গুনাহ মাফের আমলসমূহ (২য় কিস্তি)
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
আব্দুর রহীম 11311 বার পঠিত
অমুসলিম মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ :
পিতা-মাতা অমুসলিম হ’লেও তারা জন্মদাতা। তাদের স্নেহ-ভালোবাসায় সন্তান বড় হয়ে থাকে। সেজন্য তাদের সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করতে হবে। তারা আল্লাহ্ ও রাসূল বিরোধী কোন আদেশ না করলে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ-
‘আর যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদ্ভাব রেখে বসবাস করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন কর। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকটে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করব’ (লোকমান ৩১/১৫) ।[1]
عن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: نَزَلَتْ فِيَّ أَرْبَعُ آيَاتٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى: كَانَتْ أُمِّي حَلَفَتْ أَنْ لَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ حَتَّى أُفَارِقَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطُعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا-
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আমার সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের চারটি আয়াত নাযিল হয়। (১) আমার মা শপথ করেন যে, আমি যতক্ষণ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ত্যাগ না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পানাহার করবেন না। এই প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেন, ‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে চাপ দেয় যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে’ (লোকমান ৩১/১৫)।
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِى بَكْرٍ قَالَتْ قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّى وَهِىَ مُشْرِكَةٌ فِى عَهْدِ قُرَيْشٍ إِذْ عَاهَدَهُمْ فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّى وَهْىَ رَاغِبَةٌ أَفَأَصِلُ أُمِّى قَالَ: نَعَمْ صِلِى أُمَّكِ-
আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমার মুশরিকা মা কুরাইশদের আয়ত্বে থাকাকালীন সময়ে আমার নিকট এসেছিল। তখন আমি রাসূল (ছাঃ)-কে ফৎওয়া জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মুশরিকা মা আমার কাছে এসেছে। আর তিনি ইসলাম গ্রহণে অনাগ্রহী। আমি কি তার সাথে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার কর’।[2] হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ঘটনাটি ছিল হোদায়বিয়া সন্ধি থেকে মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়কার। যখন তিনি তার মুশরিক স্বামী হারেছ বিন মুদরিক আল-মাখযূমীর সাথে ছিলেন (ফাৎহুল বারী)।
عَنْ أَسْمَاءَ ابْنَةِ أَبِى بَكْرٍ رضى الله عنهما قَالَتْ: أَتَتْنِى أُمِّى رَاغِبَةً فِى عَهْدِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم آصِلُهَا قَالَ: نَعَمْ . قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى فِيهَا لاَ يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِى الدِّينِ-
আবুবকর কন্যা আসমা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ)-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী (ছাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি’। [3]
অমুসলিম পিতা-মাতাকে দান :
অমুসলিম পিতা-মাতার জন্য মুসলিম সন্তান খরচ করবে। তাদের প্রয়োজনে নগদ অর্থ প্রদান করবে। তবে তাদের যাকাতের মাল থেকে দেওয়া যাবে না। কারণ তারা মুশরিক। আর মুশরিক যাকাতের মালের হকদার নয়। অমুসলিমকে সাধারণ দান খয়রাত করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) নিকট জনৈক ইহুদী মহিলা ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে ভিক্ষা দেন’।[4] পিতা-মাতা হিসাবেও তাদের যাকাতের মাল দেওয়া যাবে না। যেমনটি মুসলিম পিতা-মাতাকে যাকাতের মাল থেকে দেওয়া যাবে না। কারণ সন্তানের জন্য আবশ্যক হ’ল পিতা-মাতার যাবতীয় খরচ বহন করা। ইমাম আবুদাউদ ’অমুসলিমদের উপর ছাদাক্বাহ করার বিধান’ পরিচ্ছেদ উল্লেখ করে আসমা বর্ণিত হাদীছটি বর্ণনা করেন (দলীলুল ফালেহীন লি তুরুকে রিয়াযুছ ছালেহীন ৩/১৬২)।
عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّى رَاغِبَةً فِى عَهْدِ قُرَيْشٍ وَهِىَ رَاغِمَةٌ مُشْرِكَةٌ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّى قَدِمَتْ عَلَىَّ وَهِىَ رَاغِمَةٌ مُشْرِكَةٌ أَفَأَصِلُهَا قَالَ : نَعَمْ فَصِلِى أُمَّكِ-
আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মাতা, যিনি ইসলামের প্রতি বৈরী ও কুরাইশদের ধর্মের অনুরাগী ছিলেন (কুরায়েশদের সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধির সময়) আমার নিকট আগমন করেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মাতা আমার নিকট এসেছেন, কিন্তু তিনি ইসলাম বৈরী মুশরিক। এখন (আত্মীয়তার বন্ধন হেতু) আমি কি তাকে কিছু দান করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মাতার সাথে অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার কর’। [5]
অমুসলিম পিতা-মাতার হেদায়াতের জন্য দো‘আ :
সাধারণভাবে অমুসলিমদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করা কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) আবু জাহল বা ওমরের হেদায়াতের জন্য, আবু হুরায়রার মায়ের হেদায়াতের জন্য, দাউস সম্প্রদায়ের হেদায়াতের জন্য, ছাক্বীফ গোত্রের হেদায়াতের জন্য এবং ইহুদী খৃষ্টানদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেছিলেন’।[6] কারণ কারো দাওয়াতের মাধ্যমে বা দো‘আর মাধ্যমে কেউ হেদায়াত হলে সেটি লাল উট অপেক্ষা উত্তম’।[7] আর পিতা-মাতা সব চেয়ে কাছের মানুষ। বিধায় পিতা-মাতা অমুসলিম থেকে জাহান্নামে যাবে এটি কোন সন্তানের কাম্য নয়। সেজন্য অমুসলিম পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের পাশাপাশি তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। আবু হুরায়রার মায়ের জন্য দো‘আর হাদীছটি উল্লেখ করা হ’ল-
আবু কাছীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার মাকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতাম, তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। একদিন আমি তাকে ইসলাম কবুলের জন্য আহবান জানালাম। তখন তিনি রাসুল (ছাঃ) সম্পর্কে আমাকে এমন এক কথা শোনালেন যা আমার কাছে খুবই অপ্রিয় ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসুল (ছাঃ)-এর কাছে এলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম। আর তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন। এরপর আমি তাকে আজ দাওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শোনালেন, যা আমি পছন্দ করি না। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আবূু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেন। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِى هُرَيْرَةَ ‘হে আল্লাহ্! আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান কর’। নবী (ছাঃ)-এর দু’আর কারণে আমি খুশি মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি (ঘরের) দরজায় পৌঁছলাম তখন তা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, আবু হুরায়রা! একটু দাঁড়াও (থাম)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং গায়ে চাঁদর পরলেন। আর তড়িঘড়ি করে দোপাট্টা ও ওড়না জড়িয়ে নিলেন, এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলেন।এরপর বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল’। তিনি বলেন, তখন আমি রাসূল (ছাঃ) এর খিদমতে রওনা হলাম। এরপর তাঁর কাছে গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সুসংবাদ গ্রহন করুন। আল্লাহ্ আপনার দো’আ কবুল করেছেন এবং আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেছেন। তখন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন এবং ভাল ভাল (কথা) বললেন। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মুমিন বান্দাদের কাছে প্রিয় করেন এবং তাদের ভালোবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর রাসুল (ছাঃ) বললেন, اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا، يَعْنِى أَبَا هُرَيْرَةَ وَأُمَّهُ إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ وَحَبِّبْ إِلَيْهِمُ الْمُؤْمِنِينَ ‘হে আল্লাহ্! তোমার এই বান্দা (আবু হুরায়রা) কে এবং তাঁর মাকে মুমিন বান্দাদের কাছে প্রিয়ভাজন করে দাও এবং তাদের কাছেও মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দাও’। এরপর এমন কোন মুমিন বান্দা সৃষ্টি হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালোবাসেনি’।[8]
অমুসলিম পিতা-মাতার কবর যিয়ারত :
