বাজেট সমাচার
আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক
ঠোঁটে রহস্যময় হাসি নিয়ে গাড়ি থেকে
নামেন অর্থমন্ত্রী। হাতে থাকে ব্রিফকেস। ব্রিফকেসে থাকে লাখ লাখ কোটি কোটি
টাকা। তবে সেটা সরাসরি মুদ্রায় নয়, কাগজের ঘোষণায়। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর সব
দেশেই বাজেটের দিন চিরাচরিত এ দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়।
জাতীয় বাজেট একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দলীল। যেখানে পরবর্তী ১ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরা হয়। বাজেট কিভাবে প্রণীত হচ্ছে, বাজেটে কাদের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে, কতটুকু ক্ষুণ্ণ হচ্ছে; গৃহীত বাজেট জনগনের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে কতটুকু সহায়ক ইত্যাদি বিষয়ে জনগণের কৌতূহল থাকে। তাছাড়া কোনো দেশের নাগরিকদের বাজেট সম্পর্কে জানা ও সচেতন থাকা যরূরীও বটে। কারণ বাজেটের অর্থ মূলত জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই বরাদ্দ করা হয়।
বাজেট কি?
বাজেট শব্দটির উৎপত্তিস্থল ফরাসী বোওগেট শব্দটি থেকে। যার অর্থ চামড়ার ব্যাগ কিংবা ব্যাগ। বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যারা কাজ করে তাদের বেতন দিতে হয়। আবার নাগরিকদের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট বানানো সহ নানান কিসিমের উদ্যোগ নিতে হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থ বছরে কোথায় কত ব্যয় হবে এবং সেই ব্যয় কিভাবে নির্বাহ করা হবে তার পরিকল্পনার নামই বাজেট। বাজেট যে শুধু সরকারই তৈরী করে তা নয়; বাজেট ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনেরও হতে পারে। তবে ব্যক্তি বা পরিবারের সঙ্গে সরকারের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে ব্যক্তি আয় বুঝে ব্যয় করে আর সরকার ব্যয় বুঝে আয় করে। ব্যক্তির বাজেট দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক বা বাৎসরিক হতে পারে। তবে সরকারের বাজেট সবসময় এক বছরের জন্য হয়। জাতীয় বাজেট হলো বাংলাদেশ সরকারের একবছরের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবের দলীল। যার সাংবিধানিক নাম- বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি বা Annual financial statement। জাতীয় বাজেট আপাতদৃষ্টিতে একটি অর্থনৈতিক প্রস্তাবনাপত্র মনে হলেও মূলতঃ এটি একটি রাজনৈতিক দলীল। বাজেটে সরকারী দলের রাজনৈতিক আদর্শ ও অর্থনৈতিক চিন্তা প্রতিফলিত হয়। সরকারী দল তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কতটুকু আন্তরিক, বাজেটে তার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি চিত্রায়িত হয়।
বাজেটের সময়সীমাঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৮৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারের পক্ষে মাননীয় অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে থাকেন। সংসদে বাজেটের উপর আলোচনা হয়। প্রয়োজনে সংশোধন হয় এবং সবশেষে তা সংসদে ১ বছরের জন্য অনুমোদন লাভ করে। জাতীয় বাজেটের এই সময়কালকে Fiscal year বা রাজস্ববর্ষ ও বলা হয়। সরকারের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেমন- ৫ বছর ব্যাপী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা মাথায় রেখে বাজেট প্রণীত হয়। বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় জুলাই মাসে, শেষ হয় জুন মাসে। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় ১লা অক্টোবর, শেষ হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। প্রতিবেশী ভারতে শুরু হয় এপ্রিল মাসে, শেষ হয় মার্চ মাসে।
বাজেট কাঠামো
সরকারের আয় ও ব্যয় কেমন হবে, সেই প্রশ্নে রাষ্ট্রের বাজেট দুই রকমের হয়ে থাকে। যেমনঃ
