সম্মান-মর্যাদা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
আল-কুরআনুল কারীম :
1- يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ - يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ-
(১) ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয় ক্বিয়ামতের প্রকম্পন অতীব ভয়ংকর বিষয়। যেদিন তোমরা দেখবে দুগ্ধদায়িনী মা তার স্তন্যপায়ী সন্তানকে ভুলে যাবে এবং গর্ভবতীর গর্ভ খালাস হয়ে যাবে। আর তোমরা মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ। অথচ তারা মাতাল নয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহর শাস্তি অতীব কঠিন’ (হজ্জ ২২/১-২)।
2- يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَا يَجْزِي وَالِدٌ عَنْ وَلَدِهِ وَلَا مَوْلُودٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَالِدِهِ شَيْئًا إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ-
(২) ‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনকে, যেদিন পিতা তার পুত্রের কোন উপকার করতে পারবে না বা পুত্র তার পিতার কোন কাজে আসবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য’ (লোকমান ৩১/৩৩)।
3- وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا - اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا-
(৩) ‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্মকে আমরা তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে বের করে দেখাব একটি আমলনামা, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সেদিন আমরা বলব,) তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৩-১৪)।
4- يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ- يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ-
(৪) সেদিন আমরা আকাশকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমরা প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমাদের ওয়াদা সুনিশ্চিত। আমরা তা পালন করবই যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং পরিবর্তিত হবে আকাশমন্ডলী। আর মানুষ মহা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে (আম্বিয়া ২১/১০৪,ইবরাহীম ১৪/৪৮)।
5- يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمْ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ-
(৫) ‘যেদিন প্রত্যেকে উপস্থিত (ফলাফল) পাবে যা কিছু সৎকর্ম সে করেছিল এবং যা কিছু মন্দকর্ম সে করেছিল। সে চাইবে যদি তার ও তার মন্দ কর্মের মধ্যে বহু দূরের ব্যবধান সৃষ্টি হ’ত! বস্ত্ততঃ আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল’ (আলে ইমরান ৩/৩০)।
6- إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَاقِعٌ -فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْ- وَإِذَا السَّمَاءُ فُرِجَتْ- وَإِذَا الْجِبَالُ نُسِفَتْ- وَإِذَا الرُّسُلُ أُقِّتَتْ - لِأَيِّ يَوْمٍ أُجِّلَتْ- لِيَوْمِ الْفَصْلِ- وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الْفَصْلِ- وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ-
(৬) ‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে দেওয়া (ক্বিয়ামতের) ওয়াদা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। যেদিন নক্ষত্ররাজি নির্বাপিত হবে। আকাশ ছিদ্রান্বিত হবে। পর্বতমালা উড়ে যাবে। যেদিন রাসূলগণের (স্ব স্ব উম্মতের সাথে চূড়ান্ত ফায়ছালার জন্য) একত্রিত হওয়ার সময় নির্ধারিত হবে। এসব বিষয় কোন্ দিবসের জন্য বিলম্বিত করা হচ্ছে? বিচার দিবসের জন্য। তুমি কি জানো বিচার দিবস কি? সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য’(আল-মুরসালাত/৭-১৫)।
7- وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا - فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا- لَا تَرَى فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا - يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا -
(৭) তারা তোমাকে (ক্বিয়ামতের দিন) পাহাড় সমূহের অবস্থা কেমন হবে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলে দাও যে, আমার প্রতিপালক ওগুলিকে সমূলে উৎপাটন করে (ধূলির মত) উড়িয়ে দিবেন। অতঃপর তিনি পৃথিবীকে মসৃণ সমতল ময়দানে পরিণত করবেন। যেখানে তুমি কোনরূপ বক্রতা বা উচ্চতা (অর্থাৎ উঁচু-নীচু) দেখতে পারে না। সেদিন তারা একজন আহবানকারীর (ইস্রাফীলের ফুঁকের) অনুসরণ করবে। যার অনুসরণ থেকে ডাইনে-বামে যাবার উপায় থাকবে না। দয়াময়ের সামনে সেদিন সকল শব্দ নিশ্চুপ হয়ে যাবে কেবল মৃদু পদশব্দ ছাড়া (ত্বাহা ২০/১০৫-১০৮)।
8- وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ- وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ-
(৮) ‘আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে, তবে যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন। অতঃপর শিঙ্গায় আরেকটি ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। পৃথিবী তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে এবং (বান্দার) আমলনামা পেশ করা হবে। (প্রত্যেক উম্মতের) নবীদের ও সাক্ষ্যদাতাদের (ফেরেশতাদের) আনা হবে। অতঃপর তাদের মধ্যে সঠিক ফায়ছালা করা হবে এবং তারা অত্যাচারিত হবেনা’ (আয-যুমার ৩৯/৬৮-৬৯)।
9- وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ- قَالُوا يَاوَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ- إِنْ كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَدَيْنَا مُحْضَرُونَ- فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ-