অমুসলিম পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করা জায়েয। কারণ তারা অমুসলিম হলেও জন্মদাতা পিতা ও মাতা। সেজন্য ইসলামী শরী‘আহ মুশরিক পিতা-মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছে। এতে তাদের উপকার হবে না। কিন্তু যিয়ারতকারীর উপকার হতে পারে।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ زَارَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ فَقَالَ: اسْتَأْذَنْتُ رَبِّى فِى أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِى وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِى أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِى فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ –
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) তার মায়ের কবর যিয়ারত করতে গেলেন। তিনি কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি বললেন, আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ইস্তিগফারের অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হ’ল না। আমি তার কবর যিয়ারত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হ’ল। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারাত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়’। [9]
অমুসলিম পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা :
অমুসলিম পিতা-মাতার ক্ষমার জন্য দো‘আ করা যাবে না। কারণ তারা নিশ্চিত জাহান্নামী। আর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে তাদের জন্য দো‘আ করে কোন লাভ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ ‘নবী ও মুমিনদের উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়, একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী (তাওবাহ ৯/১১৩)।[10]
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ رَجُلاً يَسْتَغْفِرُ لأَبَوَيْهِ وَهُمَا مُشْرِكَانِ فَقُلْتُ لَهُ أَتَسْتَغْفِرُ لأَبَوَيْكَ وَهُمَا مُشْرِكَانِ. فَقَالَ أَوَلَيْسَ اسْتَغْفَرَ إِبْرَاهِيمُ لأَبِيهِ وَهُوَ مُشْرِكٌ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَنَزَلَتْ (مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ –
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে তার (মৃত) মুশরিক পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুনলাম। আমি তাকে বললাম, তোমার মৃত পিতা-মাতার জন্য কি তুমি ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আ করছ, অথচ তারা ছিল মুশরিক? সে বলল, ইবরাহীম (আঃ) কি তার বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, অথচ তার বাবা ছিল মুশরিক? আমি বিষয়টি নবী (ছাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ) ‘‘নবী ও ঈমানদার লোকদের পক্ষে শোভনীয় নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনই হৌক না কেন’। [11] উল্লেখ্য যে, ইবরাহীম (আঃ) ক্ষমা র্প্রানা করেছিলেন তার ওয়াদা পূরণের জন্য। তিনি পিতার নিকট বলেছিলেন যে, আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তাছাড়া তার দো‘আ কবুল হয়নি। কারণ তার পিতা ছিল মুশরিক। আল্লাহ বলেন, وَما كانَ اسْتِغْفارُ إِبْراهِيمَ لِأَبِيهِ إِلاَّ عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَها إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْراهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ ‘আর নিজ পিতার জন্য ইবরাহীমের ক্ষমা প্রার্থনা ছিল কেবল সেই ওয়াদার কারণে যা সে তার পিতার সাথে করেছিল। অতঃপর যখন তার নিকট পরিষ্কার হয়ে গেল সে আল্লাহর শত্রু, তখন সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিল বড়ই কোমল হৃদয় ও সহনশীল (তাওবাহ ৯/১১৪)।
হাদীছে এসেছে, يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لاَ تَعْصِنِى فَيَقُولُ أَبُوهُ فَالْيَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ . فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ يَا رَبِّ ، إِنَّكَ وَعَدْتَنِى أَنْ لاَ تُخْزِيَنِى يَوْمَ يُبْعَثُونَ ، فَأَىُّ خِزْىٍ أَخْزَى مِنْ أَبِى الأَبْعَدِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى إِنِّى حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ يَا إِبْرَاهِيمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ، فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِى النَّار- ‘কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমন্ডল কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্রাহীম (আঃ) তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইব্রাহীম (আঃ) (আল্লাহর কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইব্রাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সর্বশরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে’।[12]
