ইসমাঈলী শী‘আদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস (শেষ কিস্তি)
মুখতারুল ইসলাম
মফীযুল ইসলাম 1384 বার পঠিত
বাল্যকাল থেকেই সংযত হওয়া :
ইন্টারনেট, Wi-Fi-এর ব্যবহার রমরমা হওয়ার কারণে তার অপব্যবহারে ডুবে যাওয়া কারো জন্য উচিত নয়। আবার টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনে সিনেমা, নাটক, কার্টুন প্রভৃতি নিয়ে মগ্ন থাকা কোন বয়সের মানুষের জন্য ঠিক নয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ- ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (নূর ২৪/৩০)।
বার্ধক্যে নিজের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার চেতনা পোষণ করা :
মানুষের জীবন মূলত তিনটি কালের সমষ্টি। শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। শৈশব এবং বৃদ্ধকালে মানুষ থাকে পরাধীন। তাই বৃদ্ধকালের সম্মান মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে যৌবন কালে অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকা যরূরী। আবু আলী আদ-দাক্কাক বলেছেন, ‘যৌবনে যে তার কামনা বাসনার উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পেরেছে বার্ধক্যে আল্লাহ তা’আলা তাকে সম্মান দান করবেন’।[1]
পাপ-পঙ্কিলতাকে তুচ্ছ মনে না করা :
পর্ণোগ্রাফীর পাপসহ যে কোন পাপকে তুচ্ছ জ্ঞান করা ঠিক নয়। কেননা প্রতিটি পাপকে মুমিন ব্যক্তি বিশাল ভয়ঙ্কর জিনিস মনে করে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا- ‘একজন মুমিন তার পাপকে এতটাই ভয়াবহ মনে করে যেন সে একটা পাহাড়ে নিচে বসে আছে, আর সে পাহাড়টা তার উপর ধ্বসে পড়ার ভয় করছে। কিন্তু পাপাচারী ব্যক্তি তার পাপকে তার নাকের উপর বসা মাছির তুল্য মনে করে (যাকে সে হাত দিয়ে তাড়িয়ে দেয়)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার নাকের উপর হাত নিয়ে ইশারায় তা বুঝিয়ে দিলেন।[2] পাপের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে জীবনের পরতে পরতে। পাপ সংযুক্ত হওয়ার কারণে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়, শরীর স্বাস্থ্য নাশ হয়। জ্ঞানের বিলুপ্তি ঘটে, মান সম্মান নষ্ট হয়, রূযী-উপার্জনের বরকত নাশ হয়, আল্লাহর আযাব গযব নেমে আসে পার্থিব জগতে ও মৃত্যুকালে মারাত্মক কষ্টের সম্মুখীন হ’তে হয় এবং পরকালে জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারিত হয়। তাই পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
দেহ সুরক্ষা :
মানুষে দেহ সাধারণত তিন ধরনের। ১. সুস্থ দেহ, ২. অসুস্থ দেহ ৩. এবং মৃত দেহ। পর্ণোর ড্রাগ মানুষের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে। যেমন বলা হয় নগ্ন ছবি দেখার ফলে মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগ Frontal Loob নষ্ট হয়, মগজ ছোট হয়ে যায়, মস্তিষ্কের গঠন পাল্টে যায় ও ব্রেন সংকুচিত হয়ে আসে কমে বুদ্ধিও। এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন দিক থেকে মানুষকে জরাজীর্ণ করে ফেলে। তাই দেহ সুস্থ-সবল এবং বোধশক্তি সতেজ রাখতে পর্ণগ্রাফী দর্শন বন্ধ করা অতীব যরূরী।
অপদার্থদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া :
ধ্বংসশীল অপদার্থ মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো ছালাত ছেড়ে দেওয়া এবং অবৈধ লালসায় মত্ত হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا- ‘তাদের পরে এলো তাদের অপদার্থ উত্তরসুরীরা। তারা ছালাত বিনষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। ফলে তারা অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (মারিয়াম ১৯/৫৯)। অবৈধ লালসার মত্ত হওয়া অর্থাৎ অশ্লীলতা নিয়ে নিমগ্ন থাকা ছালাত ছেড়ে দেওয়ার একটি কারণ।
ভাল আমল দ্বারা অন্তরাত্মা পূর্ণ রাখা :
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়, তিনি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করেন, অতঃপর সে হয় তার সঙ্গী’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬)। আজ অধিকাংশ মানুষের অন্তরাত্মায় হিংসা-বিদ্বেষ, নোংরা, অশ্লীল চিন্তা-চেতনা বিরাজ করছে। ফলে তাদের অন্তরাত্মা আর শয়তানের অন্তরাত্মা একাকার হচ্ছে। প্রিয় পাঠক! আশা করি আপনি এমন আত্মার অধিকারী হবে না। নোংরা, অশ্লীল-পর্ণোর সাগরে ভাসমান বন্ধু আমার! শয়তানী চিন্তা-চেতনা উপেক্ষা করে বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করুন। সফল হবেন। জীবন হবে সুখময়। ঐ শুনুন আল্লাহর বাণী, وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- ‘তোমরা বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (আনফাল ৮/৪৫, জুম’আর ৬২/১০)। আল্লাহর স্মরণে অন্তরাত্মা শান্ত-প্রফুল্ল হয়ে উঠে।
