দায়িত্বশীলদের গুণাবলী
মুহাম্মাদ আবুল কালাম
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম 1723 বার পঠিত
ভূমিকা :
নেতৃত্ব একটি সামাজিক গুণ। যোগ্য নেতৃত্বের ফলে একটি সংগঠন দ্রুত উন্নতির
উচ্চতর শিখরে আরোহন করতে পারে। আবার নেতৃত্বের দুর্বলতা বা অযোগ্য
নেতৃত্বের ফলে সংগঠন ধ্বংস হতে বাধ্য। ফলে প্রকৃত ও যোগ্য নেতৃত্ব জাতীয়
জীবনে একান্ত অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে সঠিক গুণাবলীসম্পন্ন নেতাই পারে একটি
সংগঠন তথা দেশ সঠিকভাবে পরিচালিত করতে। এখন প্রশ্ন-নেতৃত্ব কি ও প্রকৃত
নেত্বত্বের গুণাবলী কি?
নেতৃত্বের পরিচয় : নেতৃত্ব তাই যা একটি সংগঠন বা দলের লক্ষ্য অর্জনের পন্থা ও মাধ্যম। মানুষবিহীন নির্জন দ্বীপে নেতৃত্ব প্রয়োজন হয় না। যেমন নির্জন দ্বীপে রবিনসন ক্রসোর নেতৃত্ব দরকার নেই। আমাদের জীবনে নেতৃত্বর ভূমিকা অনন্য। বিভিন্ন মনীষী নেতৃত্বের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। এলডিন ডব্লিউ গুল্ডনার (Alvin w. Gouldner) নিম্নে লিখিতভাবে নেতৃত্বের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন: ‘নেতৃত্ব হইল ব্যক্তি বা দলের সেই নৈতিক গুণাবলী যাহা অন্যদের অনুপ্রেরণা দিয়া বিশেষ দিকে ধাবিত করে’ (ডঃ ইমাজউদ্দিন আহমদ, পৌরবিজ্ঞানের কথা, পৃঃ ২৯৩)। প্রতিদিন আমাদের জীবনে নেতৃত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খেলার মাঠে দলপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি দলকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্ব অপরিহার্য। নেতৃত্ব দুর্বল হলে পরাজয় নিশ্চিত হতে বাধ্য। নেতৃত্ব একটি বিশেষ গুণ। এ গুণে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়। লক্ষ্য তখনই অর্জিত হবে যখন কর্মীরা নেতার প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হবে। তাই নেতৃত্ব বলতে আমরা কোন ব্যক্তির সেই আচরণকে বুঝি যা কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে। এখন আমরা নেতার গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রকৃত নেতার গুণাবলী : প্রকৃত নেতাকে অনেক গুণে বিভূষিত হতে হবে। এখানে তার কয়েকটি গুণাবলী আলোচনা করা হ’ল।
(১) গভীর জ্ঞান : নেতৃত্ব দিতে হলে নেতাকে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। ইসলামেও সর্বপ্রথম জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (1) خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ (2) اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ (3) الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ (4) عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ (5) অর্থঃ ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে। পড় তোমার প্রভু মহা মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না (আলাক ১-৫)। নেতা যদি ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী হয়। তবে তাঁর পরিচালিত কর্মীরা সঠিক পথের পথিক হতে পারবে। আর যদি তিনি জ্ঞানে অপরিপক্ক হন তবে তিনি তাঁর কর্মীদের ভুল পথে পরিচালিত করবেন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যিনি প্রকৃত জ্ঞানী তিনিই মহান আল্লাহ পাকের উপদেশ হুবহু প্রহণে তৎপর থাকেন। আর তিনি লোকদের আল্লাহ পাকের পথে পরিচালিত করেন ও উপদেশ গ্রহণ করে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক বলেন,قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ ‘বল ! যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে’ (যুমার ৯)।
(২) দূরদৃষ্টি : নেতৃত্ব দানের এটি একটি অনন্য গুণ। নেতাকে অবশ্যই তার দূরদৃষ্টি দিয়ে কর্মীদের সঠিক পথে চালানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এ গুণে বিভূষিত হবার জন্য তাঁকে সচেষ্ট হতে হবে। আল-কুরআনও এ প্রসঙ্গে উদাত্ত আহবান জানায়। আল্লাহ পাক বলেন, ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ ‘আপনি হিকমতের মাধ্যমে আপনার প্রভুর রাস্তায় দাওয়াত প্রদান করুন’ (নাহাল ১২৫)। ‘হিকমত’ বলতে জ্ঞান, দূরদর্শিতা ইত্যাদি বুঝায়। যেখান থেকে حكيم ‘হাকীম’ অর্থ জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি অন্যায় কথা বা কাজ হতে নিজেকে বিরত রাখেন। প্রকৃতপক্ষে নেতা তাঁর দূরদৃষ্টির মাধ্যমে লোকদের সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