উপরোল্লেখিত ঘটনার অন্তরালে বেশ কিছু তাৎপর্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা‘আলার ভয় এবং তাঁর হুকুম-আহকামের প্রতি যাদের মধ্যে নিষ্ঠা থাকে না, তাদের দ্বারা দুনিয়ায় অন্য অধিকার রক্ষা ও নিষ্ঠা আশা করা যায় না। ইহজগতে মানবগোষ্ঠী সমাজের রীতি-নীতি কিংবা রাষ্ট্রের আইন-কানুন থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে বহু পন্থা আবিষ্কার করে নেয়। কিন্তু মহান আল্লাহর আইন-কানুনের ক্ষেত্রে সেগুলো অশোভনীয়ভাবে ধরা পড়ে যায় বা মলিন হয়ে যায়। তাই পিতা-পুত্রের মত নিবিড় সম্পর্কযুক্ত আপনজনের ক্ষেত্রেও মতৈক্যের কোন আপোষ মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি এবং কাফের পুত্রের সঙ্গে পবিত্র পিতার মিলিত হওয়া, মহা পবিত্র আল্লাহ তা‘আলা অনুমোদন করেননি। বরং পিতাকে এমন ভাষায় সতর্ক করে দেন, যা ভবিষ্যত মুসলিম জাতির জন্য এক মহাস্মারক। যেমন-
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! أَيْنَ أَبِى قَالَ : فِى النَّارِ. فَلَمَّا قَفَّى دَعَاهُ فَقَالَ: إِنَّ أَبِى وَأَبَاكَ فِى النَّارِ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! আমার (মৃত) পিতা কোথায় জান্নাতে না জাহান্নামে)? তিনি বললেন, জাহান্নামে। অতঃপর সে যখন (মন খারাপ করে) ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, ‘আমার পিতা এবং তোমার পিতা উভয়ে জাহান্নামে’। [13]
عَنْ أَبِى رَزِينٍ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيْنَ أُمِّى قَالَ : أُمُّكَ فِى النَّارِ . قَالَ قُلْتُ: فَأَيْنَ مَنْ مَضَى مِنْ أَهْلِكَ، قَالَ : أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ أُمُّكَ مَعَ أُمِّى-
আবু রাযীন (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার (মৃত) মাতা কোথায় (জান্নাতে না জাহান্নামে)? তিনি বললেন, তোমার মা জাহান্নামে। আমি বললাম, আপনার পরিবারের যারা পূর্বে মারা গেছে তারা কোথায়? তখন তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার মা আমার মায়ের সাথে থাকবে’।[14]
আবু তালেব মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন,مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ-إِنَّكَ لاَ تَهْدِى مَنْ أَحْبَبْتَ. ‘নবী ও মুমিনদের উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা’ ও ‘নিশ্চয়ই তুমি হেদায়াত করতে পারো না যাকে তুমি ভালবাস’।
অমুসলিম পিতা-মাতাকে দাফন :
অমুসলিম পিতা-মাতা মারা গেলে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করা সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব। তবে মুসলিম সন্তান তার অমুসলিম পিতা-মাতাকে গোসল দিবে না, কাফনের কাপড় পরাবে না, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে না ও জানাযার ছালাতের ব্যবস্থা করবে না (ছহীহাহ হা/১৬১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ لَمَّا تُوُفِّىَ أَبُو طَالِبٍ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ إِنَّ عَمَّكَ الشَّيْخَ قَدْ مَاتَ. قَالَ : اذْهَبْ فَوَارِهِ ثُمَّ لاَ تُحْدِثْ شَيْئاً حَتَّى تَأْتِيَنِى.قَالَ فَوَارَيْتُهُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ قَالَ : اذْهَبْ فَاغْتَسِلْ ثُمَّ لاَ تُحْدِثْ شَيْئاً حَتَّى تَأْتِيَنِى. قَالَ فَاغْتَسَلْتُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ قَالَ فَدَعَا لِى بِدَعَوَاتٍ مَا يَسُرُّنِى أَنَّ لِى بِهَا حُمْرَ النَّعَمِ وَسُودَهَا-
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু তালিব মারা গেলে আমি নবী (ছাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনার বৃদ্ধ চাচাজান মারা গেছেন। তিনি বললেন, তুমি গিয়ে তাকে দাফন করে এসো। আর এর মধ্যে কাউকে কিছু বলবেনা বা কিছু ঘটাবে না। তিনি বলেন, আমি তাকে দাফন করে তাঁর নিকট আসলে বললেন, গোসল করে এসো। আর এর মধ্যে কাউকে কিছু বলবে না বা কিছু ঘটাবে না। অতঃপর গোসল করে তাঁর নিকট আসলে তিনি এমন কিছু দো‘আ করে দিলেন যা লাল ও কালো উট অপেক্ষা উত্তম ছিল’। [15]
পিতা-মাতার অর্থনৈতিক অধিকার :
