলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মত ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে হামেশা লড়াই করে আপনর শরীরকে রোগমুক্ত রাখবার চেষ্টায় রত। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মতো শত্রুরা সবসময় আক্রমণাত্নক। সুযোগ পেলেই এরপা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে আঘাত হানতে এগিয়ে যায় সর্বশক্তি নিযে। কিন্তু এই নির্দিষ্ট এলাকার শক্তিশালী, সুশৃংখল ও সুসংগঠিত বোগপ্রতিবোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কোষগুলো যেগুলোকে সৈন্যও বলা যায়-ওই শত্রুদের সহজে অনুপ্রবেশ করতে দেয় না। এই সৈন্য-কোষগুলোর মধ্যেও আছে নানা ভাগ। প্রথমে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ অবতীর্ণ হয় সেসব ‘সৈন্য’ - যেসব সৈন্য শত্রু পক্ষের সৈন্যদের রীতিমতো গিলে খেয়ে ফেলে এবং তাদেরকে অকার্যকর করে দেয়। তরে, এই ‘গিলে খেতে সক্ষম’ সৈন্যরা যুদ্ধে পরাজিত হলে, অন্য সৈন্যদের ডেকে পাঠানো হয়। তেমন ক্ষেত্রে যুদ্ধক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ শরীরের নির্দিষ্ট অংশ বিপদ সংকেত বেজে ওঠে এবং অন্যান্য সৈন্যকেও (সাহায্যকারী ‘টি’ সেল- helper T cells) যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়বার জন্য আহবান জানানো হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন-আসা সৈন্যরা অতি সহজেই শত্রুপক্ষ থেকে মিত্রপক্ষকে আলাদা করতে পারে। অতি দ্রুত এরা ‘যুদ্ধাস্ত্র’ উপাদনে সক্ষম সৈন্যদের (‘বি’ সেল) সক্রিয় করে তোলে। এই ‘বি’ সেলগুলোর ক্ষমতা অসাধারণ। যদিও এরা শত্রুপক্ষের সৈন্যদের কোনদিন দেখেনি বা চেনে না; তথাপি এরা শত্রুপক্ষের সৈন্যদের অকার্যকর করে দিতে সক্ষম অস্ত্র তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, এরা উৎপাদিত অস্ত্র যতটুকু দূরে প্রয়োজন ততটুকু দূর পর্যন্ত বহন করেও নিয়েযায়। অস্ত্র বহন করে নিয়ে যাবার পথে এরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের এবং মিত্রপক্ষের লসন্যদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পারে (অথচ এ কাজটি মোটেই সহজ নয়)। এদিকে, সবার শেষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় আক্রমণকারী সৈন্য (কিলার ‘টি’ সেল)। এরা শত্রুপক্ষের সৈন্যদের দুর্বলতম স্থানে, নিজেদের সঙ্গে বহন করে আনা বিষময় বস্ত্ত নিক্ষেপ করে। যুদ্ধে বিজয়ী হলে, সৈন্যদের একটি নতুন গ্রুপ (suppressor T cells) যুদ্ধক্ষেত্রে আসে এবং অন্য সকল সৈন্যকে নিজ নিজ ক্যাম্পে ফেরত পাঠায়। সবশেষ যুদ্ধক্ষেত্রে আসে যে গ্রুপটি (memory cells)- সে গ্রুপটিা কাজ হচ্ছে শত্রুপক্ষ সম্পর্কে সকল ধরনের তথ্য রেকর্ড করা। বলা বাহুল্য, রেকর্ড করা এসব তথ্য কাজে লাগে ভবিষ্যতে আবারো আক্রান্ত হলে। উপরে আমরা যে অসাধারণ ও সুশঙ্খল সৈন্যবাহিনীর বর্ণনা দিলাম, এটি হচ্ছে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা Immune system। উপরে যুদ্ধের যে বর্ণনা দেয়া হলো, সে যুদ্ধে প্রতিনিয়ত যারা লিপ্ত সে কোষগুলো খালি চোখে দেখা যায় না, সেগুলোকে দেখতে হয় অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন হারুন ইয়াহিয়ার গ্রন্থ The Miracle Immune system). কতজন লোক এ ব্যাপারে সচেতন যে, তাদের প্রত্যেকের শরীরের অভ্যন্তরে আছে অমন একটি