মহান আল্লাহ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখা :
যে কোন পাপ থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। মহান আল্লাহ এমন একক সত্তা যিনি সকলকে রূযী দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন তিনি বলেন, قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ (হে নবী!) তুমি বল, তোমরা ভেবে দেখছ কি যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায়, তাহ’লে তোমাদেরকে কে এনে দেবে প্রবহমান পানি’ (মুলক ৬৭/৩০)।
দয়াময় প্রভু আমাদেরকে আলো, বাতাস, খাদ্য-পানীয় দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ মানুষই সেই প্রভুকে মূল্যায়ন করতে পারি না। তাইতো তিনি বলেন, وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ- ‘তারা আল্লাহর যথাযথ মূল্যায়ন করেনা। অথচ ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে আমি হাতের মুঠের মধ্যে নেব এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায়। তিনি মহা পবিত্র এবং যাদেরকে ওরা শরীক করে, তাদের থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে’ (যুমার ৩৯/৬৭)। মহান আল্লাহ এমন ক্ষমতাধর যে, তিনি নিমেষেই ভূমিকম্প, সুনামির মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস করতে পারেন। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ, ক্ষমতা, শাস্তি সম্পর্কে অবগত হ’তে পারলে আমরা তাঁর ভয়ে পাপ থেকে বাঁচতে সক্ষম হব।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অপব্যবহার বন্ধ করা :
যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাধ্যমে মানুষর পর্ণো উপভোগ করছে তা ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে এবং স্ব-স্ব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا- ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৬)। প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, তখন তাদের দ্বারা সংগঠিত সকল কর্মের কথা তারা বলে দেবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘সেদিন তাদের জিহবাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত সে ব্যপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’ (নূর ২৪/২৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ- ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দিব এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৫)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের শরীরের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় আমল সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করবে’ (হা-মীম-সাজদাহ ৪১/২০)। সুতরাং পর্ণোয় আসক্ত প্রিয় বন্ধু! যে পা দিয়ে আপনি জমকালো চোখ ধাঁধানো রঙ্গমঞ্চের নৃত্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, যে হাত দিয়ে আপনি স্মার্টফোনে, কম্পিউটারে, ল্যাপটপে ও টিভির রিমোটের বাটন চেপে নগ্নতা, যৌনতা, অশ্লীলতার দৃশ্য আনায়ন করে চোখ দিয়ে দেখে ও কান দিয়ে শুনে মজা লুটছেন এই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোই আপনার বিপক্ষে ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবে। কোটি কোটি মানুষ, ফেরেশতার সামনে আপনাকে লাঞ্ছিত, অপমানিত, অপদস্থ করবে। ঐ শুনুন আল্লাহ যমীন সম্পর্কে বলছেন, يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ‘সে দিন পৃথিবী তার নিজের উপর সংঘটিত সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে’ (যিলযাল ৯৯/৪)। তাহ’লে জেনে রাখুন, কোন গাছ তলায়, কোন চত্বরে, কোন আঙ্গিনায়, কোন বাড়িতে, কোন ছাদে, কোন ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বা বসে টিভিতে, ল্যাপটপে ও মোবাইলে সিনেমা, নাটক, বিভিন্ন নোংরা ও আপত্তিকর দৃশ্য উপভোগ করছেন ঐ স্থানই কাল ক্বিয়ামতের দিন আপনার বিপক্ষে কথা বলবে। তাই নিজেকে বাঁচাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চোখ, কান, হাত, পা সবকিছুকে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে অনুগত করতে হবে।
কৃতকর্মের ব্যাপারে সচেতন হওয়া :
মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতি উত্তম আকৃতিতে’ (ত্বীন ৯৫/৪)। যাতে করে সুন্দর আকার-আকৃতির মানুষগুলো আল্লাহর ইবাদত করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি মানব এবং জিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)।তাই মানুষের একমাত্র কর্মকান্ড হওয়া উচিত সকল প্রকার ভোগ-বিলাসিতাণ ও অশ্লীলতা পরিহার করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া।