সন্তানের নিকট পিতা-মাতার যেমন সদাচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে তেমনি তাদের অর্থনৈতিক অধিকারও রয়েছে। একসময় পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে যান। তারা কর্ম করে খেতে পারে না। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এমন করুণ পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার দায়ভার নিতে হবে সন্তানকে। যেই পিতা-মাতা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্তান লালন পালন করে বড় করে তুলেছে তাদের এ বয়সে ভালো থাকার অধিকার রয়েছে। সন্তান তার সামর্থ্য অনুপাতে পিতা-মাতার জন্য খরচ করবে। সন্তান মানুষের সব চেয়ে বড় উপার্জন। সন্তানেরা একটি বৃক্ষের ন্যায় যাদের পিতা-মাতা সেবা যত্ন করে বড় করে তুলে। সন্তান এক সময় উপার্জন করতে শেখে। বৃক্ষের ফলদানের সময়। এই ফল ভোগের সর্বাধিক অধিকার রাখেন পিতা ও মাতা। তাই স্ত্রী ও সন্তানের পাশাপাশি পিতা-মাতার প্রয়োজনে খরচ করতে হবে।
পিতা-মাতার প্রতি খরচ করা :
ভালো পথে সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ-
‘লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিভাবে খরচ করবে? তুমি বলে দাও যে, ধন-সম্পদ হতে তোমরা যা ব্যয় করবে, তা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় কর। আর মনে রেখ, তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করে থাক, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যকরূপে অবগত (বাক্বারাহ ২/২১৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ابْدَأْ بِنَفْسِكَ فَتَصَدَّقْ عَلَيْهَا فَإِنْ فَضَلَ شَىْءٌ فَلأَهْلِكَ فَإِنْ فَضَلَ عَنْ أَهْلِكَ شَىْءٌ فَلِذِى قَرَابَتِكَ فَإِنْ فَضَلَ عَنْ ذِى قَرَابَتِكَ شَىْءٌ فَهَكَذَا وَهَكَذَا . يَقُولُ فَبَيْنَ يَدَيْكَ وَعَنْ يَمِينِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ-
‘প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় কর। এরপর অবশিষ্ট থাকলে পরিজনের জন্য ব্যয় কর। নিজ পরিজনের জন্য ব্যয় করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় কর। আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে এদিক অর্থাৎ সম্মুখে-ডানে-বামে ব্যয় করবে’।[16]
আর পিতা-মাতা পরিজনের অন্যতম সদস্য। যেমন-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا شَابٌّ مِنَ الثَّنِيَّةِ فَلَمَّا رَأَيْنَاهُ بِأَبْصَارِنَا قُلْنَا : لَوْ أَنَّ هَذَا الشَّابَ جَعَلَ شَبَابَهُ وَنَشَاطَهُ وَقُوَّتَهُ فِى سَبِيلِ اللهِ قَالَ فَسَمِعَ مَقَالَتَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : وَمَا سَبِيلُ اللهِ إِلاَّ مَنْ قُتِلَ؟ مَنْ سَعَى عَلَى وَالِدَيْهِ فَفِى سَبِيلِ اللهِ، وَمَنْ سَعَى عَلَى عِيَالِهِ فَفِى سَبِيلِ اللهِ، وَمَنْ سَعَى عَلَى نَفْسِهِ لِيُعِفَّهَا فَفِى سَبِيلِ اللهِ، وَمَنْ سَعَى عَلَى التَّكَاثُرِ فَهُوَ فِى سَبِيلِ الشَّيْطَانِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে একজন যুবক ছানিয়া নিম্ন ভূমি থেকে আগমন করল। তাকে গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করে বললাম, হায়! যদি এই যুবকটি তার যৌবন, উদ্যম ও শক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করত! বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের বক্তব্য শুনে বললেন, কেবল নিহত হলেই কি সে আল্লাহর পথে থাকবে? যে ব্যক্তি মাতা-পিতার খিদমতে চেষ্টা ব্যয় করবে সে আল্লাহর পথে। যে পরিবার-পরিজনের কল্যাণের জন্য চেষ্টায় রত সে আল্লাহর পথে। যে ব্যক্তি নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষার চেষ্টায় রত সে আল্লাহর পথে। আর যে ব্যক্তি সম্পদের অধিকতর প্রাচুর্যের নেশায় রত সে শয়তানের পথে। [17]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ لِى مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ وَالِدِى يَجْتَاحُ مَالِى. قَالَ أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ، إِنَّ أَوْلاَدَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلاَدِكُمْ-
আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদও আছে সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন খাবে’। [18] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلَ الرَّجُلُ مِنْ كَسْبِهِ وَإِنَّ وَلَدَهُ مِنْ كَسْبِهِ ‘লোকেরা যা ভক্ষণ করে তার মধ্যে পবিত্রতম হ’ল নিজের উপার্জন। আর সন্তান সন্ততি তার উপার্জনরই অংশ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَعْدِي عَلَى وَالِدِهِ قَالَ: إِنَّهُ أَخَذَ مِنْ مَالِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ، وَمَالَكَ مِنْ كَسْبِ أَبِيكَ-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক লোক রাসূলের নিকট এসে তার পিতার বাড়াবাড়ির অভিযোগ করে বলল, তিনি আমার ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়েছেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জানো, তুমি এবং তোমার ধন-সম্পদ তোমার পিতারই উপার্জন’।[19] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, وَإِنَّ أَمْوَالَ أَوْلَادِكُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ فَكُلُوهُ هَنِيئًا ‘আর তোমাদের সন্তানদের সম্পদ তোমাদেরই উপার্জন। অতএব তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে খাও’।[20]
