চাই সহনশীলতার চর্চা

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 2163 বার পঠিত

মতভেদ এমন একটি বিষয়, যা মানবজাতির সৃষ্টিগত স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। নানা মুনির নানা মত- প্রবাদটির মত আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে মতপার্থক্য এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নানান মতের রহস্য ও পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন- ‘আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে এক দলভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে যে বিধানসমূহ দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নিতে। অতএব তোমরা আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কর্মসমূহে প্রতিযোগিতা কর। (মনে রেখ) আল্লাহর নিকটে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন স্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন যেসব বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে’ (মায়েদা ৫/৪৮)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আপনার রব চাইলে সকল মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা সদা মতভেদ করতেই থাকবে। তবে তারা নয়, যাদের প্রতি আপনার রব অনুগ্রহ করেছেন এবং তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন’ (হূদ ১১/১১৮-১৯)। মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, আবেগ-অনুভূতি, চর্চা-অভিজ্ঞতার আলোকে জ্ঞান-বুদ্ধির তারতম্য ঘটে। নিত্য-নতুন ভাবের উদয় হয়। সুতরাং মানবসমাজে মতভেদ থাকবেই। বরং মতের এই বিভিন্নতা আল্লাহর অসীম কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। নইলে মানবজীবনধারা আমাদের চোখে এতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে ধরা দিত না।

মতভেদ ও মতপার্থক্যের এই স্বভাবজাত বিষয়টি যখন আমরা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তখন লক্ষ্য করি আমাদের একটি বড় অংশই এ ব্যাপারে যথেষ্ট অস্পষ্টতা এবং বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত। একদল মনে করেন মতপার্থক্যই ইসলামের সৌন্দর্য। সুতরাং যত মত তত পথ। যে যে পথেই চলুক না কেন, শেষ ঠিকানা আরাধ্য সত্তার সান্নিধ্য। আর অপর দল মনে করেন, ইসলামে কোন প্রকার মতপার্থক্যের স্থান নেই। সুতরাং ভিন্নমত মানেই ভ্রষ্টতার পথ, বিভ্রান্তির পথ। অথচ সত্য লুকিয়ে আছে এতদুভয়ের মধ্যখানে।

মতভেদের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান হ’ল- প্রথমতঃ কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মতভেদের নিষ্পত্তি করতে হবে। আল্লাহ বলেন- ‘আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, সে বিষয়টি আল্লাহ এবং রাসূল (কুরআন ও সুন্নাহ)-এর দিকে ফিরিয়ে দাও। এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)দ্বিতীয়তঃ মতভেদ করে পরস্পরের মধ্যে অনৈক্য ও বিভক্তি সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)তৃতীয়তঃ কোন বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞান বা দলীল পাওয়া গেলে সে বিষয়ে মতভেদ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও বিভক্ত হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতভেদ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি’ (আলে ইমরান ৩/১০৫)

চতুর্থতঃ কোন বিষয়ে স্পষ্ট দলীল না পেলে যদি মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়, তবে তার স্বীকৃতি দিতে ইসলাম নিষেধ করেনি। যেমন ইজতিহাদী মাসআলাগত বিষয়। কেননা মানুষ অসীম জ্ঞানের অধিকারী নয়। তাই তার অজ্ঞতা ও স্বল্পজ্ঞান থেকে জন্ম নিতে পারে ভিন্নমত। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন বিচারক ইজতিহাদ করে এবং সঠিক মতে উপনীত হয়, তখন তাঁর জন্য রয়েছে দু’টি পুরষ্কার। আর যদি সে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, তবে তার জন্য রয়েছে একটি পুরষ্কার (কেননা সে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য চেষ্টা চালিয়েছে) (বুখারী হা/৭৩৫২; মিশকাত হা/৩৭৩২)। অনুরূপভাবে বনু কুরায়যায় আছরের ছালাত আদায় সম্পর্কে ছাহাবীদের মতভেদ থেকেও বুঝা যায় যে, সব মতভেদ বাতিলযোগ্য নয় (বুখারী হা/৯৪৬; মুসলিম হা/১৭৭০)। সুতরাং অসঙ্গত মতপার্থক্য যেমন ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়; আবার মতপার্থক্য মানেই যে নিন্দনীয়, তা নয়।

বর্তমান যুগে সচরাচর যে চিত্রটি আমাদের খুব পরিচিত তা হ’ল, ছোটখাটো বিষয়েও মতপার্থক্য দেখা দিলে আলেম সমাজ ও ধর্মীয় মহলে দেখা দেয় পারস্পরিক দূরত্ব এবং কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির প্রতিযোগিতা। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তো বিষয়টি প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে। অনেক সময় এই বাকযুদ্ধ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে মনে হয় কেবল খুনোখুনিটা বাকি। এর পিছনে মূল যে কারণটি নিহিত, তা হ’ল- মতপার্থক্যের প্রকৃতি না বুঝা এবং কোন মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে মতবিরোধের হাতিয়ার বানিয়ে নিজেদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভক্তি সৃষ্টি করা। অথচ অন্তরে ইখলাছ ও তাক্বওয়ার যথাযথ চর্চা থাকলে এবং কিছু মূলনীতি মনে রাখলে এধরনের মতবিরোধ সহজেই এড়ানো যেত। নিম্নে আমরা কয়েকটি মূলনীতি উল্লেখ করতে চাই, যেগুলো আমাদের মধ্যকার এই অনৈক্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন : 