(৯) ‘আর যখন শিঙ্গায় ফুঁকে দেওয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে উঠে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ তো সত্য কথাই বলেছিলেন। এটা তো হবে কেবল একটি মহা নিনাদ। অতঃপর তখনই সবাইকে আমাদের সামনে উপস্থিত করা হবে। আজ কারু প্রতি কোনরূপ যুলুম করা হবে না এবং তোমরা (দুনিয়ায়) যা করতে কেবল তারই প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে। অনুবাদ বাকি আছে’ (ইয়াছিন ৩৬/৫১-৫৪)।
হাদীছে নববী :
10- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلَاهُ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ-
(১০) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ছাঃ) বলেন, পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন প্রভুর নিকট থেকে আদম সন্তানের পা সরবে না। জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে, কি কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কি কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কি কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কি আমল সে করেছে? [1]
11- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ! الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، فَقَالَ يَا عَائِشَةُ، الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ-
(১১) ‘আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষ সকলে কি একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে থাকবে না? তিনি (ছাঃ) বললেন, হে ‘আয়েশা! সে সময়টি এত ভয়ঙ্কর হবে যে, কেউ কারো প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ পাবে না’।[2]
12- عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَخْبَرَنِى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَطْوِى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ ثُمَّ يَطْوِى الأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ-
(১২) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশ সমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ করবেন আর বলবেন, আমি আজ বাদশা। কোথায় আজ স্বৈরাচারীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? এর পর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ করে ধরবেন। অতঃপর বলবেন, কোথায় আজ স্বৈরাচারীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? [3]
13- أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا نَبِىَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِى أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِى الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنَّ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. قَالَ قَتَادَةُ بَلَى وَعِزَّةِ رَبِّنَا-
(১৩) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফিরদের কীভাবে চেহারার উপর উপুড় করে উঠানো হবে? তিনি বললেন, যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু’পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন, অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি’।[4]
14- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِى الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ-
(১৪) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মাক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে’।[5]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে নিজের ব্যাপারে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হ’ল, যখন আমাকে প্রশ্ন করা হবে হে আবুদ্দারদা! তুমি যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী কিভাবে ও কতটুকু আমল করেছ? [6]
২. ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস অভিশপ্ত। কেননা এর ছোট-বড় প্রতিটি কর্মকান্ডই ধন-সম্পদ ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক পরিচালিত হয়। দুনিয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতা তাড়া করতে গিয়ে ফেরআঊনকে মহান আল্লাহ তার শাস্তি স্বরূপ সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ধন-সম্পদলোভী কৃপণ কারূণকে আল্লাহ মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কেননা কারূণ আল্লাহর নবী মুসা (আঃ) -কে অনেক কষ্ট দিয়েছিল’।[7]
সারবস্ত্ত :
১. পার্থিব জীবনের পর এমন একদিন অবশ্যই আসবে, যেদিন হ’ল মহাবিচারের দিবস। সেই ভয়াবহ দিনে মহান আল্লাহর নিকট সকলকে দাঁড়াতে হবে এবং নিজেদের হিসাব দিতে হবে।
২. কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে নিজ নিজ কৃতকর্ম সম্পর্কে পূর্ণ হিসাব দিতে হবে। আর এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে তার জন্য জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।
৩. কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর করে উপুড় করে হাটানো হবে, যেভাবে সে এখন দুনিয়ায় দু’পায়ের ভরে চলে।
৪. ক্বিয়ামত অত্যন্ত ভয়াবহ দিবস। সকলে ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবে। নিজের ব্যতীত পাশের জনের খবর কেউ নিবে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আসন্ন মন্দ পরিণতির আশংকা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে।
৫. বিচক্ষণ মুমিন হ’ল সেই ব্যক্তি, যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন তথা ক্বিয়ামতের জন্য পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে।
[1]. সিলসিলা ছহীহাহা/৯৪৬; তা’লীকুর রাগীব ১/৭ পৃঃ, রওযুন নাযীর হা/৬৪৮; তিরমিযী হা/২৪১৭; মিশকাত হা/৫১৯৭।
[2]. বুখারী হা/৩৪৪৭; মুসলিম হা/২৮৫৯; তিরমিযী হা/২৪২৩; মিশকাত হা/৫৫৩৬।
[3]. মুসলিম হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/৫৫২৩।
[4]. বুখারী হা/৪৭৬০।
[5]. বুখারি হা/৬৫৩২।
[6]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৬০৩৮।
[7]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৮/৬২৫।