পিতা-মাতা সন্তানের সম্পদ থেকে কি পরিমাণ ও কখন নিতে পারবে :
পিতা-মাতা তাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুপাতে সন্তানের সম্পদ নিতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে বা পিতা-মাতা সম্পদশালী হ’লে সন্তানের সম্পদ থেকে দাবী করে বা বল প্রয়োগ করে কিছুই নিতে পারবেন না।
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ قَالَ: حَضَرْتُ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ، أَتَاهُ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا خَلِيفَةَ رَسُولِ اللَّهِ إِنَّ هَذَا يُرِيدُ أَنْ يَأْخُذَ مَالِي كُلَّهُ فَيَجْتَاحُهُ، فَقَالَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ: مَا تَقُولُ؟ قَالَ: نَعَمْ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّمَا لَكَ مِنْ مَالِهِ مَا يَكْفِيكَ، فَقَالَ: يَا خَلِيفَةَ رَسُولِ اللَّهِ، أَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيكَ؟ " فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: ارْضَ بِمَا رَضِيَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ-
কায়েস ইবনু আবী হাযেম হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একদিন আবুবকরের নিকট উপস্থিত ছিলাম। একজন লোক এসে বলল, হে রাসূলের খলীফা! ইনি আমার সমুদয় সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চান। আবুবকর তখন তার পিতাকে বললেন, তুমি কি বল? সে বলল, হ্যাঁ। আবুবকর (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার জন্য যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুক তার সম্পদ থেকে গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূলের খলীফা! রাসূল (ছাঃ) কি বলেননি যে, ‘তুমি এবং তোমার সমুদয় সম্পদ তোমার পিতার’? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ যতটুকুতে খুশি হয়েছেন তুমি ততটুকুতে খুশি হও’।[21] অত্র হাদীছের সনদে মুনযির বিন যিয়াদ নামক দূর্বল বর্ণনাকারী থাকায় সনদ যঈফ হলেও হাদীছের মর্ম সঠিক। কারণ পিতা-মাতা-সন্তানের সমুদয় সম্পদ নিতে পারবে না। তাছাড়া এর স্বপক্ষে মারফূ ছহীহ হাদীছ রয়েছে, যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَوْلَادَكُمْ هِبَةُ اللَّهِ لَكُمْ، يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا، وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ، فَهُمْ وَأَمْوَالُهُمْ لَكُمْ إِذَا احْتَجْتُمْ إِلَيْهَا-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দান। তিনি যাকে খুশি তাকে কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে খুশি তাকে ছেলে সন্তান দান করেন। তারা এবং তাদের সম্পদ তোমাদেরই যখন তোমরা সেগুলোর প্রয়োজন বোধ করবে’।[22] রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلٌّ أَحَقُّ بِمَالِهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার সম্পদে অধিক হকদার তার সন্তান, পিতা ও সকল মানুষ হতে’।[23] তিনি আরো বলেন, لاَ يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلاَّ بِطِيبِ نَفْسِهِ ‘কোন মুসলমানের সন্তুষ্টি ছাড়া তার সম্পদ গ্রহণ করা হালাল নয়’।[24]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, عَلَى الْوَلَدِ الْمُوسِرِ أَنْ يُنْفِقَ عَلَى أَبِيهِ وَزَوْجَةِ أَبِيهِ وَعَلَى إخْوَتِهِ الصِّغَارِ وَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ كَانَ عَاقًّا لِأَبِيهِ قَاطِعًا لِرَحِمِهِ مُسْتَحِقًّا لِعُقُوبَةِ اللهِ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ- ‘স্বচ্ছল সন্তানের উপর আবশ্যক হল- তার পিতার জন্য খরচ করা, তার পিতার স্ত্রীর জন্য খরচ করা ও ছোট ভাইদের জন্য খরচ করা। সে যদি এমনটি না করে তাহলে সে পিতার অবাধ্য, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহর শাস্তির জন্য উপযুক্ত’।