হালুয়া-রুটি

মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ 409 বার পঠিত

অনেক দিন আগে শীতকালের কোন একদিন জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তি যোহরের ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যান। মসজিদের বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়ান যেন সূর্যের তাপে শরীর কিছুটা গরম হয়। সামনে বাজারের দোকানে কাজ করে এরকম চার শিশু বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল।

তাদের একজন হালুয়া-রুটি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন পনির-রুটি এবং চতুর্থ জন খালি রুটি খাচ্ছিল। যে শিশুটি পনির ও রুটি খাচ্ছিলো সে হালুয়া রুটি খেতে থাকা শিশুটিকে বললো : আমিও হালুয়া খেতে চাই, আমাকে একটু হালুয়া দাও।

হালুয়া খেতে থাকা শিশুটি বললো : তুমি আমার কুকুর হয়ে কুকুরের মত ডাকতে পারলে হালুয়া দিব। সে শিশুটি কুকুরের মত ডাকতে শুরু করল এবং একটু হালুয়া পেল। সেটা দেখে বাকিরা সবাই হাসাহাসি করল।

তৃতীয় জন বলল : আমিও একটু হালুয়া চাই। আমাকেও দাও।

সে বলল : যদি আমার গাধা হয়ে গাধার মত আওয়াজ করতে পার তাহলে দিব। সেও গাধার মত ডেকে একটু হালুয়া নিল।

চতুর্থ যে শিশুটি খালি রুটি খাচ্ছিল সে বলল : ওদের হালুয়া দিয়েছ এখন আমাকেও দাও।

শিশুটি বলল : আমার বিড়াল হয়ে মিঁউ মিঁউ শব্দ করলে দিব।

সে উত্তর দিল আমি কারো বিড়াল হব না। তোমার তো হালুয়া আছে আমাকে এমনিই দাও।

হালুয়া খাওয়া শিশুটি বলল : না। এটাই নিয়ম। হালুয়া পেতে হলে বিড়াল হও, নতুবা হালুয়া পাবে না।

শিশুটি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল : দেখি আমি এই চাচাকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করি। তিনি আমাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে দেখছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করব যে, হালুয়া খাওয়ার জন্য বিড়াল হওয়ার কোন দরকার আছে কিনা। তারপর মসজিদে থাকা ঐ বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে শিশুটি জিজ্ঞাসা করল- চাচা, আপনি কী মনে করেন? হালুয়া খাওয়ার জন্য কি বিড়াল হব, নাকি হালুয়া না নিয়ে নিজের শুকনো রুটিই খাব।

তিনি উত্তর দেন, বাবা জানি না তোমাকে কী উত্তর দিব। তুমি ছোট মানুষ, তাই হালুয়া খেতে চাচ্ছ এবং তোমাদের কথাগুলোও আসলে মজা করার মত ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, তাই কেবল এতটুকুই বলব যে, আমি গত ৩০ বছর ধরে দারিদ্রের কারণে কোনদিন হালুয়া খাইনি। তবুও দেখ, অন্যদের থেকে আমার কিন্তু কোন কিছুর কমতি নেই। মানুষ আমাকে অনেক সম্মান করে। আমার প্রতিবেশী আছে যারা প্রতিদিন হালুয়া খায়। অথচ তারা কারো কাছেই সম্মান পায় না।

শিশুটি আনন্দচিত্তে নির্ভার হয়ে বলল : তাহ’লে আমিও আমার শুকনো রুটিই খাব। হালুয়া চাই না। মানুষ ৩০ বছর হালুয়া না খেয়ে থাকতে পারলে ১০০ বছরও পারবে। তাহলে কেন নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কারো কুকুর হবে? কেন কারোর গাধা হবে? কেন কারোর বিড়াল হবে?

শিক্ষা : গল্পটি ঈষৎ হাস্যকর ও শিশুদের উদাহরণ প্রয়োগ করা হলেও তাতে সকলের জন্য গুঢ় শিক্ষা নিহিত রয়েছে। আর সেটা হ’ল, আমাদের সমাজের অনেক মানুষ সামান্য অর্থ, স্বার্থ কিংবা সামাজিক সুবিধার জন্য ধনিক শ্রেণী অথবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের তোষামোদে ব্যস্ত থাকেন। এ কাজের দরুণ তাদের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব যে অনেক নিচে নেমে যায়, সেদিকে তারা কোন ভ্রুক্ষেপই করেন না। অপরদিকে অনেক সময় ধনিক শ্রেণী মানুষের অসহায়ত্বকে পুজি হিসাবে লাগিয়ে তাদেরকে সাহায্যের নামে সকলের কাছে নিজেকে হিরো সাজান এবং অন্যের সম্মান নষ্ট করে আনন্দ পান। এজন্য এ গল্প শিক্ষা দিচ্ছে যে, সামান্য কিছু খাবারের জন্য নিজের সম্মান না বিকিয়ে দিয়ে ধৈর্যধারণ করা উচিত এবং নিজের আত্মমর্যাদবোধকে উচ্চকিত রাখা কর্তব্য (গল্পটি ফারসী থেকে অনূদিত)

অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ

সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



আরও