করে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও পারফেক্ট সৈন্যবাহিনী? এদের কতজন এ ব্যাপারে সচেতন আছেন যে, তাঁরা অসংখ্য রোগ-জীবাণু দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে এরা প্রতিনিয়ত অসুখ - বিসুখে আক্রান্ত হতেন এবং মৃত্যুমুখেও পতিত হতে পারতেন? বস্ত্তত, আমরা যে বাতাসে শ্বাস নেই, যে পানি পান করি, যে খাদ্য গ্রহণ করি, সেসব স্থান স্পর্শ করি - সর্বত্রই আছে ক্ষতিকর ও ভয়ষ্কর সব রোগ- জীবাণূ দ্বারা পরিপূর্ণ। যখন একজন মানুষ এ ব্রাপারে একেবারে উদাসীন, তখন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কোষসমূহ কিন্তু প্রতিনিয়ত বোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচেছ ব্যক্তিকে রাঁচানোর জন্য। দেহকোষ থেকে বোগ- জীবাণুকে আলাদা করে চিনবার বোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কোষগুলোর ক্ষমতা, শত্রুকে না দেখেও শত্রুকে ধ্বংশ করার উপযোগী অস্ত্র তৈরি করার ‘বি’ সেলের ক্ষমতা, নিজেদের এবং মিত্রপক্ষের কারো ক্ষতি না করে প্রয়োজন মুতাবিক সেসব অস্ত্র বহন করে নিয়ে যাবার ‘বি’ সেলের ক্ষমতা, মেমোরি সেলের ক্ষমতা ইত্যাদি হচ্ছে মানবদেহের বোগ-প্রতিবোধ ব্যবস্থার কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য। বস্ত্তত এ কারণেই বিবর্তনবাদী লেখকরা কখনোই বোগ- প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্ভব সম্পর্কে কোন কথা বলতে নারাজ। বিবর্তনবাদ দিয়ে এ সিস্টেমমের উদ্ভব ব্যাখ্যা করা যায় না। এ ধরণের একটি সিস্টেম কেবল একজন মহাজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান স্রষ্টার পক্ষেই সৃষ্টি করা সম্ভব। রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া বা এুটিযুক্ত রোগ- প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে একজন মানুষের পক্ষে এই পৃথিবীতে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কারণ সেক্ষেত্রে সে প্রতিনিযত আক্রান্ত হবে চারপাশে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য রোগ- জীবাণু দ্বারা। আধুনিক যুগে চিকিৎসা-বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। তথাপি,আজো তেমন একজন ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে চাই বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা-যে ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে বাখতে হবে অন্য সকল মানুষের বা অন্য যে কোন কিছুর সংস্পর্শ থেকে দূরে (এইডস বোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে । এইডস হলে একজন মানুষের শরীরের বোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বলেই সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।-অনুবাদক) এখন মানবজাতির প্রাথমিক অবস্থার কথা ভাবুন। তখন তো কোন চিকিৎসাুব্যবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় কি তখন দেহের ভেতরে পূর্ণাঙ্গ বোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল? অবশ্য না। তাহলে আমাদেরকে এ সি্দ্ধান্তে আসতে হচ্ছে যে, মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার মত একটি জটিল ও অতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা একজন মহান স্রষ্টা কর্তৃক একবারেই সৃষ্ট হয়েছিল এবং শুরু থেকেই ওই সিস্টেমের সকল উপাদান উপস্থিত ছিল মানবদেহে।