১. সুষম বাজেটঃ সরকারের মোট আয় ও ব্যয় সমান হলে সেটি হচ্ছে সুষম বাজেট। অর্থাৎ সরকারের মোট ব্যয় পরিকল্পনা সমানই হচ্ছে সম্ভাব্য আয়।
২. অসম বাজেটঃ সরকারের আয় এবং ব্যয় সমান না হলে তাকে অসম বাজেট বলে। অসম বাজেট আবার দুই রকমের হতে পারে। যেমন:
ক. উদ্বৃত্ত বাজেটঃ ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশী হলে সেটি উদ্বৃত্ত বাজেট।
খ. ঘাটতি বাজেটঃ ঘাটতি বাজেট হচ্ছে উদ্বৃত্ত বাজেটের ঠিক উল্টোটা। এখানে ব্যয় বেশী আয় কম।
সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে সুষম বাজেট করে থাকে। তবে সবসময় সুষম বাজেট করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা সময় ছিল যখন ঘাটতি বাজেটকে বোঝা ভাবা হ’ত এখন বরং অর্থনীতিবিদরা মনে করন, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বাজেটে কিছুটা ঘাটতি থাকা ভাল। এতে অর্থনীতিতে ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে। অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ে। জিডিপি বৃদ্ধির তাগাদা থেকে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা থাকে।
বাজেটের রূপরেখাঃ জাতীয় বাজেটের ৪টি অংশ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১. প্রাপ্তি, ২. ব্যয়, ৩. বাজেট ঘাটতি, ৪. ঘাটতি অর্থায়ন।
১. প্রাপ্তিঃ প্রাপ্তি বলতে বুঝায় সরকার কোন উৎস থেকে বাজেটের অর্থ সংগ্রহ করে। সরকার যে উৎস থেকে বাজেটের অর্থ সংগ্রহ করে তা দু’ভাগে বিভক্ত- ক. কর বাবদ প্রাপ্তি, খ. কর ব্যতীত প্রাপ্তি।
ক. কর বাবদ প্রাপ্তি : যেমনভাবে ব্যক্তির আয়ের উপর ট্যাক্স (আয়কর), ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর, খাজনা, ঘরবাড়ি জমি-জমা বাবদ কর। পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর আরোপিত কর। তাছাড়া বিভিন্ন পরোক্ষ কর যেমন : আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, মাদক জাতীয় দ্রব্যের জন্য আবগারি শুল্ক ইত্যাদি।
খ. কর ব্যতীত প্রাপ্তি : কর ব্যতীত সরকারে আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হ’ল সড়কে সেতুর টোল। ইজারা, প্রশাসনিক ফী, জরিমানা, দন্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ ইত্যাদি। এছাড়া আকাশপথ, রেলপথ, নৌযান ডাকবিভাগ ইত্যাদি খাত থেকেও সরকার আয় করে থাকে।
২. ব্যয়ঃ
বাজেটে প্রস্তাবিত অর্থ তথা সরকারের প্রাপ্ত অর্থ মূলতঃ ২টি বৃহত্তর খাতে ব্যয় করা হয়।
ক. রাজস্ব ব্যয় : সরকার পরিচালনা এবং জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য যেসব খাতে অর্থ ব্যয় হয় তাই হচ্ছে রাজস্ব ব্যয়। যেমন : পুলিশ, চৌকিদার, সামরিক বাহিনী, সরকার কর্মকর্তা, কর্মচারী বেতন-বোনাস, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতিদের সম্মানী, বাসস্থান ইত্যাদি রাজস্ব ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য যে, জনগণের দেওয়া আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক ইত্যাদির সিংহভাগ উপরোক্ত খাত সমূহে ব্যয় হয়। অর্থাৎ সরাসরি জনগণের করের টাকার সরকার পরিচালিত হয়। সুতরাং প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা জনগণের প্রভু নয় বরং তারা জনগণের সেবক। বর্তমানে যাদের রাষ্ট্রের কর্মচারী হওয়ার কথা, তারাই এখন প্রভু সেজে বসে আছে। এটি বাজেট পরিপন্থী।
খ. উন্নয়ন ব্যয়ঃ কৃষি শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানীসহ ১৭টি চিহ্নিত খাতে সরকার তার উন্নয়ন ব্যয় খরচ করে থাকে।
৩. বাজেট ঘাটতি ঃ
সরকারের ব্যয় তার প্রাপ্তির চেয়ে বেশী হ’লে বাজেটে ঘাটতির সৃষ্টি হয়। পূর্বে ঘাটতি বাজেটকে সরকারের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা ভাবা হ’ত। তবে সমসাময়িক কালে অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, উন্নয়শীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে ঘাটতি বাজেট যথেষ্ট কার্যকর।
