তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ভীতি

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 1539 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- وَسارِعُوْا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ - الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعافِيْنَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ - وَالَّذِيْنَ إِذا فَعَلُوْا فاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلى ما فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ -

‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের  ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না’ (আলে ইমরান ১৩৩-১৩৫)

- وَإِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً إِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ-

‘আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুমাত্র ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী’ (আলে ইমরান ১২০)

- لَتُبْلَوُنَّ فِيْ أَمْوالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ أُوتُوْا الْكِتابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا أَذىً كَثِيْراً وَإِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَإِنَّ ذلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ-

‘অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের নিজ জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে। আর অবশ্যই তোমরা শুনবে তোমাদের পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (আলে ইমরান ১৮৬)

4- وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُوْنِ يَا أُوْلِي الْأَلْبَابِ -

‘আর তোমরা উত্তম যে কাজ কর, আল্লাহ তা জানেন এবং পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাক্বওয়া। তাই হে বিবেক সম্পন্নগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারা ১৯৭)

৫- قُلْ لا يَسْتَوِي الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِ فَاتَّقُوا اللهَ يا أُوْلِي الْأَلْبابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ -

‘আপনি বলুন, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য আপনাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (মায়েদা ১০০)। 

- إِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا إِذا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطانِ تَذَكَّرُوْا فَإِذا هُمْ مُبْصِرُوْنَ-

তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ভীতি

‘নিশ্চয় যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের দৃষ্টি খুলে যায়’ (আ‘রাফ ২০১)

৭- وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ-

‘আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন’ (বাক্বারা ১৯৪)

9- وَيُنَجِّي اللهُ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا بِمَفازَتِهِمْ لا يَمَسُّهُمُ السُّوْءُ وَلا هُمْ يَحْزَنُوْنَ-

‘আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে তাদের সাফল্যসহ নাজাত দেবেন। কোন অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না। আর তারা চিন্তিতও হবে না’ (যুমার ৬১)

10- وَالَّذِيْ جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ-

‘আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হল মুত্তাকী’ (যুমার ৩৩)

11- يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ ما قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيْرٌ بِما تَعْمَلُوْنَ-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (হাশর ১৮)

12- يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقاتِهِ وَلا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, ভয় করার মত। আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না’ (আলে ইমরান ১০২)

১৩- وَتَعاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوى وَلا تَعاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ-

‘তোমরা পরস্পরকে সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা কর। আর মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর’ (মায়েদা ২)

14- وَالْعاقِبَةُ لِلتَّقْوَى-

‘আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্য’ (ত্বহা ১৩২)

15- فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ-

‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

16- يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَاناً وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ-

‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান (হক্ব-বাতিলের পার্থক্যকারী জ্ঞান) প্রদান করবেন, তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ২৯)

১৭- إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ-

‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু’ (হুজুরাত ১৩)

হাদীছে নববী থেকে :

18-عن سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ-

রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের দিন খুৎবার দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর, তোমাদের মাল-সম্পদের যাকাত প্রদান কর এবং তোমাদের নেতাদের আনুগত্য কর এবং তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ কর’ (তিরমিযী, হা/৬১০, সনদ ছহীহ)

19-عن أبي سعيد الخدريّ- رضي اللّه عنه- قال رسول اللّه صلّى اللّه عليه وسلّم : أُوْصِيْكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ شَيْءٍ وَعَلَيْكَ بِالْجِهَادِ فَإِنَّهُ رَهْبَانِيَّةُ الْإِسْلَامِ وَعَلَيْكَ بِذِكْرِ اللَّهِ وَتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ فَإِنَّهُ رَوْحُكَ فِي السَّمَاءِ وَذِكْرُكَ فِي الْأَرْضِ-

রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশস্বরূপ বলেন, ‘আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি, কেননা তা হল সবকিছুর মূল। তোমার উপর জিহাদ আবশ্যক। আর সেটাই হল ইসলামের বৈরাগ্যবাদ। তোমার জন্য আরো আবশ্যক আল্লাহর স্মরণ এবং কুরআন তেলাওয়াত। কেননা তা হল আসমানে প্রশান্তি ও দুনিয়াতে সম্মানের কারণ’ (আহমাদ হা/১১৭৯১, সনদ ছহীহ)

20- عَنْ سَمُرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বংশমর্যাদা মালের কারণে অর্জিত হয় আর সম্মান অর্জিত হয় তাক্বওয়ার কারণে’ (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৪৯০১, সনদ ছহীহ)

21- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ - صلى الله عليه وسلم أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ اَلْجَنَّةَ تَقْوَى اَللهِ وَحُسْنُ اَلْخُلُقِ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন,  ‘যে দুটি কারণে মানুষ সর্বাধিক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তা হল আল্লাহভীতি ও সুন্দর চরিত্র’ (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/ ৪৮৩২, সনদ হাসান)

22- عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ وَإِذَا عَمِلْتَ سَيِّئَةً فَاعْمَلْ حَسَنَةً تَمْحُهَا-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ্কে ভয় কর এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ প্রদর্শন কর। আর যখনই কোন পাপকর্ম করে ফেল, তখনই কোন সৎকর্ম কর যাতে পাপটি মিটে যায়’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩, সনদ হাসান)