(৩) ধৈর্যশীল হওয়া : الصبر ‘ছবর’ শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ ধৈর্য ধারণ করা, বিরত থাকা, আত্নসংযমী হওয়া, সহিষ্ণুতা অবলম্বন করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে মানুষের প্রবৃত্তির স্বেচ্ছাচারিতাকে রোধ করতে ও সংযম রাখতে চেষ্টা করা। ধৈর্য নেতার একটি বিশেষ গুণ। ধৈর্যশীল নেতৃত্বই পারে সাংগঠনিক শৃংখলা রক্ষা করতে। যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট হাসি মুখে বরণ করা ও যে কোন সমস্যায় ধৈর্য ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وتواصوا بالصبر ‘আর যারা পরস্পরকে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (আছর ৩)। তিনি অন্যত্র বলেন,وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ (৪৫) الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ ‘তোমরা ছবর ও ছালাত-এর মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর, তবে এটা অবশ্যই কঠিন কাজ কিন্তু সে সম্বন্ধে বিনয়ী লোকেরা ব্যতীত। যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, তারা তাদের প্রভুর সম্মুখীন হবে আর তারা তাঁর নিকটে ফিরে যাবে’ (বাকারা ৪৬-৪৭)। ধৈর্যধারণ করা কঠিন কাজে হলেও প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য তেমন কঠিন নয়। লুকমান হাকীম তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়েছেন, يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ ‘হে আমার বৎস! ছালাত কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ দাও আর অন্যায় কাজে নিষেধ কর, আর তোমার প্রতি মুছীবত নেমে আসলে তাতে তুমি ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয় ইহা সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্তর্গত’ (লুকমান ১৭)। প্রকৃত ধৈর্যশীল নেতাই পারে কর্মীদের মন জয় করতে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে। আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে অগণিত পুরস্কারে ভূষিত করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘যারা ছবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত’ (যুমার ১০)। তিনি আরও বলেন,أُولَئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ ‘তাদের ছবরের কারণে তাদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করা হবে, তারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে’ (কাছাছ ৫৪)। এ প্রসঙ্গে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - قَال্َর لَيْسَ الشَّدِيْدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيْدُ الَّذِى يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর পুরুষ সে নয় যে কুস্তিতে অপরকে হারিয়ে দেয়। বরং প্রকৃত বীর পুরুষ হল সেই লোক যে রাগের সময় নিজকে সামলাতে পারে’ (বুখারী) অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ. ‘নিশ্চয়ই বড় বিপদে বড় পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন, তখন তাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করেন। যে ব্যক্তি সে পরীক্ষায় সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর যে ব্যক্তি সে পরীক্ষায় অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিযী হা/২৩৯৮, রিয়াযুছ ছালেহীন, ‘ছবর’ অনুচ্ছেদ ৪১ পৃঃ হা/৪৩)। সুতরাং নেতাকে নেতৃত্ব দানের সময় যে কোন কষ্ট, মুছীবতে ধৈর্যধারণ করতে হবে। শত বিপদ-আপদের মুখেও নেতাকে যেমন অসীম ধৈর্যধারণ করতে হবে, তেমনি কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যারও সমাধান করতে হবে। নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমেই আসবে কাঙ্খিত বিজয়। তাই দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় চরম ধৈর্যের গুণ অর্জন করতে হবে। ধৈর্যের অসীম গুণে গুণান্বিত ছিলেন নবী ও রাসূলেরা তাঁরা যে কোন বিপদে মুছীবতে ধৈর্যধারণ করতেন। শত যুলুম নির্যাতনেও তাঁরা বিচলিত হতেন না। তাঁরা সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতেন। আল্লাহ্ পাকও তাঁদেরকে পরীক্ষার পর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করতেন। ফলশ্রুতিতে দুনিয়াতে আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত, করুণা আর পরকালে মহা পুরস্কার জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব হবে, ইনশাআল্লাহ।
(৪) দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা : এটি এমন একটি আবশ্যকীয় গুণ যার মাধ্যমে নেতা কর্মীদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন। অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরী করে ফেললে বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যেমন পলাশী যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা বুঝতে পেরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্য দিকে মোড় নিত। আবার অনেক সময় সামনে এগিয়ে যেয়েও পিছনে সরে আসতে হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রবাহিনী বহুবার পিছনে এসেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিল। মোট কথা বিশেষ পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেতৃত্বের একটি মৌলিক গুণ। এ প্রসঙ্গে হুদায়বিয়ার সন্ধির কথা উল্লেখ করা যায়। একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ মুহূর্তের ভিতর শীতল হল কয়েকটি শর্ত মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে মহানবী (ছাঃ)-এর দূরদর্শিতা ও সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছিল। এমনকি এটাকে আল্লাহ্পাক বিজয় হিসেবেই ঘোষণা করলেন- إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি’ (ফাতহ ১)।