দুনিয়ার জীবনে যা কিছু করা হচ্ছে সবই লিখা হচ্ছে :
সম্মানিত ফেরশতাদেরকে মহান আল্লাহ মানুষের দুনিয়াবী সকল কর্মকান্ড লেখার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ- كِرَامًا كَاتِبِينَ- يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ- ‘আর নিশ্চয়ই তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ রয়েছেন। সম্মানিত লেখকবৃন্দ। তারা জানেন, তোমরা যা কর’ (ইনফিত্বার ৮২/১০-১২)। তিনি আরো বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا- ‘আমি সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করছি’ (আবাসা ৭৮/২৯)। তিনি আরো বলেন, إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ- مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ ‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে (মানুষের) আমল লিখছে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তা লুফে নেওয়ার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৭-১৮)। মহান আল্লাহর সম্মানিত লেখকবৃন্দ মানুষ কোথায় কী করছে। কোন সময় করছে, কি পরিমাণ করেছে তা যখন ক্বিয়ামতের দিন পেশ করবেন তখন অপরাধীরা চিৎকার দিয়ে বলবে এ কেমন কিতাব যাতে কোন আমল বাদ পড়েনি। কুরআনুল কারীমে এর বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا- ‘আমলনামা পেশ করা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত তাতে (খাতায়) যা রয়েছে তার কারণে। তখন তারা বলবে হায় ধ্বংস আমাদের! কী হলো এ কিতাবের! যাতে আমাদের ছোট বড় কোন আমলই বাদ পড়েনি। সবই লিপিবদ্ধ এ কিতাবে। তারা যে যা করেছিল তা সবই নিজের সামনে উপস্থিত পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলুম করেন না’ (কাহাফ ১৮/৪৯)। সুতরাং প্রিয় বন্ধু! আমাদের সকল কথা ও কর্ম লিখা হচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে মোবাইল ফোনে, টিভিতে অশ্লীল সিনেমা, নাটক ও পর্ণোগ্রাফীসহ সকল অন্যায় বস্ত্ত দেখা বন্ধ করতে হবে। কারণ দুনিয়ার এই হল ঘরে আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা নিচ্ছেন যে কে উত্তম আমল করে। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি পরক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (মুলক ৬৭/২)। অতএব স্থায়ী জীবনে সফলতার জন্য সর্বোত্তম কর্মে লিপ্ত হয়ে আমলনামা সুন্দর করতে হবে।
হাশরের ময়দানে আমল প্রকাশের চিত্র স্মরণ রাখুন :
হাশরের ময়দানে যাদের আমলনামা ডান হতে দেওয়া হবে তারাই হবে সৌভাগ্যবান আর যাদের আমলনামা বাম হ’তে দেওয়া হবে তারাই হবে দুর্ভাগ্যবান। আল্লাহ বলেন, فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ-فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا- وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا -وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ- فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا- وَيَصْلَى سَعِيرًا- ‘অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে। তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হবে। সে তার স্বজনদের কাছে আনন্দ চিত্রে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমলনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেওয়া হবে। সে মৃত্যু কামনা করবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে’ (ইনশিক্বাক ৮৪/৭-১২, হাক্কাহ ৬৯/১৯-৩২)।
ডান হাতে আমলনামা পেয়ে চির সুখের স্থান জান্নাত লাভে ধন্য হওয়ার জন্য এবং জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার নিমিত্তে কল্যাণকর কাজে নিমগ্ন হওয়া যরূরী। যাতে আমলনামা ভারী হয়। আল্লাহ বলেন, وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ - ‘আর আমি ক্বিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মীযান স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো আমল যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় আমি তা উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণে আমিই যথেষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/৪৭)। তিনি আরো বলেন, فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ -فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ- ‘অতঃপর যার (সৎকর্মের) পাল্লা ভারী হবে। সে সুখী জীবন যাপন করবে’ ( ক্বারিয়াহ ১০১/৬-৭)।