৪. ঘাটতি অর্থায়ন ঃ
বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার ২টি উৎসের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস, অন্যটি হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ গ্রহণ করে থাকে। তবে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বেশী হয়ে গেলে প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্ট কমে যায়। কেননা তখন দেশীয় বিনিয়োগকারীরা পর্যাপ্ত ব্যাংক লোন গ্রহণ করতে পারে না।
তাছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত অভ্যন্তরীণ উৎস হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তবে ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে অধিক হারে সুদ দিতে হয়। এতে সুদ পরিশোধে সরকারকে বেশী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়।
এক নযরে বাজেট ২০২১-২২ :
জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাযার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ৩রা জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি এ বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি।
বাজেটের মূল শেলাগানঃ ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।
এবারের বাজেটে একনযরে আলোচিত বিষয় সমুহ হ’ল- শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭১ হাযার ৯৫৩ কোটি টাকা, করোনায় বরাদ্দ ১০ হাযার কোটি টাকা। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮৯ হাযার কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৭.২%। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ছে। কর দিতে হবে না ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যের। বাজেটে এবারও করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। গ্রামে বাড়ি করতে গেলেও কর দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩২ হাযার ৭৩১ কোটি টাকা।
বাজেট নিয়ে কথা বলা কি যরূরী?
১. ‘কিতাবুল খরাজ’ নামে ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)-এর একটি বিখ্যাত কিতাব রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়, রাজস্ব কোথা থেকে ও কিভাবে নির্ধারণ হবে, কিভাবে বন্টন করা হবে- তার বিবরণ চেয়ে খলীফা হারূণুর রশীদের পক্ষ থেকে ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)-কে অনুরোধ জানানো হ’লে তিনি কিতাবটি লিখেন। কিতাবের শুরুতেই ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) যে কাজটি করেছেন সেটা হচ্ছে খলীফা হারূণুর রশীদের উদ্দেশ্য করে লম্বা একটি সম্ভাষণ উপদেশ ও ফযীলতের হাদীছ পেশ করেছেন। তাকে দ্বীনী নছীহত করেছেন। অতঃপর তিনি সেই সময় ও পরিবেশের আলোকে সরকারকে একটি বিস্তারিত রূপরেখা পেশ করেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের জায়গা থেকে আমরা যদি বর্তমানের দিকে দৃষ্টিপাত করি, আমাদের হাতে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার বিস্তারিত রূপরেখা আছে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা আছে। কিন্তু যদি তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে না পারি তবে এসব তত্ত্বের মূল্য নেই। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা, উপযুক্ততা অন্য কেউ ঘোষণা দিতে আসবে না। সেটা আমাদেরকেই করতে হবে। জাতীয় বাজেট দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতএব ইসলামপন্থীদের উচিত এ বিষয়ে সরকারকে সুপরামর্শ দেওয়া।
২. সরকারী অর্থের মালিক মূলত জনগণ। ইংরেজীতে একটি কথা আছে- My money my responsibility। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক, আমরা কর প্রদান করি এবং সেই করের টাকা দিয়ে সরকার চলে। সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের জনগণ কিভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারে, বাজেটে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা থাকে। আমার প্রদানকৃত টাকা সুচারুভাবে খরচ হচ্ছে কিনা প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা রুটি-রোজগারের পথ সুগম হবে কিনা ধনী-গরীব বৈষম্য কমবে কিনা, দ্রব্যমূল্যের গতি উর্ধ্বগামী হবে না নিম্নগামী হবে, শিশুর শিক্ষার খরচ দেবে কিনা, কৃষিতে সরকার কত ভর্তুকি দেবে, এসব জানতে হলে আমাদের সবাইকে বাজেট নিয়ে সরব হতে হবে।
৩. মোটাদাগে বলতে গেলে, ১৯৯১ সালে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ তৎকালীন সরকার Value added tax (VAT) তথা মূল্য সংযোজন কর চালু করে। এই পদ্ধতিতে একটি পণ্য উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত যতবার হাত বদল হয় ঠিক ততবার কর দিতে হয়। ধরুন, আপনি একটি পাঞ্জাবী ক্রয় করবেন এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩টি স্তরে ভ্যাটের হিসাব করা হ’ল।
ক. তুলা উৎপাদন, খ. কাপড় বুনন ও পাঞ্জাবী তৈরী, গ. দোকান বিক্রি।
ধরুন, ভ্যাট ব্যতীত তুলার মূল্য ১০০ টাকা। এখন ৪.৫% ভ্যাটে গার্মেন্টস সেটি ১০৪.৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করবে। এখন যদি গার্মেন্টস ৫.৫০ টাকা লাভ করে সেটি ১১০ টাকায় বিক্রি করবে। দোকানদার সরকারকে ৬% ভ্যাট দিয়ে ১১৬.৬০ টাকায় পাঞ্জাবী ক্রয় করবে। দোকানদার যদি ১৩.৪০ টাকা লাভ করে তাহলে পাঞ্জাবীর দাম হবে ১৩০ টাকা। এখন ক্রেতারা সরকারকে ৮% ভ্যাট দিয়ে ১৪০ টাকায় পাঞ্জাবী ক্রয় করবে। অর্থাৎ ১৪০ টাকার একটি পণ্যে জনগন মোট (৪.৫০+৬.৬০+১০.৪০)=২১.৫০ টাকা ভ্যাট দিবে। এভাবে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে এখন সরকারের রাজস্ব আয়ের সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে ভ্যাট। আর এই রাজস্ব আসে জনগণের ঘাম ঝরা অর্থ থেকে। অতএব বাজেট নিয়ে জনগণের ভাবনা থাকা আবশ্যক। তার প্রদত্ত অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে, তা সম্পর্কে সচেতন থাকা একজন মুমিনের জন্য যরূরীও বটে।
শেষকথা :
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ঘাটতি বাজেট হওয়ার কারণে আমাদের দেশের বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে সুদ পরিশোধে এবং এতে আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ করে দ্বিগুণ তিনগুণ সূদ দিতে হচ্ছে। এভাবে দেশের উন্নয়ন কল্পনা করা অসম্ভব বলে মনে করি। তাছাড়া একটি মুসলিম দেশ হিসাবে সূদভিত্তিক অর্থনীতির দাসত্ব করাটা আমাদের জন্য বড়ই লজ্জাজনক। অন্যদিকে বাজেট আসে, বাজেট যায় কিন্তু জনতার ভাগ্য অপরিবর্তনীয়ই থেকে যায়। বর্তমানে বাজেট একটা ছকবাঁধা বাজেটে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের পরিমাণ বাড়ে। সেই হিসাবে বাজেটের যে খাতগুলো আছে, এগুলোতে আমরা কিছু যোগ-বিয়োগ করা হয়, আর দু-একটা বড় বড় প্রকল্প যোগ-বিয়োগ করা হয়। এতে প্রকৃত জনসেবা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ছাপ কমই থাকে। যা থাকে, তাতে কেবল সমাজে নির্দিষ্ট একশ্রেণীর সুবিধাভোগীদেরই উপকার হয়। বৃহত্তর জনস্বার্থ সেখানে প্রায় উপেক্ষিতই থাকে। আমরা আশা করব বিকল্প সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে এবং জনগণের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করা হোক। প্রয়োজনীয় ট্যাক্স আরোপ করা হোক, তবে ভ্যাট নামক অক্টোপাশকে বন্ধ করা হোক। একটি মুসলিম দেশ হিসাবে সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির অভিশাপ থেকে জাতিকে রেহাই দেয়া হোক। তবেই বাজেট দুনিয়াবী ও পরকালীন উন্নয়নের পথে আমাদের পরিচালিত করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন-আমীন!
লেখক : শিক্ষার্থী, বিএসএস সম্মান, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়