(৫) ন্যায়নীতি : এটি নেতার জন্য একটি অপরিহার্য গুণাবলী। ন্যায়নীতি ব্যতীত অনুসারীদের উদ্ধুদ্ধ করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। সবার প্রতি একই রকম আচরণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্পাক বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ‘বস্ত্তত: আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করছেন যে, আমানত সমূহ ওর প্রকৃত প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর তোমরা যখন লোকদের মধ্যে মীমাংসা করবে তখন সেটা ন্যায় বিচারের সাথে সম্পন্ন করবে’ (নিসা ৫৮)।
(৬) ভাষা দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা : মনের ভাব সঠিকভাবে বুঝানোর জন্য ভাষার দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা একান্ত প্রয়োজন। স্পষ্ট ভাষা ও নরম কথা মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই মর্মে আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)-কে উপদেশ দিয়েছিলেন- فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا ‘তোমরা (মূসা ও হারুন) উভয়ে তার (ফিরআউনের ) সঙ্গে নরম সুরে কথা বল’ (ত্বাহা ৪৪)। মানুষের কথা সবাইকে আকৃষ্ট করে, আবার কথার কাঠিন্যতা বা কঠোরতা মানুষকে দূরে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের প্রিয়নবী (ছাঃ)-এর কথায় বিধর্মীরা আকৃষ্ট হত। আর এ কারণে দলে দলে লোক ইসলামে দাখিল হতেন। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক নবী (ছাঃ)-এর শানে বলেছেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
‘(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড় অনুগ্রহের বিষয় যে, আপনি এসব লোকের জন্য খুবই নম্র স্বভাবের! অন্যথায় আপনি যদি উগ্র স্বভাব ও পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তবে এসব লোক আপনার চারদিক থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ১৫৯)। প্রকৃতপক্ষে নেতাকে কথা বলার সময় ভাষায় দৃঢ়তা, স্বচ্ছতা, সরলতা ও আকর্ষণীয় হতে হবে। তবেই তাঁর ভিতর একটি আবশ্যকীয় গুণ অর্জিত হবে। আর তখনই তিনি হবেন একজন আর্দশ নেতা।
(৭) আত্নবিশ্বাস : আত্নবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবলই পারে একটি আদর্শকে মঞ্জিলে মাকছুদে পৌঁছে দিতে। আদর্শ যত সঠিক ও মজবুত হৌক না কেন তার নেতৃত্ব যদি দুর্বল হয় এবং আত্নবিশ্বাসে গন্ডগোল থাকে, তাহলে সেটা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তদ্রূপ নেতার আত্মবিশ্বাস দুর্বল হলে কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। এজন্য নেতাকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হতে হবে। এ গুণে নেতাকে অবশ্যই বিভূষিত হতে হবে। মহানবী (ছাঃ)-এর আত্মবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি গভীর নির্ভরতার কারণে বদরের যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ (তিনশত তের) ছাহাবী ১০০০ (এক হাজার)-এরও অধিক কাফেরদের মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছিলেন।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনায় আমরা সম্যক অবগত হয়েছি যে, নেতৃত্ব কি? ও প্রকৃত নেতার গুণাবলী কি কি হতে পারে? এছাড়া আরও নেতাকে অনেক গুণে গুণান্বিত হওয়া অবশ্যক। তিনি হবেন সর্ব গুণের আধার। তাঁর গুণে সমাজ হবে আলোকিত, রাষ্ট্র পাবে অমানিশার অন্ধকারে প্রস্ফূটিত আলোকরশ্মি। সেই আলোয় জগদ্বাসী চলবে সঠিক পথে। নেতাকে তাই হতে হবে model সেই model বা আদর্শ চরিত্রে চিত্রায়িত ছিলেন আমাদের মহানবী (ছাঃ)। আর এজন্য তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও একই চরিত্রে গড়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন পরশপাথর। আর এর সংস্পর্শে সবাই খাঁটি হয়ে গিয়েছিল। আমাদেরও এ সমস্ত গুণে গুণান্বিত হয়ে প্রকৃতভাবে গড়ে উঠতে হবে। তাহলেই ইহ্কাল ও পরকালে ধন্য হয়ে গড়ে উঠা সম্ভবপর হবে। কবির ভাষায়- ‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলেও হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন’।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম
লেখক : সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ।