সাম্প্রতিক মুসলিম বিশ্ব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 361 বার পঠিত
আরাকানে নির্বিচারে মুসলিম গণহত্যা
গত ২৮ মে মায়ানমারের আকিয়াব শহরের রামব্রী গ্রামের এক রাখাইন শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্র পিটানোকে কেন্দ্র করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের গালিগালাজ ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এক শিক্ষিকা মারা যান। এর সূত্র ধরে ৩ জুন আকিয়াব শহর থেকে গাড়ি যোগে তাবলীগ জামা‘আতের একটি দল ইয়াঙ্গুন যাওয়ার পথে ৩ জুন টংগু নামক স্থানে পৌঁছলে রাখাইন যুবকরা গাড়ির হেলপারসহ তাবলীগ জামা‘আতের ১০ সাথীকে পিটিয়ে হত্যা করে। নির্মম এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে ৫ জুন মুসলমানরা ইয়াঙ্গুন শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ ঘটনায় মুসলিম অধ্যুষিত পুরো আরাকান রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় ইয়াঙ্গুনে শীর্ষ মুসলিম নেতারা বৈঠক করে। ৮ জুন শুক্রবার জুম‘আর ছালাতে মুসলমানদের জমায়েত করে শান্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৮ জুন পুরো আরাকানে জুম‘আর ছালাতে মুছল্লীরা সমবেত হতে থাকে। মংডু শহরের মারকায মসজিদে জুম‘আর ছালাত চলাকালে মংডু বৌদ্ধদের ইউনাইটেড হোটেল থেকে মসজিদের মুছল্লীদের উপর পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের সাথে রাখাইন ও সরকারী নাসাকা বাহিনীর সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। নাসাকার গুলীতে কয়েকজন মুসলিম নিহত হ’লে পুরো আরাকানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গা সামাল দিতে সেখানে সেনাবাহিনী নামানো হয়। ১০ জুন জারী করা হয় সান্ধ্য আইন।
সরকারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাতে সেখানে বহু মুসলিম রোহিঙ্গা যুবক-যুবতী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নিহত হয়। রাখাইন যুবকদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য মুসলিম যুবতী। দেশটির নাসাকা ও রাখাইন যুবকরা মিলে রোহিঙ্গা মুসলিম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অপহরণ করেছে। রাতের আধারে একযোগে চালায় লুটতরাজ, মসজিদ ও বসতভিটাতে অগ্নিসংযোগ। অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম সহায়-সম্পদ হারিয়ে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছে। মুসলমানদের রক্তস্রোতে ভাসছে পুরো আরাকান রাজ্য। অসহায় শিশু, কিশোর, ধর্ষিতা, মযলুম মানুষের আর্তনাদে সেখানকার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ পর্যন্ত দাঙ্গায় ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে ১২ শতাধিক। উদ্বাস্ত্ত হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ। এদিকে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্ত্তদেরকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অমানবিকভাবে জোরপূর্বক মিয়ানমারের দিকে ফেরৎ পাঠায়। এসব অনাহারী বাস্ত্তহারাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছে তা জানা যায় নি। তবে নাসাকা বাহিনী বেশ কিছু নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। এছাড়া সাগরে বহু লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বৌদ্ধ প্রধান মায়ানমার সরকার মুসলিম জাতিভুক্ত রোহিঙ্গাদেরকে সে দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকার করে না। এজন্য তারা বিভিন্ন কৌশল ও সুযোগে ‘এথনিক ক্লিনজিং’-এর অংশ হিসাবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে আসছে গত ১০০ বছর ধরে। ফলে মিয়ানমারে বসবাসরত ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠীতে।
মুহাম্মাদ মুরসী মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
মিসরের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুহাম্মাদ মুরসী। গত ২৪ জুন রোববার মিসরের নির্বাচন কমিশন তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করে এবং ৩০ শে জুন তিনি মিসরের ৫ম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস! মাত্র দেড় বছর আগেও হোসনী মোবারক সরকারের আমলে যে মুরসী ছিলেন কারাগারে, তিনিই এখন মিসরের প্রেসিডেন্ট। আর মোবারক আজ কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন নিত্য।