(১) সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতা অবলম্বন করা। এদু’টি মতভেদ দূরীকরণে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। আমাদের মনে রাখা ভাল যে, ভিন্নমত মানেই ভুল মত নয়। বরং বাহ্যদৃষ্টিতে কোন সময় একটি মতকে সঠিক মনে হলেও এমনও হ’তে পারে যে, ভিন্ন মতই সঠিক। মুসা (আঃ) ও খিযির (আঃ)-এর ঘটনা এক্ষেত্রে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় (কাহফ ৬০-৮২)

(২) সর্বদা পরামর্শ ও আলোচনার দুয়ার খোলা রাখা। যে কোন সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম পদ্ধতি হ’ল ভিন্ন মতাবলম্বীর সাথে আন্তরিকতা ও সত্যনিষ্ঠার সাথে আলোচনা করা। যদি সদিচ্ছা নিয়ে পর্যালোচনার দুয়ার উন্মুক্ত রাখা হয়, তবে যে কোন জটিল বিষয়ের সমাধানও সহজ হয়ে যায়। এজন্য সর্বোত্তম পন্থায় আলোচনা-পর্যালোচনার পথ খোলা রাখতে হবে (আলে ইমরান ৩/১৫৯; নাহল ১৬/১২৫)। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে- যা উত্তম। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানী দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৫৩)

(৩) অধিকতর শক্তিশালী দলীলকে প্রাধান্য দেয়া। শরী‘আতের কোন বিষয়ে উভয় মতের স্বপক্ষে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য দলীল উপস্থিত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে অধিকতর শক্তিশালী মতটিকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে, অতঃপর তার মধ্যে যেটা উত্তম সেটার অনুসরণ করে, তাদেরকে আল্লাহ সুপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই হ’ল জ্ঞানী’ (যুমার ৩৯/১৮)

(৪) ব্যক্তিস্বার্থ বা কারো প্রতি বিদ্বেষভাব দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া। আমাদের সমাজে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হ’ল ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা তাড়িত হওয়া এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। সমাজে অধিকাংশ মতভেদ বিষাক্ত আকার ধারণ করে মূলতঃ স্বার্থপরদের কারণে, যারা যে কোন মূল্যে ব্যক্তিস্বার্থকে চরিতার্থ করতে চায়। যে কোন মতবিরোধ নিরসনের পূর্বশর্ত হ’ল এই মহা ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা (নিসা ৪/১৩৫; মায়েদা ৫/৮; শূরা ৪২/৪০)।  

(৫) বৃহত্তর ও সামগ্রিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক সময় ক্ষুদ্রতর বিষয়গুলো ত্যাগ করা বা এড়িয়ে যাওয়া দূরদর্শিতার পরিচায়ক। মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইসহ খারেজী যুল-খুয়াইছিরার সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর আচরণ এই দূরদর্শিতারই সাক্ষ্য দেয়। রাসূল (ছাঃ) চাইলে তাদেরকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি বলেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও, ভবিষ্যতে কেউ যেন না বলতে পারে যে, মুহাম্মাদ তাঁর সাথীদের হত্যা করেন’ (বুখারী হা/৪৯০৫)। হোদায়বিয়ার সন্ধি কিংবা মক্কা বিজয়কালে রাসূল (ছাঃ)-এর ভূমিকা এই মূলনীতির জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত।

(৬) আত্ম-অহংকারে লিপ্ত না হওয়া। অনেক সময় জ্ঞানী হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরাও নিজেদের অহংবোধ ধরে রাখতে গিয়ে স্বীয় মতের বাইরে ভিন্ন কোন মতকে সামান্য অবকাশও দিতে চান না। বরং অন্যায় যিদ ও হঠকারিতার মধ্যে ডুবে যান। অথচ দ্বীনের স্বার্থে অন্যের জ্ঞানকেও স্বীকৃতি দেয়ার উদারতা রাখতে পারলে বহু মতভেদপূর্ণ বিষয় সহজেই সমাধান করা সম্ভব হয়। মনে রাখা ভাল যে, নিজের বিজ্ঞতাকে সর্বেসবা ভাবার চেয়ে বড় অজ্ঞতা আর নেই। আল্লাহর বাণী আমাদের জন্য অনেক বড় নছীহত- ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর অধিক জ্ঞানী আছে’ (ইউসুফ ১২/৭৬)

(৭) সর্বদা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি রুজু থাকা। কেননা এই দু’জন ব্যতীত পৃথিবীর কারো বক্তব্যই শতভাগ গ্রহণীয় নয়। ব্যক্তি যত জ্ঞানী ও যত বড় ইমামই হোন না কেন, তার কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার বিপরীত হ’লে তা সর্বতোভাবে বর্জনীয় (আন‘আম ৬/১৫৩; আ‘রাফ ৭/৩; নূর ২৪/৫১)