23- عَنْ أَبِي نَضْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ أَلاَ لاَ فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ ، وَلاَ لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ ، وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ ، وَلاَ أَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ ، إِلاَّ بِالتَّقْوَى-

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাবধান! আরবের উপর অনারবের কোন প্রাধান্য নেই, অনারবের উপর আরবের কোন প্রাধান্য নেই, কালোর উপর লালের কোন প্রাধান্য নেই, লালের উপর কালোর কোন প্রাধান্য নেই, তাক্বওয়া ব্যতীত’ (আহমাদ, হা/২২৩৯১)

24- عَنْ عَطِيَّةَ السَّعْدِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ أَنْ يَكُوْنَ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ حَتَّى يَدَعَ مَا لاَ بَأْسَ بِهِ حَذَرًا لِمَا بِهِ الْبَأْسُ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের কাতারে পৌঁছতে পারবে না, যতক্ষণ না সে ক্ষতিকারক নয় এমন বিষয় পরিত্যাগ করে কেবল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য’ (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত  হা/২৪০৩)

25- عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رَفَعَهُ قَالَ إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الْأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُوْلُ اتَّقِ اللَّهَ فِيْنَا فَإِنَّمَا نَحْنُ بِكَ فَإِنِ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ সকাল করে তখন তার অঙ্গসমূহ তার জিহবাকে প্ররোচিত করতে থাকে যে, আমাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ্কে ভয় কর। কেননা আমাদের ভাগ্য তোমার সাথে জড়িত। যদি তুমি সঠিক পথে থাক তবে আমরাও সঠিক পথে থাকব, আর যদি তুমি বক্রপথ অবলম্বন কর তবে আমরাও বক্রপথে চলব’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৮৩৮, সনদ হাসান)

26- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ اللهَ لا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ ، وَلَكَنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও ধন-সম্পদের দিকে দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তরসমূহ এবং আমলসমূহ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩১৪)

বিদ্বানদের কথা :

১. উমর (রাঃ) একদিন উবাই বিন কা‘বকে বলেন, তুমি কি কখনও কাঁটাপূর্ণ দুর্গম রাস্তায় চলেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ! উমার (রাঃ) বললেন, সেখানে তুমি কি কর? উবাই (রাঃ) বললেন, আমি আমার কাপড় জড়িয়ে নেই এবং অত্যন্ত সাবধানতার সাথে চলি। উমার (রাঃ) বললেন, ওটাই হল তাক্বওয়া (তাফসীর ইবনে কাছীর ১/১৬৪)। অনুরূপ বর্ণনা আবু হরায়রা (রাঃ) থেকে এসেছে (আদ-দুর্রুল মানছূর ১/৬১ পৃঃ)

২. মালেক বিন আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ফকীহ আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-কে চিঠি লিখেছিলেন এ মর্মে যে, ‘তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিদের কিছু চিহ্ন রয়েছে যা দেখলে তাদেরকে চেনা যায় এবং তারাও সেসব গুণাবলীতে নিজেদের পরিচিত করে। যেমন, তারা তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকে, বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহর নেয়ামতসমূহের প্রতি শুকরিয়া আদায় করে, কথায় সত্যবাদী হয়, অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং কুরআনের বিধি-বিধানকে অনুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে। আর নেতা হলেন বাজারের মত। যেখানে যদি তিনি হক্বপন্থী হন তবে হক্বপন্থীরা তার প্রতি তাদের হক্বসমূহ আদায় করে, আর যদি তিনি বাতিলপন্থী হন, তবে বাতিলপন্থীরা তার প্রতি তাদের হক্বসমূহ আদায় করে’ (মুওয়াত্ত্বা, ইবনুল আছীর, জামেঊল উছূল হা/৯৩৫৮)

৩. উমর বিন আব্দুল আযীয (র.) বলেন যে, মুত্তাকী ব্যক্তি লাগাম পরিহিত প্রাণীর মত, সে যা ইচ্ছা তাই করে না (ইমাম বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ, পৃঃ ১৪/৩৪১)

৪. ত্বালাক বিন হাবীব (র.) বলেন, তাক্বওয়া হল আল্লাহর নূরে বিকশিত হয়ে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে এবং তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে আল্লাহর নির্দেশসমূহ পালন করা। অপরদিকে আল্লাহর নূরে বিকশিত হয়ে, তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে যাবতীয় আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নাম (ইবনে আবীদ্দুনিয়া, কিতাবুল ইখওয়ান, পৃঃ ১১৫)

সারবস্ত্ত :

১. চূড়ান্ত সফলতা নির্ধারিত রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যই।

২. মুত্তাকী ব্যক্তি যেন দুনিয়াতেই আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

৩. মুত্তাকীদের জন্য দুনিয়াবী জীবন অত্যন্ত সহজসাধ্য। আল্লাহর বিশেষ রহমতে তারা ভয়-ভীতি ও ক্ষণস্থায়ী চাওয়া-পাওয়ার তাড়না থেকে মুক্ত।

৪. মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও পাপমুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৫. আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় মুত্তাকীদের জন্যই।

৬. আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানী ব্যক্তি হলেন মুত্তাকীরা।

৭. সর্বোপরি আল্লাহর ভালবাসা ও নৈকট্য এবং ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত।



আরও