মুরসী ৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হোসনী মোবারকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমাদ শফীককে পরাজিত করেছেন। জয়লাভের পর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। তবে ২৯ ও ৩০ জুন তারিখে তিনি তাহরীর স্কয়ারে এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বক্তৃতা দেন তা একদিকে যেমন প্রকৃত ইসলামপন্থীদের হতাশ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে যে, তিনি ইসলামী শরী‘আ আইন প্রতিষ্ঠার চিন্তা কোনভাবেই করছেন না। একইভাবে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার কোন বিকল্প নেই।
এদিকে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম সামরিক কাউন্সিল নিজেদের হাতে অনেক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে যে ডিক্রি জারি করেছিল তা বেশ শক্ত হাতেই প্রতিরোধ করেছেন মুরসী। জুলাইয়ের শুরুতেই তিনি নিজস্ব ক্ষমতাবলে এই ডিক্রি বাতিল ঘোষণা করেন। অতঃপর ১২ আগস্ট তিনি সেনাপ্রধান তানতাভী এবং সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ সামী আনানকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেন। তাঁর এই কঠোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তেমন কোন হুমকি না আসায় বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সাড়া পড়ে যায়। ২৭ আগস্ট তিনি ২১ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন যাতে ৩ জন মহিলা এবং ২ জন খৃষ্টান রয়েছেন। মোটামুটি যোগ্যতার সাথে এবং শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে মুহাম্মাদ মুরসির প্রাথমিক ক্রিয়াকলাপে। ভবিষ্যতই বলে দিবে, ইতিহাসে তিনি কেমন শাসক হিসাবে নিজেকে প্রমাণিত করতে সক্ষম হবেন।
মালির সালাফী সংগঠন আনছারুদ্দীন শিরকের আড্ডাখানা গুঁডিয়ে দিল
সম্প্রতি মালির উত্তরাঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সালাফী বিদ্রোহী সংগঠন আনছারুদ্দীন এবং এমএনএলএ। অতঃপর তারা দখলীকৃত টিম্বুকটু শহরের ছূফী সাধকদের বড় বড় মাযারসমূহ ভেঙে ফেলতে শুরু করেছে। ইসলামী শরী‘আতের কট্টর অনুসারী এই সংগঠনটি মুসলিম ছূফী সাধকদের এসব সমাধিকে মূর্তি হিসাবে বিবেচনা করে। বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তান, মিসর ও লিবিয়ায় ছূফী সাধকদের বিভিন্ন সমাধিতে হামলা করেছিল এই সংস্কারপন্থী সালাফীরা। ইতিমধ্যে তারা সিদি মাহমূদ সমাধিসহ আরও দুটি স্তম্ভ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। মূলতঃ পুরো মালিতে ইসলামী শরী‘আ আইন চালু করতে এবং সকল প্রকার শিরকের মূলোৎপাটন চায় এই সালাফী সংগঠনটি।
রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রকাশ
সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় তৈরীকৃত ‘ইনোসেন্স অফ মুসলিমস’ নামে প্রকাশিত একটি চলচ্চিত্রে রাসূল (ছাঃ)-কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে যে, এ বছরের জুলাই মাসে চলচ্চিত্রটি প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজী ভাষায় এবং একটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। সে সময় ১৪ মিনিটের একটি পার্ট ইউটিউবে আপলোড করা হয়। তবে বিষয়টি তখন প্রচার পায়নি। অতঃপর সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রযোজকরা এই চলচ্চিত্রাংশটি আরবীতে ডাবিং করে আপলোড করে। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর মিসরের ‘আন-নাস’ টিভিতে ইউটিউবের এই কাটপিসটি প্রদর্শিত হলে সর্বপ্রথম বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে মিসর ও লিবিয়ায় এ ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা সহিংস হয়ে উঠে এবং মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়। ঐদিনই লিবিয়ার বেনগাজীতে মার্কিন দূতাবাসে এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার ইভান্স নিহত হন। এ ঘটনায় সারাবিশ্বে মুসলিম সংগঠনগুলো বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবী জানায়। বেশ কয়েকটি দেশে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমেরিকান সরকার বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্ম ও রাসূল (ছাঃ)-কে বিদ্রুপ করে নির্মিত এই ঘৃণ্য চলচ্চিত্রটি প্রচারে ইহুদীদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার কখা প্রকাশ পেয়েছে।