(৮) আত্মসংশোধনকে হীনতা মনে না করা। কারণ সংশোধন হ’তে পারাই ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যত নেককার ব্যক্তিই হোক, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয় (ইউসুফ ১২/৫৩; নাজম ৫৩/৩২)। সুতরাং ভুলের উপর টিকে থাকায় কোন কৃতিত্ব নেই; বরং আত্মসংশোধনেই রয়েছে সফলতা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিতও হবে না (আ‘রাফ ৭/৩৫)

(৯) অপরের কল্যাণকামী হওয়া। মানবতার বৃহত্তর কল্যাণচিন্তা যার মনে বিরাজ করে, মতবিরোধে লিপ্ত হওয়া তার জন্য প্রায় অসম্ভবই। বরং সংশোধন ও সংস্কারের প্রবল আকুতি উল্টো তাকে মতবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তাড়িত করে। তার ভাবনা জুড়ে প্রতিধ্বনিত থাকে আল্লাহর বাণী- মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তাক্বওয়া অবলম্বন কর। যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হ’তে পার (হুজুরাত ৪৯/১০)। এমনকি অমুসলিমের প্রতিও সে থাকে দয়ার্দ্রচিত্ত (মুমতাহিনা ৮)। মানুষকে ক্ষমা করা, ছাড় দেয়া, সহমর্মিতা প্রকাশ করা ইত্যাদি হয় তার নিত্য বৈশিষ্ট্য (আলে-ইমরান ৩/১৩৪; নূর ২৪/২২)। কোন অবস্থাতেই সে অন্যের সম্মানহানির চিন্তা করতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের উপর হস্তক্ষেপ করা হারাম। কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে (মুসলিম হা/২৫৬৪)। তিনি আরো বলেন, ‘দ্বীন হ’ল কল্যাণকামিতার নাম’ (মুসলিম হা/৫৫)

(১০) মধ্যপন্থা অবলম্বন করা : একজন মুসলমানের জীবন হবে ভারসাম্যপূর্ণ। অতি অনুরাগ কিংবা অতি বিরাগ তাকে কখনই বিভ্রান্ত বা লক্ষ্যচ্যুত করবে না। কোন অবস্থাতেই সে চরমপন্থা অবলম্বন করবে না। বাড়াবাড়ি করবে না। বরং সাধ্যমত মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সমঝোতার পথ খোলা রাখবে (বাক্বারাহ ২/১৪৩; ফুরক্বান ২৫/৬৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন করা, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না। মানুষকে সুসংবাদ দাও, দূরে ঠেলে দিও না (বুখারী হা/৬৯; মুসলিম হা/১৭৩২)।    

প্রিয় পাঠক! বর্তমান যুগে আলহামদুলিল্লাহ দ্বীনের দাওয়াতের ময়দান যেমন প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি এর বিপরীতে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় দল-উপদলের মধ্যে বাড়ছে পারস্পরিক হিংসা -বিদ্বেষ ও কলহ-বিবাদ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ধার্মিক তরুণদের একটা বড় অংশ একে অপরের বিরুদ্ধে জবাব-পাল্টা জবাব, রদ-পাল্টা রদে মহা ব্যস্ত। কারো বিরুদ্ধে সামান্য ত্রুটি পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগা, সম্মানহানি করা এগুলো এখন স্বাভাবিক কালচারে পরিণত হয়েছে। কোন বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান কিংবা প্রকৃত তথ্য না জানা থাকলেও তারা বড় বড় মন্তব্য, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্রোক্তি করতে দ্বিধা করছে না। ফলে মতভেদের বিষবাষ্প বাড়ছে বৈ কমছে না।

অথচ এই মতভেদ-ঝগড়া, বিবাদ-বিসংবাদ, গীবত-তোহমত কখনই ইসলামের কাম্য নয়। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের দ্বীনদারিতার, হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ইখলাছ, বিনষ্ট হচ্ছে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ, বিপথগামী হচ্ছে আমাদের সমাজ; সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সার্বিক অগ্রযাত্রা। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর ও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না। করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি ও প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন (আনফাল ৮/৪৬)। সুতরাং যদি আমরা আল্লাহর প্রকৃত আনুগত্যশীল বান্দা হ’তে চাই, আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে ইসলামী সংস্কৃতির সুসভ্য বাতাবরণে সাজাতে চাই, ঐক্য ও সংহতির সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই এবং মুসলিম উম্মাহকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে দেখতে চাই, তবে আমাদেরকে অবশ্যই মতবিরোধের এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য, সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। পারস্পরিক সমঝোতার পথ খুঁজে নেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। তুচ্ছ কারণে আমাদের মধ্যে শয়তান যেন কোনরূপ বিভেদের দরজা খুলতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে। আর এর মাঝেই নিহিত রয়েছে আমাদের দুনিয়াবী ও পরকালীন সাফল্য ও মর্যাদা। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন। আমীন!            



বিষয়সমূহ: শিষ্টাচার
আরও