[25] ওলামায়ে কেরাম পিতা-মাতা কর্তৃক সন্তানের সম্পদ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করেছেন। যেমন- ১. পিতা-মাতাকে দরিদ্র হতে হবে, যাদের কোন সম্পদ নেই এবং কোন উপার্জনও নেই। ২. পিতা-মাতার প্রতি খরচ করার জন্য সন্তানের সামর্থ্য থাকতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) দু’টি শর্ত উল্লেখ করে বলেন, : أحَدُهُما ألاَّ يُجْحِفَ بِالابْنِ، ولا يضرَّ بِه، ولا يَأخُذَ شَيئًا تَعَلَّقتْ بِه حَاجَتُه. الثَّانِي: ألا يَأْخُذَ مِن مَالِ وَلَدِه فيُعْطِيَهُ الآخَرَ، ‘প্রথমত, সম্পদ নেওয়ার কারণে সন্তানের প্রতি যাতে যুলুম না হয়, এর কারণে সে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং পিতা এমন কিছু নিবেন না যা সন্তানের ব্যক্তিগত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। দ্বিতীয়ত, পিতা এক সন্তানের সম্পদ নিয়ে আরেক সন্তানকে দিবেন না’।[26] কোন কোন বিদ্বান পিতা কর্তৃক সন্তানের সম্পদ গ্রহণের জন্য ছয়টি শর্ত আরোপ করেছেন। ১. পিতা এমন সম্পদ গ্রহণ করবেন যাতে সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বা যে সম্পদের সন্তানের প্রয়োজন নেই। ২. অন্য সন্তানকে না দেওয়া। ৩. তাদের যে কেউ মৃত্যু রোগে আক্রান্ত না হওয়া। ৪. সন্তান মুসলিম ও পিতা কাফির না হওয়া। ৫.সম্পদ মজুদ থাকা। ৬. মালিকানার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা’।[27]
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, وَلِأَبِيهِ أَنْ يَأْخُذَ مِنْ مَالِهِ مَا يَحْتَاجُهُ بِغَيْرِ إذْنِ الِابْنِ ؛ وَلَيْسَ لِلِابْنِ مَنْعُهُ ‘আর পিতা সন্তানের সম্পদে প্রয়োজনবোধ করলে তার অনুমতি ব্যতীত গ্রহণ করবে। এতে সন্তানের বাধা দেওয়ার অধিকার নেই’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৪/১০২)।
সন্তানের পরিত্যাক্ত সম্পদে পিতা-মাতার অধিকার :
পিতা-মাতার পূর্বে সন্তান মারা গেলে সন্তানের পরিত্যাক্ত সম্পদে পিতা-মাতা ভাগ পাবেন। পিতা তিন অবস্থায় সন্তানের সম্পত্তিতে ভাগিদার হবেন। ১. সন্তানের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে পিতা সম্পদের এক ষষ্টাংশ পাবেন। ২. সন্তানের স্ত্রী-সন্তান না থাকলে পিতা ওয়ারিছ ও আছাবা হিসাবে সন্তানের সম্পদ পাবেন। ৩. সন্তানের কেবল কন্যা সন্তান থাকলে পিতা ওয়ারিছ হিসাবে এক ষষ্টাংশ ও আছাবা হিসাবে বাকী সম্পত্তি পাবেন। অপর দিকে মাতাও তিনটি ক্ষেত্রে সন্তানের সম্পত্তিতে ভাগিদার হবেন। ১. সন্তানের সন্তান থাকলে মাতা সম্পদের এক ষষ্টাংশ পাবেন, ২. সন্তানের কোন সন্তান ও ভাই বোন না থাকলে মাতা সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পাবেন ৩. সন্তানের একাধিক ভাই বোন থাকলে মাতা সম্পদের এক ষষ্টাংশ পাবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا-
মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী, তা তোমরা জানো না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় (নিসা ৪/১১)।
উপসংহার : যেই পিতা-মাতার মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীতে আগমন সেই পিতা-মাতার মর্যাদা অনেক বেশী। তাদের একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদান দেওয়ার ক্ষমতা সন্তানের নেই। অনেকেই তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। কিন্তু ইসলামে আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতার মর্যাদা অনেক উপরে দিয়েছেন। যে পিতা-মাতার কারণে একজন সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয়, সেই পিতা মাতাকে যারা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, তারা আর যাই হোক মানবিক বোধ সম্পন্ন নয়। সর্বাস্থায় পিতা-মাতার সাথে সদাচারণ করতে হবে। অন্যথায় দুনিয়ায় অশান্তি ও পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। পিতা-মাতাকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে। পিতা-মাতার কষ্ট পাওয়া সন্তানের জন্য বদ দো‘আ। সেজন্য কোন ভাবেই যেন পিতা-মাতা কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিতা-মাতার সাথে সদাচারণের মাধ্যমে তাদের দো‘আর আশা করতে হবে। তাদের ভাল দো‘আ সন্তানের জন্য কল্যাণের কারণ হবে। পিতা-মাতার খিদমত করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দুনিয়া ও পরকালে সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুন- আমীন।
[লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
[1]. আয়াত দু’টি খ্যাতনামা ছাহাবী সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ) প্রসঙ্গে নাযিল হয় (কুরতুবী)। যা ইতিপূর্বে সূরা আনকাবূত ৮ আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। ১৪ আয়াতে মায়ের কথা বলতে গিয়ে তার বিনষ্ট মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। (১) গর্ভধারণ (২) কষ্টের পর কষ্ট বরণ এবং (৩) দুই বছর যাবৎ বুকের দুধ খাওয়ানো। ছহীহ হাদীছেও ঠিক এভাবে এসেছে যে, সর্বাঙ্গিন সদাচরণ পাওয়ার হকদার কে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার মা। তারপর কে? তোমার মা। তারপর কে? তোমার মা। তারপর কে? তোমার পিতা (বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮; মিশকাত হা/৪৯১১; কুরতুবী হা/৪৯৪০)। অত্র আয়াতে দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ সর্বোচ্চ দু’বছর বর্ণিত হয়েছে। অতএব এর মধ্যেই বাচ্চার দুধ ছাড়াতে হবে। আয়েশা (রাঃ)-এর বিমাতা বড় বোন আসমা (রাঃ)-এর নিকটে তার কাফের মা এলে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তার প্রতি সদ্ব্যবহার করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ’ (বুখারী হা/২৬২০; মুসলিম হা/১০০৩; মিশকাত হা/৪৯১৩; কুরতুবী হা/৪৯৪১)। পরে আবুবকর পরিবারের সবাই ইসলাম কবুল করেন।
[2]. বুখারী হা/৩১৮৩; মুসলিম হা/১০০৩; মিশকাত হা/৪৯১৩।
[3]. বুখারী হা/৫৯৭৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৫।
[4]. বুখারী হা/১০৪৯; মুসলিম হা/৯০৩; মিশকাত হা/১২৮।
[5]. আবুদাউদ হা/১৬৬৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৫০০।
[6]. বুখারী হা/২৯৩৭; মুসলিম হা/২৪৯১; আহমাদ হা/১৪৭৪৩; আবুদাউদ হা/৫৩৮; তিরমিযী হা/৩৯৪২; মিশকাত হা/৪৭৪০, ৫৯৮৬।
[7]. বুখারী হা/২৯৪২; আবুদাউদ হা/৩৬৬১।
[8]. মুসলিম হা/২৪৯১; মিশকাত হা/৫৮৯৫।
[9]. মুসলিম হা/৯৭৬; হাকেম হা/১৩৯০; মিশকাত হা/১৭৬৩।
[10]. অত্র আয়াতে মুশরিকদের ক্ষমা প্রার্থনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাদের শিরক ও কুফরী স্পষ্ট হয়ে গেছে। জীবিত মুশরিকদের জন্য হেদায়াতের দো‘আ করা যেতে পারে। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু মৃত কাফির-মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তাদের নামের আগে শ্রদ্ধাবশতঃ মরহূম-মাগফূর, জান্নাতবাসী বা জান্নাতবাসিনী ইত্যাদি দো‘আ সূচক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
কুরতুবী, ইবনু কাছীর প্রমুখ মুফাসসিরগণ অত্র আয়াতের শানে নুযূল হিসাবে আবু তালেবের কাফের অবস্থায় মৃত্যুকালীন ঘটনা ও রাসূল (ছাঃ)-এর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার বিষয় সম্পর্কিত আহমাদ, বুখারী হা/১৩৬০, ৩৮৮৪, ৪৭৭২ ও মুসলিমে হা/২৪ বর্ণিত বিখ্যাত হাদীছটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সূরা তওবা হ’ল কুরআনের শেষ পর্যায়ে নাযিলকৃত মাদানী সূরা সমূহের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে আবু তালেবের মৃত্যুর ঘটনা ছিল ইসলামের প্রথম দিকের। অতএব সেটি হবে মাক্কী সূরা কাছাছ ৫৬ আয়াতের শানে নুযূল। যেখানে বলা হয়েছে إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ ‘নিশ্চয়ই তুমি হেদায়াত করতে পারো না যাকে তুমি ভালবাস। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে হেদায়াত দান করে থাকেন এবং তিনিই হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৬)।
[11]. তাওবাহ ৯/১১৩; হাকেম হা/৩২৮৯; তিরমিযী হা/৩১০১; আহমাদ হা/১০৮৫, সনদ ছহীহ।
[12]. বুখারী হা/৩৩৫০; মিশকাত হা/৫৫৩৮।
[13]. মুসলিম হা/২০৩; আবুদাউদ হা/৪৭১৮।
[14]. আহমাদ হা/১৬২৩৪; যিলালুল জান্নাহ হা/৬৩৮।
[15]. আহমাদ হা/৮০৭; নাসাঈ হা/১৯০; ছহীহাহ হা/১৬১।
[16]. মুসলিম হা/৯৯৭; মিশকাত হা/৩৩৯২।
[17]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪২১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৮৯২; ছহীহাহ হা/২২৩২, ৩২৪৮।
[18]. আবুদাউদ হা/৩৫৩০; ইবনু মাজাহ হা/২২৯২; মিশকাত হা/৩৩৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৪৮৭।
[19]. তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/১৩৩৪৫; ছহীহাহ হা/১৫৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৩১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৬৭৬৩ ।
[20]. আহমাদ হা/৬৬৭৮।
[21]. মু‘জামুল আওসাত হা/৮০৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৬৭৭১; ইরওয়া ৩/৩২৮।
[22]. হাকেম হা/৩১২৩; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৫২৩; ছহীহাহ হা/২৫৬৪।
[23]. সুনানু সাঈদ ইবনু মানছুর হা/২২৯৩; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৫৩১; ছুগরা হা/২৩১৩; বর্ণনাটি মুরসাল।
[24]. আহমাদ হা/২০৭১৪; দারাকুৎনী হা/৯১-৯২; মিশকাত হা/২৯৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৬২।
[25]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৪/১০১।
[26]. মুগনী ৬/৬২।
[27]. মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শায়খ, ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৯/২২১ পৃষ্ঠা।