দুনিয়ার মোহগ্রস্থ না হওয়া :
মরণে বিশ্বাসী প্রিয় বন্ধু! যে ব্যক্তি বিবেকহীনভাবে দুনিয়ার রং তামাশায়, অশ্লীলতায়, গান-বাজনা নিয়ে মত্ত আছে, আপনি তাদের দলভুক্ত হবেন না। কারণ যে দুনিয়াকে ভালোবাসে, তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং পরকালকে ভুলে যায় নিশ্চিত সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আল্লাহ বলেন, فَأَمَّا مَنْ طَغَى-وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا-فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى- অতঃপর যে লোক সীমালঙ্ঘন করেছিল, আর দুনিয়ার জীবনকে (পরকালের উপর) প্রাধান্য দিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার আবাসস্থল’ (নাযিয়াত ৭৯/৩৭-৩৯)। দুনিয়ার ব্যাপারে নিমণ বাণী গুলো স্মরণযোগ্য। মহান আল্লাহ বলেন, اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُو- ‘তোমরা জেন রেখো যে, দুনিয়ার জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। (দুনিয়ার উপমা) বৃষ্টি, যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দিত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায় ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা টুকরা (খড় কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহ র ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়’ (হাদিদ ৫৭/২০) ।
তিনি আরো বলেন, وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ- ‘এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পরকালীন জীবনই হলো আসল জীবন, যদি তোমরা জানতে (আনকাবূত ২৯/৬৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ فِي الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ إِلَيْهِ- ‘আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতুটুকু পানি নিয়ে ফিরছে’।[3] অত্র হাদীছ থেকে বুঝা যায়, আঙ্গুলটিতে জড়িত থাকা সামান্য পানি হ’ল দুনিয়া। আর বিশাল সমুদ্রের পানি হ’ল পরকাল যার কোন অন্ত নেই।
জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ الْعَالِيَةِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْىٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَم فَقَالُوا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَىْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ قَالَ أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ . قَالُوا وَاللَّهِ لَوْ كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ فَقَالَ فَوَاللَّهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ একদা রাসূল (সঃ) বাযারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমতবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ছোট কান বিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটাকে নেওয়া পসন্দ কর? তাঁরা বলল, আমরা কোন জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পসন্দ করব না এবং আমরা এটা নিয়ে করবই বা কী? তিনি বললেন, তোমরা কি পছন্দ কর (বিনা মূল্যে) এটা তোমাদের হোক? তাঁরা বলল, আল্লাহর কসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারনে দোষযুক্ত ছিল। এখন সে তো মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)? তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর কাছে তার চেয়েও বেশী নিকৃষ্ট’।[4]
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফের জন্য জান্নাত’।[5]
ইবনে উমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, أخذ رسول الله صلى الله عليه و سلم بمنكبي فقال (كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ- রাসূল (ছাঃ) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক’।[6]
عن سهل بن سعد الساعدي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ-
সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানি ও পান করাতে দিতেন না।’[7] সুতরাং দুনিয়া আল্লাহর কাছে কতই না নিকৃষ্ট তা অত্র হাদীছ থেকে সহজে অনুমান করা যায়।
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقُولُ :الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ وَمَا وَالاَهُ، أَوْ عَالِمًا، أَوْ مُتَعَلِّمًا. আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে সবই। তবে আল্লাহর যিকির এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস আলেম ও তালেবে-ইলম নয়’।[8]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَإِنَّ الدُّنْيَا خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَنَاظِرٌ كَيْفَ تَعْمَلُونَ ، أَلاَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا ، وَاتَّقُوا النِّسَاءَ. ‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কীভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে’।’[9]
আল্লাহ বলেন, إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ‘যমীনের উপর যা কিছু আছে আমি সে গুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে আমলের দিক থেকে কারা উত্তম’ (কাহফ ১৮/৭)। কাজেই দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালের ফলাফল যেন খারাপ না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া আবশ্যক।
অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসে মত্ত না হওয়া :
দুনিয়াবী ভোগ-বিলাসিতায় আত্মহারা হওয়া মুসলিম জাতির অপমানিত, লাঞ্ছিত, অপদস্ত, মূল্যহীন এবং দুর্বল হওয়ার কারণ। তাই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এটাকে ভয় করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنِّي مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا- ‘আমি তোমাদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হ’ল এই যে, তোমাদের উপর দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে’।[10]
নবী করীম (ছাঃ) বলেন, تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيفَةِ وَالْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ- ‘ধবংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উত্তম পোশাকের গোলাম (দুনিয়াদার)। যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহ’লে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়’।[11]
কাব ইবনে ইয়ায (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, إِنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً وَفِتْنَةُ أُمَّتِى الْمَالُ - ‘প্রত্যোক উম্মতের জন্য ফিৎনা রয়েছে এবং আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল’।[12]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَدْخُلُ الفُقَرَاءُ الجَنَّةَ قِبْلَ الأَغْنِيَاءِ بِنِصْفِ يَوْم ، وذَلِكَ خَمْسِمِائِةِ سَنَةٍ- ‘গরীব মুমিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাত প্রবেশ করবে’।[13]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, اطَّلَعْتُ فِى الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ ، وَاطَّلَعْتُ فِى النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ- ‘আমি জান্নাতের মধ্যে উঁকি মেরে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর জাহান্নামের দিক তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই হল মহিলা’।[14] অধিক অধিক ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা দ্বীনের ব্যাপকভাবে ক্ষতি করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ - ‘ছাগলের পালে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশী ক্ষতি কারক’।[15] তাই তো মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ‘হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে’ (ফাত্বির ৩৫/৫)।
(ক্রমশঃ)
[লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]
[1] . রাওযাতুল মুহিববীন, ৪৮৩ পৃঃ।
[2] . বুখারী হা/ ৬৩০৮; মিশকাত হা/২৩৫৮।
[3] . মুসলিম হা/২৮৫৮; তিরমিযী হা/২৩২৩; ইবনু মাজাহ হ/৪১০৮।
[4] . মুসলিম হা /২৯৫৭; আবু দাউদ হা/১৮৬; আহমাদ হা/১৪৫১৩।
[5] . মুসলিম হা/২৯৫৬; তিরমিযী হা/২৩২৪; ইবনু মাজাহ হা/৪১১৩, আহমাদ হা/৮০৯০।
[6] . বুখারী হা/৬৪১৬; তিরমিযী হা/২৩৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৪১১৪।
[7] . তিরমিযী হা/২৩২০;; ইবনু মাজাহ হা/ ৪১১০।
[8] . তিরমিযি হা/২৩২২;ইবনু মাজাহ হা/৪১১২।
[9] .মুসলিম হা/২৭৪২; তিরমিযী হা/২১৯১; ইবনু মাজাহ হা/৪০০০; আহমাদ হা/১০৭৫৯।
[10] . বুখারী হা/ ১৪৬৫; মুসলিম হা/১০৫২; নাসাঈ হা/ ২৫৮১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৫।
[11] . বুখারী হা/২৮৮৭; তিরমিযী হা/ ২৫৭৫; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৬।
[12] . তিরমিযী হা/২৩৩৬, হাসান ছহীহ; আহমাদ হা/১৭০১৭।
[13] . তিরমিযী হা/২৩৫৩; ইবনু মাজাহ হা/ ৪১২২; আহমাদ/৭৮৮৬।
[14] . বুখারী হা/৩২৪১; মুসলিম হা/২৭৩৮; তিরমিযী হা/২৬০৩; আহমাদ হা/ ১৯৩১৫।
[15] . তিরমিযী হা/ ২৩৭৬; আহমাদ হা/১৫৩৫৭; দারেমী হা/২৭৩০।